অ চি ন্ত্য   মা জী-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ অচিন্ত্য মাজী।  গ্রাম- ঠাকুরডি, ব্লক- পাড়া, পোস্ট- কালুহার, জেলা- পুরুলিয়া, ৭২৩১২৬. প্রথম কবিতার বই- কোজাগরী স্থাপত্য বেরোয় ২০১৩ সালে। প্রবন্ধের বই সাম্প্রতিক কবিতার চালচিত্র(  ২০১১). শেষ কবিতার বই চন্দন কাঠের সেঁজুতি(২০১৯)। 

 

অ চি ন্ত্য   মা জী-র কবিতাগুচ্ছ

যাত্রা

ইসরো থেকে খবর এল আর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই
চন্দ্রযান মঙ্গলের মাটিতে পা রাখবে।
কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে নিবিষ্ট হয়ে দেখছ
ছাগলের কলিজার মতো সেই ছোট্ট যান
মহাস্পেস ছিঁড়ে তীব্র গতিতে উড়ে যাচ্ছে,
দূর গ্রহের আজব প্রাণীরা ছোট্ট কালো পুতুলটিকে
ছোখ ছানাবড়া করে দেখছে।
এদিক্ব সারাবিশ্ব আনন্দে ঘোর
পাতাল থেকে অন্ধ শাবকেরা লাথি মারছে
শত সহস্র হরিণীর ঘাইয়ে কেঁপে উঠছে বলিষ্ঠ পাটাতন
কোনো আজব দৃষ্টিতে তুমি জেনে গেছ
কীভাবে ভাঙতে হয় প্রসবের কাঁপ
ভূগোলের প্রচণ্ড জটা ছিঁড়ে ব্রহ্মাণ্ডের শাঁস খেতে হয়
লুকানো সমুদ্রগর্ভ থেকে কাছিমের ডিম।
চূড়ান্ত তছনছ জানো, জানো বিন্দুপতন
চূর্ণ উন্মাদ উচ্ছৃঙ্খল হাসিতে বন্ধ্যা জরায়ু জ্বলে
জ্বালাও প্রবল পাকে নৃমুণ্ডের গলিত আঠাল ধী
তুলকালাম ধ্বংসের আগে দারুহরিদ্রার দেশে পৌঁছে
অচেনা ফুলের পাশে পাখি হয়ে গান গাও
অন্ধকারে ডেকে যাও সঙ্গিনীকে

 

খেলা

 

আদ্যাভূমে ক্রীড়া করে চন্দ্রবনিতা
এইমাত্র উঠে এল সে সায়রের জলীয় স্বচ্ছতা থেকে
শোলা আর রাংতা এখনও ভিজে চুপসে
সলমাজরিতে ঝিলমিল করে সঘন চন্দ্রাংশু
সে যুবতী কী উর্বশী কী কিন্নরী বোঝা গেল না
হ্রদের বজ্রধূমে শুধু কেলি করে আর প্রখর নির্যাস ফোটায়
প্যাঁচালো মেটুলি সাপ তার উন্নত স্তনরেখা ঢাকে
মহাব্যোম দুলিয়ে সে নৃত্য করে
স্থির মুদ্রার ভেতরে অস্ফুট টালমাটাল
যেন কোনো মহীয়সী ব্যথার নেশা শতদল হয়ে ফোটে
মাটি গলে মাটি ছেনে মাটির পিণ্ড চটকে
আভূমি প্রণত সেই প্রতিমা কিরাত জীবন খোঁজে
কূটস্থ ব্রহ্মের মতো সমাহিত আর একা।
নিবাতকম্প দলমণ্ডল একে একে খুলে গেলে
সমূহ শৃঙ্খলবোধে জাগ্রত হয়ে আছে
ঈষৎ চঞ্চল ওষ্ঠদ্বয়।

 

মৃত্যুর আগে

 

মৃত্যুর আগে প্রাণীরা ভেতরের ঝাড়বাতি জ্বালায়
গন্ধ শোঁকে হিম শান্ত নিথর শমনের
কোমল রক্তকুসুম হাড়ের পাশাতে বাসা বাঁধে
বুনো রোমশ ত্বকে আদিম বেঁটে পোকা মুখ গুঁজে রয়
তারা টের পায় অদ্ভুত আঁধারের রন্ধ্রে আশ্চর্য আলোর চাঁচর
দিন শেষের পাঁশুটে হলুদ লাবণ্য উদাসীন মায়া হয়ে
রক্তের গভীরে বৈদূর্যের ধী নিয়ে দীপ্তিমান

নীরব পরকিয়া আরো দামাল হলে
নীল ঢেউ তোলা পথ জুড়ে অপার্থিব শেকড়
অবুঝ মাধ্যাকর্ষণের বেগ হড়কে নামে
প্রৌঢ়তা এলে সব নিষ্ঠুরতা ঝরে যায়

বিষণ্ণ পক্ককেশে যাতনা নয় স্নেহের দুরধিগম্য কুহক
লুলিত চামড়ার ভাঁজে তুমি তখন সুকুমার শিশু
ক্ষরপ্রভ দহনে দপ করে জ্বলে ওঠার আগে
নির্জন চোখের সুপ্তির মতো প্রশান্ত বিষাদে
বলগাহীন হয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে খুঁজে নেয় অন্তরের সারাৎসার

 

শেষদৃশ্য

 

তারপর কাঁপতে লাগলাম ঠকঠক করে
মুগ্ধ প্রেমিকের মতো সহজাত বিস্ময় আর এক অশান্ত রঙ
গলে পেঁচিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইল বিয়ারের গাঢ় ফেনা হয়ে
বোতলের নলি খুব সরু তাই তীব্র বিচ্ছুরণের জোয়ার নামে
লাল মঙ্গলগ্রহের আলো ফেনার গায়ে লাগতেই
নিঃশব্দে ভৌতিক খেল শুরু হয়
সেই শুদ্ধ সাদা ফেনা আর বুব্ধুদের ভেতর
ফ্যাকাশে কয়েকলক্ষ ডিম পেড়ে রেখে গেছে অতিজীবিত প্রাণী
তার চোখ নেই মুখ নেই কান নেই
তীক্ষ্ণ শুঁড়টিকে দেখতে পায় না মর্তের জীবেরা
আণুবীক্ষণিক যন্ত্র নিয়ে দেখলে টের পাবে
পিঙ্গল অস্থিসার কোটরে জন্ম মৃত্যু বিহীন বিষহীন প্রলাপ
প্রচণ্ড শব্দে ভোঁ ভোঁ করছে।
সেই অদৃশ্য ধ্যানের জরণে কর্ণকুহর ফেটে গিয়ে
ঈশ্বর নাম জপ করতে করতে কাঁপাতে লাগল অন্তর ও নাভিস্থল

 

 

বেপর্দা

 

কতটুকুই বা গভীর এই নাকের ফুটো
পাটার অসমান খাঁজগুলি পার হলেই তো সেই অস্বচ্ছ তল
লোমশ পরিবেষ্টনের ভেতরে নলির সরু লাল রেখা
ক্ষীণ হতে হতে দুর্ভেদ্য অন্ধকার হয়ে গেছে

নাকের পাটায় কবে আদিম পাথরের ঝলক লেগেছিল মনে নেই
শুধু অন্ধকার চোঙের ভেতরে শুকনো ঝোপের মতো
আদ্যিকালের এক অপেক্ষা চুপ করে আছে

কীটেদের পায়ের মতো সূক্ষ্ম রোমগুলিতে চাপা কুহক
উষ্ণ প্রাচীন অনুসন্ধান সেখানে খেলা করে দিনরাত
অদৃশ্যের ভেতরের রতি ভেঙে ভেঙে
তার লাজুক অবগুণ্ঠন খোলে ধীরে ধীরে

সূর্য অস্ত গেলে লাল পায়ের রেখা ধরে মিলিয়ে যায়।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *