স ন ৎ কু মা র ব ট ব্যা ল-র জীবনীচর্চায়
যে জন থাকে প্রানের মাঝে
আজ ভারতবর্ষের এক কৃতি সন্তানের
কথা আপনাদের বলব। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এই মহামানবের নাম। আজ তাঁর অমৃতলোকে যাত্রার দিন।আসুন
স্মরণ করি সেই মহামানবকে।
সতীশচন্দ্র সামন্ত
জন্ম— ১৫ ই ডিসেম্বর ১৯০০ সাল। গোপালপুর, থানা-মহিষাদল,
মহকুমা-তমলুক,
মেদিনীপুর(ব্রিটিশ ভারত)
অমৃতলোকে যাত্রা— ৪ ঠা জুন, ১৯৮৩ সাল ।মহিষাদল, পশ্চিমবঙ্গ,
ভারত।
বাবা– ত্রৈলোক্যনাথ সামন্ত
মা– কিশোরী দেবী
অল্প বয়সেই মাকে হারিয়েছিলেন। বিমাতা ভবানী দেবী ও ঠাকুরমা দয়াময়ী দেবীর কোলেপিঠে মানুষ হন। ছোট্ট সতীশ গ্রামের দ্বারকানাথ প্রধানের পাঠশালায় প্রাথমিক পাঠ শেষ করে মহিষাদল রাজ হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলের সেই সময়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন হরিপদ ঘোষাল। ওঁর নৈতিক চরিত্র ও জীবনচর্যা ছিল আদর্শস্থানীয়।যা ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করেছিল কিশোর সতীশচন্দ্রকে। ছোট্ট বেলায় এই এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কার্যকলাপ তাঁকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছিল।এই সময় ১৯১৬ সালে মহিষাদলে অন্তরিন থাকা চরমপন্থী বিপ্লবী সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ওরফে স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর সান্নিধ্যে এসে বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৯১৬ সালে সতীশচন্দ্র প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন।কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে আই এস সি কোর্সে ভর্তি হন। ১৯১৮ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই এস সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন।
১৯১৯ সালে পাঞ্জাবে জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যা ছিল এক বিভীষিকাময় ঐতিহাসিক অধ্যায় ।সেই সময় সারা ভারতবর্ষে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র সমাজ স্কুল কলেজ থেকে বেরিয়ে এসে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে সামিল হয়।
সতীশচন্দ্র সামন্ত ও শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাঠ চুকিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিকের ভূমিকা পালনে ,ঝাঁপিয়ে পড়েন ।
আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।
১৯২৪ সালে তমলুক শহরের হ্যামিল্টন হাইস্কুলে বসেছিল স্বদেশী মেলা।এই মেলা প্রাঙ্গণে সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয়ের সাথে আলাপ হয়
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ও আগামী দিনের আর এক বিপ্লবী অযাতশত্রু অজেয় পুরুষ অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ই যেন সেতু বন্ধন করে দিয়েছিলেন এই দুই মহান বিপ্লবীর জীবনগাথার নব হলদিঘাট।
তিনি ছিলেন অকুতোভয়, প্রচণ্ড উপস্থিতবুদ্ধির অধিকারী। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অতুলনীয়, ভীষণ জেদি ও চঞ্চল ।ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেন খুব অল্প বয়সেই। সতীশচন্দ্র সামন্ত ছিলেন প্রচণ্ড আদর্শবাদী। বিলেত ফেরত বিখ্যাত ব্যরিস্টার
বীরেন্দ্রনাথ শাসমল ( কাঁথি), জননেতা কুমার চন্দ্র জানা(সুতাহাটা), মহেন্দ্র নাথ মাইতি( সবং) প্রমুখ দের নেতৃত্বে নিজেকে তৈরী করতে পেরেছিলেন।
সঙ্গী হিসেবে সাথে পেয়েছিলেন মেদিনীপুরের অবিসংবাদিত নেতা অজেয় পুরুষ অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়কে ( তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক, ১৯৬৭ ,১৯৬৯,১৯৭১ সালে তিনবারের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী),পাঁশকুড়ার জনদরদী কংগ্রেস নেতা চিরকুমার রজনীকান্ত প্রামাণিক ( মন্ত্রী, পঃবঃ সরকার), বীর বিপ্লবী সুশীল কুমার ধাড়া ( পঃবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ও পরবর্তী কালে লোকসভার সদস্য),বিশিষ্ট বিপ্লবী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শ্যামাদাস ভট্টাচার্য ( অধ্যক্ষ, মন্ত্রী পঃবঙ্গ সরকার),খেজুরির জননেতা ও শিক্ষাবিদ নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি ( মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার),আভা মাইতি (সর্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদিকা, লোকসভা সদস্যা,মন্ত্রী পঃবঙ্গ সরকার, সদস্য- নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি ও অন্যতম সদস্যা, নিখিল ভারত কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটি, মন্ত্রী- ভারত সরকার),
কাঁথির জননেতা বসন্তকুমার দাস (কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ), মাতঙ্গিনী হাজরা, গুণধর ভৌমিক(তমলুক) মহাতপ চাঁদ দাস (বিধায়ক-সুতাহাটা),হরহরি দেব (বিধায়ক-সুতাহাটা), বিরাজ মোহন দাস (সুতাহাটা), বিধুভূষন কুইতি (সুতাহাটা), ক্ষুদিরাম ডাকুয়া ও কুমুদিনী ডাকুয়া ( বরদা- সুতাহাটা), ডাক্তার জনার্দন হাজরা, ডাক্তার গোবিন্দ চন্দ্র ভৌমিক (এম এল সি,মহিষাদল), প্রবীর চন্দ্র জানা(নন্দীগ্রাম -বিধায়ক),সুবোধ কুমার মাইতি (বিধায়ক-নরঘাট),অনঙ্গ মোহন দাস (বিধায়ক-ময়না), চারুশীলা জানা(সুতাহাটা), সুবোধ বালা কুইতি (অধিনায়িকা- ভগিনী সেনা), লবন আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক আশুতোষ মাইতি(বাবুপুর,সুতাহাটা) লড়াকু নেতা শক্তি প্রসাদ ভট্টাচার্য (সাহাপুর,সুতাহাটা), বরদা কান্ত কুইতি (নন্দকুমার) আরও অনেক অনেক কংগ্রেস কর্মীবন্ধুদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজে ১৯৩০ সালের ১২ ই মার্চ মহাত্মা গান্ধীর ডাণ্ডি অভিযানের মাধ্যমে শুরু হওয়া লবন সত্যাগ্রহ আন্দোলন সারা ভারতবর্ষে এক নব উন্মাদনায় উদ্বেলিত করেছিল।মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সেই উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছিল।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অবিসংবাদীে নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয়ের নেতৃত্বে ,অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়,রজনীকান্ত প্রামাণিক, বসন্ত কুমার দাস, মহাতপ চাঁদ দাস, কুমার চন্দ্র জানা, বিধুভূষন কুইতি, বরদাকান্ত কুইতি, সুশীল কুমার ধাড়া,গুণধর ভৌমিক দের সহযোগিতায় হলদি নদীর তীরে ঐতিহাসিক নরঘাটে লবন আইন অমান্য করতে যান হাজার হাজার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেচ্ছাসেবী ।সেখানে ব্রিটিশ পুলিশের
হাতে সতীশচন্দ্র গ্রেফতার হন এবং বিচারে তাঁর আড়াই বছর কারাদণ্ড হয়। ১৯৩৭ সালে সতীশচন্দ্র সামন্ত কলকাতা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ।কিন্তু ১৯৪০ সালে ব্যাক্তিগত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গ্রেফতার বরন করেন।সেখানে তাঁর ছয় মাসের জেল হয়।
১৯৪২ সালের ৯ ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধী আওয়াজ তুললেন ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো’। সেই ধ্বনি আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পোড়ল।মহাত্মা গান্ধীকে আগেই জেলে ঢোকালেন ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু আজাদির আগুন দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়ল।
মেদিনীপুরের মাটি তৈরীই ছিল।শুধু সময়ের অপেক্ষা ।মহাত্মা গান্ধীর অনুসরণকারীরা দলে দলে এসে ভীড় জমাল আধুনিক ভারতবর্ষের হলদিঘাট (তমলুক) এর কংগ্রেস কার্যালয়ে। বাংলাদেশের অবিসংবাদী নেতা, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা, মেদিনীপুরের দামাল ছেলে অকুতোভয় বীর বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে তৈরী হল নতুন রাষ্ট্র। সেটা ছিল ইতিহাসের ইতিহাস।
১৯৪২ এর ১৭ ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাভারতীয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার।প্রথম তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রথম সর্বাধিনায়ক
হলেন স্বাধীনতা আন্দোল নের অগ্রণী সৈনিক সতীশ চন্দ্র সামন্ত ।পরবর্তীতে দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক হলেন অজেয় পুরুষ অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে ছিল এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতৃত্বরা। উত্তর প্রদেশের বালিয়া(স্বাধীনতার পর যে লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন সেদিনের তরুণ তুর্কী- চন্দ্র শেখর)য় কিছু দিনের জন্য জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলাতেও অল্প কিছুদিনের জন্য জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মেয়াদ ছিল প্রায় দু বছর। যেটা অকল্পনীয় ও অবর্ণনীয় ।মেদিনীপুরের মানুষ ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিজেদের তৈরী করতে পেরেছিলেন।বহু বাহাদুরের বাহাদুরি আমরা দেখেছি। একটা জেলায় তিনজন ব্রিটিশ জেলা
শাসককে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করতে হাত কাঁপেনি ।ইনি সেই জেলার অবিসংবাদী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন সতীশচন্দ্রের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের সেদিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দেখতে । তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের এই সোনালী অধ্যায়ের প্রশংসা করেছিলেন। মেদিনীপুরের মাটির গুণে লক্ষ্য করেছিলেন মহাত্মা।
ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়, প্রফুল্ল চন্দ্র সেন,অতুল্য ঘোষ সবাই সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয়কে আলাদা শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমের চোখে দেখতেন। দীর্ঘদিন কারাবাসের অন্তরালে কাটিয়েছেন ।স্বাধীনতার পর দেশে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৭সালে তিনি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৪৭-১৯৭৭ দীর্ঘদিন ভারতবর্ষের লোকসভা সদস্য ছিলেন।
পরবর্তীতে সারা ভারতবর্ষের কংগ্রেস রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন আসে। সেদিনের মাদ্রাজ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কামরাজের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয় ।সমস্ত প্রবীন নেতৃত্ব মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করে সংগঠনের কাজে যোগ দেন। সেই সময় অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রীত্ব যায়। তিনি তখন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের আমিত্বে লাগে, অপমানিত বোধ করেন ।কংগ্রেস দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
১৯৬৬ সালের ৫ ই ও ৬ ই ফেব্রুয়ারী কলকাতার শ্যাম স্কোয়ারে নিজের অনুগামীদের নিয়ে ‘ বাংলা কংগ্রেস ‘ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
মেদিনীপুরের অবিসংবাদী নেতা বন্ধু, সুহৃদ, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহযোদ্ধা সতীশচন্দ্র সামন্ত, লড়াকু নেতা সুশীল কুমার ধাড়া, রজনীকান্ত প্রামাণিক, অহীন্দ্র মিশ্র, অন্যান্য জেলা কংগ্রেসের নেতৃত্ব ডঃ হুমায়ুন কবির, জাহাঙ্গীর কবির, বঙ্কিম বিহারী মাইতি ও অন্যান্য জেলা কংগ্রেসের ভিন্ন ভিন্ন পদের পদাধিকারীরা এই দলের সদস্য পদ গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আকাশের দুই নক্ষত্র প্রনব মুখার্জী (ভারতবর্ষের রাজনীতির চানক্য, সদস্য লোকসভা ও রাজ্যসভা ,বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দফতরের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী,পরবর্তীতে দেশের রাষ্ট্রপতি) ও সর্দার আমজাদ আলী(সদস্য- রাজ্যসভা ও লোকসভা) এই দলের সদস্য পদ সংগ্রহ করেন। এই দুজনের রাজনৈতিক গুরু শ্রদ্ধেয় সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয় ও অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়(সর্দার আমজাদ আলী সাহেবের মুখে শোনা)।
★ ১৯৫১-১৯৫২ সাল পর্যন্ত এফ এ ও লিয়াসাঁ কমিটির সদস্য,
★ ১৯৫৩-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রেলওয়ে কোরাপশান এনকোয়ারি কমিটির
সদস্য,
★ ১৯৫৫-১৯৫৭,১৯৬০-১৯৬২ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্ট এস্টিমেটস কমিটির সদস্য,
★ ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এসেসর কোর্ট অফ এনকোয়ারি এবং বড়া ধেমো কোলিয়ারি দুর্ঘটনা কমিটির সদস্য,
★ ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চিনাকড়ি কোলিয়ারি দুর্ঘটনা কমিটির সদস্য,
★ ১৯৫৪-১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পোস্ট এণ্ড টেলিগ্রাফস অ্যাডভাইসারি পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সদস্য,
★ ১৯৬০-১৯৬২ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল বোর্ড অফ অ্যানথ্রোপলজি এণ্ড কয়ার বোর্ড কমিটির সদস্য,
★ ১৯৬০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স অ্যাডভাইসারি কমিটির সদস্য,
★ ১৯৬২-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটির সদস্য,
★ ১৯৬৫-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল শিপিং বোর্ডের সদস্য,
★ ১৯৬৭-১৯৭০ সাল পর্যন্ত হলদিয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রদ্ধেয় সতীশচন্দ্র সামন্ত।
★ ১৯৫৪ সালের আগস্ট মাসে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কনফারেন্সের
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সতীশ বাবু।
★ চাঁইবাসা কয়লা খনি দুর্ঘটনায়
তাঁর নেতৃত্বে পার্লামেন্টারি এনকোয়ারি কমিটি তৈরী হয়েছিল।
আজকের আন্তর্জাতিক হলদিয়া বন্দরের মুখ্য প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রয়াত সতীশ চন্দ্র সামন্ত। তাঁর
দূরদর্শিতার তারিফ না করে পারা যায় না। সংসদে বাংলা ও বাঙালির জন্য লড়াই চিরকাল করে গেছেন। বাংলা ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য তিনিই প্রথম ব্যক্তি সংসদে প্রস্তাব রেখেছিলেন। তাঁর প্রস্তাব মেনেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ভারতবর্ষে মান্যতা পায়। তিনি তাঁর ও পথিকৃত। আশার কথা, ১৯৭২ সালে সতীশচন্দ্র সামন্ত ও অজয় মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসে ফিরে এসে ছিলেন। তমলুক বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন অজয় বাবু। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয় তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে ছিলেন। কিন্তু এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহযোদ্ধা জনতা পার্টির প্রার্থী সুশীল কুমার ধাড়ার কাছে পরাজিত হন। এরপর অজয় কুমার ও সতীশ চন্দ্র দুজনেই রাজনৈতিক সন্ন্যাসে চলে যান।
আজকের দিনে এমন সৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় অভাব।
আমেরিকান এক সাংবাদিককে ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, সতীশচন্দ্র সামন্ত মহাশয়ের সম্পর্কে বলেছিলেন ‘সতীশ বাবু ইস নট এ পলিটিশিয়ান,হি ইস এ ম্যান–এ ম্যান উইথ অল দ্যা নোবল কোয়ালিটিজ। ব্রেন অফ দিজ টাইপ আর ভেরি ফিউ
– দেয়ার নাম্বার ইজ ডিমিনিসিং ডেলি’।
১৯৮৩ সালের আজকের দিনে(৪ ঠা জুন) সতীশচন্দ্র অমৃতলোকে যাত্রা করেন।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর একসময়ের সহকর্মী ও সুযোগ্য রাজনৈতিক শিষ্য প্রনব মুখার্জী এসে ছিলেন । কিন্তু সেদিনের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রী একটা বাসী ফুলের মালা এই হতভাগ্যের গলায় পরিয়ে দেননি। ইতিহাস যে কথা বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। আদর্শকে জলাঞ্জলি দেননি। আসুন সকল ভারতবাসীর উচিত ফুলের মালায়,ধূপের ধোঁয়ায়, পবিত্র চন্দন ফোঁটায় এই মহামানবের অমৃতলোকে যাত্রার দিনে একটু স্মরণ করা।স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদী নেতা সতীশচন্দ্র সামন্তের নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ভারতবাসীর মনের মণিকোঠা…