তৃতীয় পর্বঃরুমির কবিতাঃ অনুবাদ – তৌফিক হোসেন

তৃতীয় পর্ব
                             রুমির কবিতা 

                        অনুবাদ – তৌফিক হোসেন

সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি : মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি (1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]

একুশ

আমাদের ভয় নেই ঈশ্বরের তরবারির
অথবা শেকল বন্দির
অথবা মস্তক ছেদনের।

আমরা দ্রুত পুড়ে যাচ্ছি,
জীবনের পথে,নরকের আগুনের স্বাদ নিয়ে।

তুমি কল্পনা করতে পারবেনা
লোকে যা বলে 
তা আমরা কত তুচ্ছ জ্ঞান করি।

বাইশ

পথে এসো
শুধু তোমার সুবাস নিয়ে।

নদীতে নামো না 
পোশাক পরে !

পথগুলি ছড়িয়ে গেছে এখান থেকে ওখানে 
কিন্তু আসা যাওয়া নয়!
এখন সময় আদুড় হয়ে বাঁচার।

তেইশ

রসের পেয়ালা আত্মা
বুদ্ধির সর্বনাশ করে।

সেই বাতি এসে আমায় গ্রাস করল,
যার অগ্নিশিখায় এই বিশ্ব
এলোমেলো হয়ে যায়।

চব্বিশ

সাধক নৃত্য করে দিনের আলোয়,
অন্যরা করে না সুর শুনে।

তারা সব বলে ‘পাগলামো ‘।
যদি তাই,এটা খুব বিনম্র,
পরিপোষক ধরনের।

পঁচিশ

এই ভালোবাসা ভাষার অতীত,
কিন্তু তোমার বাস উপরে তুলে ধরে
তুমি প্রশ্ন করো,’তোমার মনের খবর কী?’

আমি বলি আরো ‘আরো ওপরে তোল!

এই কসাইখানার মাটি
রক্তে ভেসে যাচ্ছে।’

ছাব্বিশ

যেখানে তোমার আদুড় পা হেঁটে যায় 
আমি সেই আধার হতে চাই,

হয়তো পা ফেলার আগে,
তুমি মাটির দিকে তাকাবে।
আমি সেই করুণা চাই।

সাতাশ

তুমি কি বন্ধুর সত্যটা জানতে চাও?

খোসা ত্যাগ করে 
শাঁসের ভেতর এসো

ভাঁজের ভেতর ভাঁজে
প্রিয় নিমজ্জিত নিজের সত্তায়।
এই বিশ্ব সিক্ত হয়ে আছে ঐ নিমজ্জনের সঙ্গে।

আঠাশ

ভালোবাসা নিখুঁত ও পূর্ণ,তুমি এসো।
আমার সত্ত্বা জুড়ে কথারা ভিড় করে 
কিন্তু কিছুই বাইরে আসে না।

এক পথিক একসঙ্গে 
তার আনন্দ ও দুঃখের মুখোমুখি হয়।

তৃষ্ণায় মরতে মরতে আমি দাঁড়িয়ে আছি এখানে 
যখন ঝর্ণার জল আমার পা চুবিয়ে দেয়।

ঊনতিরিশ

চারিদিকে বসন্ত।আর আমাদের ভেতর 
এক অন্যরকম একতা

এখানে প্রতিটা চোখের আড়ালে,
এক প্রদীপ্ত আবহ।

বাতাসে 
বনের প্রতিটি শাখা নড়ে যে যার মতো
কিন্তু যখন তারা দোলে 
তারা শেকড়ে-শেকড়ে মেলে।

তিরিশ 

আমাকে আসতে দেখে 
এক মদ্যপ হাততালি দিয়ে বলল,
‘দেখ আমাদের তীর্থযাত্রী ফিরে এসেছে 
তার সমস্ত অনুতপ্ত প্রতিজ্ঞা ফেলে।’

এটা সত্য কিন্তু সে জানল না
কতটা পীড়াদায়ক এ কাজ ছিল।

মনে রাখবে: যত চেষ্টা করা হয়,
তত সহজে ভাঙা হয়।

                                   ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *