অনুলিপি-৩

মূলত গদ্য ও গল্পকার। পেশায় সাংবাদিক। দীর্ঘদিন নানান প্রথম সারির দৈনিকে সাংবাদিকতার পর নিজে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র চালিয়ে বর্তমানে সেই “দেশ মানুষ” সংবাদপত্রটি অনলাইনে নিয়ে আসেন।তিনি বর্তমানে তারই কর্ণধার। কবি মিশ্র বাইফোকালিজমেরও একজন অন্যতম সদস্যা।আজ তাঁরই পত্র-কাব্য নিয়ে বাইফোকালিজম্-র পতা সেজে উঠল।

অনুলিপি-৩

ক বি   মি শ্র

প্রিয় তুই,
কেমন আছিস আর জিজ্ঞেস করবো না। নিশ্চয়ই ভালো আছিস্। সাত বছর পর তোকে চিঠি লেখা। এখন তো কেউ লেখে না, whatsapp r massenger এ লেখে। আমার ইচ্ছে হল চিঠি লিখতে। চিঠিতে তোকে অনেক কাছে পাই।অনেক আপন মনে হয়।সোসাল মিডিয়ায় তো সব সময় দেখি তোর আপডেট। তুই হয়তো জানিস না। যেদিন তোর সঙ্গে শেষ দেখা হয়ে ছিল, সেই দিনই আমি সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। লাষ্ট দুবছর অন্য নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছি, শুধু তোকে দেখব , তাই।
তোর মেয়ে দুটো খুব সুন্দর হয়েছে, খুব মিষ্টি… তোর মতোই হয়েছে… বাপ মুখো মেয়ে খুব ভাগ্যবান হয়। মনে মনে হাসছিস তো, কেমন বুড়িদের মতো কথা বলছি…হাসলে কিন্তু তোকে দিব‍্যি লাগে..যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। তবে এখন তোকে আরও হ‍্যান্ডসাম লাগে। মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির চাকরি করিস বোঝাই যায়।
তোকে এখন “তুই” বলতে কেমন লাগে, তুমি বা আপনি কি বলব? একসময় খুব “তুমি” বলতে চাইতাম। তুই হয়তো চাইতিস্, কিন্তু কি করবো আমার উপায় ছিল না। সায়ন্তনী তখন তোর প্রেমে পাগল.. সবসময় আমাকে বলছে তোর সঙ্গে আলাপ করে দেওয়ার জন্য…যেন তুই আমার কথা শুনবি। আলাপ করে দিয়ে ছিলাম, তোদের সম্পর্ক ও হয়েছিল…বিয়ে করলি না কেন ? অবশ্য ও যে টাইপের মেয়ে ছিল, আমার ভালো লাগতো না। তবুও ভেবেছিলাম তোকে হয়তো সত্যিই ভালোবাসে।
অথচ অবাক দেখ আমি নিজেই জানতাম না তোকে ছাড়া আমিই বাঁচবো না। আজও প্রতিটা দিন শুরু করি তোর কথা ভেবে, রাতেও তোর প্রোফাইল দেখে ঘুমোই।
মালবিকার সঙ্গে তোকে খুব মানিয়েছে। শুনেছি ও নাকি তোর কোম্পানিতেই কাজ করে। আমি ও আর বেকার নেই, একটা প্রাইমারি স্কুলে চাকরি নিয়েছি। বাচ্চাদের নিয়ে সময়টা ভালোই কেটে যায়।
দেখ এতক্ষণ কত কথাই বলে গেলাম, যার জন্য চিঠি লেখা.. আগামী ৯ই মাঘ আমার আর সন্দীপের রেজেস্ট্রি..আমি চাই তুই আমার সাক্ষী থাক। ভাবছিস তো, এই বয়সে বিয়ে, কিছু করার ছিল না, ভায়েরা যে যার বাইরে, বোনের বিয়ে দিয়েছি, বাবা মা নেই। তাই সবাই প্রেসার দিল। সন্দীপ ব‍্যক্তি হিসেবে খুব ভালো। কেয়ারি। গত ডিসেম্বরে যখন অ্যাপেন্ডিক্সের যন্ত্রণায় মরতে বসে ছিলাম,হাসপাতাল ,ডাক্তার, আমাকে দেখাশুনা সব ওই করেছে।তোর কথা সব বলেছি। আসলে না বললে হয়তো ওকে ও ঠকাতাম। তুই না চাইলেও আমার জীবনের একটা বড় অংশ তুই।


এখন ও যে বেঁচে আছি, সেটাও তো তোর জন্য.. মনে আছে ? মাস্টার্স করার সময় আমরা পিকনিক করতে গিয়ে ছিলাম দিঘায়। আমি জল ভয় পেতাম, তাই পাড়েই ছিলাম। সবাই নামছে , তুই ও আমাকে জোর করলি, সাহস পেয়ে তোর হাত ধরে অনেক দুরে চলে গেলাম । কখন যে হাত ছেড়ে তলিয়ে যাচ্ছি তোর আর খেয়াল ছিল না। যখন খেয়াল হলো, তখন অনেক দুর চলে গিয়েছিলাম। শুধু হাত টুকু দেখা যাচ্ছে। অত ঢেউ কাটিয়ে কি ভাবে আমাকে তুলে আনলি, আজও ভাবলে অবাক লাগে…তুই কিভাবে এক্সপার্ট এর মতো পেটে প্রেসার দিয়ে জল বের করলি..আমার মুখে মুখ দিয়ে নিশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা …চেতনে- অবচেতনে..সারা শরীরে শুধু ই তোর স্পর্শ। সমুদ্রের পাড় থেকে হোটেলে পর্যন্ত আমাকে কোলে করে এনে ড্রেস চেঞ্জ করে হোটেল বয়কে বলে গরম দুধ পর্যন্ত আনিয়ে ছিলি। আমার রুমমেট অর্পিতা তো অবাক। সায়ন্তনী অবশ্য একটু অফেনডেট হয়েছিল। ও বলছিল তুই কেন এতসব করছিস। সবাই ভেবেছিল তুই আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসিস। তখন থেকে আমি ও চাইতাম তোর কাছাকাছি থাকার। কিন্তু আমি কখনোই হ‍্যাংলা পনা করতে পারি নি..আমার নিজস্বতায় লাগে। ওই ঘটনার পর সবাই তোকে যখন উতক্ত‍্য করতো, তুই কেমন একটা রহস্য ভরা হাসতিস..
ঠিক মানে বুঝতাম না। আমার লজ্জা করতো..তবে তখন থেকে তোকে একটু অন্য চোখে দেখতাম। অভিমান হতো, কে বলেছিল অতসব করতে…অভিমান তো অন্তরে গাঁথা.. সন্দীপ তাই বলে, অভিমান করে যেন তাকে না ছাড়ি। নাহ্, এখন আর অত অভিমান করি না।…
তোর সঙ্গে শেষ দেখাটা আজও মনে পড়ে..সায়ন্তনী তোকে কি বলেছিল জানি না, তবে তুই যে অতটা রূঢ় হতে পারিস আমি জানতাম না। আমি তোর সম্পর্কে কোন দিন ই কারো কাছে মন্তব্য করিনি। আমার রুচিতে লাগে। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝে সেদিন কলেজ ক‍্যান্টিনে যা নয় তাই বললি। অর্পিতা, সঙ্গীতা, নয়না -সবাই বলেছিল ওটা সায়ন্তনীর কাজ, ওই তোকে ভুল বুঝিয়েছে….আমাকে পাঁচ বছর দেখার পর ও কি করে ভাবলি আমি অন্য কাউকে প্রেম পত্র দেব। আমি কি তেমন ছিলাম। আমি বলেছিলাম প্রমাণ দেখাতে। পারিসনি তুই.. পরে ক্ষমা চেয়ে অনেকের হাতে চিঠি দিয়েছিলি..কিন্তু আমি কোন রেসপন্স করিনি… জানি না ওই রাগটাই তোর ভালোবাসা ছিল কিনা..তবে আমার এতটাই অভিমান হয়ছিল যে আর সাড়া দিইনি…
থাক সে সব কথা, মন ভার হয়ে যায়… হয়তো যত বয়স হবে.. স্মৃতি ততই নাড়াচাড়া করবে…নতুন পুরাতনের দ্বন্ধ হবে…
এখন আর আগের মতো চঞ্চল, ছটফটে নেই আমি। সবসময় ওটা নিয়ে কম কথা শোনাসনি..এখন আমি শান্ত সংসারী..সন্দীপ বলেছিল বিয়ের পর বাইরে কোথাও যাবে – উটি, কুলুমানালী, গোয়া, না হলে সিঙ্গাপুর.. আমি সব বাদ দিয়ে দীঘায় যাবো বলেছি..শুনে কি হাসি…আসলে ও যেখানে যেখানে যেতে অভ‍্যস্থ, সেখানে দীঘা …তবে আমার কথাতেই ওখানে একটা বড় হোটেল বুক করেছে…. ওটা ওর চয়েস…
কথায় কথায় বলতে ভুলে গিয়েছি, সন্দীপ একটা মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির co.
স্পিড পোষ্টে চিঠিটা পাঠাচ্ছি, তুই কিন্তু অবশ্যই আসিস, না হলে আমার বিয়ে আটকে যাবে.. তুই যতক্ষণ না আসিস বিয়ে হবে না… আর হ‍্যাঁ তোর সুইট পুচকি দুটো আর মালবিকাকেও সঙ্গে আনিস….ইনভাইট কার্ডটাও পাঠিয়ে দিলাম…
আর কিছু না..অবশ্যই আসিস…
   

          ইতি
“অসমাপ্তি”

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *