বি পু ল চ ক্র ব র্তী-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ বিপুল চক্রবর্তী (জন্মঃ ২৫ মার্চ ১৯৫৫) একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। ২০১২ সালে ‘শিউরে উঠে বলেছিলাম’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বীরেন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। সংক্ষিপ্ত জীবনী – বিপুল চক্রবর্তী ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম রমানাথ চক্রবর্তী। মাতার নাম উমারানী চক্রবর্তী। তাঁর জন্ম যদিও কলকাতায়, শৈশব-কৈশোর কেটেছে কখনও বাঁকুড়ায় কখনও উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে। পড়াশোনাও তাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা পরবর্তী জীবনে একটি সরকারি অফিসে তিনি টানা চাকরি করেন। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘তোমার মারের পালা শেষ হলে’ ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর কবি জীবনে নানা ছোট পত্রিকাতে তাঁর কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। সত্তরের গণ-আন্দোলন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল তাঁর কবিতায়, তাঁর গানে। পরবর্তী সময়ে নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়েও এগিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে ‘শিউরে উঠে বলেছিলাম’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বীরেন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গান লেখা, সুর করা আর গান গাওয়া বিপুলের জীবনের অন্যতম অবলম্বন – অন্যতম আনন্দ। ১৯৮১ সাল থেকে ‘অনুশ্রী-বিপুল’ এই জুটি হিসেবে কলকাতা মহানগরী থেকে বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে গান গেয়েছেন – গান গেয়ে চলেছেন। এ পর্যন্ত মোট সাত-আটটি ক্যাসেট/সিডিতে সে গান প্রকাশিত। গ্রন্থ তোমার মারের পালা শেষ হলে আমি দেখছি নীল পাহাড়ের দেশে দুঃখের আঁধার রাতে, প্রিয় তোর মুখ দেখতে চাই রাত্রিজল ছুঁয়ে জেগে আছি ছেলের ঠোঁটে আকন্দের দুধ শিউরে উঠে বলেছিলাম রং তোমাকে জল পড়ি পাতা পড়ি বন্দিদশার কবিতা ২০০৯ সালে “তোমার মারের পালা শেষ হ’লে” থেকে “ছেলের ঠোঁটে আকন্দের দুধ” পর্যন্ত, প্রথম দিকের নিঃশেষিত তাঁর সাতটি বই এক মলাটের নিচে এনে “ডানা ঝাপটায় পুরনো পোস্টার” নামে এক সংকলন প্রকাশিত হয়।

বি পু ল    চ ক্র ব র্তী-র কবিতাগুচ্ছ

যেতে যেতে

সন্ধ্যা নেমে এল

যেতে যেতে সন্ধ্যা নেমে এল
যেতে যেতে হারাল প্রান্তর
যেতে যেতে রাক্ষুসে প্রাসাদ
যেতে যেতে সে এক শহর
.
যেতে যেতে ভীষণ হাঁ-মুখ
যেতে যেতে, যাওয়াই সঙ্গিন
যেতে যেতে পার হওয়া তবু
দিন আর রাত্রি আর দিন…

 

ব্যথার আগুনে

.
সে ছিল আমার দুঃখী বয়স —
গঞ্জনা কত কী যে
পুড়েছে সে তার ব্যথার আগুনে
পুড়ছি আমিও নিজে
.
আগুন পেরিয়ে সে কী চেয়েছিল —
কোন্ সে পৃথিবী পেতে
খুঁজে ফিরি আজও তার সে ভুবন
যেতে যেতে যেতে যেতে…

কুয়াশার দেশে

দু’টি হাতে কুয়াশা তাড়াই
কুয়াশায় ফের যাই ঢেকে
একদিন পাশে ছিল কারা
আজ নেই তাহাদের কে কে
.
কুয়াশায় যেতে যেতে যেতে
এই, শুধু এই-ই দেখে নেয়া
কুয়াশা জড়ানো দু’টি হাতে
বেয়ে চলা জীবনের খেয়া…

 

চরৈবতি

বাতাস বলেছে, চলো চলো বয়ে চলো
আমি কিছু বলি, তুমি কিছু কথা বলো
.
কারা তা শুনছে, দরকার নেই জানার
পাখিটি বলেছে, ওড়বারই কথা ডানার
.
ঝরাপাতা আর নদীও বলেছে তাই-ই
যেতে যেতে আমি সেই কথা লিখে যাই…

মাদারির খেল

একঃ

কষ্টেসৃষ্টে কেটে গেল দিন —
কখনও চাইনি পেতে
কেষ্ট
শুধু আসা-যাওয়া
আর থাকা-খাওয়া
এজন্য
চেয়েছি সামান্য
কিছু রেস্ত
সেখানে পড়লে টান
খানখান
হয়েছি, চেয়েছি
হেস্তনেস্ত
.
একদিন হেঁটেছি রাস্তায়
টানটান
বাধা ছিল, পরোয়া থোড়াই
আজকে খোঁড়াই
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটি…
মনে হয়, এর চেয়ে
এখানেই দাড়ি টানা শ্রেয়
হাত-পা ঝারা
যত্রতত্র হ’তে হয়-না হেয়
আর তাছাড়া
শুরু হয় যে রচনা, আছে তার
শেষ তো!

 

দুই

একদিন তো যেতে হবেই —
পেরিয়ে রোদন
শ্মশানে যাওয়ার পথে
দেখে যাব প্রসূতিসদন
না, ধনি
ওখানে জন্মাইনি
তবে, বলা যেতে পারে
ওখানে প্রত্যহ আমি
প্রতিটি শিশুর মধ্যে
এখনও জন্মাই
.
যাই
জীবনের মাদারির খেলা
আর-বার শেষবেলা
দেখে যেতে চাই —
এপাশে আসছে কেউ
এপাশে হাসির ঢেউ
ওপাশে শ্মশানঘাটে
কী মরাকান্নাই
.
এইসব দেখতে দেখতে
একদিন যেতেই হবে, ভাই!

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *