স্বপনকুমার বিজলী-র ছড়াগুচ্ছ

     ছড়ার ছড়াছড়ি

স্বপনকুমার বিজলী-র ছড়াগুচ্ছ

প্রকৃতই ছড়াকার।এই নাম আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম।লিটল ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্রিকাতে তাঁর ছড়া পাঠকের অনেক আগে থেকেই 
দৃষ্টি ও মন দুই-ই সমান ভাবে বারবার কেড়েছে।তাঁর পাঠকের কোনও সীমা নেই।ছোট থেকে যুবক,বৃদ্ধ কিশোর সকলের কাছেই তিনি হলেন ছড়ার আসল ফেরিওয়ালা।

                    চাঁদের আলাে
             

চাঁদের আলাে যখন এসে ঘর উঠোনে ভরে
 খুশির যেন ছড়াছড়ি খুকুর মাটির ঘরে
                     পড়ায় তখন ছুটি
 মন চলে যায় পাড়ায় পাড়ায় খুঁজতে থাকে জুটি।
 সারাদিনের অনেক ছবি হঠাৎ ভেসে আসে 
খেলার মাঠের বকুলফুলের গন্ধ নাকে ভাসে  
                  চাঁদের আলাের ভিড়ে
কচিকাঁচার সঙ্গে সে মন হারায় ধীরে ধীরে।
চড়ুই শালিক খেলছে কি আর পাকা ধানের শিষে
প্যাঁচার ডাকে ক্ষেতের বাতাস যাচ্ছে বুঝি মিশে       
                   দেখতে ইচ্ছে করে।
 চাঁদের আলাে দিঘির ঘাটে কেমন করে ঝরে।

                  শীত যেই আসে

শীত যেই আসে ——
সারা রাত হিম পড়ে মাঠ ভরা ঘাসে
 ঠান্ডায় কেঁপে ওঠে কুকুরের ছানা
টোকো কুল ভরে থাকে, খেতে তবু মানা। 
শীত যেই আসে ——
গুড় মােয়া পিঠে পুলি চোখে যেন ভাসে
রস ভরা ভাঁড় ঝােলে খেজুরের গাছে
পাটালির ঘ্রাণ পাই শিউলির কাছে। 
শীত যেই আসে ——
সব গাঁয়ে যত চাষি নামে রবি চাষে 
মুলাে কপি মাঠে ভরে, লাউ খায় দোলা 
চাষি বউ হাসি মুখে ধানে ভরে গােলা।
শীত যেই আসে ——
শাল মুড়ি দিয়ে দাদু খুটখুটে কাশে
পরিযায়ী সব ঝিলে আসে দলে দলে
 বইমেলা বড়দিন জমে কোলাহলে।

                       আমি বড় হলে 

আমি বড় হলে–
আদর করে ডাকলে দিদা উঠব না আর কোলে
আমার সখের পিঠে পায়েস করে যদি আবার 
চুপটি করে এক নিমেষে করব সবই সাবাড়।
আমি বড় হলে–
খােলা বইয়ের উপর ঘুমে পড়ব না আর ঢলে
 দাদার মতাে মন দিয়ে খুব করব পড়াশােনা 
দুষ্ট আমায় বলবে না কেউ বলবে খাঁটি সােনা। 
আমি বড় হলে–
দিদির মতাে একাই আমি স্কুলেই যাব চলে 
পথের পাশে পাই যদি সেই ফুচকা বাদাম চানা 
ইচ্ছে মতাে খাব সবই করবে না কেউ মানা।
আমি বড় হলে–
মোটেই কথা বলব না আর ডাকলে ‘ফটকে’ বলে। ‘ফটিক বাবু’ বললে তবেই একটু দেব সাড়া 
আমি বড় হয়ে গেছি বুঝবে তখন পাড়া।

                   পাখির কান্না

                 হিম মেখে ধীর পায়ে 
                    শীত যেই আসে
                পরিযায়ী কত পাখি
                     বিলটায় ভাসে। 

                 সুখে ভরা সংসার 
                     টলমলে জলে
                ছানাপােনা নিয়ে ওরা 
                    দল বেঁধে চলে। 
     
                পাড়ে থাকা যত গাছ 
                    ফুলে ফুলে ভরে 
               নানা পাখি ডালে ডালে 
                    কত খেলা করে। 

               গাছ কেটে ঝিল ভরে
                     হল বহুতল 
               এই দেখে কাঁদছিল
                  পাখিদের দল।

                   স্বপ্নে অভিযান


 স্বপ্নে আমি উড়ে গেলাম চন্দ্রযানের টু-এ
খুব জোরে সে ছুটে গিয়ে চাঁদকে দিল ছুঁয়ে 
চাঁদের বুকে হেঁটে হেঁটে দেখছি কোথায় কী যে 
হিম মাখানাে ধুলাে ঝড়ে একটু গেলাম ভিজে। 

ওজন আমার কমে গিয়ে শরীর যেন তুলাে অনেকদিনের জমে থাকা ইচ্ছেগুলাে ছুঁল 
দেখছি ঘুরে চাঁদের বুকে শুধুই পাথর-মাটি 
ভাবছি মনে মানুষ যদি চাঁদে গাড়ে ঘাটি! 

অক্সিজেন-এর অভাব না হয়, সবাই গাছের চারা চাঁদটা তখন হেসে উঠে খুশিতেই আত্মহারা 
চাঁদ বলেছে, সাবাস খােকা ভাবনা তােমার ভালাে হাজার বছর পড়ে আছি জ্বালাও বুকে আলাে।

মেঘগুলাে সব ডেকে আনি, মস্ত দিঘি কেটে 
জলের অভাব আর হবে না তখন চাঁদের পেটে  বাসযােগ্য কাজ করেছি সারাটা রাত ধরে। 
হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় মােরগ ডাকা ভােরে।

                  দিয়ার কাণ্ড

বই নিয়ে বসলেই কেন ঘুম পায় 
মেঘগুলাে উড়ে উড়ে কোন দেশে যায়
রাত হলে কাক আর চড়ুই কি খায়
দিয়া সব বলে দেবে কচিমুখ থেকে স্কুলের খাতায়
যদি দাও ছবি এঁকে।

দাদা কেন গেম খেলে বকা খায় মা’র 
দুটো দুই যােগে-গুণে কেন হয় চার
সুয্যি না চাঁদমামা নিজ আলো কার
জানতে চাইলে সব বলে দেবে দিয়া 
এনে দাও যদি এক লালমুখাে টিয়া। 

শীতে কেন সব ঝিলে পরিযায়ী চরে 
দিদা রােজ সাঁঝবেলা কার পুজো করে 
রাতের আকাশে কেন বহু তারা ভরে 
হাসি মুখে দিয়া সব পারে বলে দিতে 
কিনে দিলে চুড়ি আর লাল-নীল ফিতে।

               গেছো ভুতের ছানা

            চাঁদের আলােয় সন্ধ্যাবেলা 
                  হাঁটছি তখন একা
           বাঁশবাগানের ঝােপের ভিতর 
                 পেলাম ভূতের দেখা।

            কঞ্চি ধরে ঝুলছে সে যে
                দুলছে বাঁশের বনে। 
            ঝিরি ঝিরি বইছে বাতাস 
                 ভয় পেয়ে যাই মনে। 

            থমকে দাঁড়াই, হেঁকে বলি 
                 দিচ্ছ কে বাঁশ নাড়া? 
             নাকি সুরে বলল আমায় 
                    নির্ভয়েতে দাঁড়া।

               পরিচয়ে বলল সে এক 
                  গেছাে ভূতের ছানা 
              চাঁদনি রাতে বাঁশে ঝুলে 
                  খাচ্ছে মিহিদানা।।


                               ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *