নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার
আলেহো কার্পেন্তিয়ের
ছবিঃ গৌতম মাহাতো
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : শৈবাল কুমার নন্দ
তিনি ঘােষনা করে দিলেন, “আমি কোনরকম অভ্যন্তরীণ সমস্যা চাই না। এছাড়াও আসল যেটা, এখন সংযুক্ত রাষ্ট্রসমূহ বিতর্কিত এলাকাগুলোর জন্য বেশ বড় আকের শনি সংক্রান্ত ছাড় মঞ্জুর করেন। পরিস্থিতি এতটাই জট পাকানো ছিল যে রাষ্ট্রপূতকে তার চ্যান্সেলরীয় দপ্তর তলব করল সরাসরি হাজির হয়ে এ ব্যাপারে রিপোর্ট করতে। ফলে অন্ততঃ দু সপ্তাহ তাঁকে বাইরে যেতে হবে। রাষ্ট্রদূতের সী তাঁর স্বামীর জিনিসপত্র অস্বাভাবিক ভালোবাসা ও যা নিয়ে বেঁধেছে দিলেন এবং পরের দিন বিমানবন্দরে তাকে প্লেনে তুলে দিতে গেলেন, তুপ্তির সঙ্গে লক্ষ্য করলেন যে প্লেনটা এক পুরনাে, লজয়ছে মডেলের, যে কোন মুহর্তে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পুরােমাত্রায় ও এটা ছিল সেই ধরনের প্রেম রক্ষণাবেক্ষণকারী লােকেরা যেটার নাম দিয়েছিল এক “শুভূত শববার।” পরের দিনই কনসাল আমার সাথে দেখা করতে এলেন। আপনি তা এখন আমারই কাগজপত্রগুলাে যেগুলাে আমার নতুন নাগরিকতসুনিশ্চিৎ করছিল। এখন থেকে আনার কোটের হাতা দুটোতে আমি দেখলাম আমাকে দেওয়া সব নথিপত্র গুলো থাকবে দুটো সজাগ পাহারাদার প্যান্থার, সােনালী এক ত্রিভুজের ওপরের দিকে ওৎপাতা তবস্থায়; এটা অবশ্যই স্পষ্টতঃ এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে যে, ইওরােপীয়দের কাছে, আমার নতুন দেশের সবচেয়ে খ্যাতনামা প্রতিনিধি হলেন নাইটদের দলের সবথেকে বাস্তববাদী প্রিন্স কাদেশ।
কিন্তু এটাই সব নয়, কনসাল তাঁর কথা চালিয়ে গেলেন, এমন এক ভঙ্গিতে যার া মাত্রা ও ছন্দ হঠাৎ পাল্টে গেল।এই শেষের বছরগুলােতে আমি আমার বিদেশ মহককে আপনার কাজকর্মের ব্যাপারটা সুম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করেছি,” তিনি ধীরেসুস্থে বলে চললেন, সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ, ব্যবসা বাণিজ্যের বৃদ্ধি, উৎপন্ন দ্রব্যের লাভজনক আমদানি-রফতানি ইত্যাদি-ইত্যাদি। আপনার দেশ হওয়ার আগে আমার দেশের জন্য আপনি যা যা করেছেন সে সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ সচেতন। ঐ বােকাটা (তিনি আঙুল দিয়ে রাষ্ট্রদূতের আরামকেদারাটা দেখান)কোন কাজের ছিল না আদৌ। এবং বিদেশ মকও সেটা জানে। সে কারণে (গলার স্বর নামিয়ে), ওর জায়গাতে এখানে স্দেশবাসী, তিনি বললেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার হাতে তুলে দিলেন আপনাকে আমার দেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হচ্ছে। বখন আমি প্রতিবাদ করতে গেলাম, কনসাল আমায় বললেন যে তাঁর দেশে – আমাদের দেশের”- রাষ্ট্রদূতের পদ সাধারণতঃ পেশাদার কুটনীতিজ্ঞকে দেওয়া হয় না, কিন্তু চমংকার মেধাযুক্ত বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিদের দেওয়া হয় : লেখক, অর্থবিনিয়ােগকারী, গােটা বিশ্বে পরিচিত এমন কেউ, সাংবাদিক। এছাড়াও, এটা এক আমেরিকান ঐতিহ্য যে উপমহাদেশের অন্য কোন দেশের কাউকে কুটনৈতিক ও শিক্ষা সান্ত পদুলােতে করানো হয়। মধ্য আমেরিকাতে কোন দেশে কুবান মন্ত্রীরা আছেন;এক ভেনিজুয়েলান, আন্দ্রে বেলাে, চিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ছিলেন। আমার মনে আছে…” আমি সম্ভাব্য তালিকা কেটে হেঁটে দিই : “কিন্তু তারা কখনােই আমাকে স্বীকৃতি দেবে না।” | “মাবিলান আমাদের দেশের সাথে ভালাে সম্পর্ক বজায় রাখতে এত আগ্রহী যে এখন। সে ১৫০ লক্ষ ডলার নিংড়ে আদায় করে নিতে চায় এই জোটবন্ধনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে, এমন কি সে এখন জ্যাক দ্য রিপারকেও৬৫ স্বীকৃতি দিয়ে দেবে।” (অট্টহাসি।)। “কিন্তু রাষ্ট্রদূত, বা তাঁর স্ত্রী ?” “রাষ্ট্রদূতকে প্রকৃতপক্ষে ফেরত পাঠানাে হবে, এবং গােথেনবার্গে নিতান্তই সাধারণ। কনসাল অফিসার হিসেবে বদলি করে দেওয়া হবে। আর তাঁর স্ত্রীর ক্ষেত্রে, যতদিন না তাঁর অসুবিধা হয়, এখানে থাকতে পারেন দূতাবাসের সচিব হিসেবে।”| দেরি না করেই স্বীকৃতি মঞ্জুর হল। এবং সামনের মঙ্গলবার শরণার্থী জেনারেল মাবিলানের সামনে তার নথি ও কাগজপত্র দাখিল করতে গেল। এটা ছিল শেষ দিন যে তার দরজাতে রক্ষী মােতায়েন ছিল, এবং তারা তার দিকে তাদের অস্ত্রগুলাে তুলে ধরল। রাষ্ট্রদূতের ফ্রক কোট তার গায়ে সুন্দর মানিয়ে গেল। কিন্তু টপহ্যাটটার চামড়ার ফিতের ভেতরে কাগজ পুরে সামাল দিতে হল এবং মাখন-রঙা দস্তানাগুলাে তার বাম হাতে ধরা থাকল একগােছা অ্যাসপারাগাসের মত, কারণ সেগুলাে খুবই টাইট হয়েছিল। সব কিছু চমৎকারভাবেই চলছিল : বিদেশ মন্ত্রকের মােটর গাড়ি, কুটনৈতিক বাহিনীর ভাইস মার্শালের সঙ্গে প্রথামাফিক সংলাপ, যিনি নতুন রাষ্ট্রদূতদের সবার সাথে পরিচিত করান। দিনটা ছিল মঙ্গলবারা। মঙ্গলবার, মঙ্গলবার, মঙ্গলবার। মঙ্গলবার, ২৮শে জুন। জুনের ২৮ তারিখ! এমন এক মাস যার নাম সৈকতগুলাে ও ফাঁকা। খােলামেলা জায়গাগুলােতে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকল … ভাইস-মার্শালের সঙ্গে, প্রাক্তন শরণার্থী মিরামােন্তেসের প্রাসাদে পৌঁছােল। যখন সার্জেন্ট রেতন কাতর ও আন্তরিক দৃষ্টিতে তার দিকে চোখের ইশারা করল, সে কোনরকম সাড়া দিল না। সামরিক সম্মান ও অভিবাদনে তাকে অভ্যর্থনা জানানাে হল। এবং সে জেনারেল মাবিলানের অফিসে ঢুকল। সেখানেও গভীর হৃদ্যতার সঙ্গে তাকে অভিনন্দিত করা হল, এবং জেনারেল তার নথিপত্রগুলাে প্রহসনভরা আনন্দে পরীক্ষা করছিলেন, যে কাগজপত্রগুলাে সব দেশ ও সবরকম ক্ষেত্রে প্রায় একইরকম ভাবে স্তুপাকৃতি হয়ে পড়েছিল। তারপর তিনি সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্য রাখলেন যাতে দু দেশের সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা ছিল, এবং এ সম্পর্কের ভালাে দিক যেটা তা তৈরি হবে তাদের বর্তমান পারস্পরিক বােঝাপড়ার মধ্যে যা দাঁড়িয়ে আছে উভয় দেশেরই সমৃদ্ধির এক সন্ধিক্ষণের মুখে; অতীতের গৌরবগাথা, দেশগুলাের পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ ব এবং এমন কি আসন্ন ভবিষ্যতে আরাে শক্তিশালী সাতটার সম্পর্ক, এবং এই ক্ষেত্রে আরাে বেশি কিছু। নতুন রাষ্ট্রপতি এক রকম ভঙ্গিতে, ভাষাতেই জবাধী বৃতা দিলেন, উদ্লেখ করলেন “সমৃদ্ধি … বন্ধুত্ব… সমঝোতা… ভাতৃত্ব… আমাদের আমেরিকা… ভবিষ্যতের মহাদেশ… নতুন জগতের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীযুক্ত, ‘সরকারগুলোর একমূখী প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে যুগযুগান্তের আদর্শগত বিরোধগুলোর সমাধান, ” এবং যা কিছু এখানে কেউ শােনে একইরকম কোন অনুষ্ঠানে সেগুলােই বলে। দু গ্লাস শ্যাম্পেন আনা হয়েছিল, উভয় দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে পান করা হবে বলে। এবং সমবেত এক হাততালির সময়ে জেনারেল নতুন রাষ্ট্রদূতের কানের কাছে ফিসফিস করে উঠলেন:
“আমি আলােকচিত্রীদের ডাকি নি। এটা অস্বাভাবিক দেখাতাে। সংবাদপত্রে ছাপানাের জন্য আমি একটা চিরকুট পাঠাবাে, যেটা গৃহীত হবে শরণার্থীদের সাথে তােমার নামের মিল উল্লেখ করতে।” আমি বুঝতে পেরেছি, জেনারেল।” এবং গলা এমন কি আরাে নামিয়ে, জেনারেল বলে উঠলেন : “রিকার্দো, তুমি একটি পাক্কা শুয়োরের বাচ্চা।” “এবং জেনারেল, আপনার ঐ সমস্ত অভিজাত, সংস্কৃতিমনা ইওরােপীয় রমনীদের কি হবে, যাদের নিজেদের হয়ে বলার মতাে অনেক কিছু আছে, ?” “ঐ সব বাজে জিনিস এখন মাথা থেকে হঠাও।”কুটনৈতিক বাহিনীর ভাইস মার্শাল উঠে এলেন এবং ইঙ্গিতে জানালেন যে সাক্ষাৎকার শেষ হল। নতুন রাষ্ট্রদূত পিছনের দিকে হেঁটে দরজা পর্যন্ত গেলেন, প্রতিটি পদক্ষেপেই মাথা নুইয়ে অভিবাদন করতে করতে। যখন তিনি বাইরে এলেন, পর্দাগুলাে টেনে সরালেন, সেগুলাের মধ্য দিয়ে মাথা ঢােকালেন এবং বললেন : “বিদায় ফেলিপে। | রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুস্বাদু সব খাবার ও মদ সাজিয়ে। আমার খুব প্রিয় কোরিয়ান শসার কাসুন্দি প্রচুর পরিমানে ছিল, আমের চাটনি যা কিছু ডিশে স্বাদ-গন্ধ বাড়ায় সেটারও অভাব ছিল না, এবং ফরাসী হালকা মুচমুচে ফ্রাই যা ব্রাজিলীয় আখের রস থেকে তৈরি পানীয়ের সঙ্গে চমৎকার জমে। আহত সেই ডােনাল্ড ডাকের পুতুলটা সরিয়ে তার বদলে রেখে দেওয়া হয়েছে অক্ষত নতুন আরেকটা। কিন্তু তার আকারটা আমার মনের সাথে যুক্ত অমরত্বের ধারনার সাথে আর সম্পর্কযুক্ত নয় আগের মত, এমন কি গােমেজ ভাইয়েদের হার্ডওয়ারের দোকানে এডিসন বাল্বগুলো আর জাগিয়ে তুলতো না। মেনলাে পার্কের স্মৃতি যেন সেগুলাে মাত্রই গতকালের ঘটনা। ক্যালেন্ডার পেকে সমস্ত পুরনাে পাতাগুলাে ছিড়ে ফেললাম, শুধু মঙ্গলবার, ২৮শে জুনে পাতটি ছাড়া। ভালাে সময় শুরু হতে চলেছে, এবং যখন, বেশ কয়েকবার ঢক্ ঢক্ করে আখের রস থেকে তৈরী পানীয় গিলে নেওয়ার পর একটু নেশার ঘাের লাগা চোখে, আমরা খাবার ঘরের দিকে এগােলাম, লাতিন গানটার সুরে ডূবে যেতে যেতে | দুম এসে রেক্স ইন আবিতু সুও, নার্সস মেয়া দেদিৎ ওদোরেম সুয়াভিতাস। | রেডিওতে লুই আংয়ের ট্রাম্পেট আওয়াজের সাথে সাথে, পরের দিন, আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হল যে এটা হল বুধবার, এবং বুধবারেরও যে নিজস্ব নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা গুলো থাকতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পরে দিনগুলাে ও তাদের নামগুলো আবার একবার তাদের নিজের নিজের জায়গাতে বসে গেল মানুষের প্রতি নির্দারিত সময়ের কিছুক্ষণের মধ্যে। এবং কাজকর্ম শুরু হল এবং দিনগুলাে এগিয়ে চলল।
★★★
মূল গল্পঃ “এল দেরেচো দে আসিলো”
ইংরেজি অনুবাদ গল্পের নামঃ “রাইট অফ স্যাংচুয়ারি“
স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেনঃ
ফ্রানসেস পারট্রিজ
★★★