প্র কা শ ঘো ষা ল-এর কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ রেল কলোনিতে জন্মঃ ৪ ঠা মার্চ, ১৯৬৩, আসানসোল। নব্বইএর দশক থেকে লেখালেখির প্রকাশ। কবিতার বই- ‘জন্মদিনের মতো বৃষ্টি’। ‘দেখা’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ১৮ বছর। কবিতার সাথে পথ চলা দীর্ঘদিনের।লিখেছেন বাাংলা ও বাংলার বাইরের নানান লিটল ম্যাগাজিনে।প্রকাশ ঘোষাল একজন নিভৃতের কবি।তাঁরই একগুচ্ছ কবিতা নিয়ে সেজে উঠল আজকের বাইফোকালিজম্-এর পাতা..
 

প্র কা শ ঘো ষা ল

স্ক্রিনশট

কান্নার হাজার ডিঙি
স্বপ্নের রিসিভারে শুধু নুনজল কিছুটা পাথর

দূরে আলোহীন ছিঁড়ে যাওয়া মাঠ,উড়ন্ত দেয়াল
আর নৌকোর চিৎকার খড়ের জন্মরূপ
ভেসে যায় পায়ে পায়ে জড়ানো সাপ ও শিশুর কক্ষপথ
ঝড়ের ছোবলে চাঁদ, জলের তলায় নাছোড় ঘুমের দাগ
কালশিটে গাছেদের পুরনো বয়স

দিনান্তে আশ্রয় রাক্ষুসি মেঘ অন্নহীন লঙ্গরখানায়
পাগল রাত্রিস্বর কার কাছে রেখে যায়
হাইটেক হাইওয়ে মাটির অভিমান খনিজের সম্মতি

জলের ভেতরে এতো ঘরবাড়ি, জলই রক্ষাকবচ
মৃত্যুর ছায়া কতটা গভীর হলে অক্ষর বিলাস,
রঙিন আকাশ হাঁটে নিরাকার পথে
বৃষ্টির আগুনে নীল আহা কয়েকটা স্ক্রিনশট
ভাসমান ধানের গোলা, ডুবে যাওয়া স্কুলবাড়ি
ভিজে যায় আমিষের করুণায়

ঝড়

ঝড় ছিঁড়ে দিচ্ছে প্রতীক আর উপযুক্ত ধ্বনিরূপ
নেভিগেশন ছুঁয়ে রেইনকোট আর ক্যামেরা ছুটছে কাকদ্বীপ নামখানায়
শতাব্দীর সন তারিখ হয়তো এক্ষুনি মুছে যাবে বিদ্যুৎ রেখায়
ফ্রিজে জমে থাকা গীতবিতান ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াবে কিছুক্ষন
মধ্যবর্তী বিষাদে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রে দুলে উঠবে শূন্যতা
দুফোঁটা দুঃখে ডিভান শোধন করে শুয়ে পড়বে রাত্রি
বলবে ধুস, বাইরে যা হাওয়া
এখন কবিতা না লেখাই ভালো।

বাউল আখড়া নাচে

আলোর অপেরা শুনে বেজে ওঠে শীতঘুম
এক ফোঁটা রঙের ঝিনুক ছায়া ছায়া অসুখী শরীর
খুলে ফেলে সহজ পাঠের বাড়ি
চোখের আড়ালে যত ফিসফিস ইচ্ছেপ্রণয়
নিরন্ন বাতাস এসে দুয়ো দেয় খালি
বাসিমুখে খেয়ে ফেলে আস্ত আকাশ
ডাকনামে ঘরছুট একলা বালক দেখে
কিভাবে সাজায় পালক সোহাগ চুড়ায়
বাউল আখড়া নাচে রসিক পাড়ায়।

সেফটি রেজর

সেফটি রেজর থেকে সমস্ত কথা, মেঘ ও চাঁদের ফাজলামি,
কুয়োতলার গুনগুন ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে অঙ্গার খাঁচায়
উল্লাসের পিছনে পিছনে নিমফল,ইনবক্স ভরে যায়
সাতরঙ ছাতা হাতে রোদ্দুর জানলা টপকে আসে
নরম শ্যাওলার কাছে ভেসে ওঠে রাতের ব্যর্থতা
ধারালো ছুরির পাশে মনখারাপের হাসি
এসো অক্ষর মনিমালা ব্রতচারি
উইঢিপির ভেতর
রাজা রাজা খেলি
স্বপ্নের আগুন ছুঁড়ি ভিক্টোরিয়ায়।

আমার তর্জনী ছুঁয়ে

আমার তর্জনী ছুঁয়ে বসে থাকে আমারই সৎকার ঘাম
বোকার মতো মৃত কালপুরুষের বেল্ট খুলে ভাবি
বিছানা আর আয়নার মেহফিল
প্রপিতামহের মেঘের ভেতর
রঙিন পেন্সিলে আঁকি রাতের কোরিওগ্রাফ
খসে পড়ে বরফ শরীর
স্বাধীন ধুলোর কাছে নরম ফুলেরা আসে
ত্রিকালদর্শী পয়ারে বৃষ্টির চিঠি লিখি
পাতাবাহারের দেশে এখনো কি রক্তপাত
পাথরের পাখি ওড়ে
গাছেরা কি নির্বীজ কবিতা লেখে

শিকার

রান্নাঘর বেহালা বাজায়
উনুনে ঘুনসি পোড়ে

ক্ষতমুখে পিঁপড়ের ব্যারিকেড
উপপাদ্য ভেঙে যায় অবাধ্য শিকারে

কম্পাস

দরজায় সেলফোন
গোলার্ধ খুলে দেয় স্বর্গের জানলা
চাঁদের রেলিঙে শুকোয় পাখিদের হাড়
গুবরে পোকার খিদে
সাপ লুডো খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে আজ আয়নায়

রাতের পোশাক ছেড়ে পৃথিবীর প্রতিভাগুলো দেখুক
পরিযায়ী রুটির আজও কোন কম্পাস নেই

নির্জন প্রতীকে চাঁদ

দেরাজ ভর্তি ছায়া সন্ধের আঙুলে এখনো ঘাসের ঘুম
ফিরে যাচ্ছে বরফ কুচি মেঘ ধারাবাহিক কবিতা যাপন
জানলার ওপারে কেউ রিংটোনে সরোদ বাজায়
আলখাল্লার নিচে শুয়ে আছে শান্ত ইঁদুর
বিমূর্ত সিঁড়ির নিচে ধূর্ত বিড়াল
হঠাৎ ঘুমের ভেতর রাত্রি বিহার
উত্তর দক্ষিণ খোঁজে শুকনো ছায়ায় কিছু আদরের এঁটোসুখ
দেহরূপ আকাশ গামী
ফেরিঅলা অক্ষর চুমু খায় বাংলা ভাষায়
খেঁজুর রসের গান আহা
হাতে হাত চোখে চোখ
জিভে আলপিন তেঁতুল বিছের সারারাত সারেগামা
নির্জন প্রতীকে চাঁদ গল্প ছড়ায়

উন্মাদ লিপি

দুপুরের আঁশটে হাওয়া যেন পাথরের খিদে
কোথায় টার্মিনাস আগুন মুখে ছুটছে প্রিয় ব্রিফকেস
খোলস ছড়ানো পথ সীমানাহীন
হাজার পৃষ্ঠায় কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি
যুদ্ধের জালে ঢুকে পড়ছে উন্মাদ গ্রহ, সাতশো ছুরির যৌনতা
দিনের মাথায় ষোলকলার হালখাতা
ধর্মতলায় ঠা-ঠা রোদ্দুর
ছড়িয়ে দিচ্ছে দুচোখ খোলা হাইফেন
থালাভর্তি ইউটিউবে ঝরে পড়ছে ছদ্মবেশ
বলিরেখায় নাভির স্বর সূর্যাস্তের দাগ

স্বরবর্ণে ভরে যায়

আঙুলের ডাকনাম
কে কার দিকে ফনা তোলে আসলে ওটাই কার্টসি
আগাছায় শ্বাসনালী, দাতব্য ঠোঁটেও এতো রংরুট,
নির্জন স্মৃতিকলে পেঁচার ভ্রমণ

ব্লেডের প্রান্ত ছুঁয়ে সন্দেহ ছোটে পৃথিবীর দিকে
ভারতীয় ম্যাপ যে কোন দিকেই আঁকা তিনদিকে জল
অর্ধেক চাঁদের নিচে জড়ো হয় বুলেট ও অপমান

মুদ্রার অভিসারে বেঁচে থাকে যে সব নিঝুম
বহুমুখী আলেয়া শাসন
সন্ধি সমাস চলে গেলে আনপড় সন্ন্যাস
যোনীদেশে শূন্য বাউল
স্বরবর্ণে ভরে যায় কামিনী আগল

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *