কৌ শি কী ব্যা না র্জী-র কবিতাগুচ্ছ
আগামী দশকের জন্য
আমি জন্মসূত্রে যা পেয়েছি,
তার নাম ‘ভয়’;
আমার পাশের বাড়ির মুসলিম
ছেলেটি আর হিন্দু মেয়েটিকে
ওরা খুন করেছিল যোগ চিহ্নে গেঁথে!
এমনকি ওদের দেহও দাফন
করা হয়নি এক মাটিতে!
আমার মা বলেছিলেন, “দেখ! ভয় পা!”
আমার ঘরের জানলার আধ খোলা পাল্লা
দিয়ে দেখেছিলাম, ইয়ারির পেটে ছুরি
মেরেছে রক্ত মাংসের মন
কোনো এক নারী দেহের চাহিদায়!
বাবা বলেছেন, “দেখ! ভয় পা!”
আমি ভিড় শহরে অশ্লীলতাকে গলা
টিপে খুন করতে দেখেছি বিশ্বাস!
রাস্তার লোকগুলো বলেছে, “দেখ, ভয় পা!”
আমি মিটিংয়ে মিছিলে দেখেছি,
সত্যি কথা গুলি খেয়ে লুটিয়ে
পড়েছে মিথ্যুকের নোংরা কোলে;
মাইক, স্পিকার, খবরের কাগজ বলেছে,
“দেখ! আবার ভয় পা!”
পাড়ায়, ঘরে, বাইরে, সমাজে দেখেছি,
নিজ যৌনতার সঠিক সংজ্ঞা না জানায়
হাততালি দিয়ে কালি ছুঁড়ে বিশাল
মৃত দেহের স্তূপ বানিয়েছে
মানুষকেই কিছু মানুষ!!
সমাজ বলেছে, “দেখ, তারপর চোখ বন্ধ!
এবার প্রচন্ড ভয় পা!!”
এভাবে ভয় পেতে পেতে ভয়কে
ভয় পাচ্ছি না তো আর!
সমাজ, এবার তোমার ভয় করছে না?!!
কারফিউ এবং একটি ভ্রমণ কাহিনী
আমাকে দাঁড় করানো হয়েছে
আত্মার সামনা সামনি..
আমি এখন পালাবার রাস্তা কোথায় পাবো?
ওরা বলেছে সাবসিডির জন্য
লাগবে কিছু গাছশরীর;
আমি এখন ময়লা মাখা
উদ্বাস্তু কোথায় পাবো?
কোথায় পাবো কান্না মাখা
কঙ্কাল আর কিছুটা চামড়া?
আর সদ্য বিচ্ছেদের পর ফুটো
হয়ে যাওয়া প্রেমিকের হৃদয়ের
মতো বিদীর্ণ একটা-দুটো পদবী?
ভাঙা জানলার ধুলো পড়া
পর্দা সরাই আসতে আসতে!
একটা আট-দশের ছেলে ইঁটে
বাঁধা চিঠিতে জানালো
দেশ জুড়ে কারফিউ হবে বিকেল চারটেয়!
হোস্টেল ফাঁকা করে রাখা
হবে লাশেদের প্রেমপত্র, বই
আর মায়ের হাতের বানানো রুমাল!
তাড়াতাড়ি আসি, ছেঁড়া ব্যাগে সেফটিপিন,
একটা ফুটো ভাতের হাঁড়ি, প্লেটো, শেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ কুড়িয়ে দৌড় দি..
রাস্তায় প্রচণ্ড আগুন.. ওরা বলে,
“যাঃ! একটা ধর্ম মরে গেল!, যাঃ! একটা শাসন!,
আবার একটা গদি পুড়ে যাচ্ছে!!”
আমি জিজ্ঞেস করি, “আর মানুষগুলো?”
দমকলের ছেঁড়া জামা পড়া ছেলেটা বলে,
“চিতা থেকে ফিনিক্স হয়ে উড়ে গেছে, গণতান্ত্রিক স্বর্গে! বাম দিক দিয়ে সোজা চলে যাও!”
আমি ছেঁড়া ব্যাগ আর আদর্শ
সাবধানে নিয়ে হাঁটা দিচ্ছি
লাশ টপকে টপকে..!
অবশেষে
বিশাল ঝড়ের পর,
যেটুকু যা ছিল―
আশ্রয়, মন, বুক
―সব ভেঙে গেছে,
যে টুকু পড়ে আছে―
ক্লান্ত শরীর, ভেজা গাল,
ভেজা বালিশ, চিবুক
― সেই সব অন্তহীন!
প্রেয়সী’কে
যারা ছেড়ে চলে গেছে,
পালিয়েছে বহুদূর এই মৃত্যু উপত্যকা ছেড়ে,
হয়েছে পরিযায়ী কোনো সমতলের সন্ধানে,
জীবনের সন্ধানে, আমার মৃতদেহ ফেলে রেখে,
যাদের আমার ভালোবাসা বাকরুদ্ধ করেনি,
বরং শ্বাস রুদ্ধ করেছে,
তাও,
তারা উপহার রেখে গেছে
শূন্যতা,
অন্ধকার ― ঘন মেঘের মতো,
ছেড়ে যাওয়া প্রেয়সীর ঘন কেশের মতো,
তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ,
মৃত্যর থেকেও সুন্দর কিছুটা অন্ধকার দিয়ে যাওয়ার জন্য!
আফসোস,
তাদের জন্য এত বড়ো বুকে একটা ক্ষুদ্র জানলাও রেখে যেতে অপারগ আমি!
এতটাই আহাম্মক!
আগামী_আর_একজন_আধুনিকা
ক্যামেরা থেকে আলো এসে পড়লো
ষড়যন্ত্রের মুখে!
চোখ বুজলো সমাজ!
জনতা চেঁচিয়ে বললো,
“লাইটস্! ক্যামেরা! অ্যাকশন!”
আমি ফিক করে হেসে উঠলাম;
দেখি স্ক্রিনে আমার স্বপ্নদের স্লাইড শো হচ্ছে!
আসলে জনগণ তো এখন দর্শনীয় বস্তু,
আর আবেগ বিক্রয়যোগ্য!!
মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একদল উদ্বাস্তু!
তোমার হাসি পাচ্ছে?
আমারও পাচ্ছে!!
ছুট্টে গিয়ে পরনের কাপড়টা
খুলে দিয়ে এলাম!
এখন ওরাও ভিখারি,
আমরাও ভিখারি!
চলো, দেশ বেচে থালা কিনে
সিগনালে বসে বিপ্লব আঁকি..
ওরা আমাদের চাল আমাদের পাতে
ছুঁড়ে একটু মহান হোক না!
ক্ষতি কি!!
তারপর একদিন ঝড় হবে,
ওদের খড়ের চাল, ভাতের চাল
সব উড়ে যাবে!
স্টেজে উঠে দাঁড়বে,
স্পট লাইটটা মুখের ওপর,
দুটো ন্যাংটো বাচ্ছা হাসতে হাসতে বলে যাবে…
“তুইও তো আজ ভিখিরীর বাচ্ছা!
উদ্বাস্তু! হাস! হাস!”
আমি দেখবো, হাসবো আর সিনেমা বানাবো!
মজা হবে না?