সুতপা চক্রবর্তী-কবিতাগুচ্ছ

সুতপা চক্রবর্তী খুব বেশি দিন এই জগতে এসেছেন এমনটা নয়,বরং বলা যায় এই সামান্য সময় জুড়ে যে চর্যা আত্মস্থ করেছেন তা নজর শলাকা ঘুরিয়ে দেবার মতই।তাঁর জন্ম বরাক উপত্যকায় এবং বেড়ে ওঠা আসামের শিলচরে।সাহিত্যের গবেষণার পাশাপাশি তার কবিতা চর্চা অতি নিভৃতের সাধন।এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলিয়ে অজস্র লিটল ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন।কবিতার মধ্যে সুতপার যাপন বড় অদ্ভুত বড় একাকিত্বের,তাঁর কাছে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার এ এক মৌনমুখর আনন্দ চৌপাল।ইনিও “বাইফোকালিজম”-এর একজন অন্যতম সদস্যা।আজকের কবি তাই সুতপা চক্রবর্তী

সু ত পা   চ ক্র ব র্তী-কবিতাগুচ্ছ

 

কুকুর-সিরিজ 

এক

কুকুরটা আমার লাশ খুঁজছিল

আমি তখন তালগোল পাকিয়ে পড়ে ছিলাম

স্ব-মাংসে

অনেকটা জান্তব শিশু,
কুকুরটা একবার ককিয়ে উঠল।

চারপাশে তখনও ম ম করছে
আমার শরীর

উচ্ছিষ্ট অন্নের মতো পড়ে ছিল পেট…নাভিমূল…

কুকুরটি ততক্ষণে মানসিকবিকারগ্রস্ত

দুই

কুকুরটা অনেকক্ষণ ধরে আমার
মাংস খুবলে যাচ্ছিল

একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ
চারদিকে ; সহোদরা আরও কুকুরী
মিলে ততক্ষণে খুলে ফেলেছে
আমার মগজের
ঘিলু…শিরা..উপশিরা শব

একটা বদ্ধ মাতাল ইতিমধ্যেই ঢুঁ
মেরে গেছে এদিকে
মাংসের উৎসবে সেও নাকি আজ
বিভাগীয় কুটুম!

মগজ…হাড় এবং মৃত শিরদাঁড়া

ক্রমশ কুকুরটির পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠছে

 

তিন

একটা আধইঞ্চি বুকের পাটা

এতগুলো কুকুরকে পোষ
মানিয়েছে দেখলে আপনার
লাশও
মানদণ্ডে মাপা হবে।

একটা বুড়ো শরীর এবং কাঁচা
মাংসের হাড়ি পরস্পরের দিকে
তাক করে আছে দীর্ঘক্ষণ।

আপনি হয়ত কুকুরটির অপেক্ষা করছেন।
সে তার প্রভুর লাশের পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে

চার

আমার লাশের উপর দুটো মাছি বসে আছে।

প্রথমটি আমারই পচে ওঠা গর্ভের ফসল
দ্বিতীয়টি ঈষৎ কালো; আবছায়া
দুজনেই উন্মুখ হয়ে তাকিয়েছিল
আমার জরাচোখে

পচে ওঠা শরীর, ক্ষীণ

অনেকটা সংসার পাতানো বাসি
ভাত, মড়ক…….মাংসপিণ্ড

একধরনের জলীয়বাষ্প ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছে চরাচর, স্রোত

পাঁচ

একটা কুকুর আমার শরীরের অবশিষ্ট
অংশ জড়ো করছিল।

চোখ, কান, মুখের সাথে একবস্তা
তালগোল পাকানো মাংস এবং
দু’হাতের একটি শিরদাঁড়া

সর্বমোট দুশো একষট্টি টাকা।

এরকম একটা দরকষাকষির সময়
হাঁ করে সেসব দৃশ্য উপভোগ
করছিল
কুকুরটি ; অশিক্ষিত ও ততোধিক বাধ্য হওয়ার কারণে অনায়াসেই
সে হাসিল করে ফেলেছিল
এক একটা মোক্ষম ছাড়পত্র…

ততক্ষণ

আমার লাশ, পাশে পড়ে থাকা মাংস শিরদাঁড়া
সমস্ত কিছু দাহ করতে সময় লেগেছিল
মোট সাড়ে তিন ঘণ্টা

ছয়

একটা দো’তলা বাড়ির পাশে
কুকুরটির লাশ পড়ে আছে

ভেতরের দৃশ্য আপাত অন্ধকার

বাইরে দু চারটে জায়গায় ছড়িয়ে
ছিটিয়ে রয়েছে হাড়..চামড়া
আমি অনেকক্ষণ ধরে সে বাড়ির
দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছি

এখনও অবধি কিনা একটা ডোমেরও দেখা নেই!

 

শূকর সিরিজ

 

এক

শিরদাঁড়া বিক্রি করার মুহূর্তে
শেয়ালটি দেখল
প্রতিটি ক্রেতাই আসলে সে স্বয়ং

অতএব এই দ্বন্দ্বের ভেতরে
খানকয়েক চক্কর কাটা হল,
ইতিমধ্যেই অনেক বোদ্ধা
বরাহশাবকের লাইন লেগেছে এ
লাইনে!

একটি অরাজনৈতিক সভাও
বসেছে
আপনারা অতিথি ; বরাহভবনের

পাশে ছোপ ছোপ আতিথ্য

হুজুগে মেতেছে প্রবঞ্চকপাড়া

দুই

ঘাড় হেট করে চলা একদল নপুংসক শূকরীর সিজন্যাল ফ্লু দেখা দিয়েছে।

চিকিৎসক বলেছেন গোটা দুইশিশি বাঘের রক্তের স্যাম্পল পেলে বিষয়টাকে একটু সরল করা যেত

খবরটা চাউর হয়েছে,পাশের গলিতে ঘিঞ্জিতে…খানাখন্দ পানশালায়।বাঘের খোঁজে ইতিমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছেন সর্বদলীয় শূকরকূল

এদিকে সিজন্যাল ফ্লু-এর মেয়াদ বাড়ছে,একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ চারদিকে

জনৈক শূকরের পদোন্নতি ঘোষণা করা হল

 

তিন

তার পরনের দামী পোশাকে লেগে আছে চৌকশহীন জেল্লা

পাশের টেবিলে আড়ষ্ট মতোন কিছু কাগজ…ঘাড় হেট করা দু এক পিস মনুষ্যশাবক

শুয়োরের ইদানীং পসার বেড়েছে
সহমর্মি আরও শুয়োরে ভরে উঠেছে তার কার্নিশ… চশমার ডাঁটি!

এক একসময় তার হাতপা চেটেপুটে দ্যায় তারা; মাথার ঘিলুতে ভরে দ্যায় নিজেরদেরই বর্জিত মল…চর্মসার….

আর এদিকে দাঁড়িতে, চোখে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আপনারা ভাবছেন ঠাট্টা করছি আমি?

৬ নভেম্বর, ২০২০ ইং

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *