পর্ব-২৬
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-র
চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
ছবিঃ গৌতম মাহাতো
পর্ব-২৬
শ্রীমন্মহাপ্রভুর পদধূলিধন্য চন্দ্রকোণা।
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ।
শ্রী অদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ।।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে আমাদের সনাতন হিন্দুধর্মের
মধ্যে যখন নানা জটিলতার সৃষ্টি হইয়া ছিল এবং
নিরাকার ইসলাম ধর্ম্ম যখন অত্যাচারী মুসলমান শাসকবর্গের প্রভাবে ব্যাপকভাবে হিন্দুদিগকে ধর্মান্তরিত করিতে ছিল, সেই যুগসন্ধিক্ষণে শ্রীধাম
নবদ্বীপে জীবের পরিত্রাতা শ্রী মন্মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ
চৈতন্যদেবের আবির্ভাব হয়। হিন্দুর সনাতন বৈষ্ণব
-ধর্মের ভাবধারাকে অতি সহজ ও সরল করিয়া
কলিযুগে অন্তত প্রাণ ক্ষীণকায় মানবের সাধনোপ-
যোগী কেবল ‘নাম’ ধর্ম্ম প্রচারের জন্য বর্ত্তমান
ভাগীরথী তীরস্থ নবদ্বীপে১৪০৭ শকাব্দের শুভ
দোল পূর্ণিমা তিথিতে শ্রী শ্রীগৌরচন্দ্র পিতা জগন্নাথ মিশ্রের গৃহ আলোকিত করিয়া শচীমাতার
গর্ভসিন্ধু হইতে ধরাধামে অবতীর্ণ হলেন। এই
সম্বন্ধে যে শ্লোকটি প্রচলিত আছে তাহা পাঠক
-বর্গের সুগোচরার্থে নিবেদন করি:-
শাকে মুনি ব্যোম যুগেন্দুগন্যে
পুণ্যে তিনি ফাল্গুনে পৌর্ণমাস্যাম্
ত্রৈলোক্য ভাগোদয় দেব: শচীনন্দন আবিরাসীৎ।
★★(ইন্দু ১, যুগ ৪ , ব্যোম ০,মুনি ৭, অর্থাৎ ১৪০৭শকাব্দ)
শ্রী মহাপ্রভুর পদধূলি ধন্য চন্দ্রকোণা
(খণ্ড-২)
নিমাইচন্দ্রের আবির্ভাবের পুর্বে প্রকৃতি দেবীও তাঁহার আসন সংরক্ষিত করিয়া রাখিয়াছিলেন।
মোক্ষ দায়িকা ভাগীরথ ও জলঙ্গী নদীরস্রোত-ধারা
আবর্ত্তিত হইতে হইতে কালক্রমে নয়টি দ্বীপ অর্থাৎ
নয়দল পদ্মের সৃষ্টি করেন। তাহার মধ্যদ্বীপে অর্থাৎ
নাভীপদ্মের মধ্য বিন্দুতে এই দিব্য শিশুর জন্ম হয়।
১৯২০ খ্রীস্টাব্দের District Gazzetter of Nadia by Garret, ICS , ইহার ১৮৩ পৃষ্ঠাতে লিখিত আছে যে, “The people point to the middle of the stream as the spot where Chaitanya was born. “
বর্ত্তমান পুণ্যতীর্থ নবদ্বীপ ধামের সুর ধ্বনী ভাগীরথী তীরস্থ প্রাচীন মায়াপুর অঞ্চলে পুরাতত্ত্ব বিভাগ কর্ত্তৃক খননের ফলে মৃত্তিকাভ্যন্তরের প্রায় ২০ফুটের নীচে একটি অতি প্রাচীন মন্দিরের শিখর দৃষ্ট হয়। পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, ” ইহাই যথার্থ শ্রী মন্মহাপ্রভুর জন্ম স্থান এবং
এই স্থলেই বিষ্ণুপুরের ধার্ম্মিক রাজা বীরহাম্বির
গৌরাঙ্গ সুন্দরের জন্ম স্থানের উপর ঐ দেব-দেউল
নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন।” এক্ষণে এক নিম্বতরুছায়ায় প্রভূর সূতিকাগার গৃহরূপে ঐ
স্থানটি পুনরক্ষিত হইয়াছে।
পণ্ডিতগণ ইহাও মনে করেন যে, দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের ৪৭১৩ বৎসর পরে
এবং তিরোধানের ৪৫৮৮ বৎসর পরে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রকট হয়।
“Sri Chaitanya Mahaprabhu-completed the Vedic restoration Sixteenth century (Back to God head Vol-15, No 8)
কিন্তু কি আশ্চর্য! যাঁহারা সত্য ও ত্রেতাযুগে ছিলেন, তাঁহারাই দ্বাপরে আসিয়াছিলেন আবার
তাঁহারাই এই কলিযুগে তাপিত জীবের উদ্ধার হেতু
সর্ব্বদা ঁ রাধাভাবে ভাবিত নবদ্বীপ চন্দ্রের সহিত
‘গৌর লীলা রস’ আস্বাদনের জন্য গুরুবর্গ, প্রিয়া বর্গ, পার্ষদাদি ও পঞ্চতত্ত্বের অপর চারজন গোস্বামীরূপে এই পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে অবতীর্ণ হলেন।
আমাদের ধর্ম্মের অর্থ:- যিনি সকলকে ধরিয়া
আছেন এবং আমাদের সমাজে সকলের সমান
-.গতি আর এই সমাজ ধর্ম্ম ভিত্তিক। সুতরাং
আমাদের ধর্ম্ম সত্য, সমাজ বন্ধন সত্য, বেদ,পুরান,
উপনিষদাদি শাস্ত্র সত্য ;মঠ মন্দিরাদির দেব-দেউল
অবতার গণ সত্য; গীতা সত্য আর সত্য
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রী শ্রী ভগবানের নিসৃত বাণী…
ক্রমশঃ …