(উৎসর্গ: মানবেন্দ্র পাত্র )
ছবিঃগৌতম মাহাতো
কৌশিক বর্মন-এর কবিতাগুচ্ছ
এক
ইতিহাসের পাতায় অনেক জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে হাঁটি
হাঁটি সভ্যতার বুক চিরে-
এক সভ্যতা থেকে আর এক সভ্যতায়
যেখানে প্রপিতামহের জীবনী লেখা আছে
লেখা আছে আমার জাতক জন্ম
আর
না পড়া ধর্মগ্রন্থ।
দুই
জাতক জন্মের থেকে হেঁটে চলেছি নৈঋতের পথে
ধূসর কুয়াশা ঠেলে পশ্চিমের জানালা ভেঙে
পুঃনজন্মের দিকে
যেখানে আমার উত্তর পুরুষের ইতিহাস লেখা হবে।
তিন
লিখতে বসেছি ইতিহাস
জাতক জন্ম থেকে পুঃনজন্মের
মাঝে দীর্ঘ জীবনযুদ্ধ
কেউ পড়বে না জেনেও লিখেছি ভাবনায়
আমার মৃত্যুর পরে অপ্রকাশিত ইতিহাস
কল্পনায় পড়ে নিও।
চার
কেউ কি পড়বে সময়ের কথামালা
যেখানে আমরা আমাদের কথা বলি
প্রতিটি দিনের উপন্যাসের পাতায়
মিথ্যের বুকে সত্যকে তুলে ধরি
তুলে ধরি আমি প্রজন্মকালের ব্যথা
ছবি এঁকে যাই সময়ের সরণিতে
সত্য থেকে দ্বাপর পেরিয়ে আজও
রূপকথ লিখি প্রাকসময়ের বুকে।
পাঁচ
প্রাকসময়ের মানচিত্রের বুকে
আঁকা হয়ে আছে অতীতের ইতিহাস
আর্য থেকে অনার্য থেকে আর্য
নদীর বুকে আবহমানের সকাল
ঢেউ আছড়ায়, আছড়ায় এই বুকে
গড়ে আর ভাঙে সময়ের সমকাল
ভুলগুলো সব মুছে যায় প্রতিদিন
লেখা হয়ে যায় দিনের দীর্ঘশ্বাস।
ছয়
দীর্ঘশ্বাস ঝরে ঝরে পড়ে বুকে
বুক চিরে বয় সরযু নদীর জল
রাম জন্মের প্রাকইতিহাস নিয়ে
সময়ের পথে চলেছে কালের রথ
রথের চাকায় সভ্যতা হেঁটে চলে
যেখানে দিনের প্রথম সূর্য থামে
থেমে যায় যত হৃদয়ের স্পন্দন
যখন আকাশে চাঁদের জ্যোৎস্না ঝরে।
সাত
ঝরে ঝরে পড়ে সময়ের ইতিহাস
রাতের আকাশে মালিনি নদীর ঢেউ
লেবুর শাখায় জোনাকির আলপনা
তারাদের ভিড়ে আলপথ ভাঙে কেউ
হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে ফেলেছি পথ
থমকে থেমেছি চৌরাস্তার মোড়ে
দীপবৃক্ষের আলোয় সূর্যদ্বয়
সময়ের কথা লেখা আছে চালচিত্রে।
আট
জেগে আছে রাত না-খাওয়া মদের গ্লাসে
ঘুমহীন চোখে কেন জাগো তুমি রাত
শরীর তোমার প্রতিদিন ভেঙে পড়ে।
তুমি ভাঙলে সভ্যতা ভেঙে যায়
অমানুষের আত্মারা আসে ছুটে
লুট হয়ে যায় সম্ভ্রম চারদিকে
থমকে থামে সভ্যতা নিভৃতে।
তবুও আমি হেঁটে চলি প্রতিদিন
লিখে রাখি যত সময়ের সাক্ষর
ভুল কথাগুলো ইতিহাস হয়ে যায়
আর ইতিহাস মুখ ঢাকে লজ্জায়।
নয়
কারো চোখে আমি বেদুইন, যাযাবর
আর কারো চোখে আমি এক সভ্যতা
কারো চোখে আজও নিশিথ অন্ধকার
আমার জীবন জন্মেই গেছে থেমে।
অথচ, আমার স্বপ্নের ভাঙা ঘরে
ভাবনারা এসে ঘুরে ফিরে চলে যায়
কল্পনাগুলো ইতিহাস লিখে চলে
রাত্রির বুকে সাদা মেঘ উড়ে যায়।
লেখা হয়ে যায় মেঘদূত ইলিয়াড
আর লেখা হয় হাসেদের ভালোবাসা
মেল ট্রেন ছোটে রাত্রির বুক চিরে
মানবেন্দ্রের চোখে জেগে থাকে রাত।
দশ
কেন জেগে আছো মৃত্যুর বাতায়নে?
চাঁদের জ্যোৎস্না কী আর বলতে পারে!
চিরাচরিতের কথকথা তুমি জানো?
জেনেছ কি তুমি মিশর ও ব্যাবিলন
রোম সভ্যতা অথবা সিন্ধুতীর
হিউ-এন-সাঙ এর বর্ননা তুমি জানো
ঘুরে দেখেছ কি ভারতবর্ষ কেমন !
যে পথে আমি হেঁটে চলি প্রতিদিন
অরণ্যচারী জীবন করি যাপন
ভুখা পেটে আজও কেটে যায় সারাদিন
বুকে আমার ভারতবর্ষ দ্যাখো।
★★★