স ন্দী প ন বে রা
বিন্দুতে
স্থির চিত্তে তাকিয়ে রয়েছে ছেলেটা
ছোট্টো একটা চারকোণা পৃথিবীতে সে আবদ্ধ
মানুষের সাথে সরাসরি ও মুখোমুখি কথা বলা
তার কাছে অপছন্দের বিষয়।
সেও সামাজিক প্রাণ
সমাজবদ্ধ শ্রেষ্ঠ প্রাণীকুলের একজন
সমস্তরকম খেলাধূলার ইতিহাস তার জানা
সেও যে খেলাধুলা করতে পারে
এটা বোধহয় সে ভূলে গেছে।
তখন মোবাইল আবিষ্কার হয়নি
মানুষেরা অন্যরকমভাবে ভালোবাসতো
মনের লৌকিক উপাদানগুলো ছিল সজীব
আজ আরও একা হতে হতে
মানুষ একটি ছোট্টো বিন্দুতে পরিণত হয়ে গেছে
আমরা বিস্মৃত।
জীবন বড়ো আধ্যাত্মিক
চারকোণা পৃথিবীতে সীমাবদ্ধ।
ঐ যে ছেলেটা বসে আছে
তার কাছে পড়ে আছে
একটি ফুটবল,
দৃষ্টিহীন ফুটবলটা চিৎকার করে বলছে
‘আমি তোমাদের মধ্যে থাকতে চাই
মারো আমাকে
একটা লাথি মারো
অব্যক্ত বেদনা নিয়ে
আমি হারিয়ে যেতে চাই না।
মগ্ন ছেলেটা নিশ্চুপ তবুও
সারা পৃথিবীর বুকে বিন্দুতে পরিণত হওয়া
অসংখ্য প্রাণের মতো
তার হৃদয়ে কেউ নাড়া দেয় না।
শিকড়
তখন জল বইত ধীরে ধীরে
স্রোতের অনুকূলে,
ঝর্ণার বুকে স্নান করে এলিয়ে যেত শরীর,
ঢেউয়ের মতো দুলে উঠত সে,
পৃথিবীর উষ্ণ স্পর্শ নিতে চাইত কেউ।
হেসে উঠবার অপেক্ষায় ফুলগুলি
গোপনে যেন ডাকছে কাউকে,
সেই অন্বেষনে জেগে থাকে
পথহারা এক বিষণ্ণতা।
এ গল্প কার জানো ?
মাটির গভীরে থাকা এক শিকড়,
যে প্রানপনে খুঁজছিল তার প্রান।
ভাগ্যের চাকা
একটা বাঁশ পোতা আছে ,
একটা দড়ি বাঁধা আছে ,
দাঁড়িয়ে আছে একটি দেশ ।
দেশের একটি মাথা আছে ,
দেশের একটি পতাকা আছে,
পতাকার তিনটি রং,
একটি রং গেরুয়া
একটি রং সাদা
একটি রং সবুজ
সাদা রঙের কথা
খুব একটা আলোচিত হয় না,
তবুও চাকা ঘোরে তার মধ্যেই ।
ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে থেমে গেলে
কেউ শহীদ হয়ে যায়
কেউ দেশপ্রেমিক হয়ে যায়
কেউ রাষ্ট্র হয়ে যায় ।
দোষটা কী
গণ্ডগোলটা হবে একদিন
সেই অপেক্ষায়…
ওৎ পেতে আছে কেউ।
আমি শান্ত নিরিহ গোবেচারা,
আমার কিছু হবে না তাই
দেখেও আমি কিছু দেখিনি।
প্রতিবাদ আমাদের মুখে মানায় না,
আমরা শান্ত নিরীহ আরামপ্রিয়।
কারা যেন হারিয়ে গেল,
আমি মাথায় হাত দিয়ে
খবর দেখি আর দুশ্চিন্তা করি।
কপাল খারাপ হয়নি বলেই
কিছুদিন পর সব ভুলে গেলাম।
একদিন আবার গণ্ডগোল হল,
আমার কাঁধে বন্দুক রাখা হল।
নাঃ ,আমি গুলি খাইনি ,
আমি শান্ত নিরীহ ট্রিগারও টিপিনি,
তবু সংশোধনাগরে বসে ভাবি
আমার দোষটা আসলে কী ছিল!
আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল
সম্রাটের একটি তাজমহল আছে
তাজমহলের নীচে চাপা পড়ে আছে কত চুম্বন
অজানাকে জানার মধ্যেও
বেঁচে আছে ইতিহাসের প্রশ্ন
আন্তরিকতার অভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনার
সাল তারিখ যত্ন করে সাজানো ।
তার একটি কুতুবমিনার আছে
তার একটি হাওড়ার ব্রিজ আছে
আছে একটি সুবিশাল অট্টালিকা ও বাগান
এছাড়াও আছে অনেক মন্দির মসজিদ গির্জা
রাজার মনের ভেতর অনেক কর্মচারী আছে
সম্পর্কের টানাপোড়নে দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্র
একদিন রাজার জীবন থেকে সরে যায়
আকাশ বাতাস নদী
রাজাকে যে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল
যে মাটি সে আজও পথ তৈরি করে চলেছে ।
পেয়ালায়
তুলে রেখেছি শালীনতা থেকে যেটুকু হৃদয়,
তার কাপ পেয়ালায় হাঁটে সভ্যতা।
জলকে ভাগ করে নিয়েছে যে সংকীর্ণ পথ
সেখানে দাঁড়িয়ে আছে রাজকীয় জলক্ষয় ।
ক্লান্ত মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের আশাজনিত ঘন ঘন ক্ষয় বিকিরণে হলুদ পাখি, শালিক, গাংচিল আরও কত পালক পড়ে আছে আমাদের দুর্দশায় ।
একদিন জীবাশ্ম বলে দেবে অবলুপ্ত আমাদের ইতিহাস,
কত দিন কত রাত পড়ে আছে …
পটভূমি লেখে শুকনো আওয়াজ।
চোখ রেখে কোম্পানিতে ,
যে ছেলেটি পড়েনি একটিও বই,
যে মেয়েটা বাসন মাজতে মাজতে সাদা অর্কিড থেকে বয়স বাড়াতে চায় অনায়াসে
তাদের কাছে রয়েছে ইতিহাস হারিয়ে যাওয়ার গল্প,
নিজেদের সাজানো চাওয়া পাওয়া কখনও কখনও
বিবর্ণ মুখে ফিরে আসে বিপদাপন্ন সিঁড়ি বেয়ে ,
সভ্যতা সেখানে খালি পায়ে হাঁটে না
সে শুধু ডানা খোঁজে ।
স্বত্বা
সমস্যায় সমস্যায় জর্জরিত এলাকা ও দেশ ,
নিয়মিত ঘটে যাওয়া ঘটনার ঘনঘটা
ক্রমশই জাল তৈরি করছে,
যুগজীবনের দ্বন্দ্বযুদ্ধ থেকে উৎকীর্ন সমাধানের ইঙ্গিত সামগ্রিক পরিমণ্ডলেই রয়েছে ।
একসমুদ্র বৈষম্যমূলক প্রতিচ্ছবি
সময়োপযোগী নয়,
মানবতাহীন কৌতুহলে সমাধান নেই ,
সমাজের অন্দরমহলে বাঁসা বাঁধা ঐক্যের
পরিমণ্ডল আসলে সংকীর্ণতা।
অনুসন্ধানী মনোভাবে ফুটে উঠেছে
লালিত পালিত বিদেশী স্বত্বা,
কত গাছ কত ফুল ঝরে যাওয়ার আগে
দিয়ে গেছে কিছু সমাধান
সতেজতার সময় উপলব্ধি প্রয়োজন।
বসন
সোনার ফসল জুড়ে
চুপচাপ
টুপটাপ
মিঠে মন বিনয় কথা জীবন
এ গাছ ও গাছ ।
ফোন আসে
বাড়ন্ত চুলে তেল
কি লাভ বলো জুঁই ফুল বনে
বসন্ত নদীর শহর ধুয়ে ধুয়ে,
বাঁশরী বাজায় বাঁশি ।
ঝিরি ঝিরি বাজে নপুরের টানে
নিষ্কোষণ তান,
বিন্দু বিন্দু কনায়
সবুজ আভায়
সোনালী বসন বৈজয়ন্ত।
এ হাত দুরে রাখো অমৃত আবাসন …
চোখ তাকায় মৃদু হাসে
শরীর থেকে গড়িয়ে পড়ে
চুপচাপ
টুপটাপ।
বিবর্ণ মুখ
তখন অন্যরকম ছিল ,
খরস্রোতেও বাঁধা থাকতো আঁচল ,
জুবুথুবু হয়েও হাঁটতো হাসি।
আজ চাঁদের দেওয়ালে ঘণ মেঘ,
করোনা ভাইরাসের স্টেজ ফোর ,
ধ্বংসের মুখে এগিয়ে আসা কাছগুলোতে
হাসিহীন চৌকাঠ।
দাবানলের আগুন মেনেছে হার,
আসন পাতবে কার জন্য ?
সাজগোজ, বডি স্প্রে মুখ্য নয়,
মুখে মাস্ক পরেছে সমস্ত চুম্বন।
স্যাটেলাইট থেকে দেখো
অসমাপ্ত গিরিখাদ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে কতগুলো দেশ আজ এক রসাতলে কার্ফু জারি করেছে।
জরাজীর্ণ এই পর্ণমোচীর বসন্ত শেষ করো ,
পতাকার নীচে সচেতনতা হাজির করে
রোদ গায়ে মেখে খুঁজে নাও নিজের দাম।
অনুধাবন
যেখানে একুল ওকুল দুকুল হারায়
থাকে না দিন মাস বছরের হিসেব
ভাঙার খেলায় নিয়মিত ঝরে ফুল
নতুন পথের ধূলোয় সেখানেও বাঁচে
হাসির ছোঁয়া গাছগাছালির রোদ।
মন ঠিক করে শুয়ে পড়া বিছানায়
কলসী ভরা ঘুম
তুলসীতলায় প্রদীপ ও ধুনুচি জুড়ে
সন্ধ্যাহীন আরতি
শব্দশক্তির কোষাঘাত বয়ে আনে
বিবেকহীন যত্ন
জীবন্ত ফসিলের তামাসায় একা হাঁটে
সব মাইলস্টোন
বাজপাখির ছোঁ মারার দুরকম মানে
অনুধাবনই জানে।
বুকের মাঝে সৎ অসতের দ্বন্দ্ব অবিরত
গুগুলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যায় প্রত্যাশা
দিনরাত্রির কাজের ফাঁকে রিংটোন বাজে
হাতের আঙুলেই চালিত হয় কিছু কথা
জীবনপথে দাঁড়িয়ে থাকে সাহায্যের হাত।