আজকের গল্পঃ বাড়ি

 

পেশায় ও নেশায় একজন ফটোগ্রাফার। জীবনের বহেমিয়ানাকে তারিয়ে উপভোগকারী একজন মানুষ।যার কাছে বয়স একটা সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।এখনও বাইফোকালিজম্-র বাকি সদস্যদের চেয়েও ট্রেকিং-এ বোহেমিয়ানায় অনেকগুণ বেশি পটু। বিজ্ঞানের বাইরের কোন কিছুকেই স্বীকার করতে আপত্তি।অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে তাঁর আগ্রহ বাইফোকালিজমের বাকি সদস্যদের বেশ তাক লাগিয়ে দেয় মাঝে মাঝেই। তাঁরই গল্প নিয়ে আজকের পাতা।ওহ.. ইনিও বাইফোকালিজম্- এর একজন অন্যতম সদস্য।

বাড়ি

দে বা শি স   দে

অনেক দিন ধরে অনি শুধুই কাজ করেই চলেছে।
প্রথম ছ’মাস ছাগলের মত, তার পরের এক বছর পাগলের মত।
গ্রামের জমি-বাড়ি বিক্রি করে, দু ভাই হাতে পেয়েছিল যথেষ্ট টাকা। শহরে, মনের মতো একটা জায়গা কেনা, যে কি জিনিষ, তা তার ধারনায় ছিল না। যাই হোক ছাগলের মত ঘুরে ঘুরে, শেষে সেটাও হয়ে গেল। পুরো মনের মত না হলেও, প্রায় মনের মত। বি এল আর ও তে দরখাস্ত আর মিউনিসিপালিটি অফিসে মিউটেশন আর প্লান পাশ করিয়ে অবশেষে তার ‘ছাগল চক্র’ শেষ হল।
হাতে এখনো আছে ভালোই টাকা। কুঁয়ো খোড়া দিয়ে শুরু হল, বাড়ি তৈরীর কাজ। আশা ছিল মাটির নীচে হয়ত কিছু মিলবে। কয়েকটা ভাঙা ইট, কিছু কাপ প্লেটের টুকরো ছাড়া পেল এক পাটি গোটা হাওয়াই চটি। কাজ চলতে চলতে, একটা সময় টাকা শেষ হয়ে গেল, কিন্তু বাড়ি শেষ হলনা। কি আর করা যাবে, অগত্যা ব্যাঙ্ক থেকে লোন। এই সময়ের মধ্যে, সে রাজমিস্ত্রি, গ্রিল মিস্ত্রি আর কাঠ মিস্ত্রির সাথে, বার কুড়ি ঝগড়া করেছে। কাঠ মিস্ত্রিতো তক্ষক, এক পরীক্ষিৎ ছাড়া কেউ তাকে জব্দ করতে পারেনি। অবশেষে তার বোধদয় হল, পৃথিবী তার নিজের নিয়মে চলবে, তা পরিবর্তনের সাধ্য অনির নেই।
বৌ এই সময়ের মধ্যে, শুধু বাড়ি নিয়ে ঝগড়ায় হাফ সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছিলো। এছাড়াও পরের বৌ মানে হবু প্রতিবেশীদের বৌ-এরা তাদের বাড়িতে হাওয়ায় উড়ে বালি ঢোকা থেকে কুলি-মিস্ত্রীদের রাস্তার ড্রেনে হিসি করা নিয়েও বেশ কয়েক বার অভিযোগ জানিয়েছিল। ইলেকট্রিকের কাজের পর যখন প্লাম্বার কাজ ধরল, তখন সে নিজেকে বেশ কিছুটা উচ্চ মার্গে নিয়ে যেতে পেরেছিল। বুঝতে পারল, ‘ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা’ কথাটার মানেটা কি।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্য জিনিষ হল, ‘পাগল’ হওয়ার ঠিক আগের দিনে, বাড়ির সব কাজ আপাতত সম্পূর্ণ হয়ে গেল। অনির অনেক আশা ছিল, এবার সে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যাবে। মনে মনে ভেবেও রেখেছিল, তার ক্ষেত্রে বার্ধক্যের বারানসী-র ঠিকানা হবে রাঁচী। কিন্তু তার আর সব উচ্চাকাংখার মত, এটাও তার অধরাই রয়ে গেল।
পুরোহিত পাঁজি দেখে গৃহ প্রবেশ করালেন, অনেকেই এলো। যারা দিনে আসতে পারলেন না, তারা রাতে। কারোর কোন অসুবিধা হল না। সুবিধা একটাই অতিথিরা চলে যাওয়ার পর, তাদের দিয়ে যাওয়া প্রেজেন্টেশন গুছাতে হল না। যে কটা ফুলের তোড়া পেয়েছিল, তা ফুলদানির অভাবে জায়গা পেল দেওয়ালের কোনে।
রাতে খাওয়ার পর, মাদুরের মধ্যে বালিশ, চাদর, মশার ধূপ নিয়ে, শুতে চলল নতুন বাড়িতে। রোজের মত, রাত বারোটায়, সে দিনের মতো সিরিয়াল দেখা শেষ হল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে শ্রীমতি অনি দেখে, গাধাটা জলের বোতল নিতে ভুলে গেছে। বেচারির সারা দিন অনেক পরিশ্রম গেছে, ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফোন এল, ‘হাতে করে দেইনি বলে তুমি জল নিতে ভুলে গেলে?’ অনেক কষ্টে মাথাটা ঠান্ডা রেখে বলল, ‘আমিতো হিন্দু তাই রাতে রোজা করবো, তোমরা ঘুমিয়ে পড়। গুড নাইট। হ্যাভ এ নাইস ড্রিম’। আর কোন ভুল না করে সুইচ অফ করে দিল ফোনটার।
অনেক দিন থেকে বন্ধুরা ধরেছিল, নতুন বাড়ি উপলক্ষে একটা স্পেসাল ট্রিট হোক। গত মাসে অফিসে ভালই রোজগার হয়েছে। আর চিন্তা কিসের, ঠিক হল ট্রিট হবে ভুড়িশোলা ফরেষ্ট বাংলোয়। বাড়িতে বলে গেল, সাপ্লায়ারের পুকুরে মাছ ধরে, মাছ খেয়ে পরের দিন ফিরবে।

ফরেস্ট বাংলোর চৌকিদার মুরগিটা বেশ ভাল করেছে। ফাস্ট ক্লাস। সে প্রাইজ পেল একটা নিপ।
ভোলা বুদ্ধি করে ওডোমস ক্রিমটা নিয়ে গিয়েছিল। চাঁদের আলোয় উঠানে বসে, কসা দিয়েই পয়লা বোতল শেষ।
দ্বিতীয়টার প্রথম রাউন্ড শেষ হওয়ার পর, হঠাৎ বিলু বলল
আমরা পঞ্চ পান্ডব হলে কি হত?
খুব ভালো হত, তোর বৌটা আমাদের সবার
আর কিছু মনে এলো না?
তোরটাও আমাদের হতে পারত
না বন্ধু, তুই বিয়ে করেছিস সবার আগে, তোরটাই দ্রৌপদি।
কিন্তু দ্রৌপদি কি মুরগি রাঁধতে জানত?
ঠিক কথা,
জাঠতোতো ভাইদের সাথে কাটাকাটি
আমাদেরতো ভালই বনবাস হচ্ছে, শালা মদ মুরগি
যতু গৃহে বার বি কিউ হয়ে যেতিস বে
আচ্ছা, ঘরটা গালা দিয়ে তৈরী করার কি দরকার ছিল বলত? কত খরচ। পাকা বাড়িতেও তো আগুন লাগে।


শালা মাতাল হয়ে গেছে বে, মহাভারতে সিমেন্ট
সিমেন্ট ছাড়া কি পাকা হয় না। পাকা মানে পাকাপোক্ত, দীর্ঘস্থায়ী
বাথরুমে থেকে ঘুরে আসছি
দিস ইস ভেরি ব্যাড।
তুই মাতাল হয়ে ডিগবাজি খা ঠিক আছে, কিন্তু গ্লাস পড়বে কেন? পেট ভর্তি মদ নিয়ে বোতলগুলো বছরের পর বছর সোজা দাঁড়িয়ে থাকে। কই তারাতো পড়ে যায় না, আর তুই বেটা গ্লাসটাকে উলটে দিলি! তোদের সাথে মদ খাওয়া একটা-
মহাভারতে কিন্তু কোথাও-
ভূমিকম্পের কথা লেখা নেই,
লে হালুয়া
কেন কর্ণের চাকা মাটির নীচে ঢুকে গেল
কর্ণের চাকা কি বে, বল রথের চাকা
ওখানে বোধ হয় পাঁক ছিল
বাদ দে, অনি তোর বাড়ির কথা বল
বাড়ি, বাড়ি মানে একটা দরজা। যার ভেতরটা- ভেতরের জগৎ, আর বাইরেটা- বাইরের জগৎ
মানে?
কি বললাম বলত?
তুইতো ফিলজফার হয়ে গেলি বে। ভেতরের জগৎ, বাইরের জগৎ
দেখ বাড়ি করা মানে বাড়ি করা, আর ঘর করা মানে বিয়ে করা, হাঁড়ি কড়া। শালা দুটোই ভুল, কিন্তু ঠিক। তুই বিয়ে করলি, বালবাচ্চা রেখে দেওয়ালে ফটো হয়ে উঠে গেলি।
আবার বাড়ি বানালি তুই মরে যাওয়ার পরেও সেটা থেকে গেল। তুই বাড়ির মধ্যে ফটো হয়ে আরো একশ বছর দিব্যি থেকে গেলি।
ফ্রেমের কাঁচটা ফেটে গেল, তোর নাতনী তোর নাম দিয়ে দিল ফাটা কেষ্ট
হা হা হা হা হা হা……..
তোর বাচ্চারা ওই বাড়ির মধ্যে ঘর করবে- নাতি নাতনি আর কি চাই! টাকা নিয়ে আসিসনি, আবার নিয়েও যাবি না। যা শালা, অত শত চিন্তা করতে পারব না। ভজা তোর-
ঠিক কথা মাইরি, বাড়ি মানে একটা দরজা। যেটা পেরিয়ে ঘর থেকে বেরতে হয়। মনে আছে পর পর ছুটি থাকায়, খালাস হতে চার দিন লেগে গেল। একটা একটা করে ঘন্টা গুনেছি, কখন দরজাটা পার হব।
বাবা-মা, ভাই বোন, এটা ঘর! আর সাইকেল, নিজের ইচ্ছে, তোরা সবাই এটা বাইরের ঘর।
বাড়িটা ঐ কটা ইট ছিল না। সে সময় মনে হত জেলখানার বাইরে গোটা পৃথিবীটাই বাড়ি।
কি দিলি মাইরি
মনে হত, বাড়ি মানে স্বাধীনতা, আর এখন, বাড়ি মানে জেলখানা। আমি যদি ভুল করি তাহলে গালাগাল আর বৌ যদি ভুল করে তাহলেও গালাগাল। কেন আমি বারণ করিনি!
এমন একটা সপ্তাহ কাটে না যখন ঝগড়া করে না। বুঝি না কেন যে এত ঝগড়া করতে ভালবাসে?
বোঝ শালা, কি করবি, কর। একটা মেয়ে যে কি করে এত বোকা হতে পারে, না না সে সময় আমি কি করে যে এতটা গাধা ছিলাম?
তোর মধ্যে নির্ঘাত গাধার জিন লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলেই লাফ মেরে বেরিয়ে আসে
কি বললি শুয়ার?
বললাম তোর ভেতর নির্ঘাত গাধার জিন আছে।
আর তোর মধ্যে কি কুত্তার?
এই বললি শুয়ারের, এর মধ্যে বদলে গেল। আবে শালা, আগে শোন্‌, যা বলার পরে বলবি।
কেন বে তোর কথা শুনতে হবে, শালা তোর মুখে-
বল্‌ মুতে দি, দে মুতে দে। শালা মাতাল
তোরা চুপ করনা শালা
তুই বিয়ে করার কত পর জানতে পারলি, যে তুই একটা গাধা? ক’ বছর পর, বল? প্রথম প্রথম কবিতা লিখেছিলি চন্দ্রমুখী বলে। মনে পরে তরুন ঘোষকে? স্কুলে পড়ার সময় তোর বৌকে লাইন মারত
কি ভাগ্যবান মাইরি
ও শালা প্রেম করল আর আমি হতভাগা বিয়ে করলাম!
প্রথমে পত্নী এখন পেত্নি? মনে আছে এস জি স্যার কি বলেছিলেন, বিয়ের আগে যে পরী, পরিণয়ের পরই বোঝা যায় যে সে পরী নয়
কি দিলে গুরু
তুই ঘাবড়াস না, তোর বাবাও কোন একদিন নিজেকে গাধা বলে ভেবেছিলেন।
না বে, মা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী
ওবে সেটা তোর কাছে। তোর বৌও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, তবে সেটা তোর ছেলের কাছে।
আবে গাঁড়ল, সত্যিই যদি তার বুদ্ধি থাকত, তা হলে তোকে কেন বিয়ে করল শালা? বাতানকে চান্স নিত। অনেক মালদার। তেল-ডাল-আলু। ইট-সিমেন্ট-ট্রাক-লজ কি নেই? শালা আমার বেতনের থেকেও বেশী খরচা করে মাগীর পেছনে। স্কচ ছাড়া খায় না। শুনেছি শুধু ঘুষই দেয় বছরে দশ-বারো লাখের উপর। আরো কত কি কাইন্ডে কে জানে। জানিস, ওই লম্বাটা শুধু অফিসারদের জন্য। ভেট বে।
এই যে এখানে এসেছি, গ্যারান্টি যে বিলু বা অনির বৌ-এর কাছে ফোন করে জেনেছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি? সাথে কে কে যাচ্ছে?
কি বললি? বৌদের কাছে? হা হা হা হা কালকেই আমাকে ফোন করেছিল। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কবে ফিরব?
তবে শোন, মাস খানেক আগে, সকালে বৌ-এর বন্ধুর সাথে দেখা। গুড মর্নিং বলে, জানতে চাইলাম বিরুদা কেমন আছে? উপর সব থেকে দেখেছে। বাজার থেকে ফিরে আসার পর আরম্ভ হল গজ গজ। কেন আমি গুড মর্নিং বললাম? এতো কথা বলার কি আছে? ও ভালো না। অথচ সেই মহিলা আমার বউ-এর যথেষ্ট ভালো বন্ধু।
বোঝ শালা, যে খারাপ তার সাথে বন্ধুত্ব করলে ক্ষতি নেই, আর আমি গুড মর্নিং বললেই দোষ।
মরে গেলেও সন্দেহ করবে, নির্ঘাত স্বর্গের অপ্সরাদের লাইন মারছি।

কি? কি বললি? তুই স্বর্গে যাবি? আবে সেটা কি কোন দিন সম্ভব? শালা পাপী। আর একটা কথা মনে রাখবি।

তপার বাবা যদি তোর শ্রাদ্ধ করে, স্বর্গ বহুত দূরকা বাত, নরকও জুটবে না।
ইয়ার্কি নাকি। আগে তপার বাপ মরবে, তার পরে আমি। আমি ওর শ্রাদ্ধ খাব, ও শালা কি আমার শ্রাদ্ধ খাবে বে?
শালা তুই তোর বৌকে বলে দিস পৃথিবী ছাড়ার পরেই, তোর ছেলে, তোর সাধের যন্ত্রপাতি সব পুড়িয়ে ছাই করে দেবে। তোর আত্মাটা না হয় লাইন মারল, ক্ষতিটা কি?
তাছাড়া তারা ঘরে থাকবে আর তুই? তোদের আম গাছ বা রাস্তার শ্যাওড়া গাছে। এটা আনফেয়ের। শীত বর্ষায় কত কষ্ট বলত?
চিন্তা করত একটা হনুমান তোকে চুলকে দিচ্ছে। তোর আবার লেজ নেই। শালা, ব্যালেন্স রাখতে পারবি না। আছাড় খাবি।
কঙ্কালটার, হাড়গুলো আবার ভাঙবে হা হা হা হা
কি ডাকল?
লে শালা শিয়ালের ডাকও চেনে না।
বলত ডে অফ দি জ্যাকেল কার লেখা?
তোর বাপের, আর নাইট অফ দি জ্যাকেল তোর বৌ-এর। সেতো আবার কবি ছিল।
বাদ দে, বাড়ির কথা হচ্ছিল, হ্যাঁরে অনি তোর কত গেল?
এখনো এক লাখ বাকি, ভাবছি গরমের আগে ঘরটার মাথায় একটা টিনের হেলমেট পরাব।
তেরি মাগকি এয়সি কি ত্যেয়সি, ক্যায়সা মর্দ বে তু? শালা। বিবিকো গালি, ফির উসকিহি গোলামি। আমারতো কখনো মনে হয় না। সালমে ক’ মাসের জন্য আসি বে? আর তো তিন দিন, ফির চলে যাব, কবে আসব কে জানে?
শুধু বর্ডারেই কাটিয়েছি প্রায় তিনটা বছর।
নিজের কানে বুলেট উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছি বে, শালা ভোসড়ি। কি আর করবি বল? শালা তোদের মর্দাঙ্গিতো আর কন্‌ডমের বাইরে বেরতে পারল না।
আবে শোন, আমার কাছে বাড়িটা একটা ভালবাসার জায়গা। এর প্রত্যেকটা ইট আমার দোস্ত। সিরিয়াসলি। সেখানে আমাকে কেউ পাপা বলে, আবার কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আসল কথা কি জানিস তোরা শালা বৌকে ভালবাসতেও জানিস না। তাই ক’ মাসেই পুরান হয়ে যায়।
পটেট চিপস্‌ আর জুটলনা, আলু ভাজা খেয়েই বুড়া হয়ে গেলি।
হ্যাঁবে নিতান্ত তোর মালটা ভালো বেরিয়ে গেছে, তাই এত ডায়ালগ মারছিস।
আমারটার মতো জুটে গেলেনা, তুই তো কোন হরিদাস পাল, তোর মেজরেরও পেছন দিয়েও, সব ভালবাসা, গ্যাস হয়ে বেরিয়ে যেত
কাম অন, কাম অন, লাইনে এস বাবা। গ্যাস কেন হবে বে শালা? আসল কথা বল যে, হজম করতে পারিস নি। ওবে গাধা তোরা কি জিনিস, জানিস? শিংগি মাছের ঝোল, যুবতী মেয়ের কোল, বল হরি বোলের মাল। সামান্য মাল খেতে হলেও ঘরের বাইরে যেতে হয়।
আরে, বৌটা তো একটা ঘরে থাকা মেয়ে, তোরা তো তা নয়। ঠিক করে টিউন করে নে না। দেখবি ঐ বুড়া তবলাও টং টং করে বাজছে।
বাবু, বিস্টি পরছে, ঘরে আসুন
বৃষ্টি পড়ছে? ভালই তো, পড়ুক, কেন পড়বে না?
ভেতরে চলবে, শালা ঠান্ডা লেগে যাবে
কিস্‌সু লাগবে না, রক্তে অ্যালকোহল ছুটছে, ঠান্ডাটা লাগবে কোথা থেকে?
তোর অভ্যেস আছে। আমাদের তো নেই, চল্‌ ভেতরে চল্‌
তোরা গেলে যা, আমি যাব না। ভাগ্‌ শালা
তোর নেশা ধরে গেছে, চল্‌
কি বললি? নেশা ধরে গেছে? ঠিক উলটো, তোদের কথায় আমার নেশা ছুটে গেছে। তোরা যা না বে, কে তোদের মাথার দিব্যি দিয়েছে? শালা এতক্ষণ ঘরের বৌকে গাল দিয়ে, আবার মাথা গুঁজতে ঘরে ঢোক।

যা নারে।
চৌকিদার এখানে একবার এসো তো বাবা
বাবু?
তা চৌকিদারবাবু তোমার তো বাড়ি আছে?
হা বাবু?
তোমার কাছে বাড়িটা কি?
বুঝলাম না বাবু
মানে বাড়িটাকে তুমি কি রকম দেখ?
মাটির বাড়ি, টালি দেয়া-
আর?
গোয়ালে কাথ নেই, খড়ের চালি-
আরে বাবা আমি জানতে চাইছি, বাড়ি গেলে তোমার বৌ, কি রকম ভালবাসে?
আমার বউ নেই বাবু
সে কি গো?
অনেক আগে চলে গেছে
কার সাথে?
মরে গেছে
তো ঘরে কে আছে?
ছোট মেয়েছেলেটা, ছোট জামাই আর দুটা লাতিন
মদটা খেয়েছ?
না বাবু, ভাল জিনিস। উটা জামাইকে দিব।
তুমিতো মহাপুরুষ হে
না বাবু, আমি মহাপুরুষ লই। মেয়েছেলে দুটাকে আমার কাছে রেখে, খরিশটা তাকে লিয়ে গেল।
আর বিয়ে কর নি?
না গো। মেয়ে দু’টার বিয়া দিছি, আর কি চাই, বলো? তোমার কাছে ঘর যদি পিরিতি হয়, আমার কাছে তা লাতিন। দুঃখ একটাই, বউটা দেখে গেল না।
কে মানুষ করল বাচ্চা দু’টোকে?
আমার মা, সেই কষ্ট করে মানুষ করে দিছে
ভাগ্য ভালো সে সময় তোমার মা বেঁচে ছিলেন।
জানো, আমার দাদু তিনটা বিয়ে করেছিলেন। দিদারা কেউ কোনো সতিনকে দেখেন নি। বাচ্চা রেখে টুক করে টাডা বলে চলে যেতেন। আমার ছোটমামা যখন খুব ছোট, ছোটদিদাও মারা যান, দাদুকে আর বিয়ে করতে হয় নি। তাঁর বড় মেয়ে ফিরে এসেছিলেন বিধবা হয়ে। তিনিই মানুষ করে দেন ছোটমামাকে।
কতো দিন আগে?
সে সময় আমার মাও খুব ছোট
বড় মাসির কাছে শুনেছি দাদু তার বৌদের খুব ভালোবাসতেন
তুমি দাদুকে দেখেছো?
দাদু মারা যাওয়ার অনেক পর মায়ের বিয়ে, বাদ দাও, কি নাম তোমার বৌয়ের?
কি হবে? সেতো চলে গেছে
না এমনি, কি নাম?
মাঝে মাঝে সে আসে বাবু,
রাতেরবেলা, সপনে। মোকে কাদাতে। আগে ভাবতাম মরলে আবার দেখা হবে, উপরে। কিন্তু এখন আর তা হবার লয়।
অনেক বছর চলে গেল, ও আবার কুথায় জনম লিছে, কে জানে? আবার কাকে কাদাতে।
না না, সে এখনো জন্মায়নি
কবে বারো বছর হয়ে গেছে
তাহলে সপনে আসে কি করে?
যে নেই সে কি ফিরে আসে?
সব মায়া বাবু। ও কি আর আসে? আমিই ডেকে আনি। আমার মন ডেকে আনে
তুমি যাও, বৃষ্টি বাড়ছে
তুমিও চলো, বিস্টি বাড়বে
আমি ভিজবো, আরো ভিজব। আমার খাওয়ার, এখানে খাব। দিয়ে যেও। একদিন না হয় অন্য রকম। এখন যাও।
গ্লাসটা নিয়ে যাও তো, আর একটা বড় করে বানিয়ে দিতে বলবে
ভাত ভিজে যাবে বাবু
ক্ষতি কি? আমিও ভিজছি। এখন এসো।
হ্যালো হ্যালো। চৌকিদার আর একটি বার এসো
বলুন বাবু
বাড়ি বলতে আমরা বুঝি, বাড়িটা কার জন্য, কারা থাকবে? একটা সাধারণ লোক সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে বাড়ির জন্য, যাতে তার ছেলেমেয়েরা নিরাপদে সেখানে থাকতে পারে, বিপদমুক্ত বংশ বিস্তার করতে পারে। আমি মরে গেলেও আমার জিন সেখানে যেন বাড়তে পারে। ভাগ্য ভালো হলে, তার দেওয়ালে একটা ছবি হয়ে আশ্রয় পাবো।
তোমার কাছে বউ-এর কোন ফটো আছে?
কি যে বলেন বাবু
আছে?
কোথা থেকে থাকবে?
কোন দিন কোন ফটো তোলাই হয় নি।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *