চন্দ্রকোনার ইতিহাস; সাহেব পটের গানঃ শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী

পর্ব-২০

   শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-

চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে                         
           মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                                                                                ছবিঃ গৌতম মাহাতো

                                পর্ব-২০

                            বিদ্রোহ বহ্নি

                        সাহেব পটের গান
                    শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
                                      ★
এসব চোরেদের বিচার হচ্ছে কোথায়? কোলকাতা
হাইকোর্টে। চিক ফেলে বিবিরা তামাসা
দেখছে। দেখি সাহেবরা এইসব চোরদের কি রকম
বিচার করে। সাহেবরা এই বিচার করছেন-কাকে শূলে দেবে, কাকে ফাঁসী দেবে, কাকে দায়মল বাটি
পাঠাবে, কাকে হরিংবাড়ী পাঠাবে, কাকে নজরবন্দী দেবে, কাকে ডাল কুকুরে খাওয়াবে।

এইসব চোরেদের বিচার হয়েছে। আঠার কাহান
ডাকাতের সর্দার যুগল কিশোর দুই ভাইকে কাঠ
ডমুকের বাজনা বাজিয়ে ছত্রগঞ্জে নাল ডাঙ্গাতে
পাথর ঘাটে ফাঁসী কাঠে থেকে দিয়েছিল ( ঈশান
চিত্রকরের নিকট প্রাপ্য)।

সত্য কথা বলতে কি এইগুলি বিকৃত সাহেব পটের গান। কারণ সাহেব পটের এমন অনেক ছবি আছে
যার গানের সঙ্গে মিল নেই। পটুয়াগণ তৎকালীন
সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করে বিদ্রোহীদের
ডাকাত বলে চিহ্নিত করেছেন।

আঠারো কাহান ডাকাতের সর্দার
         বহু পূর্বে ছিলেন
কাঠ ডমুকের বাজনা করে
মেদিনীপুরের ফাঁসী কাঠে থেকে দিয়েছিলো
           খাই দাই করি নাম-
        বাবুদের দুষ্মনি যে করে
        এমনি করে ফাঁসীর তলে
      ঝুলতে ঝুলতে যাক তার প্রাণ
        খাই দাই করি নাম। 

মোটামুটি সাহেব পটের ঐ গানগুলিতে ইংরেজ দের তোষামোদ করা হলেও; এই অঞ্চলের তখন কার পারিপার্শ্বিক অবস্থা যথা নীল ও তসর ব্যবসা,
চুয়াড় বিদ্রোহ ও তার পরিনতি; ঘাটা নিমকো অর্থাৎ ঘাটাল নিমতলা, ব্যাতা-বাগড়ী অর্থাৎ
গড়বেতা ও বগড়ী; ছত্রগঞ্জের নীলগঞ্জ;ফাঁসী কাঠে
অর্থাৎ ফাঁসী ডাঙ্গার ফাঁসীর কাউকে বোঝাচ্ছে।
এছাড়া এই গানে যুগল কিশোর দুই ভাই অর্থাৎ
নায়েক বিদ্রোহী যুগল কিশোর ও ইংরেজের
অফিসার নিতাই সিং দারোগার নাম পাওয়া যায়।

সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের বিদেশী বণিকগনের
বর্বরোচিত অত্যাচারে বগড়ীর গণগণির সুবিশাল
অরণ্যের নায়েক শিবির  ধ্বংস হলেও সেদিনকার
পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথমদিকের
সেনাপতি অচল সিংহ, রাজপুত্ত বীর বীর সিংহ,
‘বিজয় নায়েক’বীর বালা ‘চামেলী ও অন্যান্য নায়েক সর্দার গণের শৌর্য, বীর্য ও ত্যাগের কথা
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

তারপর সুচতুর ইংরেজ গভর্নমেন্ট  বগড়ীতে রাজা
ছত্র সিংহকে রাজ্যচ্যুত করবার পর কয়েকজন
ব্যক্তিকে ১৭৮৮ খ্রীস্টাব্দ হতে ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পর্যন্ত বগড়ী ইজারা দেন, তখনও বিদ্রোহ
কমে নি। বড় বড় প্রজা  জমিদারের বিরূদ্ধাচরণ
করে। এমন সময় শম্ভু চরণ মুখোপাধ্যায় ১৮৩৭ খ্রীস্টাব্দে মিঃ জন জন রবার্ট ও মিঃওয়াটসন নামে
দুইজন ইংরেজকে বাধ্য হয়ে বগড়ী পত্তনি দিলেন।

                                                       ক্রমশঃ…

                                ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *