সুজিত পাত্র-র কবিতা গুচ্ছ

কবিতাগুচ্ছ

                                                                                                   ছবিঃ সুজিত পাত্র

সুজিত পাত্র-র কবিতা গুচ্ছ

                                                       

সুজিত মূলতঃ চিত্রকার।তবে সে বলে সব কথার এক ভাষা হতে নেই।তাই মাঝে মাঝে কবিতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেন তিনি।ইদানিং গদ্যে লাফ দিয়েছেন।তবে এ সব লেখাই গোপনে তার নিজের জন্য লেখা।বড় নিভৃতের নির্মাণকার সুজিত।

  অর্জুন আমাকে চেন

       

                            

অনেক স্বপ্নে ঘুমেএকলব‍্য আমি।বিছানা বালিশে আজো একা ।এশহর অর্জুনের।এশহর লেখা ছিল পান্ডবের নামে।এশহরে দ্রোণাচার্য এখনও জীবিত।এখনো মঞ্চ মোর্চা।পাড়ায় পাড়ায় জয়ধ্বনি পড়ে।পতাকা বাহিনী যায় মোটর বাইকে।এখনো ব্রিজের নিচে পড়ে থাকে কাটা হাত ।বলিষ্ঠ আঙুল।আমার ও শরীর থেকে চুরি গেছে পুরুষের ধর্ম জ্ঞান।অস্ত্র বিদ‍্যা।যুদ্ধ আর প্রেমের কাহিনী।দ্রোণের কবলে আজো অসহায় বাকরুদ্ধ প্রানী।পুরোনো আঙুল পেলে আমি তার দেহ জুড়ে প্রেম দেব ।কেড়ে নেব শোক আর শব্দভেদী বাণ।

অনেক স্বপ্নে ঘুমে একলব‍্য আমি।বিছানা বালিশে আজো একা

                             

অর্জুন আমাকে চেন।চিনে নাও অস্ত্র শিক্ষা দিয়ে।আমারও শরীরে প্রেমে জাগ্রত ঋষি।শব্দভেদী তীরের ফলক।ধর্মে আর শবদেহে ।আমাকে নিঃস্ব করে নিয়ে গেছ মৃত্তিকা তোমার।নিয়ে গেছ নারী আর কালজয়ী ঘোড়া।এখনও নিঃস্ব আমি বংশপরম্পরা।এখনো ভাগ্য চক্রে। একা। এখনও প্রেমের শেষে কেঁপে ওঠে রাতের শোক ভূমি।আস্তাবলে ছিন্ন ভিন্ন পুরুষ কঙ্কাল।পশুর পাথর দেহে ।পাপে ।আর পাঞ্চালির শোকে

অর্জুন আমাকে চেন।চিনে নিও অস্ত্র শিক্ষা দিয়ে

                               

আঙুর ফলের কথা লিখে আমি মরে যাবো জানি।প্রিয়জন ছেড়ে গেলে বাগানের এককোণে স্মৃতি সৌধ যেভাবে দাঁড়ায়।কংক্রিটের মাইল ফলক ।যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ।পিঠে নিয়ে পথের হিসেব।সেভাবেই বেঁচে যাবো।একা।আমাকে বন্দী করে কাছের মানুষ নিয়ে যাবে অন্ধকার ঘরে।সারা গায়ে লিখে দেবে চুমু ও চাবুক।আমার এ পুরুষ রিপু সাড়ে তিন হাত বাস্তু মালিকানা।সব দেব রাজস্বে তোমাকে।তারপর শিল্পের কাছে ।নগ্নতায়

আঙুর ফলের কথা লিখে আমি মরে যাবো জানি

                                ৪ 

পরবাস থেকে আমি ছুঁয়ে দেব পুরানো প্রেয়সী।মিথ্যে করে মনসার গুপ্ত অভিলাষ।মরদেহে থেকে আমি জেনে নেব  নৌকা বিলাস।বেহুলারা নদী পথে ভাসালে জীবন।আমি তাকে প্রেম দেব।জরায়ুতে ঢেলে দেব বিষের ফসল।মরুভূমি জুড়ে শুধু  চাষ হবে ।দেহ থেকে দেহে।গাছ থেকে গাছে যাবে পুরুষের বিষ।ভোররাতে সব ঘরে নিভে গেলে জোছনার বাতি।আদিম কুয়াশা ক্ষেতে আমি একা।রাত জাগে কফিনে কাফের।মরদেহ জেগে ওঠে রিপুর জ্বালায়। গৃহবধূ বুকে নেয় বালিশ যখন।মিথ‍্যে করে সাপিনীর মুখের গরল।কাছে নেব বেহুলার অন্ধকার রাশি।পায়ের আলতা নেব।মাথার সিঁদুর ফোঁটা মেখে নেব মৃত্যু সহবাসে।যৌনাচারে

মিথ্যা করে মনসার দৈব অভিযোগ ।পরবাস থেকে আমি ছুঁয়ে দেব পুরোনো প্রেয়সী

                                   

অনেক প্রেমের দিন রেখে যাব স্নান ঘরে একা।অনেক দুঃখ জল সোঁপে দেব বেশিনের কাছে।চোখে মুখে জল দেব।তোয়ালের নরম আদরে। সাবধানে মুছে নিয়ে সহবাস স্মৃতি।সেভলন মেখে আমি মেতে উঠি ধারালো খেলায়।ব্লেডের রক্ত চোখে এলে। কেঁপে ওঠে  প্রতি রোমকূপ। আয়নার কাচে আমি ভালোবাসে চুমে যাবো আপন শরীর।ঘাড়ে পিঠে মেখে নেব নাইসেল সাদা। সুগন্ধি সাবান ফেনায়। ঘরময় নেমে এসো সুদ্ধতার স্নেহ।আলুপোস্ত।ঝোলে ভাতে।মাছের পেটির লোভে।রেখে দিয়ে পূর্ণ অধিকার।জহর কোটের বুকে সাজিয়েছি গোলাপি বাহার।তারপর মোজা পরে ।উডল‍্যান্ড জুতো পায়ে ।বহুদূর চলে যাব একা।পুরোনো বৃক্ষ তলে।পার্কের বেঞ্চিতে।স্কুল গেটে।তালা দেওয়া কলাপসিবলে।চুন খসা রেলিংয়ের পাশে

রেখে যাবো পাঁচশ গোলাপ।অনেক প্রেমের দিন

                                   

উড়ো চুমু রেখে যাব অচেনা চিবুকে।কাছে এসো প্রিয় নারী।মাছরাঙা ঠোঁট।লিপস্টিক রঙেআমি রেখে যাই পুরুষের পূর্ণ অধিকার। যদিও ইলেট্রিক যুগ।শঙ্খলাগা চুম্বকের লোভে।তারের ভিতর দিয়ে ছুটে আসে ভূকম্পন রেখা।তবুও শান্ত আমি ।বিষ দাঁত নিয়ে।সাপিনীর জিভ থেকে জেনে নিয়ে অমৃতের স্বাদ। বালিশের কাছে আমি রেখে যাবো বিষন্ন বাতাস ।  ঠাকুর ছুঁয়ে বলো।ছেলের মাথায়  হাত রাখ।পুরুষের পাপে তুমি ছুঁয়ে দেবে অলীক পাথর ।প্রেম দেবে ।শীতঘুমে দিয়ে যাবে উষ্ণ আদর।প্রচন্ড জ্বরের দিনে সারারাত জলপট্টি দেবে কপালে আমার।মুখে মুখ রেখে দিয়ে যেও শান্তি স্বস্ত‍্যয়ন।আমিও কবর থেকে উঠে ।হাঁটু মুড়ে বসবো আবার ।প্রিয় নারী কাছে ডেকে দেহ সাপ দিয়ে যাবো তাকে।সান্ত্বনা দেব।সন্তান দেব।সনাতন ধর্ম মতে বৈষ্ণবীকে মুক্তি দেব সেবার দায় থেকে।

কাছে এসো প্রিয় নারী।উড়ো চুমু রেখে যাবো অচেনা চিবুকে

                                   

হয়তো তোমাকে নয়।তোমার কোলের ছায়ায় বেড়ে ওঠা বালিকাকে ফুল দেব।স্টেটকাট বলে দেব ভালোবাসা তোমাকে দিলাম।তার মায়াবী হাসির লোভে।দু দশ বছর। থেকে যাবো তোমার পাড়ায়।হয়তো তোমাকে নয়।প্রস্তর যুগে।নগ্নতায়। গুহাচিত্রে।বাসস্ট্যান্ডে।মেট্রোস্টেশানে। বস্তির পাশে।হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি ।কোন এক গৃহিনীর কোলের শিশুকে চুমু চুমু।চুমু দেব বলে।অথচ পাখিরা সব ।উড়ে গেছে ।সোনালী রোদের দেশে।সমুদ্র বীচে।সূর্য প্রণাম সেরে ফিরে আসি নিজের বাসায়।দেওয়ালে ঝোলানো ব‍্যাগে।হাতঘড়ি চেনে।প্রেসার কুকারে ।পর্ণণমোচী গাছের পাতায়।জমিয়ে রেখেছি যত পরম আয়ু                                                      
হয়তো তোমাকে নয় ।তোমার কোলের ছায়ায় বেড়ে ওঠা কোন এক কিশোরীর গালে গুলাবী আদর দেব। 

স্টেটকাট বলে দেব ভালোবাসা তোমাকে দিলাম

                                       ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *