লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর কবিতাগুচ্ছ
খয়েরী রঙের সমীক্ষা
—————————-
ছবিঃ গৌতম মাহাতো
এক.
ছাই উড়ছে শরীরের বলিরেখা ঘিরে , আর কিছুদিন পরেই আড়চোখের দৃষ্টিতে বসবে কলঙ্কের ছাপ । মগ্নতা থেকে সুশীল পুরুষের দিক পরিবর্তনের ছবিটা কেটে যারা ঘুড়ি ওড়াবে তারাও ক্লান্তি ঘোঁচাতে হাত উঁচিয়ে হাই তুলছে চৌরাস্তায় । মুক্তবেণির মেয়েটি পান’এ আদা মেশাতে মেশাতে বাতাসের তাপ মাপছে – পাশেই ট্যাপ খুলে পড়ছে জল । তাদের কোনো বিকার নেই , নরেন্দ্রও কেমন বরফ খুঁজছেন – এটা তার ভান হতে পারে , তবে কোন নৌকাবিহার নাই ! মফসসলের শরীর
পুড়ছে , আর কালো কালো ঘুর্ণির ঘুর্ণনে ঘুরছে জামা
প্যান্ট শাড়ি ব্লাউজ , রাগছেন বাগ্মী মমতা । বৈরাগ্য কোথায় কে জানে –
দুই.
বিকেলের চালায় গাল ঠেকিয়ে থাকার দৃশ্যতে হার মানে পশ্চিমের রং । মশগুল তার ক্লান্তিতে দুদলের কাঁটাতার। যারা দিন ফিরিয়ে দেবার জন্য মিছিল করে তার সাথে বিরোধী দলের কোন পার্থক্য নেই – সকলের ইস্তাহারে ঘুমন্ত রাত্রি অবোধ্য। তবু হাওয়ায় ফোলা খয়েরী ঠোঁট জামফলের মতো রসাল , যেন ছায়া কেঁপে ওঠা এই ভূগোল , আর সঙ্গমে উন্মুখ লাঠি সোটা বন্দুক । ঠিক ঠিক রাঙাদ্বীপের কাহিনী । এই বুঝি ফিরে ফিরে আসে চাপ চাপ রক্ত – জঙ্ঘা বেয়ে দক্ষিণে মেঘদলে –
তিন.
আরও আটকে রেখো সহজ কোমর পেঁচিয়ে রাখা শাড়ি , অথবা জটিল হও পালাগানের সহচরী । এই জংলিপনাতে কিছু সময় তো দাও – যেখানে দৌড়ে দৌড়ে হৃদয়টা বেড়ে যেতে পারে জঙ্গলের পরিধি মতো – এই জৈষ্ঠ্যে দম বাড়াতে পারলেই সাপুড়েরা বুঝে নেবে মিথ্যে রানীর গন্ধ । যতই উড়ুক্কু সাপ হোক এক্সিট পোলের সংখ্যা গুলো পেরোতে পারবে না আর –
চার.
কারও কোন খুঁত নেই এমন ঠাট্টা না করাই ভালো – তুবড়ানো গালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কলপগুলো জ্বলজ্বল করছে ত্রিফলা বাতিতে । চাপা দিতে চাইলেও দগদগে সাদা দাড়ি ভেসে ওঠে রোড শো’র আলোয় – কারা যে হাত নাড়ে নিজের খুলির ভিতর?
অবিরাম জলপড়ার শব্দে নাচে নন্দলালা – মাখন চুরির অভিজ্ঞতায় নাড়তে থাকে হাতের নাড়ু , টোপ খাওয়া রোদে উপচে পড়ে গ্লাসের টলটলে মদ –
তখনই মুখোসের দিকে তাকাও – অস্বীকারের ঢেউয়ে যে মদের দোকান গুলো ভেসে আসে , ঠিক তেমনই কোন একদিন ওদের আলাপ – সেগুলোই এলেমেলো করে দেয় নিজস্ব আমবন – কপালের কাটা দাগে ফুটে ওঠে বিপন্নতা –
পাঁচ.
মনিকে একটা হাতলহীন ছুরি মনে হয়
কোমরে শাড়ি না জড়িয়েও সাপের মত হেঁটে বেড়ায় রাস্তার ফ্যাসানে –
চামড়ায় ট্যাটু করার ইচ্ছে আছে একশ ভাগ, সে-কারণেই ভোটের দিন গুলিতে সে অমোচনীয় কালিতে
মিশিয়ে দেয় পুরুষের জিব
তাই নখের আঁচড় ফুটে উঠেছে শিৎকার লিপিতে
রোদের কাছে কোনো লজ্জা নেই – করতে নেই ,
যত ঘোমটা থাক না কেন মিছিল আর খাওয়া দাওয়াতে
আঙুল গুলো সমুদ্র কাঁকড়া – সমুদ্রে যায় আর গর্তে ঢুকে পড়ে
এঁকেবেঁকে ফাঁকা নাভিশ্বাস ধরতে চাওয়া না চাওয়ার কাছে ,
তাতে লেগে থাকে নত মুখের মৃদু হাসি
অব্যক্ত আড়াল গেলেই হাতের কাঁদালে দাঙ্গা লাগে –
ছয়.
এত হই-হুল্লোড়ের পর যে যার চালার নিচে ফিরছে। হাত ধুচ্ছে পা ধুচ্ছে মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে – সেখানেও কী মুখোশ পরে রাখার দরকার পড়ে বুঝি না – তবুও পরে আছে সুর তাড়ানো পুরুষেরা
জলপড়ার শব্দে চমকে ওঠে শিরদাঁড়া , পুরনো মেঘের সাথে কাটা ডালপালাগুলি রোদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আড়ালে – ঝিলিক দিয়ে উঠছে টোপ খাওয়া রোদ আর
ওষুধের দোকানে কাঁচুমাচু মুখ – কোন হিসেব নেই গলগণ্ডের । বদলে দিচ্ছে গলার গামছার সাথে বিছানার চাদর –
ভিটের কাছে সর্ষে ফুলে জুয়া পোকার শোকানুভুতি – আবারো কারো চুলের গন্ধ উড়তে উড়তে টুকরো হচ্ছে নদীর গতি – স্নানের পর ব্লেডের টুকরো গুলো হারিয়ে ফেলে ক্ষত মুখ –
সাত.
অনেকটা পথের পরও খেয়াঘাট পাইনি – শুধু ধারে ধারে পক্ মিল আর গাঁথনি বিহীন ইটের ঘর – আর ঝোপ ঝোপ টাকা কামানোর ফাঁদ । ইতিহাস জানে এ কখনো মহেঞ্জোদারো হতে পারবে না । তবুও কিছু কিছু সাবওয়ে ঢুকে যায় সেই ঘরের ভিতর – আর সেপারে যাওয়া যাবে না – আর সেপারের তাল গাছের বাবুই আসবে না – এখানে চলছে গুমোট হাওয়ার মাঝে শাড়ি খোলার শব্দ , আর ক্লীভেজ বেয়ে আসছে দরদরে ঘাম – কুপিটা নিভে যেটুকু নিশ্বাস আসে তাকে জীবন বলেই জানে পার্থ – তারও হাতে সাদা জলের বিকৃত স্বাদ ।
চোখ বুজে আসলেই চাঁদ ছুঁয়ে দেয় চোখের পাতা – বুকের লোমে নোনা স্বাদ – এবার কি চিমনি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ধোঁয়া নেমে আসবে নদীর জলে ?
এবার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ভেষজপাতার কল্লোল – কারা যেন শিস দেয় সূর্যাস্তের গায়ে – কারা যেন হেঁটে যায় দিগন্তের বিপক্ষে – আলো ভাসে – ছায়াও ভাসে । ওপারে যাওয়ার কোন খেয়া ঘাট নেই –
আট.
মৃত্যুর আগে ওগো নীল পাতার ধ্বনি – ঝিকমিক করে ধর্মখুন – অতীত এসেছে হত্যার জন্ম নিয়ে । অস্তহীন দিন দিন খরার মাঝে সদর দরজা খোলা আছে , সুড়ঙ্গ ভেঙে যত কিছুই দেখি রোজ – নিজেকে পোড়াচ্ছে রাতের শাখা , যেন নিদ্রার নিচে এক ক্লান্ত কাক – বসে – সময় পেরিয়ে যেতে যেতে কোথায় যেন যায় । তারপর উধাও চিন্তামণি । তারপর হাজার বছর সেই অস্থিরতা – গোপন সংক্রমণে ছেয়ে যাচ্ছে সমস্ত বসবাস – এ কাজ কারও নয় – এ কাজ যন্ত্রণারও নয় , একটি খাঁচার ভিতর দুর্লভ মাংসপিণ্ডের মতো ভালোই তো আছি । নিকটে প্রাণযোগে প্রাণ রাখতে গিয়ে সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সংক্রমণ , যেভাবে কুকুরটি লালা ঝরাতে থাকে – যদিও দূরে মঞ্চের নিচে অন্ধকার মাথাগুলো – জন্মের ভেতর শিখে গেছে জিভ লুকোতে
★★★