সহজ মানুষ-সহজপাঠ

 

পরম হংস শ্রীরামকৃষ্ণ,স্বামীজি ও মা সারদাময়ী-র মতাদর্শ ও দর্শনের অন্য আলো নিয়ে লিখছেন–নিমাই বন্দোপাধ্যায় “ঈশ্বর প্রসঙ্গে “— বিভিন্ন গ্রন্থে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, -মুনি-ঋষিদের কথায়, বাণীতে,প্রনম্য বহু অবতারদের, লেখক -সাহিত্যকদের লেখায় ও কথায় যা পড়েছি এ যাবৎ– সে গুলিই সহজ সরল ভাবে এখানে একত্র করেছি মাত্র। এর কোনোটিই এ অধমের পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টি নয়।বলা যেতে পারে ” ছায়া অবলম্বনে “। আমার মতো একজন অর্বাচীনের এ স্পর্ধা কেন ঘটল ঈশ্বরই জানেন।আমি জানিনা।” ঠাকুর -মা-স্বামীজী মহারাজের শ্রীচরণ স্মরণ করে এ লেখায় উৎসাহিত হয়েছি,একথা স্বীকার করতে আমার কোনো বাধা নেই। আমি নিমাই বন্দোপাধ্যায়, দূর্গাপুর থেকে বাইফোকালিজম্ ওয়েব পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে এবং উৎসাহে প্রতিদিন কিছু কিছু লেখা নিয়েই – এই তৎপরতা।

ত্যাগীশ্বর হে নরবর(এক)

নি মা ই   ব ন্দো পা ধ্যা য়

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন সহজ।সরল।সমান্তরাল।কোনো বাঁক নেই।আকাশের মতো বিশাল।ব্যাপক তঁার
বিস্তৃতি।আবার ধরিত্রীর মতো সহ্যশীল।

তিনি যখন প্রথম কামারপুকুর থেকে কোলকাতায় আসেন,দাদার সাথে তখন তাঁকে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। অনেক কষ্টে পূজারির কাজ জোগাড় করতে হয়েছে। জনান্তিকে বলেছেনঃ আমি গাঁয়ের ছেলে।কোলকাতা কত বড় শহর। আমি কী এখানে কল্কে পাব? অর্থাৎ আমি যতই ঈশ্বরে অনুরক্ত হই, সোজাসাপ্টা মানুষ হই, আমি কী কোলকাতা শহরে পাত্তা পাবো?

আজ কামারপুকুরের সেই গদাই কোলকাতা ছেড়ে, বাংলা ছেড়ে, ভারতবর্ষ ছেড়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলে, সমগ্র ধর্মজগতকে নাড়িয়ে দিয়ে মহাবিশ্বে আসন পেতে বসেছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস হয়ে।
আমরা দেখেছি, তিনি যতদিন স্থূলদেহে বর্তমান ছিলেন, ততদিন তাঁর খ্যাতি এবং অবতারত্ব যত না আলোড়ন তুলেছে, যখন তিনি সূক্ষ্মদেহে-তখন শ্রীরামকৃষ্ণ ঢেউ বেশি বেশি আছড়ে পড়েছে জগত জুড়ে। আর এখনও তার বিরাম নেই। ভবিষ্যতে যে কত সহস্র বৎসর চলবে আমরা কেউ জানিনা।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন প্রচন্ড বাস্তববাদী।জীবন সম্পর্কে তাঁর বোধ, তঁার পর্যবেক্ষণ, অনেক বিখ্যাত দার্শনিকের সূক্ষ্ম বিচার বোধকেও হার মানায়।
তিনি জানতেন, তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম, তাঁর মত এত প্রচন্ড সাধনা করতে পারবে না।তিনি যে কঠোর কৃচ্ছসাধন করে, সর্বধর্ম ঘুরে বেড়িয়েছেন ঈশ্বরের খোঁজে, তেমনটি ধর্ম জগতে আর দ্বিতীয়টি হবে না।
খৃষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বেদান্ত সব ধর্মেই তিনি সাধনা করেছেন ঈশ্বরকে জানতে। বলেছেনঃ–সব ঘাট দিয়ে সেই একই পুষ্করিণীতে পৌঁছনো যায়।পুষ্করিণী কিন্তু একটাই। অর্থাৎ “ঈশ্বর এক”।
গ্রাম্য সোজা সহজ কথায় নিজের অনুভব ব্যক্ত করেছেন। এরপরই তাঁর সেই পাতালফোঁড়া উক্তি, জগত বিখ্যাত অনুভব ” যত মত তত পথ “

আগেই উল্লেখ করেছি তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা। আমার মনে হয় সেজন্যই তিনি পরবর্তী সময় বলেছেনঃ”আমি ১৬ টাং করেছি তোরা অন্তত এক টাং কর।” অর্থাৎ ‘ আমি ১৬ আনা করেছি, তোরা ১ আনা কর’। তিনি জানতেন ষোলো আনা চাইলে সবাই পালাবে, তাই এক আনা চাইলেন।

আমরা বাস্তব জীবনে দেখেছি, কিশোর বয়সের কেউ, তার চেয়ে বয়সে ছোট কোনো সদস্যের কাছ থেকে কোনো কাজ আদায় করতে হলে বলেঃ ” চল ভাই, দুজনে এই কাজটা করি।ভারী কাজটা আমি করছি, তুই হাল্কাটা কর। “

তেমনই ঠাকুর ভক্ত- অনুরাগীদের বলতেনঃ- “এমন মানব জনম যখন পেয়েছিস, তখন কিছু কর। ঈশ্বর দর্শনের জন্য কাতর হ। অন্তত মাটিতে একটা দাগ কেটে যা।”
বলেছেনঃ” আমি জল ঢালছি,তোরা কাদাটুকু মাখ।আমি ছাঁচ তৈরী করছি৷ তোরা নিজেদের সেখানে ফেলে ‘কপি(copy) ‘ করে নে। কেননা ঈশ্বর লাভই মনুষ্য জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। ”
কত কত ঈশ্বর প্রেম হলে একজন মানুষ আর একজনকে এমন প্রস্তাব দেন! তাঁর কী স্বার্থ? তুই ঈশ্বর দর্শন পেলি আর না পেলি? আমার ভারী বয়েই গেল! না।।
আমি তোদের পথ বলে যাবো। দিয়ে যাবো দিকনির্দেশ। উদাহরণ দিয়ে বলেছেনঃ কথা প্রসঙ্গে, “কেউ আম খেয়ে মুখটি মুছে ফেলে।কেউ যাতে না জানতে পারে। আবার কেউ পাঁচ জনকে ডেকে আম খাওযায়।”
অত্যন্ত তাৎপর্যময় কথা। আমি যেমন আমের স্বাদটা পেয়েছি তেমন তোরাও আয়।স্বাদ উপভোগ কর। ঈশ্বরে সকলের অধিকার। তারপরই তাঁর সেই বলিষ্ঠ উক্তিঃ ” চাঁদমামা সকলের মামা “।

                                                    চলবে…

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *