চন্দ্রকোনার ভুলে যাওয়া ইতিহাস

পরিচিতি
দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাস নিয়ে লেখালিখি করছেন।লেখক চন্দ্রকোনার বাসিন্দা।স্বর্গীয় কানাইলাল দীর্ঘাঙ্গীর সুযোগ্য পুত্র।মূলত মেদিনীপুর তথা চন্দ্রকোনার ইতিহাস চর্চার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।নিজের প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন একটি স্বয়ংকৃত মেদিনীপুরের ইতিহাস সংরক্ষনাগার।

লিখছেনঃ দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা

কোন পুরনো ঐতিহ্যের শহর বা গ্রামের  বিস্মৃত
লুপ্ত  প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি, অতীত পুরাবৃত্ত,
ভগ্ন দেব দেউল, মঠ মন্দির ,  রাজপ্রাসাদ ইত্যাদির
ঐতিহাসিক  গৌরব পুনরূদ্ধার করা, সংস্কার করা বা পুরাতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য
যে সকল স্হানীয় গবেষক বিভিন্ন কাহিনী, কিংবদন্তি লোককথা সংগ্রহ করে জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত (২১শে ফাল্গুন, ১৩৭৬   সাল) থেকে কিছু  তথ্য জানাই। :-
” চন্দ্রকোনার পার্শ্বদেশে বগড়ী পরগণা রয়।
গনগনির ডাঙ্গায় ‘ভীম, বকরাক্ষসে’ যুদ্ধ হয়।।
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞকালে ভীমসেন
কৈল্য   জয়।
উত্তরমল্ল, দক্ষিণমল। সুম্ভ রাষ্ট্র দিগ্বিজয়।।
বহু  রাজ বংশের কীর্ত্তি কথা হেথায় বিজড়িত।
অনেক রাজার রাজত্ব কাহিনী আছয় লিখিত।।
রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ আজো অনেকেই রয়।
বারদুয়ারী লালগড়, রামগড়, রঘুনাথগড়ে শোভা
পায়।।
ইতিহাসে পাই মোরা খয়ের মল্লের কথা।
নিজ শৌর্যে রাজত্ব তার মল্লভূমে হেথা।।
তৎপ্রতিষ্ঠিত মল্লেশ্বর স্বয়ম্ভুলিঙ্গ জানাই।
চন্দ্রকোণার মল্লনাথ মহাদেব সবারে কই।।
রাজপুত সর্দ্দার তীর্থ থেকে ফিরিবার পথে।
আস্তানা বাঁধা তিনি দেবগিরিতে।।
নিজ নামে স্হাপন করেন ‘চন্দ্রানগরী’
তা’ থেকে হ’য়ে যায় ‘চাঁদা আজকেরই।।
রাজপুত বীর চন্দ্রকেতুর হৈল অভ্যুত্থান।
মল্লরাজ খয়ের মল্ল পরাজিত হন।।

চন্দ্রকেতু রাজার পুত্র ‘করভষণ্ড জয়কেতু’।
তৎপুত্র পুষ্পকেতু, তৎপুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রকেতু।।

রাজ প্রতিষ্ঠিত মল্লেশ্বরের তায়দাদে লিখা রয়।
১৫০বৎসর কেতু বংশের রাজত্ব জানা যায়।।
কেতু বংশের রাজত্বকালে চন্দ্রকোণা ছিল স্বর্গ পুরী।

  ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণাঃ

সোলেমান সেনাপতি কালাপাহাড় চন্দ্রকোণা
আক্রমণ করে, বহু মন্দিরের ক্ষতি করে, মহিলাদের
উপর অত্যাচার করে। দ্বিতীয় চন্দ্রকেতু জলে ডুবে
আত্মঘাতী হন, রানীগণ জহরব্রত করে আত্মাহুতি দেন। লেখক ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত তে কবিতার
মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন :-


ঘেঁসারী ঘাস কাটতে গিয়া হৈল পাষাণ। 
পুর নারী জয়হরিতে শঙ্খ ফেলে দেন।। 
মল্লনাথ শিব ঠাকুর পাথর চাপা রয়। 
কেতু বংশ এখানেতেই সমাপ্ত হয়। 
রাজ্য দখল পাঠানগণ শুরু সর্ব্বজন।
এই সময়েই আইল মুসলমানগণ।। 
গৌড়েশ্বর হুসেন শাহ এ রাজ্য জয় করে। 
উত্তরমল্ল, দক্ষিণমল্ল, সুম্ভরাষ্ট্র এল অধিকারে।। 
১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব হয়। 
মর্ত্যধামে প্রেমভক্তির বন্যা বয়ে যায়।। 
শাহী শড়ক ধরে প্রভু শ্রীক্ষেত্রে গেলা। 
জগদানন্দ, মুরারি, মুকুন্দ পার্ষদ ছিলা।। 
ঝাঁকরা গ্রামেতে প্রভুর হৈল অবস্থান। 
হাটের নিকট দীঘির তটে চিঁড়া দধি খান।। 
১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে যুদ্ধ বাধিল মুঘল-পাঠানে। 
চৌহান বংশীয় বীর ভানুসিংহ এলেন এখানে। 
ইন্দ্রপ্রস্থ হৈতে তিনি তীর্থ যাত্রা মানসে। 
শাহী শড়ক পার্শ্বে তাঁবু ফেলিল মনের হরষে। 
অবস্থান হয় তাঁর শ্যামদেবের মাঠেতে। 
কেতু বংশের রাজ্যগুলি জয় করিতে।। 
রাজার নামে’ বীরভানুপুর ‘ নাম করণ হৈল। 
‘বী’রভানুপুর’ হৈতে বী’রভানুপুর নাম ক্রমে হয়ে গেল।। 
কেতু বংশীয় রাজাদের ৮০বর্গমাইল রাজত্ব কাড়ি লয়।
রাজধানী তিনি তাঁহার চন্দ্রকোণায় স্হাপন করয়।। 
….. 
১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে মান সিংহ আইল যখন। 
রঘুনাথ গড়ে রাজা রঘুনাথ সিংহ রুখিলা তখন।। 
স্বাধীনতা হারাইয়া তার মান খোয়া গেল। 
চারিদিকে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার হৈল। 
হরিভান সিংহ এখান হৈতে হরিসিংপুরে রাজধানী গড়ে। 
বহু সৈন্য সামন্ত লইয়া মুঘলদের সাথে লড়ে। 
হরিসিংপুর নাম হয় হরিভান সিংহের নামে। 
হরিভান পত্নীর সমাধি মন্দির আছয় ঐ গ্রামে।। 
সাজাহানের মত তাঁকে আত্মবিলাপ করিতে হৈল
সবশেষে তিনি মুঘলদের অধীন হয়ে গেল।।

**চন্দ্রকোণাধিপতি রঘুনাথ সিংহকে বঙ্গ বিজেতা
মান সিং এর নিকট  স্বাধীনতার মান খোয়াতে হয়েছিল, সে কথা লেখা আছে ‘টোডরমল মল্লের
হিসাবে’- যেখানে দেখা যায় মোঘল অধিকৃত সরকার মান্দারণ, বীরভূম, বর্দ্ধমান, হাওড়ার
পশ্চিমাংশ, হুগলীর আরামবাগ, মেদিনীপুরের
চেতুয়া,মহিষাদল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। কিন্তু
চন্দ্রকোণার অন্তরাত্মা সহজে মেনে নেয়নি সে
লজ্জাকর কাহিনীকে নীরবে।
এখানের রাজা রঘুনাথ সিংও হরিভান সিং
যুদ্ধে হেরে গিয়ে পরাজয় স্বীকার ক’রেছেন।

★ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা

সোলেমান সেনাপতি কালাপাহাড় চন্দ্রকোণা
আক্রমণ করে, বহু মন্দিরের ক্ষতি করে, মহিলাদের
উপর অত্যাচার করে। দ্বিতীয় চন্দ্রকেতু জলে ডুবে
আত্মঘাতী হন, রানীগণ জহরব্রত করে আত্মাহুতি দেন। লেখক ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত তে কবিতার
মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন :-


ঘেঁসারী ঘাস কাটতে গিয়া হৈল পাষাণ। 
পুর নারী জয়হরিতে শঙ্খ ফেলে দেন।। 
মল্লনাথ শিব ঠাকুর পাথর চাপা রয়। 
কেতু বংশ এখানেতেই সমাপ্ত হয়। 
রাজ্য দখল পাঠানগণ শুরু সর্ব্বজন।
এই সময়েই আইল মুসলমানগণ।। 
গৌড়েশ্বর হুসেন শাহ এ রাজ্য জয় করে। 
উত্তরমল্ল, দক্ষিণমল্ল, সুম্ভরাষ্ট্র এল অধিকারে।। 
১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব হয়। 
মর্ত্যধামে প্রেমভক্তির বন্যা বয়ে যায়।। 
শাহী শড়ক ধরে প্রভু শ্রীক্ষেত্রে গেলা। 
জগদানন্দ, মুরারি, মুকুন্দ পার্ষদ ছিলা।। 
ঝাঁকরা গ্রামেতে প্রভুর হৈল অবস্থান। 
হাটের নিকট দীঘির তটে চিঁড়া দধি খান।। 
১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে যুদ্ধ বাধিল মুঘল-পাঠানে। 
চৌহান বংশীয় বীর ভানুসিংহ এলেন এখানে। 
ইন্দ্রপ্রস্থ হৈতে তিনি তীর্থ যাত্রা মানসে। 
শাহী শড়ক পার্শ্বে তাঁবু ফেলিল মনের হরষে। 
অবস্থান হয় তাঁর শ্যামদেবের মাঠেতে। 
কেতু বংশের রাজ্যগুলি জয় করিতে।। 
রাজার নামে’ বীরভানুপুর ‘ নাম করণ হৈল। 
‘বী’রভানুপুর’ হৈতে বী’রভানুপুর নাম ক্রমে হয়ে গেল।। 
কেতু বংশীয় রাজাদের ৮০বর্গমাইল রাজত্ব কাড়ি লয়।
রাজধানী তিনি তাঁহার চন্দ্রকোণায় স্হাপন করয়।।
……..
১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে মান সিংহ আইল যখন। 
রঘুনাথ গড়ে রাজা রঘুনাথ সিংহ রুখিলা তখন।। 
স্বাধীনতা হারাইয়া তার মান খোয়া গেল। 
চারিদিকে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার হৈল। 
হরিভান সিংহ এখান হৈতে হরিসিংপুরে রাজধানী গড়ে। 
বহু সৈন্য সামন্ত লইয়া মুঘলদের সাথে লড়ে। 
হরিসিংপুর নাম হয় হরিভান সিংহের নামে। 
হরিভান পত্নীর সমাধি মন্দির আছয় ঐ গ্রামে।। 
সাজাহানের মত তাঁকে আত্মবিলাপ করিতে হৈল। 
সবশেষে তিনি মুঘলদের অধীন হয়ে গেল।। 

**চন্দ্রকোণাধিপতি রঘুনাথ সিংহকে বঙ্গ বিজেতা
মান সিং এর নিকট  স্বাধীনতার মান খোয়াতে হয়েছিল, সে কথা লেখা আছে ‘টোডরমল মল্লের
হিসাবে’- যেখানে দেখা যায় মোঘল অধিকৃত সরকার মান্দারণ, বীরভূম, বর্দ্ধমান, হাওড়ার
পশ্চিমাংশ, হুগলীর আরামবাগ, মেদিনীপুরের
চেতুয়া,মহিষাদল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। কিন্তু
চন্দ্রকোণার অন্তরাত্মা সহজে মেনে নেয়নি সে
লজ্জাকর কাহিনীকে নীরবে।
এখানের রাজা রঘুনাথ সিংও হরিভান সিং
যুদ্ধে হেরে গিয়ে পরাজয় স্বীকার ক’রেছেন।

তথ্যসূত্র: ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত-শ্রী কানাই লাল
                দীর্ঘাঙ্গী, ১৩৭৬ সাল। 

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *