ছবিঃ গৌতম মাহাতো
প্রশান্ত মাইতি-র কবিতাগুচ্ছ
মূলতঃ লিটল ম্যাগাজিনেই তাঁর মুক্তি।দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখির মধ্যেই বসবাস। “বন্ধুর খোঁজে”- সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “হারিয়ে যাবে কিশলয়, সম্পাদিত সংকলন – “প্রীতিদীপ্ত” ও “স্বপ্নভাঙা স্রোত”
পেয়েছেন নানান সম্মাননা ও পুরস্কার, তার মধ্যে- মায়াকরবীর লাল সম্মাননা, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার,কাব্যশ্রী সাহিত্য সম্মাননা,টেকচাঁদ ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার, সিটিএন টি ভি থেকে নক্ষত্রাণী সম্মাননা পত্র ইত্যাদি।
স্রোত প্রেম
যে অবিরাম স্রোত প্রেম বইছে
বুকের ভেতর নিরন্তর
দেখতে পাচ্ছো তাকে …
জানি পাবেনা দেখতে তাকে
তুমি রয়েছো পড়ে অদেখার আবরণ
আমি জানি এ স্রোতের ব্যাকুলতা
যেভাবে আছরে পড়ে নিঃসঙ্গ
পথিকের নিদারুণ হাহাকার,
প্রেমহীন যুবকের আর্তচিৎকার
ঠিক সেভাবেই বয়ে চলেছি স্রোতে
সাঁতার নাজানা হাবুডুবু শিশুটির মতো ।।
সাধনা
হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছি চাতক
দৃষ্টে দিকবিদিক একটা ভালোবাসা
সেই কৈশোর থেকে যৌবন
কত বসন্ত পেরিয়েছি ঝরা
পাতার হাত ধরে ধুলোয় মিশে
চেয়েছি তোমায় মনের সিংহাসনে বসাতে
কবিতার মালায় সাজিয়ে,রকমারি
আনন্দের আলোয় আলোয় ভরিয়ে
প্রেমের ফুলে চাই অর্ঘাঞ্জলি দিতে
সেই চোখ,সেই অকৃত্রিম হাসি
সেই তোমার অহর্নিশ মধুর কথা
বারংবার টোকা মারে সাধনায়
মন ছুঁয়ে যায় ভাবনার একাকিত্বে
শূন্যতা জ্বলে ছাই জলছবির আগুনে ।
সংশয়
একের পর এক হাসপাতালের
গন্ধ ওষুধের হাত ধরে নামে
অসুখের গল্প গাঁথা
দিনরাত বয়ে চলে শুধু কোলাহল
রোগীদের আনাগোনা,সংশয়,
স্বর্গরথের অবিরাম ব্যস্ততা
হিমসিম ডাক্তার আবহমানকাল শুধুই
স্পর্শ করে শিরা উপশিরা
নিঃশব্দে কেটে যায় রাত দিন
ব্যাক্তিগত সম্পর্কের ক্ষত জোরালো হয়
নৈঃশব্দিক একাকিত্বে ।
বসে একা
আমি একা বসে নিরালায়
ব্যস্ত দুপুরের খোলা বারান্দায়
বিকেল আসছে হেঁটে কোনো অভিমানে
আকাশের গা বেয়ে ভার মুখে
কালো ঘন মেঘ বাতাসের
সিড়ি বেয়ে নামছে আমার পায়ে
অলীক কল্পনা গুলো ভিজছে
সেই মেঘ ফোঁটা বৃষ্টি জলে
আমি একা বসে নিভৃতে
চেয়ে থাকি দুর রাস্তার প্রান্তে
সেই চেনা চুড়িদারের রঙে
আমি ভিজছি অপেক্ষার সময় ভুলে ।
জ্যোৎস্না ভেজা রাত
যখন তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে
একমুঠো অন্ধকার নিয়ে হেঁটে যাই
মনে পড়ে তোমার কথা ভীষণ
ঘুমহীন রাত নামা পথে
পূর্ণিমা চাঁদ ছড়াচ্ছে মাটির ধুলোয়
ভাঙ্গা শাঁখার গুঁড়ো গুঁড়ো আলো
কিছু স্মৃতি ভাসে চোখে
জ্যোৎস্না ভেজা আলোর রাতপথে ।
বন্ধ দূয়ার
কেনো রেখেছো বন্ধ মনের দুয়ার
দেখতে কি পাচ্ছনা তুমি
আমার ভালোবাসার অবাধ বিচরণ
মুক্ত হাওয়ায় উঠোন জুড়ে
বিকেলের উষ্ণতা মাখা শরীর
অবিরাম খেলছিল রোমে রোমে
মলিন আকাশ চেয়ে থাকে
পশ্চিমাকাশের তিমির অপেক্ষায়
আসক্ত নিদ্রা কড়া নাড়ে শরীরে
তুমি কি পাচ্ছনা দেখতে
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বপ্ন
শুনতে পাচ্ছোনা ভালোবাসার পদচারণা
কেনো রেখেছো বন্ধ দুয়ার দিবস রজনী ।
মনের ঘরে
মেনে নিয়েছি আজ সত্যি
ভুলটা আমারই চরম,তাই —
তোমায় ভালোবাসি মাতালের মতো
মনে পড়ে আজও ভীষণ রকম
কখনো কবিতার পাতায়,কখনোবা
শব্দ অক্ষরের বাগান বাড়িতে
সেই কবে চলেগেলে ছেড়ে
গেলাম একা রয়ে,তবুও
ভুলিনি তোমায় জীবনের চরম দুঃখে
আজও রাত যাপনের ঘরে
মনে পড়ে তোমার কথা
তুমি থাকো পাশে নিথর প্রহরে
সব ভুল স্বীকারের দায় নিয়ে
ভালোবেসে টোকা মারি মনের ঘরে ।
প্রতিটি রাত
প্রতিটি সকালের গায়ে
লেগে থাকে সূর্যের সোনা রঙ
প্রত্যেক ঘাস পাতায় জড়িয়ে থাকে
রূপালী কুয়াশার বিন্দু
সন্ধ্যেকে জড়িয়ে থাকে জোনাকি
রাত্রির ল্যাম্প পোস্টের স্নিগ্ধ আলোয়
জেগে ওঠে ধর্ষকের কামনার আগুন ।
আশার আলো
শুধুই যন্ত্রনা,নাকি সমস্ত অভিনয়
আমি বন্দী তোমার গণ্ডি খেলায়
নিশ্চুপ বসে তিমিরান্ধকারে
কত আলো,কত সজ্জা,
তবুও আমি পালাতে চেয়েছি বহুবার
পারিনি,তবু আমি আগলে থেকেছি
অন্ধকার,বুক বেঁধে আলোর আশায় ।
কোলাজে তুমি
বসন্তের উষ্ণ বিকেল বাতাসের
শূন্য ক্যানভাসের অনেক খানি জুড়ে
এঁকে দিলাম কোলাজ তোমার ছবি
আকাশ বেয়ে নামা মেঘ বৃষ্টি
ছুঁয়ে দেখো ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
ভালোবাসার প্রতি তার ব্যাকুলতা
বসন্তের উষ্ণতায় তোমার হৃদয় ছোঁয়া
কোমল আঙিনায় দেখো কেমন স্বগৌরবে
ফুটে আছে শতদল সুবাসিত উঠোনে ।
★★★