ক্ষয়ে যাওয়া এক খণ্ড আত্মজৈবনিক আবার বৃষ্টি আসুক

   ★★ক্ষয়ে যাওয়া এক খণ্ড আত্মজৈবনিক

আবার বৃষ্টি আসুক

 

ছবিঃ গৌতম মাহাতো

কলেজের ছাদ থেকে অর্পা অনেকটা ফিতের মতাে লাগে। পাড়ে সারি সারি সব দোকান পাঠ, পানের গুমটি, ভাইজানের চায়ের দোকান। সেখানে আমার মতাে কিছু লাস্ট বেঞ্চের ছেলেরা অধিকাংশ সময়টাই সাজিয়ে দেয়। তার পাশ দিয়েই রাজনন্দগাঁও-এর হাইওয়ে, লম্বা শুয়ে ওম নেয় শীতের দুপুরে। একে একে লরির ডাইভাররা তাদের কিসসা শােনায়। মুম্বাই-এর কোন বার গার্ল-এর অথবা কোন রাতের সফরের। আমার অবাক লাগে ওদের দেখে। মনে হয় কোন প্রাণ-পুরুষ যেন উঠানে কে লিয়ে কৌন কম্বখত কাহা। আপ বয়ঠিয়ে বয়ঠিয়ে—
জিন্দেগী হ্যায় পানী কী বুলবুলে জয়সা 
          চন পল ঠহর গয়ে তাে খতা কয়া হ্যায়।। 
        মুসাফির হম মুসাফির তুম 
              কৌন জানে রাস্তা কৌন সা। 
তারপর একে একে সবাই কোথায় জানি হারিয়ে যায়। দ্বিতীয়বার আর কারও সাথেই দেখা হয় না। ঐ বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতেই এক দুপুর থেকে আরেক দুপুর লাফ দেয়। কলেজে মেয়েরা চাপা স্বরে আমায় দেখে আলােচনা করে। ছেলেরা বলে 1. প্রবাসী বাঙালি মেয়েটি সে একদিন দাঁড়াল চা দোকানের সামনে। আমি তখন অরপার দুপুর খেলা দেখছি। এ সময় নদীটা বড় একা হয়ে যায়। বাচ্চারা ওর বালি নিয়ে খেলে না, কেউ মাথায় সজির বােঝা নিয়ে ওপারে চাটিডিহ-র দিকে হেঁটে পার হয়ে যায় না। ঝিমলি হাত বাড়িয়ে বাদামী একটা খাতা দেয়। চিনতে অসুবিধে হয় না। আমার হারিয়ে যাওয়া ডাইরিটা। মনের ভেতর একটা আলুথালু জলস্রোত। শুধু বেশী মাত্রায় থ্যাঙ্কস ছাড়া আর কোন কথাই হয়নি সেদিন। তারপর যতবার ওদের গ্রুপটাকে ক্রস করে গেছি সিঁড়িতে বা বাগানে বা ওরা চা দোকানের সামনে দিয়ে যতবার গেছে শুধু জটলার ভেতর থেকে শুনেছি থ্যাঙ্কস থ্যাঙ্ক আর হাসির দমকা। প্রথম নামটা প্রচারে আসে প্রেসিডেন্ট সিলেকসনের দিন। একে একে নানা নাম উঠে আসছে। তাদের বেশীরভাগকেই চিনি না। অমিতা হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল, – মুসাফির। আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকল নামটা। ভাবছি কে এই মুশাফির! ততক্ষণে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে উদোম হাসি জুড়েছে। সঙ্গে ম্যাডমও।
বহুদিন পর ভাের দেখলাম বােধ হয়। ভুলেই গেছলাম ভাের হয় কেন? আনার দশ বাই বারাে রুমে বােঝাই যায় না ভাের সকাল নাকি দুপুর । হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছি। গুরগাওর অবজারভেশনের জন্য কলেজ থেকে বাস ছাড়বে। আমি অলরেডি লেট। যদি আমার জন্য বাস না অপেক্ষা করে ! ফুটপাতের ধার ঘেঁসে দাঁড়ালাম। মেরুদন্ড দিয়ে একটা কিলবিলে পােকা নিচে নেমে গেল। কাকেদের একটা জটলা কি যেন একটা প্যাকেট নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। কাঁচ তোলা কালো স্যান্ট্রোটা আমার সামনেই দাঁড়ালাে। দেখি ভেতর থেকে হাত নেড়ে ডাকছে মার্সি বিনিতা, উঠে এলাম। মাসি খ্রিস্টান। গাড়ি বেশ জোরে চলছিল। আমার দিকে তাকালাে মার্সি, সরাসরি। যে দৃষ্টির মানে অনেক কিছুই হতে পারে। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম , শুধু হাসলাম। উত্তরে সেও হাসল। মার্সির হাসিটা অদ্ভুত সুন্দর আজকে ভােরের মতাে। দুপাশের গজদাঁত দেখা যায়। ও বলল –            ড্রাইভিং জানতেহাে মুসাফির ?
আমি ঘাড় নাড়লাম; ও হাসল আবার; মার্সি বলল কোন বেলা ইয়েস অর নো? হাঁ থোড়া থােড়া কৌশিশ করতা । জানি না কেন মার্সির সাথে অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। হয়তাে বা কলেজে সময়ে পৌঁছােনাের চাপটা কমে গেছল বলে। যখন আমরা পৌঁছলাম দেখি সবাই বাসে উঠে পড়েছে। মার্সি গাড়িটা পার্কিং জোনে এনে দাঁড়াল। আমি নামতে যাব হঠাৎ মার্সি ডাকল
– মুসাফির; জো শুন রাহা হু ক্যয়া ও সহি হ্যায়?
আমি আশ্চর্য হলাম পালা। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বাস থেকে সমস্বরে ডাক পড়ল। মার্সি ওদের দলটাতে মিশে গেল। আমি ধীর পায়ে বাসে উঠে এলাম। বসার জায়গা প্রায় নেই। হঠাৎ হাতে টোকা খেলাম মুসাফির।। জো হ্যায় ও তুমহারা হ্যায় উসে কিউ বদলাে গে ! এবার আমার অবাক হবার ওর পাশটা ফাঁকা বটে তবে একখানা লেডিজ পার্স রাখা, আমার চোখটা ওদিকে যেতেই অমিতা ওটা হাতে নিয়ে বলল – ওহ, সরি; বসলাম। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম মার্সি কোথায়। ঝিমলির সাথে চোখ মিলল। আলতাে হাসলাম।

বাকি অংশ পরের সংখ্যায়                                  ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *