অ ভি জি ৎ ঘো ষ-র গুচ্ছকবিতা
চরৈবতি চরৈবতি…
অচেনা নদীর বাঁকে থমকে দাঁড়াই
অবান্ধব সন্ধ্যা নামে
ধীরে ধীরে পলি জমে, আবার
আমার যাত্রা শুরু…
তোমার পায়ের কাছে এলোচুল বিকেল
আসাড়, নতমস্তক…
ডিয়ার রমা
বিকেল বড় আস্তে হাঁটছে
জানলার শিক ধরে ধরে
অশান্ত হয়ে উঠছে মন
শুকিয়ে যাওয়া জামা-কাপড় তুলেছ?
এবার চায়ের জল চড়াও
একটু অপেক্ষা…আমি আসছি…
হ্যাঁ, সত্যিই আসছি
ঘোড়ায় চড়ে না
ধীর বিকেলের পাতলা রোদ মেখে
আর একটু
তারপর একসাথে চায়ে চুমুক
যেমনটা দুজনে চেয়েছিলাম
পনের বছর আগে…
জোট
খুব বেশি বিরহ ভালো নয়
ভালোবাসা, সেও বেশি হলে উপচে পড়ে সম্ভার
চলো তবে তাই হোক
নিক্তিতে মেপে দিই তেল-নুন-হলুদ
প্রথমে ছড়াবে ঠিকই
একটু পরে মিশে যাবে সব,
লাল-নীল-সবুজ, সে-এক
বিচিত্র কোলাজ…
ভালো-মন্দ; সবাই এক…
হে যোজনগন্ধা
এত সহজে লজ্জা ভুলে
কোন কূলে আজ বৈঠা ঠেলে এলে?
নদী লুকায় মুখ কুয়াশা চাদরে
পাশের গলুই যায় না দেখা
এই আঁধারেই মুনিপুঙ্গবের মৃগয়া…
কার বরে হলে শুচি-
হে মৎস্যগন্ধা?
বাস্তু ঘুঘু
কার্ণিশে জমেছে শ্যাওলা
উঠোন ঘিরে আগাছা
পলেস্তারা খসে পড়ে
এক বিষধর সাপের সাথে বেজীর লড়াই
দিন দিন প্রতিদিন
এসবের মধ্যেই অভ্যস্ত
এসবের মধ্যেই স্বপ্ন
পেরোয় না চৌকাঠ
আসে না নীল আকাশ
চাঁদের আলো, রোদ্দুর
বেশ শলায় শলায় কেটে যায় জীবন…
গন্তব্যে
প্রতিটি পথের বাঁকে লুকিয়ে থাকে
চন্দ্রবোড়ার বিষাক্ত ছোবল।
পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাই
কারা যেন পিছু নেয়
লুকিং গ্লাসে দেখি সব
আমার ধর্ম এগিয়ে চলা
অতীত ডানা ঝাপটায়
আমি একটু জিরিয়ে নিই, তারপর
অবলীলায় ছুঁড়ে ফেলি চন্দ্রবোড়া…
শেষ ঘুম
এখন আর রাতে ঘুম আসে না।
একসময় মানুষ ছিলাম
খিদে পেত, আড্ডা দিতাম
মে মাসের দুপুরে ঘামে জবজব হয়ে
পাতার পর পাতা চিঠি লিখতাম তিলোত্তমাকে
আর জানলার ফাঁক দিয়ে
চোখাচোখি হত পাশের বাড়ির বৌদির সাথে
এখন আর কোন ইচ্ছে নেই
ভালবাসা নেই, করুণা নেই
ঢিমে আঁচে রান্না হয় আর
আমি কড়ায়ের দিকে তাকিয়ে
সময় পার করে দিই…
একদিন ঘুম আসবে
ঠিক আসবে
সকালে দরজা খুলে লোকে দেখবে
শুয়ে আছি শেষ ঘুমে…
শিবির
এই মাঠেই তুমি নামো, বাড়াও
বল নিঁখুত পাসে সামনে পাও যাকে
দ্যাখো, এই মাঠে কত মাঠ
তুমিও নিয়েছ বেছে নিজের মাঠ
জানো ঠিক পাশের মাঠ কার?
দ্যাখো অনিমেষ দাঁড়িয়ে
একটি পাশের অপেক্ষায়
তুমি কি বাড়াবে? না কি
অদৃশ্য আদেশের অপেক্ষায় থাকবে?
এইভাবে কিছুই হবে না
বল ঘুরবে মাঠের ভিতর
পাবে না খুঁজে তিন কাঠি…
ইচ্ছে বা রূপকথার গল্প
তুমি চাইলেই, বিশ্বাস করো
আমি হয়ে যেতে পারি
তোমার ব্যালকনির
লাল-নীল-হলুদ ফুল
অথচ তুমি বিশ্বাস করো
পরজন্ম বলে কিছু নেই।
সত্যিই নেই।
তাই তুমি চাইলেই
দুয়োরানীদের মুখে ঘষে দিতে পারি ঝামা
ভূতের রাজার কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে পারি
একডজন জব্বর বর
ছুমন্তরে খুলে দিতে পারি
তোমার বাবার বন্ধ কারখানার গেট
পকেট ফাঁকা- তবু সারতে পারি
গ্রান্ডে ডিনার
তুমি চাইলেই
ঘ্যানঘ্যানে ট্রাফিক জ্যামে
পক্ষীরাজের ঘোড়ায়
তোমায় নিয়ে উড়ে যেতে পারি
অন্য কোন জগতে…
অথচ তুমি মানো না
এই জগতের বাইরেও
একটা জগৎ থাকতে পারে
আজ সাতদিন এ’সব ভেবে ভেবে
পার করে দিলাম
অথচ জানি তুমি নেই
সত্যিই তুমি নেই…
তবুও আমি
তোমার ব্যালকনির
লাল-নীল-হলুদ ফুল হয়ে
ফোটার ইচ্ছে রাখি…