অণুগল্প – শেষ বিদায়ঃ তাপস কুমার দত্ত

 অণুগল্প

                                             ছবিঃ প্রসেঞ্জিৎ মণ্ডল

—————————————————————
 তাপস কুমার দত্ত- এর অণুগল্প

                                                           

                             শেষ বিদায়

[গল্পকার ও কবি। 
প্রকাশিত উপন্যাস— চন্দ্র গোধূলি।
 সম্পাদিত  সংকলন– দুঃসময়ের কবিতা সংকলন। নাটকের বই– নিশি পদ্মের কান্না]

                                   


এন এইচ সিক্সটি হাইওয়ের প্রায় কাছাকাছি রোহিতের স্কুল। যাতায়াতের ভরসা বলতে মোটর বাইক। আজ বাইকের স্পীড প্রায় পঞ্চাশের মতো, সাঁ সাঁ  গতিবেগে ছুটছে নিমেষে পেরিয়ে যাচ্ছে রাস্তার ধারের গাছপালা সুদৃশ্য ঘরবাড়ি। হঠাৎ ই চোখ আটকে গেল রাস্তার ধারে দোতলা বাড়ির ছাদের দিকে তাকিয়ে, এক তরুণী ওকে দেখে হাত নাড়ছে।রোহিত হতচকিত হয়ে ব্রেক কষে ধরে বাইকের, তরুণী ওকে দেখে আনন্দে লাফাতে থাকে। কিছুই বুঝে উঠতে পারে না রোহিত। প্রশ্ন উঁকি মারতে থাকে সারিবদ্ধ লাইনে। স্কুলের দেরি হচ্ছে, হাত ঘড়িটা দেখে নিয়ে আবার স্কুলের পথে এগিয়ে যায় রোহিত। এই ভাবে প্রতিদিন ঘড়িতে সকাল দশ টা দশ মিনিটে রোহিত তরুণীর বাড়ি অতিক্রম করে তরুণী হাত নাড়ে, প্রত্যুত্তরে রোহিত ও হাত নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় স্কুলে।এই ভাবে প্রায় মাস পাঁচেক পর তরুণী যেন হঠাৎ  অদৃশ্য হয়ে গেল, আর বারান্দায় দাড়িয়ে  তাকে হাত নাড়তে দেখা  যায় না। একদিন,দু দিন এই ভাবে প্রায় বারো দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল।রোহিত  বিষণ্ণ হয়ে পড়লো, কি এমন হলো যে, আর ওকে দেখাও যায় না।রোহিত প্রতিদিন স্কুলে যায় কিন্তু বারান্দা শূন্য। কোনো কোনো দিন কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে  তরুণীর বাড়ির সামনে। এলোমেলো বাতাস এসে রোহিত এর প্রশ্ন গুলো উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়, দূরে আরো বহুদূরে। উত্তর পাওয়ার আশায় রোহিত আজ ওদের বাড়ির দরজায়। টোকা মারতেই দরজা খুলে দিল সেই তরুণী। রোহিত কিছুটা অবাক, তরুণী যেন ওকে চিনতেই পারলো না। পাশের ঘর থেকে আওয়াজ এল এক মহিলার, সৃষ্টি কে এসেছে রে? তরুণী চুপ করে দাড়িয়ে। মহিলা বাইরে বেরিয়ে এলেন।রোহিতের দিকে তাকিয়ে বললো কে বাবা তুমি?ঠিক চিনতে পারলাম না তো?সৃষ্টি কিছু করেনি তো?রোহিত না বলে মাথা নাড়লো।আসলে কি জানো বাবা, আমার সৃষ্টি এ রকম ছিলই না।জমজ ভাই বোন এক সাথে বড় হয়েছে। প্রায় সাত বছর আগের কথা। সেদিন বোন গেল না স্কুলে, ভাই গেল। ওদের স্কুল গাড়ি আসতো ঠিক সকাল দশ টা দশ মিনিটে।সেদিন ও এসেছিল গাড়িটা।বোন তাই ভাই কে টা  টা করার জন্য উঠেছিল বাড়ির বারান্দায়।ভাই আর ফেরেনি,শুধু তার আর্তনাদ আজও আমাদের বুকে হাহাকারে ভরিয়ে দেয়। একটা লরি ওর ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়ে আমাদের জীবন সেই মুহূর্তে বদলে দিল।সৃষ্টি ও সেদিন থেকে ভাইকে খুঁজেই চলেছে।তাই আজও ভাইকে সকাল দশ টা দশে বারান্দায় দাড়িয়ে, হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। মহিলা সৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।রোহিত হতবাক হয়ে জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। 

                                       ★★★



Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *