গৌ ত ম ম ণ্ড ল-র ছোটগল্প “চাচীর দেশ”

পরিচিতিঃ ১৯৮৩ এর ১৫ই জুন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ বড়রাক্ষসখালিতে জন্ম। জল জঙ্গলে বড় হয়ে ওঠা। বর্তমানে দক্ষিণ২৪ পরগণার কাকদ্বীপের একটি বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। কবিতার নিয়মিত লেখক নয়।বাইফোকালিজম্-র পাতায় আজ তাঁর ছোটগল্প চাচীর দেশ

 

গৌ ত ম   ম ণ্ড ল-র ছোটগল্প

চাচীর দেশ

এক

হ্যাঁ রে বাপ, তুই আমাকে কী একটা দিবি বলছিলি!
হ্যাঁ দেবো তো চাচী।
কবে দিবি বাপ, আমি মরে গেলে?
ছিঃ ছিঃ, এসব কী বলছ, চাচী?  মরতে যাবে কেন? আমি আজই…
মুখের কথা শেষ করতে দেয়না।
তোরা আছিস বলেই না কোনরকমে বেঁচেবর্তে আছি বাপ।
এসব কী বলছ চাচী,  তোমার কষ্ট কি আমি জানিনা?  পারছি কোথায় তেমন ভাবে তোমার পাশে দাঁড়াতে!
তোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক বাপ। বেঁচে থাক সোনা।
কিছু খেয়েছ  চাচী?
না রে বাপ,  আমার খাওয়া আর হোল কই? সক্কাল থেকে এ পাড়া ও পাড়া করছি। কত ঘর মেগে মুগে এই ক’টা চাল।
দাঁড়াও দাঁড়াও। হাতে মুখে জল দাও। একটু খেয়ে নাও আমার সংগে।
গিন্নিকে বলি, ” আর একটা থালায় খাবার বাড়বে গো।”
মেঝেতে পাশাপাশি বসি আমি, ছেলে আর চাচী। খালি পায়ে সকাল থেকে কত হেঁটেছে। আগেরবার সময় পাইনি বলে এক জোড়া জুতো কিনে দিতে পারিনি। পা দুটো ফেটে চৌচির। রক্ত বেরোতো,  নেই বলে মনে হয় বেরোয়নি।
চাচী, তুমি আবার কখন আসবে? আমি তোমার শোয়েটার আর জুতো এবার কিনে রাখবো।
তোকে বল্লুম বাপু, পুরোনো কিছু থাকলে দিয়ে দে আমাকে। আমার আবার নতুন পুরানো কিরে? পরতে পারলেই হলো।খুব ঠাণ্ডা পড়েছেরে বাপ।
খাওয়া শেষ করে তড়িঘড়ি গিন্নির দুটো পুরানো শোয়েটার আর ছেলের এক জোড়া চপ্পল গুছিয়ে দেই। তারপর স্কুলে বেরিয়ে যাই হনহনিয়ে।
পিছন থেকে শুনতে পাই, ঠিক আমার মায়ের গলা, “অত তাড়াহুড়ো কেন করছিস কেন বাপু? খেয়ে উঠে…. সাবধানে যাস সোনা..”

দুই

আলাপটা হয়েছিল একেবারে সাদামাটা ভাবে। সকালে ব্যস্ততার মধ্যে স্নানে যাবো বলে গায়ে তেল মাখছি। হঠাৎ উঠোন থেকে ভেসে এল –
মা আ আ আ রে, দুটো ভিক দে মা
বেরিয়ে এলুম উঠোনে। সাদা থান কাপড় পরা বেঁটে খাটো চেহারার একটা বুড়ি।খালি পা, মাথায় সাদা চুল, এলোমেলো।
কোথা থেকে আসছ তুমি?
ওই তো, মোল্লা পাড়া থেকে। ও বাবা ওই যে খবর হয়েচিল, ভুলে গেছিস?
কী খবর বলো তো?
ওই যে উত্তর পোদেশে কাজ করতে গে মরে গেল একটা ছেলে!
মরে গেল…?
হ্যাঁ রে বাপ, সবাই মিলে পিটিয়ে মেরে ফেল্ল না… আব্বাস রে বাপ, আব্বাস সেক…।
হ্যাঁ শুনেছিলুম মনে হয়…
আমি ওই আব্বাসের মা রে বাপ।
ওওওওওও…..
মনটা খারাপ হয়ে গেল। মানুষ কী না করতে পারে! জংলি জন্তুরা প্রয়োজনে হত্যা করে, মানুষ প্রয়োজন টয়োজন মানেনা। হত্যা করবে বলেই হত্যা করে বসে। সকালবেলা মনটা বিষিয়ে উঠল একেবারে। কেমন একটা টানাপোড়ন যেন শুরু হয়ে গেল।

“চাচী, চাল দেবার তো এখন কেউ নেই, ১০ টা টাকা দিলে হবে?”
“দে বাপ। যে যা দেয় তাই তো নিই।”

১০ টাকার একটা কয়েন দিলাম হাতে।
বুড়ি চলে গেল।  আমি তাকিয়ে থাকলাম ওর যাওয়ার দিকে।
ক’দিন পর এক বিকেলবেলা বুড়ি আবার এল। সেই সাদা থান কাপড়। আলুথালু চুল।খালি পা। আমি তখন সবে গিন্নির সাজিয়ে দেওয়া পরিপাটি ফলাহারে উদ্যত হয়েছি। বুড়িকে দেখে চিনতে অসুবিধে হলোনা। বল্লুম “চাচী, ভিতরে এস।” বলেই আর একটা প্লেট নিয়ে আমার প্লেট থেকে সবরকম ফল একটা দুটো করে নিয়ে সাজাচ্ছি।
না রে বাপ, আমাকে কী দিবি দে বাপ, চলে যাই।
জানি চাচী, তোমার বসার ফুরসত নেই। তবু একবার আমার ঘরটায় একটু বসে কিছু মুখে দিয়ে যাও। আগেরবার তো…
কথা শেষ করতে দিলনা।
নারে বাপ, সেসব না। আমার আবার কী কাজ! ভিক্ষে করি। লোকে দয়া করলে হয়,  নয়তো… আসলে আমাকে ঘরে ঢুকতে নেই। ও বাপ, আমি মোল্লাঘরের লোক রে বাপ, তোকে সেদিন বল্লুম যে, ভুলে গেছিস?
না চাচী ভুলবো কেন? তুমি ভিতরে এস। আমি আসতে বলছি তো।
কত কুন্ঠাভরে বুড়ি শেষমেশ ভিতরে এল। কিছুতেই চেয়ারে বসতে চায়না। প্রায় জোর করেই বসালুম। মুখের সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিলুম। বুড়ির চোখে জল।
খাও চাচী।
আমার আব্বাস একবার খেজুর এনে ধুয়ে থালায় করে খেতে দিয়েছিল। যত বলি ওরে আমার ফল খেয়ে কী হবে, তোরা খা, তোদের তাকত দরকার এখন…শুনবে কেন! জোরজবরদস্তি করে খাইয়েই ছাড়ল। ওই শেষ আসা… আর আসেনি বেচারা..
চাচী, খেয়ে নাও।
বুড়ি চুপ করে গেল। কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছল। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। প্লেটে হাত লাগাল বুড়ি।
চাচী, তোমার আর কেউ….
ছিল বাপ। আমার একটা মেয়ে ছিল। সাধ করে তার আব্বা নাম রেখেছিল কোহিনুর। তোর চাচা মরার সময় বলেছিল, “তোমার কোহিনুর আছে, তোমাকে দেখবে। ”
আব্বাস চলে যাওয়ার পর কোহিনুরই দেখতো আমাকে। এখন সেও নেই রে বাপ। তবে কি জানিস বাপ, সে বেঁচে আছে, আব্বাসের মতো… আবার কেঁদে ফেল্ল বুড়ি। আমার আর এগোতে মন চাইলনা। আমি বোধহয়, ক্ষতটা খুঁচিয়ে বুড়িকে আরো রক্তাক্ত করছি। কিন্ত বুড়ি নিজেই এগোতে থাকল, যেন কৃষ্ণ গহ্বর থেকে টেনে আনছে মূল্যবান কোহিনুরকে।

কোহিনুরের মাথায় ভুত চেপেছিল। পোদ পাড়ার অনিল মুণ্ডলের ছেলের সংগে ভালবাসা করে নিকা করে ফেলেছিল। ব্যাস, নিকা করে ঘরে ফিরতেই হিঁদু মুসলিম দু পাড়ার লোকেরা কী কাণ্ডটা না করল। জানিস বাপ, সেই রাতে মেয়েটা তার বরকে নিয়ে আমার কুঁড়ে ঘরের পিছনের জানলা ভেঙে যে কোথায় চলে গেল, আজ অব্দি আর খোঁজ নেই।

স্তব্ধতা কখনো কখনো মুখর হয়ে উঠে। বুড়িকে ৫০ টা টাকা দিলাম। নিঃশব্দে উঠে গেল বুড়ি। আমার  মাথার ভিতর তখন কতগুলো হিজিবিজি পোকা সশব্দে কামড়াচ্ছিল, অস্থির হয়ে উঠছিলাম আমি।

তিন

বিকেলে ফিরেই দেখি চাচী উঠোনে উবু হয়ে বসে আছে। হাতে একটা ভাঁজ খেয়ে যাওয়া ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড।
ও বাপ, তোর জন্যে বসে আছি অনেকক্ষণ।
আচ্ছা, তুমি কিছু খেয়েছো চাচী?
হ্যাঁ রে সোনা। তোর বাড়ীতে তো কেউ নেই। ওই অপি আমাকে বিস্কুট খেতে দিয়েছে।
বুঝলাম। কাজের বৌদি ওকে বিস্কুট দিয়েছে। বাড়িতে যে কেউ থাকবেনা সেটা আমার অজানা নয়। গিন্নি আর ছেলে দেশ বাড়ি গেছে আজই সকালে।
তাড়াতাড়ি পোশাক ছেড়ে একটা মাদুর নিয়ে বসলাম উঠোনে। চাচীকেও মাদুরে বসালাম।
বলো চাচী, কী হয়েছে?
দ্যাখ তো বাপু এটা।
এটা তো ভোটার কার্ড।
হুম, বলছি, কী সব নাকি হচ্ছে। মোল্লারা ঠিকঠাক কাগজ দেখাতে না পারলে দেশে থাকতে পারবেনা?
বুঝলাম, এন আর সি’ র কথা বলছে বুড়ি। বল্লুম-
চাচী, সে তো শুধু মোল্লাদের নয়, সবার জন্যই।
না রে বাপ, এটা তো হিঁদুদের দেশ। দেখলিনা আমার আব্বাসকে কেমন…
একটু চুপ করে যাই। চাচীও থেমে যায়।
আচ্ছা চাচী, তুমি তো ভোট দাও?
ভোটের কাগজ আছে, কিন্তু দেইনা বাপ।
এটা কিন্তু ভারী অন্যায় চাচী। ভোট কেন দাওনা?
দিতে তো যাই। রাস্তায় ফারুক, মোতালেবরা বলে দেয়,  “চাচী তোমার ভোট আমরা দিয়ে দিয়েছি, তুমি ফিরে যাও।”
ওহহ!
ওরা কারা চাচী?
ওরা আগে দা হাতুড়ি করত, এখন ফুল।
কোনদিনই ভোট দাওনি চাচী?
না বাপ, ওরাই দিয়ে দেয়।
কিন্তু তোমার তো কাগজ আছে?
হাঁ রে বাপ, আমি তো সেকথাই বলছি। লাগরিক নইলে কি ভোটের কাগজ থাকে? অন্য দেশের লোক কি এদেশে ভোট দিতে পারে? বল বাপ?
চাচীর এরকম মোক্ষম প্রশ্নে একটু হতচকিত হলুম।
আচ্ছ  চাচী, ওই মোতালেবরা কী বলছে?
বলছে, ৫০ বছর আগের কাগজ জোগাড় করতে হবে। নইলে দেশ থেকে চলে যেতে হবে। আমার তো দেশ নেই বাপ, আমাকে নাকি কোথায় একটা থাকতে হবে, ওই কয়েদখানার মতো কি একটা।
বুঝলাম ডিটেনশন ক্যাম্পের কথা বলছে।
চাচী, চাচার কোনো কাগজ নেই?
না বাপ, আগের বার ঝড়ে ঘর পড়ে গেছিল। ওসব যদি ছিল তো মাটির তলায় গ্যাছে।
চাচী, তুমি তো এই দেশেরই বাসিন্দা। অত চিন্তা করোনা।
হ্যাঁ রে বাপ, আমার দেশ তো ওই মোল্লাপাড়া।লোকে জহরপুর বলে। ওইটাই আমার দেশ।

কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। একটা স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা গ্রাস করছিল।

দেশ মানে কি জমি? নাকি মানুষ? কে কাঁটাতার দিতে বলেছে? দেশের লোক? কাঁটাতার দিয়ে কার লাভ?  আমার? চাচীর? কই না তো। অথচ, এই মাটি এখন আমার, সেই প্রমাণ জোগাড় করতে হবে আমাকে। প্রমাণ কি গাছে ফল যে চাইলেই পাওয়া যায়?

ওওও বাপ, শোন না।
ও হ্যাঁ, বলো চাচী।
তুই তো হিঁদু।
ইয়ে মানে…
তুই তো কত জায়গায় যাস।
হ্যাঁ চাচী, মানে…
আমার তো এই বয়েস, ভিক্ষে করে খাই।
সে তো…
এই বয়সে কোথায় যাবো বল বাবা। তুই কাউকে ক’য়ে বলে তোদের দেশে একটু থাকার বন্দোবস্ত করে দে না সোনা। ক’দিন আর বাঁচবো বল বাপ।

কী বলা উচিত জানিনা। এ দেশ কার আমিও জানিনা। কে থাকতে পারে, কে পারেনা, সেও কি আমি জানি! শুনছি আসামে ডিটেনসন ক্যাম্পে হিন্দু মুসলিম সব আছে। কাদের তাড়াতে চায় এরা? তাড়া খেয়ে কোথায় বা যাবে মানুষগুলো?
ক’দিন আগে সন্দীপদা বলছিল, সব দাস তৈরির কৌশল, সব কিছুর মূলে লাভ ক্ষতি।
চাচী উঠে গেল। আমি তাকিয়ে আছি। কেমন একটা ঘোর। মনে পড়ল, চাচীকে আজ কিছু দেওয়া হয়নি। চাচীরও হয়ত এখন ভিক্ষে নয়, ভাত নয়, রুটি নয়, আগে একটা দেশ চাই।

কী হয়, দেশ নিয়ে? জানিনা। দেশ খেলে কি ক্ষিদে মেটে? তাহলে চেঁচিয়ে চাচীকে বলতাম – দেশ চিবিয়ে খাও।

মনে পড়ল, আমার বন্ধু দীপংকর একবার বলেছিল, দেশ খাওয়া যায় কিন্তু তা চিবিয়ে খাওয়ার দাঁত সবার থাকেনা।

উঠে একটা সিগারেট ধরালুম।

চার

বেশ কিছুদিন চাচী আর আসেনা। আমি একটু বিচলিত বোধ করি। বুড়ি মানুষ। মরে টরে গেলনা তো! গেলেই বা কী! আমাকে কেউ বাড়ি বয়ে খবর দিয়ে বা কেন যাবে? এদিকে নতুন কিছু খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। জহরপুর, মল্লিকপাড়া, মোল্লাপাড়া, কলোনীপাড়ার দিক থেকে বাতাস আসে। বাতাসে আঁশটে গন্ধ। সবাই ফিসফিস করে, দাংগা লেগেছে। মানুষ খুন হচ্ছে। ঘরবাড়ি পুড়ছে। চাচীর বাড়ি মোল্লাপাড়ায়। একটা অজানা আতংকে বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করে ওঠে। কারুর কাছেই কোনো খবর নেই ঠিকঠাক। কিছু একটা হচ্ছে, সবাই জানে। কেউ বলতে চায়না।
রোববারের সকালে সাংবাদিক বন্ধু মেহবুবকে ফোন করলুম।
হ্যালো।
শোন না, জহরপুর চিনিস?
হুম, চিনি। নদীর পাড়, ঘন জংগল। কেন, কাব্যি করতে যাবি নাকি, ভাই?
না না, খুব সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি আচ্ছা, ওখানে কিছু হয়েছে?
হুম, শুনছি দাংগা টাংগা হচ্ছে। খুনখারাপি, রেপ টেপও হচ্ছে। বাইরের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেনা পুলিস। কাল তো দিলীপ…
শেষ করতে দেইনা ওকে।
আচ্ছা, চাচীর খবর…
চাচী?
ওহো, তুই জানিস না,  তুই বা কিক’রে জানবি!  ভিক্ষে করে, ওই যার ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছিল উত্তর প্রদেশে।
হ্যাঁ সে জানি, কিন্তু তার মা’কে চিনবো কিক’রে ভাই?
হুম।  কিভাবে খবর পাওয়া যায় বলতো?
এখন পাওয়া যাবেনা, অপেক্ষা কর। আচ্ছা, রাখ এখন। একটা স্টোরি কভার করতে এসেছি, পরে কথা হবে। বাই।

ঠিক করলাম নিজেই যাবো। কাউকে কিছু না বলে। দু চাকা নিয়ে বেরোলে যেতে পৌনে এক ঘন্টা লাগবে। অত সময় গাড়ি চালানোর অভ্যাস নেই। আমার আবার স্পাইনের সমস্যা। খোকন কে ফোন করে আসতে বললাম। সে সব শুনে প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলনা যেতে। অনেক বলে কয়ে আনালাম। ও থাকলে আমার সুবিধা হবে, গাড়ি ও বেশ চালায়।

জহরপুরের মুখে পুলিস ক্যাম্প। আমাদেরকে পুলিস আটকে দিল।
কী ব্যাপার, কোথায় যাবেন?
মোল্লাপাড়া যাবো।
এখন ওদিকে যাওয়া যাবেনা।
কেন?
সমস্যা আছে।
কীসের সমস্যা?
কে মশাই আপনি? আপনাকে কি কৈফিয়ত দিতে হবে?
কৈফিয়ত নয়। যেতে দেবেন না বলছেন তাই। আমার দেশ, আমি কেন যেতে পারবোনা সেটা আমি জানবোনা?
অল্পবয়সী পুলিস কনস্টেবল, একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল।
আপনি কি কোনো পার্টির…
না, আমি কোনো পার্টির লোক নই। আপনার অফিসারের সংগে দেখা করতে পারি?
কী যেন ভাবল ছেলেটি। তারপর বল্ল, আসুন আমার সংগে।
আমি আর খোকন পিছনে পিছনে গেলাম।
আমার উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামের ভিতরে যেতে না পারলেও চাচীর খবরটা অন্তত কোনোভাবে জোগাড় করা। তাও না পারলে অন্তত কাউকে চাচীর কথা বলে যাওয়া।

“হ্যাঁ বলুন।”
মুখ ফেরাতেই দেখি জাফর, আমার কলেজের বন্ধু। আমি তো যারপরনাই অবাক হয়ে গেলাম। কী বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না।
তুই এখানে? কোথায় যাবি ভাই? ওদিকে যাসনা। খুব সমস্যা। কারফ্যু আছে।
ওহহ। তা,জাফর, তুই…
আমি তো এই থানায় দু’ বছর আছি। সেকেণ্ড অফিসার। আপাতত এখানে ফাঁড়ির দায়িত্বে। ভাই ফোন নম্বর দিয়ে যা,  আমি পরে কথা বলবো। এখন প্লিজ চলে যা।
শোন না ভাই। উত্তর প্রদেশে সেই আব্বাস লিঞ্চিং এ….
উফ্, এসব এখানে বলিসনা। পরে শুনবো, এখন যা।
আমি সেসব বলছিনা। তুই দুটো মিনিট আমার কথা শোন। আমি চলে যাবো। না শুনলে আমি জোর করে ভিতরে যাবো,  তুই গুলি করলে কর…
দাঁড়া দাঁড়া। বল। একটু ছোট করে বল।
ওই আব্বাসের মা ভিক্ষা করে। আমার কাছে প্রায়ই যায়। কিন্তু ক’দিন যাচ্ছেনা। একটু খোঁজ নিয়ে আমাকে বলতে হবে,  প্লিজ জাফর।
আচ্ছা, শোন না। ওদের বাড়িটা একদম নদীর পাড়ের কাছে। ওদিকটায় ঘরদোর সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মোল্লাপাড়া, পোদপাড়া, কলোনিপাড়ার সব লোককে ইভাকুয়েট করা হয়েছে। ওই দিকটা পুরো ফাঁকা।
বলছিস কী রে!  কেউ মারা টারা…
অনেকেই। হিসেব নেই এখন।এখন হিসেব করার সময়ও নেই।
তুই কি চাচীর কোনো খবর…
আমি খোঁজ নেবো। খোঁজ নিয়ে তোকে ফোন করবো।
আচ্ছা,আসি।
গাড়ির কাছে এসে আবার পিছিয়ে গেলাম।
কী হল রে আবার?
জাফর!
বল
তুই এই ৫০০ টাকা রাখ। চাচীর দেখা পেলে একটু কিছু কিনে দিস। মনে হয় খেতে পাচ্ছেনা।
আরে শোন না।
আর কিছু না শুনে, ৫০০ টাকার একটা নোট প্রায় জোর করে জাফরের হাতে গুঁজে দিয়ে গাড়িতে উঠি। খোকন গাড়ি স্টার্ট দেয়। আমি সিগারেট ধরাই। এত খারাপ খবরের মধ্যেও একটা কীরকম তৃপ্তি মন জুড়ে এল। মনে হল টাকাটা যেন চাচীর হাতেই দিয়েছি।

পাঁচ

সময় রক্তের দাগ মুছে দেয়। চার বছর সময়টা বিস্মরণের জন্য কম কিছু নয়। সুখ দুঃখ ব্যথা বেদনা কান্না হাসি আবেগ অনুরাগ প্রেম প্রেমহীনতা সব কিছু নিয়মমাফিক আসে যায়। অন্ধকার হয়ে গেলে ভাবি সূর্য উঠল বলে, রোদ উঠলে ভাবি এই তো, গোধূলি এসে সব প্রেমময় করে দিল হয়তো।
মূর্শিদুল ফোন করেছিল। আজ আসবার কথা, আসছে ও। এলেই বেরিয়ে পড়বো। গন্তব্য জহরপুর। জহরপুর আর আগের জহরপুর নেই।  নদীর পাড়ে ঝাঁ চকচকে সব হোটেল, রিসর্ট। কত জায়গা থেকে লোকে বেড়াতে আসে। নদীর পাড়ে বসে সন্ধেবেলা। সিগারেটের ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে ওঠে। বিয়ারের বোতল থেকে বুদবুদ করে ফেনা বেরোয়। ম্যানগ্রোভ জংগলের ভিতরে ভিতরে স্বপ্নালু বিজলি বাতি। পাড়ের উপর রঙীন আলোর রোশনাই। অবাঙালী লোকেদের আনাগোনা। দামী দামী গাড়ি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বহুরঙা কৃত্রিম ফোয়ারা। সেই মোল্লাপাড়া পোদপাড়া কলোনিপাড়া সেসবের ছিঁটেফোঁটা চিহ্ন নেই। সব উধাও। ৫ কিলোমিটার দূরে একটা ডিটেনশন ক্যাম্প। সেখানে বিদেশি অনুপ্রবেশকারী দের রাখা হয়েছে। বেড়াতে যাওয়ার মোক্ষম জায়গা। টোটো  গাড়ি গুলো লোক নিয়ে সাইট সিইং দেখায়। ডিটেনশন ক্যাম্প না  দেখে কেউ ফেরেনা। বিদেশী অনুপ্রবেশকারী লোক গুলো মানুষের মতো দেখতে। তাই দেখে অনেকে অবাক হয়ে যায়।

মূর্শিদ আসা মাত্রই বেরিয়ে পড়লাম। আমি তৈরি ছিলাম। দু’চাকা এখনো আমাদের ভরসা। চাকার সংখ্যা আর বাড়েনি। আজ রাত্রে জহরপুরে থাকার প্লান নিয়েই যাচ্ছি।

হোটেল ”নেচার ভিউ’। একেবারে নদীর পাড়ে। ভাল রুম।ওয়েল ফারনিশড। এয়ার কণ্ডিশন্ড। একটু দেরি হয়েছে অবশ্য আসতে। রাস্তায় কতবার দাঁড়িয়ে চা, সিগারেট।  এটা হয়, আমরা যখন দুজন এক সংগে হই।
ফ্রেশ হয়ে নদীর পাড়ে গেলাম। কলেজের কিছু স্মৃতি, জীবনানন্দ, রবীদ্র সংগীত, বন্ধুদের প্রেম, সিগারেট খাওয়া কতকিছু এলোমেলো কথাবার্তা।
রুমে ফিরে টিভি অন করলাম। তিন বছরের মেয়ে ধর্ষিতা কাকার হাতে। প্রতিবাদ। মোমবাতি। বড় অসহিষ্ণু লাগছিল নিজেকে। মূর্শিদের দিকে চেয়ে দেখলাম হাত মুঠো হয়ে গেছে।

মূর্শিদ
বল
আমরাও একদিন বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতাম, তাই না?
হুম, একটা কম্যুনিস্ট দলের খুব দরকার ছিল রে।
তুই এখনো…
হ্যাঁ বিশ্বাস করি,বিপ্লব আসবেই।
আচ্ছা, তোর মনে আছে আমরা হিউম্যান রাইটস নিয়ে জে ইউ তে একটা ডিপ্লমা করেছিলাম?
হুম, তুই তো কম্লিট করতেই পারলিনা। ”গায়ত্রী গায়ত্রী” করে…
তুই তো কমপ্লিট করেছিস।
দরকার ছিলনা। মানবাধিকারের জন্য লড়াই করতে এসব লাগেনা।
হুম…
আমরা কোথায় সার্ভে করেছিলাম, মনে আছে তোর?
মাথা চুলকে বললাম, রেড লাইট এরিয়ায়।কালীঘাট।
হুম, তুই তিন দিন ধরে একজনের ইন্টার্ভিউ নিয়েছিলিস,মনে আছে?
হুম। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
জানি, আমরা মুভমেন্ট করেছি অনেক, কিন্তু তোর মধ্যে একটা অন্যকিছু ছিল। মানুষের কষ্টটা…

টিং টং…
কলিং বেলের আওয়াজ। উঠে দরজা খুললাম। বয়।
কী ব্যাপার?
স্যার কিছু লাগবে?
না, তেমন কিছু নয়।
মদ টদ?
না না।
স্যার…
হুম
পাখি লাগবে?
পাখি?
ভাল চিড়িয়া আছে স্যার। ঝাক্কাস!
হঠাৎ কী হল জানিনা। মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, “হুম লাগবে।”
ও.কে. স্যার। টাকার ব্যাপারটা কম্প্রোমাইজ করে নেবো। আপনারা বাইরে থেকে এসেছেন। তবু স্যার, যদি লিমিটটা বলেন…
লিমিট?
হাজার পাঁচেকের মধ্যে দেই স্যার?
আচ্ছা।
থ্যাংক ইউ স্যার।

দরজা বন্ধ করে মুখ ফেরাতেই মূর্শিদ ক্ষেপে লাল হয়ে উঠল।
শালা, বোকাচোদা, তোর এই হাল হয়েছে এখন?
না মানে…
ধুর শ্লা, আমি চলে যাচ্ছি। তুই শালা মর।
আরে…
কোনো কথা বলবিনা। শালা, ক্যারেক্টারলেস!
মূর্শিদ গর গর করতে করতে উঠে পড়ল।
“বলছি, আর একবার সার্ভে করবিনা মূর্শিদ? দেখবিনা কতটা পাল্টেছে আমার দেশ?” আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে বসে পড়ে মূর্শিদ।
“বাল পাল্টেছে! দেখছিসনা খবর?” বলেই ধপাস করে টিভিটা অফ করে দিল। সিগারেট ধরিয়ে দিলাম ওকে।

দরজা ঠেলে যে ঢুকল, তার বয়স চড়া রঙের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে।

“ইয়ে মানে, আপনারা দু’জন? আসলে এর আগে এরকম…”
কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
“আপনাদের তো আর কোনো রুম বুক নেই, না?  মানে এক সংগে দু’জন…”
একটা অস্বাভাবিক উদ্বেগ যেন গ্রাস করে ফেলেছে। বল্লাম-
আপনি বসুন প্লিজ।

ছয়

বিদ্যুতের ঝটকা খেলেও বোধ হয় এমনটা হয়না। আক্ষরিক অর্থে আমি প্রথমবার জহরপুর এসেছি। কারণ চার বছর আগে আমি যখন জহরপুর আসতে চেয়েছিলাম, আমার রাষ্ট্র আমাকে আটকে দিয়েছিল। তবে মনে মনে এর আগে আমি সহস্রবার জহরপুরে এসেছি। জহরপুর, নদীর পাড়, মোল্লাপাড়া, পোদপাড়া, কলোনীপাড়া আমি ঘুরে ফেলেছিলাম আমার মানসচক্ষে অনেকবার।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ইট ইজ দ্য এফিসিয়েন্সি র‍্যাদার দ্যান দ্য ইনএফিসিয়েন্সি অফ হিউম্যান মেমোরি দ্যাট কমপেলস মাই ওন্ডার। একদম ঠিক। আমি কিছুই ভুলিনি। বরং আমার সমস্ত স্মৃতির উপর এক স্তর ধূলো জমেছিল। মুহূর্তে সে স্তর উড়ে গেছে। আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে।
আমি কোহিনুরের সামনে বসে আছি। কোহিনুর তার অভিশপ্ত জীবনের কাহিনী শোনাচ্ছে, আর সে কাহিনী থেকে তার নিজস্ব উপলব্ধির এক দর্শন,  এক অদ্ভুত লালনগীতি ছড়িয়ে পড়ছে সারা ঘরময়। মূর্শিদ থ হয়ে আছে।
“কত বড় শহর কলকাতা,” কোহিনুর বলছিল।
“কত মানুষ! সেখানে হারিয়ে যাওয়া কি এমন! আমি আর ঝন্টু জানলা ভেঙে চোঁ দৌড় মেরেছিলাম ষ্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা।”

আমি চোখ তুলে তাকালাম, “তারপর?”

তারপর বস্তি। ঝন্টু জোগাড়ের কাজ করতো। ভারা ভেঙে ঝন্টু পড়ে গেল একদিন। মরে গেল। আমি দিশেহারা। ঝন্টুর সংগে যারা কাজ করতো তারা আমার দিকে তাকাল।

মানে?

চারটে লোক এসে ছিঁড়ে খুবলে খেল আমাকে। বস্তির নোংরার মধ্যে আমার চীৎকার হারিয়ে গেল। তারপর হাতবদল। এ হাত, সে হাত।

একটা দীর্ঘ স্তব্ধতা। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলাম শুধু। মুখ খুল্ল মূর্শিদ-
“এখানে কীভাবে…”

এন আর সি হলো। আমি নিজে এগার ক্লাস অব্দি পড়েছিলাম। ভাবলাম কোনো কাগজপত্র যদি থাকে! কিন্তু…
ততদিনে সব শেষ হয়ে গেছে। দাংগায় সব শেষ। বুড়ি মা টা মনে হয় পুড়ে মরেছিল। এখানে তখন সাজো সাজো রব। হোটেল হচ্ছে, রেঁস্তরা হচ্ছে। বার, মালখানা, কত জায়গায় কত লোক লাগছে। মালিকরা সব উদ্বাস্তু,  অনুপ্রবেশকারী,  যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, যাদের কোথাও যাবার নেই তাদের দিয়ে বেগার খাটাচ্ছে। থাকার জায়গা দিচ্ছে, দুবেলা খাবার দিচ্ছে। মেয়েদের লুফে নিচ্ছে হোটেলের মালিকরা। তাদের জন্য ঝুপড়ি বানিয়ে থাকার জায়গা করে দিচ্ছে। তার বদলে তারা গতর দিয়ে যৌবন দিয়ে মালিককে রোজকার দেবে। যেকোনোভাবে তখন এই মানুষগুলোর একটা থাকার জায়গা চাই, একটা দেশ চাই।
“দেশ…”  অস্ফুটে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।

হ্যাঁ, দেশ না থাকলে কোথায় যাবো বলুন? আমার শরীর যে গংগাজলে ধোয়া পবিত্র শরীর তেমনও নয়। বুকে পেটে উরুতে পাছায় নখের গভীর আঁচড় নিয়েই তো তখন ঘুরছি দেশহীন আমি। তাই তখন সবকিছুর বদলে একটা দেশ চাই।

“দেশ পেলে?”  মূর্শিদের স্বগতোক্তি।

হুম, পেলাম। একটা ঝুপড়ি পেলাম।বুঝলাম দেশ মানে ওই ঝুপড়ির ভিতরের জমি। আর সেই জমির মালিক কোনো নেতা নয়, দল নয় পয়সাওয়ালা একজন দু’জন লোক। আপনারা তো অনেক লেখাপড়া করেছেন। আচ্ছা, বলতে পারেন দাংগা করে কার লাভ হয়? হিঁদুর? মোল্লার? নাকি অন্য কারুর?

“রাজনৈতিক নেতাদের ”  কথাটা আমার অবচেতনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
ভুল, ভুল জানেন আপনারা। দাংগা করে লাভ না হিঁদুর হয়, না মোল্লার। আর নেতার কথা বলছেন? সে আর কী এমন লাভ করে? আসল লাভ কার জানেন?
কার?
দেখুন, আমি যে হোটেলে এখন বুকের কাপড় ফেলে দুটো লোকের সামনে বসে আছি, সেই হোটেল টা হয়েছে সেখানেই যেখানে আমাদের কুঁড়েঘর টা ছিল। দাংগা না হলে কি এই জায়গাটা একটা মালদার লোকের হাতে যেত, নাকি এখানে হোটেল হতো?
এতক্ষণে আমার হুঁশ ফেরে। আমি কাঁপতে কাঁপতে উঠে কোহিনুরের বুকের কাপড় তুলে দেই। সহস্র নখের আঁচড় যদি একটা রাত গোপন থাকে তাই বা কম কীসে!

অনেক রাত হয়েছে, কোহিনুর। তুমি ঝুপড়িতে চলে যাও।
এখনো আপনাদের সময় আছে।  আমি আপনাদের দাস আজ রাত্রে।
প্লিজ, কোহিনুর তুমি এখন এসো।
শুনুন,
হ্যাঁ–
আমার চৌদ্দপুরুষ এই দেশের বাসিন্দা।
জানি কোহিনুর। তোমার আম্মা…
আসলে পয়সাওয়ালা লোকেদের কিছু দাসের প্রয়োজন ছিল। তাই এন আর সি।
মাথা নাড়লাম।
যদি আবার আরো বেশী দাসের প্রয়োজন হয়, আবার হবে, অন্য ফিকির হবে। আপনারাও হয়তো ছাড় পাবেন না।
জানি কোহিনুর।
দরজা দিয়ে সন্তর্পনে বেরিয়ে গেল কোহিনুর।

বারান্দায় এলাম। সিগারেট ধরালাম। মূর্শিদও ধরাল। এতক্ষণ ও চুপচাপ ছিল। ধোঁয়া ছেড়ে বললাম, “কী দেখলি?”
আমার দিকে ঘন হয়ে মূর্শিদ তাকাল। যেন কত মাইল দূর থেকে কথারা হেঁটে আসছে ওর মুখে।
বল্ল,” সামনে থেকে কার্ল মার্ক্স কে দেখলাম।”

ফাঁকা শুনশান রাস্তা। দূর থেকে মাতাল জুয়াড়িদের উত্তেজক কথা ভেসে আসছিল-

সবুজ,
না, গেরুয়া
না,সবুজ
গেরুয়া
সঅঅঅঅবুউউউউজ
না আ আ আ,  গেএএএএএএ রু আআ।

বিঃদ্রঃ -“নব জিজ্ঞাসা “পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত (২০২০)

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *