ত্যাগীশ্বর হে নরবর ( দুই)
নি মা ই ব ন্দো পা ধ্যা য়
“আমি গ্রাস মেখে রেখেছি। তোরা সব আয়, আমার চন্দনতরুর দল, তোরা এসে বোস।বড় করে হাঁ কর, ভাল করে খা। তৃপ্তি করে ভোজন কর।”
কতবড় মানব- দরদীর আকুল ডাক!কত প্রানবন্ত!
কত বড় মানবপ্রেমী হলে এমন একজন অভিভাবকের জন্ম হয়! এমন একজন ক্ষণজন্মা
বরিষ্ঠ অবতারের আবির্ভাব হয়!
শ্রদ্ধেয় পাঠক, সত্যিই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন এ জগতের এক বিস্ময় সাধক।কিন্তু তার সাথে সাথে
তিনি যে কতবড় মানব- প্রেমী, ওপরের উদ্ধৃত কথাগুলো থেকেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়।
‘মানুষ’ সম্পর্কে তাঁর অভিমত ছিলঃ ” মানুষ কী কম গা! মাটি কাঠ খড়ের মূর্তিতে দেবতার পূজো হতে
পারে, আর রক্ত মাংস হাড়ের যে মানুষ তার পূজো হবে না?” -এ প্রশ্ন ঠাকুরের।
তিনিই বলেছেন, ” জীবে দয়া নয়, জীবে সেবা।” আরও পরিষ্কার করে শুনিয়েছেনঃ ” দয়া করার তুই কে রে? ‘দয়া’ নয়, বল ‘সেবা’।
প্রিয় পাঠক, একজন স্কুল- ছুট, অভাবে অনটনে বড় হওয়া, গ্রাম্য পরিবেশে মানুষ হওয়া, অল্প বয়সে বাবাকে হারানো, পেটের দায়ে শহরের দিকে পা বাড়ানো এক ব্রাহ্মণ- সন্তান কীভাবে এত বড় মানব- দরদী হতে পারেন! এও এক জাগতিক বিস্ময়!
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ টাকা পয়সা স্পর্শ করতেন না।এসব ধরলে তাঁর হাত বেঁকে যেত। দক্ষিণেশ্বর
কালি বাড়ির পূজারি হিসাবে তিনি যে কটা টাকা
মাস- মাহিনা পেতেন, তা রাখার দ্বায়িত্ব ছিল ভাগনে হৃদয়রামের।
স্বামী বিবেকানন্দ – তখন নরেন্দ্রনাথ, ঠাকুরের ‘ লরেন’ ছিলেন প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, সুতরাং ঘোর নাস্তিক। যুক্তিবাদী তরতাজা তরুন। তিনিও ঠাকুরকে প্রথম প্রথম
নানাভাবে পরীক্ষা করেছেন। ঠাকুরের বিছানার
তলায় টাকা লুকিয়ে রেখেছেন, ঠাকুরের অনুপস্থিতিতে। নিজের চোখে দেখতে চেয়েছেন
ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া।
বিছানায় বসেই ঠাকুর লাফিয়ে উঠেছেন। উঃ..
এতো জ্বালাপোড়া হচ্ছে কেন শরীরে? তারপর সামনে-বসা নরেনকে দেখে মুচকি হেসে সস্নেহে
বলেছেনঃ “এসব তোর কাজ তাই-না রে? বেশ
করেছিস; সব সময় সব কাজে সবকিছু বাজিয়ে
দেখে নিবি। তবে বিশ্বাস করবি। স্বামীজী মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
পরবর্তী কালে স্বামীজী তাঁর বন্দনায় ঠাকুরকে
” ত্যাগীশ্বর” বলে উল্লেখ করেছেন। ঠাকুরের ধ্যানে
এবং পূজার প্রনাম মন্ত্রে বর্ণনা করেছেন ” অবতার
বরিষ্ঠায়” বলে।
অর্থাৎ এ যাবৎ ধর্ম জগতে যতজন অবতার জন্মেছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
তিনি কখনও লীলায়,তো কখনও নিত্যে। এই বর্হিমুখে ভক্ত পরিবৃত হয়ে কথার অমৃত বর্ষণ
করছেন তো, তক্ষুনি অন্তর মুখে সমাধিস্থ। ” শিব
হয়েও তিনি, জীব হয়েও সেই তিনি। ”
তিনি সবখানে।সর্বত্র।তিনিই ঈশ্বর। এক। অনন্য।
অব্যয়।
চলবে….