গৌতম মাহাতো
ছবি ও লেখা
চিল্কিগড়। নামটা এখন আর নতুন নয়।বিশেষত বহেমিয়ান ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে।কিন্তু কেমন আছে এই চিল্কিগড়?,ইতিহাস সাক্ষী রেখে জাম্বনী ব্লকের সেই সব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের চিত্র তুলব না।বরং অবহেলার একটা নিদর্শন বয়ে চলছে ৪৫০ বছরের জীর্ণ ক্ষয়িষ্ণু একটা রাজবাড়ি।যারা চিল্কিগড় বেড়াতে গেছেন তারা সকলেই হয়তো রাজবাড়িটা একবার ঢুঁ মেরে এসেছেন।কিন্তু এর ইতিহাসের নমুনা পেলেও প্রামান্য সংরক্ষনের অবহেলায় আজও বোবা বিধবার মত পড়ে আছে।যেখানে অনতি দূরেই অপর একটি রাজবাড়ি পুনর্পরিচর্যায় প্রান ফিরে পেয়েছে সেখানে সামান্য সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহের প্রাসাদে আজ ইঁট কাঠেরর পাঁজর দাঁত নখ বের করছে রোজ।কনকদুর্গা মন্দিরের যে নবরূপ আমরা আজ দেখছি এটা মূল মন্দির বা বিগ্রহ কোনওটাই নয়।শুধু তার ওষধি উদ্যান নিয়ে রাজ্য বায়োডায়ভারসিটি বোর্ড সংরক্ষণ দেখিয়েছেন তার দ্বিগুন সংরক্ষনের দাবি রাখে ভগ্নপ্রায় প্রাচীন মূল মন্দির।যা বর্তমান মন্দিরের ঠিক পাশেই শাখামৃগদের বাসস্থান।এই মূর্তি চুরি হয়েছে বারচারেক।
প্রশাসন সাময়িক কর্তব্য করেছে।কিন্তু তার সংরক্ষনের কোনও উদ্দ্যোগ আজ অবধি চোখে পড়েনি।রাজবাড়ি চত্তরের ভেতরে বেশ কিছু মন্দির রয়েছে যা রক্ষনাবেক্ষন তো দূর নজরটুকুই দেওয়া হয়ে ওঠেনি প্রশাসনের।অথচ ঝাড়গ্রাম পর্যটন শিল্পের একটা শক্ত স্তম্ভ এই নীলবসনা দেবীর চিল্কিগড়।
সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময় স্বপ্নে প্রাপ্ত এই দেবী মূর্তি স্থাপন করেন।মূর্তি নির্মিত হয় তার তিন রাণীর কাঁকন নিয়ে।চতুর্ভূজা এই দেবীর অষ্টমীর রাতে হয় নিশা পুজো।এই পুজোয় অংশগ্রহনের অধিকার শুধু মাত্র জপ পরিবারের ও পুজারি রাম চরণ ষড়ঙ্গীর উত্তরসূরী পুজারীর।অনেকের দাবি এই নিশাপুজো নাকি দেবী রংকিনির।মূর্তি প্রতিষ্ঠার বহু পূর্ব থেকেই যদিও পূজো প্রচলন ছিল কিন্তু মূর্তির রূপদানে তিনিই প্রথম উদ্যোগী ব্যক্তি।যদিও আদিবাসীদের একাংশের দাবি এই ‘থান’ ছিল অনার্যদেরই।পরে তা রাজানুগ্রহে রূপপরিবর্তন হয়ে মূর্ত হয় বর্তমান রূপ।এবং প্রচলন হয় বলির।কান পাতলেই শোনা যায় এক সসময় নাকি নর বলিরও প্রচলন ছিল।কিন্তু দেবীর নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায় একদিন।রাজা গোপীনাথ সিংহ নির্মিত সেই স্বর্ণ মূর্তি১৯৬০সাল নাগাদ ডাকাতি হয়।এবং ১৯৯৬ সালের দিকে রাজা গোপীনাথেরর বংশধরেরা অষ্টধাতুর মূর্তি পুনরায় প্রতিস্থাপন করেন।কিন্তু ২০০৭ ও ২০০৮ এ আবারও খোয়া যায় দু দুবার এই মূর্তি।
এরপরও প্রশাসন সংরক্ষনের কোনও রূপ নজর চোখে পড়েনি।এলাকা বাসীই উদ্যোগী হয়ে মন্দির সংরক্ষণ কমিটি তৈরি কিছুটা চেষ্টা করলেও তা অবৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ৪৫০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
মহকুমা শাসক নকুল চন্দ্র মাহাত ২০০৭ সালে বায়োডায়ভারসিটি বোর্ডের নজরে আনলেও ইতিহাস রক্ষার খামতি কিন্তু স্পষ্ট।
★★★