৬ষ্ঠ পর্ব
ছবিঃগৌতম মাহাতো
নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার
আলেহো কার্পেন্তিয়ের
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : শৈবাল কুমার নন্দ
জাতীয় শােকের দিনগুলাে, বছরে ছটা; ঐ অনুষ্ঠানগুলাে বক্তৃতাসহ মােটামুটি ঘন্টা চারেক ধরে চলে। (আমি একটা গুজব ভাসিয়ে দিয়েছি যে আমার লিভারের অসুখ, যাতে এ সমস্ত অনুষ্ঠানগুলােতে আমাকে আমার স্বামীর সঙ্গ না দিতে হয়।) মিরামােন্তেস প্রাসাদে নতুন বছরকে স্বাগত জানানাের অনুষ্ঠান, কমবেশি পাঁচঘন্টা, সেনা দিবস, আট ঘন্টা, কারণ মিছিল ফিরে আসার পরপরই মিলিটারী ক্লাবে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন থাকে। এছাড়া যোগ করা যাক বিভিন্ন উৎসব, রানীর অভিষেক সমেত এবং কূটনৈতিক নানা অনুষ্ঠান, যেগুলাের অল্প কটাতে মুখ দেখানাের জন্য আমাকে হাজির হতে হয়। কিন্তু আমরা নিজেদের পেছন ফিরিয়ে রাখি যখন বিখ্যাত মানুষদের মূর্তিগুলাের আবরণ উন্মোচন হয় – এবং ভগবান জানেন এ দেশে তারা সংখ্যায় অনেক। এবং সেখানেই শেষ নয় আদৌ : মহামান্য পোপের দূতের আগমন উপলক্ষ্যে স্বাগতানুষ্ঠান; একটি বাড়িতে নাম লেখা বোর্ড লাগানো যেখানে গত শতকের এক মহান শিক্ষাবিদ জন্মেছিলেন, এবং বিভিন্ন জেটি, জলাধার, সেতু ইত্যাদি ইত্যাদির উদ্বোধন।”
এই সময়েই রাষ্ট্রদূত পৌঁছলেন, ঘামতে ঘামতে ও হাঁসফাঁস করতে করতে, তাঁর মাড় দেওয়া কোটের কলার কুঁচকে গেছে, গনগনে রােদের মধ্যে খােলা মঞ্চে বসে গরম ও অস্বস্তি হওয়ার অভিযোগ জানাতে জানাতে।
” উত্তর আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত দপ্তরের অবশ্যই আমাদের মােটরচালিত ইউনিটগুলােকে ঢেলে সাজানাে উচিৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে।” যাইহােক, স্থলবাহিনী ক্লান্তিকর ধূলোর রাশিই শুধু সৃষ্টি করেছে রাজহাঁসের মত পায়ে এভাবে কুচকাওয়াজের প্রতি এই নতুন বাতিকের জন্য।
৬
যে কোন দিন
একজন রাজনৈতিক পলাতককে নির্বিন্ন আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি বিষয়ক কূটনৈতিক আধিকারিকদের উপর আরোপিত শর্তগুলোকে রাষ্ট্রদূত যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতেন (১৯২৮ এর প্যান আমেরিকান সম্মেলনে গৃহীত সমঝােতাপত্রের ধারা ২, অনুচ্ছেদ ২), যেটা অনুযায়ী “নির্বিঘ্ন আশ্রয় মঞ্জুর করার ঠিক পরেই, কুটনৈতিক প্রতিনিধি অবশ্যই পলাতকের নিজের দেশের বিদেশ দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করবে”, এবং এইসব নির্দেশগুলাে সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রদূত মেনে চলেছিলেন। ফলে, স্থায়ী বেনেটধারী দুজন সৈন্য সবসময় দুতাবাসের সামনে পাহারাতে মােতায়েন থাকত, যে অল্প কজন আবেদনকারীর কনসুলেটের অফিসে দরকারী কাজ থাকত, তারা যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ত। এটা বুঝিয়ে দেয় কেন ঐ সকালের অবিরাম গুলিবর্ষন যেন মনে হয়েছিল তোমার পাকস্থলিতেই আঘাত করেছিল। তােমার কাছ থেকে মাত্র কয়েকফুট দূরেই, রাস্তাতে খেলনার দোকানটা ও অঘটনপটীয়সী কুমারী মাতার গির্জার মাঝে – যেটার খুব কাছেই পড়েছিল গুলিবিদ্ধ দেহগুলাে – পুলিশ তখনাে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল সেই ছাত্রদের ওপর যারা জেনারেল মাবিলানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল কারণ তিনি চেষ্টা করছিলেন সংবিধান এমনভাবে সংশােধন করতে যাতে আরাে আটবছর ক্ষমতায় থাকতে পারেন, জাতীয় গণভােটের দ্বারা পুননির্বাচনের সম্ভাবনা সমেত। আমার খুব হচ্ছে হচ্ছিল ঐ ছাত্রদের সাথে সামিল হতে, যারা চিৎকার করছে, লােহা, স্ক্রু ও পাথরের টুকরাে ছুঁড়ছে পুলিশের দিকে, অশ্বারােহী পুলিশদের টেনে সরিয়ে ফেলছে তাদের ঘােড়াগুলাের ওপর থেকে। কিন্তু আমার ঘরের দরজাতে পাহারায় থাকা পুলিশ দুজন যাদের কাছে আমি এক চিহ্নিত ব্যক্তি এবং কোন কিছু করতে পারতাম না। এছাড়াও যেটা ছিল, আমার খুঁটিনাটি ধারণা ছিল এ ধরণের দমনমূলক ব্যবস্থাগুলাে সম্পর্কে যা বিশেষ বর্বরতার সঙ্গে প্রযুক্ত হবে গ্রেফতার হওয়া প্রথম ছাত্রদলটার উপর; জেলখানাগুলাে এমন ভাবে ভর্তি হয়ে গেছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে সদ্য বন্দী হওয়াদের অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্য হয়েছিল জেলের বদলে কাছাকাছি হােটেলগুলােতে ঠাই পাওয়ার; লাঞ্ছনা ও ইতিমধ্যেই শুরু হওয়া নির্যাতনের চমৎকার সব রূপগুলোর যেগুলােতে গেস্টাপো ও আমেরিকান এফ বি আই এর এজেন্টরা ভালোমতই রপ্ত; পুরোনো মােটর গাড়ির টায়ারের ওপর একটানা বারাে ঘন্টা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্টকর পরীক্ষা। কিন্তু এখন এরই মধ্যে সমস্ত ধরণের বিচিত্র বিকৃতকামী মানুষেরা আবির্ভূত হল প্রেক্ষাপটে: স্যাডিস্টের দল, বৈধ ধর্ষকেরা এবং সবধরণের লম্পটের দল, সবই “দ্য স্প্যারো-হক” এর নির্দেশ অনুযায়ী, একজন লােক এল যাব বুড়াে আঙুল ও তর্জনীর নখগুলাে এতটাই লম্বা ও শক্ত যে সে অনায়াসেই সেগুলাে কোন মানুষের গলাতে চট করে ঢুকিয়ে দিতে পারে, গলা কেটে ফেলার ভয়ংকর একটা আবহ তৈরি করে। তাও তাে ব্যভিচারের চক্রান্তকারী ও সাদা চামড়ার ক্রীতদাসদের কথা বলা হয় নি, যারা এখন সমস্ত রকম অনুমতি ও উপযুক্ত কাগজপত্রাদির অধিকারী হয়েছে যাতে তারা সব সময় নিজেদের প্রমান করতে পারে সরকারের রাজনৈতিক পুলিশ বাহিনীর এজেন্ট হিসেবে।
তুমি প্রেমে পড়েছো, এবং তুমি নিজেকেই এই প্রেমে পড়ার জন্য গালাগালি দাও যেন এটা ছিল এক দোষ বা এক অপরাধ। যারা এরকমভাবে রাস্তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে তারা সবাই যেন আমার চেনা – যদিও তারা এক নতুন প্রজন্মের তাদের প্রতি যারা দর্শনের বিশাল বাস্তবতাকে ভেদ করেছিল, তােমার হাতে হাত রেখে, খুব বেশিদিন আগে নয়। তাদেরই কেউ মজা করে বলত : “গােটা পৃথিবী চালিত হয় দুটো যান্ত্রিক কৌশলের দ্বারা : যৌনতা আর লাভ।” সেই একইজনেরা অবাক হত কারণ কোন কোন বাস্তববাদী দার্শনিকেরা প্রাক-সক্রেটিসীয় বইগুলােতে এত গুরুত্ব দিত যেগুলাে এত সংক্ষিপ্ত ছিল যে তাদের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছিল এক পরিস্কার চিন্তাধারা দিয়ে যা তাদের কাছ থেকেই উৎকলিত… আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম :।
ক্রমশ…