কৌশিক চক্রবর্ত্তী–র কবিতাগুচ্ছ
বৃষ্টিফোঁটার দাম
এই শহরে ভেজার ওপর প্রবল নিষেধাজ্ঞা
বৃষ্টির জলে এখানে নিরোগ বসন্ত
আর লোকজনের মুখে অনবরত অমরত্বের কথা-
অমর হতে গেলে যতটা ভালোবাসতে হয়
তার কথা কি আজ পর্যন্ত লিখে গেছে কেউ?
বিড়াল ডিঙিয়ে গেছে জিরোনো যৌবন
তবু নিজের জন্য বরাদ্দ করেছে আঁশটে খাবার-
আমার থালায় আঁচল গুটিয়ে রেখেছি ক্রমাগত
তাই বৃষ্টিফোঁটায় তোমার অধিকার বুঝিয়েছি অহল্যা…
এই শহরে একলা রাস্তা হাঁটা মানা-
আমার বাম পাশে বিপর্যস্ত গলিপথ
থরে থরে সাজানো আছে টলটলে যুবতী বৃষ্টিকণা-
আমার শরীর ঘেঁষে অজানা নির্মাণ-
আঙুলে লেগে আছে লিপিবদ্ধ মেঘ
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বারবার দেখানো হচ্ছে সেইসব নির্ভরতা…
তারাখসা
আজ সন্ধে হয়নি
নিয়ম করে নিজেদের শতবর্ষ উদযাপন করেনি নক্ষত্ররা
যে নগরে কখনো খসে পড়েনি স্বাবলম্বী উল্কাপিণ্ড
সেখানে খুঁজে দেখেছি নির্বিবাদী মানবীর ছায়া
হারানো আঙুলের সন্ধান বহুদিনের
আবার নিজের দিকে তাকালে স্বচ্ছন্দে ভিজে যায় বৃষ্টিচ্ছায় পিঠ
দুহাতে ভরিয়ে নেওয়া উদ্বৃত্ত তারাদের শোক আর ভাঙাচোরা কয়েকটা চাঁদ
হয়ত চিরকালই এইভাবে উত্তাপ ছড়ানো মানা
কিন্তু তারাখসার রাতে আমি প্রথাগত ভাবে ঘুমোতে পারিনি কোনোদিন।
লোডশেডিং
অন্ধকারের একটা নাম দেয়া যাক। আলোর বিপরীতে বসানো যাক আরো কয়েকটা অনামী জতুগৃহ। পোড়াতে এসেছ যারা, ফিরে যাও অনিষ্ঠের পথে।
নিম গাছের দিকে চেয়ে আছে বসন্ত কোকিল। নিরুদ্দেশ হবার জন্য তাদের দিনভোর জারিজুরি।
চলছে… চলুক…
আমি ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দিতে পারি অপ্রকাশিত কবিতা। তুমি অক্ষর সন্ধানে আবার আসতেই পারো। চাইতেই পারো অন্ধকার ঘর।
সম্পাদকেরা যখন বই খুলে স্ট্রীটলাইটের আলো খোঁজে, আমি তখন সনাক্ত করছি পোড়া শরীর।
ওরা সমস্ত লোডশেডিংয়ের জন্য আমায় অভিযুক্ত করেছে বারবার।
আলোর অধিকার
চেহারাটা অচেনা। তাতে কী?
খামে ভরে স্পিড পোস্টে দাও তোমার দাঁতের টুকরো।
শিরোনামহীন কবিতার অংশ ভেবে তুলে ধরব সেইসব নক্সা৷
গলিটার শেষভাগে গোপন প্রতিকৃতি
আলো জ্বলবার অপেক্ষা
এখনো ল্যাম্পপোস্টের গায়ে স্পষ্ট বিধাতার ছায়া-
আমরা জানি তিনি সন্ধেকাল পছন্দ করেন-
অথচ প্রতিদিন বিকেল আসার আগে আমরা আলোর অধিকার খুঁজি।
কয়েকটা অভিযুক্ত আঙুল
ধ্বংস করতে চেয়েছিল যারা
আজ তারা সকলে বন্দী
আর গড়ে তোলবার জন্য
যারা নিজের দিকে তুলেছিল সবকটা আঙুল
তারা সকলে আজ আমার প্রতিবেশী
এ পর্যন্ত আমার নিজের দিকে চেয়ে থাকা হয়নি…