রা জ কু মা র রা য় চৌ ধু রী-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ আমি বন্দুকের ব্যবহার শিখিনি, তাই লিখি আমি খুব রোগা লোক।ওজনের হিসেবের মধ্যে পড়ি না।ভারী কাজও করতে পারি না, একটু ভীতু প্রকৃতির।তাই একার সঙ্গে একা-একা আমার বেঁচে থাকা।বন্দুকের ব্যবহার শিখিনি।যদি শিখতাম তাহলে মূর্খ কলমকে নিয়ে এভাবে বোকা বোকা খেলায় মেতে থাকতাম না।কলমের চেয়েও বন্দুক অনেক শক্তিশালী, এমনি মনে হয় আজকাল।আমার বিপজ্জনক ভাঙাচোরা ঢেউগুচ্ছকে সামলাবার কোনও ক্ষমতা নেই। তাই রাত্রির নিভৃতে উড়ি — মায়াবী পিয়ানোর মধ্যে খুঁজে পেতে চাই জীবনের উষ্ণতা।অন্ধকারের মধ্যে ডুবে মরব বলে স্তব্ধতার মধ্যে আমার চলাফেরা।এ সময় দু’ফোঁটা চোখের জল ঝামেলা করে খুব।ওই জলে লিখি, দু’একটি নিঃসঙ্গতার কথা।ওকে পদ্য বলা যেতে পারে, কিছুতেই কবিতা বলা যায় না।শুধু আঙুলের চাপে আমার লেখার মধ্যে লেগে থাকে ব্যথার কালে ছায়া।উদ্বিগ্ন কলম শুধু কাঁপে মধ্যরাত্রি জুড়ে — বাইফোকালিজম্-র পাতায় তাঁরই গুচ্ছকবিতা আজ পাঠকদের জন্য।

 

রা জ কু মা র   রা য় চৌ ধু রী-র কবিতাগুচ্ছ

 

আয়না

 

অতিথি নিবাস পালিয়ে এসেছি গোপনে আজ
সাদা ঘোড়াটিকে বেঁধে বসন্তের গায়ে।
স্বাগত মেঘ, তুমি ডেকে নিচ্ছ আমাকে আকাশে,
পরিচয় হলো একটি পাখির সঙ্গে, সে চেনায় –
আকাশের মধ্যে হারানো জ্যোৎস্নালাগা এপথ ওপথ

দু’রঙা ঘুড়ির বর্ণনা করবো না, আজ অন্যজীবন
মেঘের ওপর ঘোড়াটি ওড়ে — তার পিঠে আশ্চর্য ডানা,
সে এদিকে আসে, বলে একডাকে, ‘তুই আমাদের পিকু না’!

দংশন

 

রক্তে রাঙা পুরুষ এখন বেণী ধরে তোমার ওপরে উঠবে,
নামাবে তোমায় মাটিতে, দেখাবে তার লিঙ্গের দীর্ঘ ছোবল।

লুকোবে সাপ নতমুখে, বোবার বিলাপে, বিব্রত নির্জন শরীরে।

আঁধার মেঘের নীচে আঙুল ডুবিয়ে কী লেখো বিষাক্ত অক্ষরে?
পৃথিবীর হিংস্র হায়নাদের ধরো, ভীষন মারো পাথর ছুঁড়ে।

শরীর খেলুড়ে, শরীরকে কে দেয় জবজবে অন্ধকার প্রকাশ্যে ধার?
অন্ধকার সাদা নয়, শরীর চুম্বক, তোমাকে বাঁচাবে কে দু’হাতে আজ?

চোখ থেকে ছিটকে আসে অন্ধকার, চকচক করে আমাদের সাদা পোশাক
চুলে বাঁধা থকথকে রক্তাক্ত লাল ফিতে আমাদের দোলবিলাসী বলে যায়।

জীবনবিমা

 

নোটা কোন বাঘের খাঁচা নয়, নীরব কিছু কথা
রং নেই, তবুও ভাঙাচোরা মানুষের সংবিধান
ওখানে রাজা নেই, ঘোড়া নেই, তবুও আছেন উনি –
এক অন্তর্যামী, কী বলেন তিনি একা একা –
রহস্যময় হাসি হাসল কেউ, উদ্দেশ্যপ্রবণ দু’পক্ষ
ও কি আমাদের নির্বাচন কমিশন? থলথলে মিডিয়া?

ওখানে হালকা বেতের চেয়ার আছে মুখোমুখি বসিবার
চলো ঘুরে আসি যৎসামান্য বাঁচার অবিশ্বাস্য আনন্দে,
জানতে দিয়ো না ওদের, তাহলে ছিঁড়ে খাবে গোগ্রাসে।
বলশালী পেশিবল লাফায়, স্বাস্থ্য বৃদ্ধি ঘটে ওদের,
ঘুমের ভিতর ধরিয়ে দিতে পারে ওরা লাল আগুন।

আমরা কাঁপলে, ওরা হাসে, চলো আজ নোটায় উঠি
চারপাশে ঝিঁঝিঁ ডাকে, জ্যোৎস্না দেখা যায় ওদিকে।

এসো গড়ি ভারতবর্ষ সবুজ বৃষ্টি মিশিয়ে আজ দুহাতে।

রাত্রির কথা

এক

দুটি ঈষৎ ডানা মেলে কৃষ্ণবালিকা নেমে আসছে,
মোহিনী মায়ায় একা একা সর্বহারার দেশে।

রাত্রির আলোছায়ায় কে কার নাম লেখে!
দারিদ্রের প্রেম নগর বন্দর জুড়ে জেগে ওঠে
সহচরী তবে আয় – আয় স্পর্শ কর, খুলে ফ্যাল
বৃষ্টিতাড়িত হাওয়ায় সবুজ পাতার আগুনবর্ণ মোহরগুলি।

দুই

ঘন ঘোর আঁখির পাতায় রজনী নামে,
লুকিয়ে দ্যাখো ঢেউ ত‌োলা চাউনি, গ্রীবার ভাষা,
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় বৃষ্টির গায়ে কারা লেখে
পাশের বাড়ির রোগা ফর্সা মেয়েটির নাম।

 

তিন

চমৎকার পালক খসে পড়ে –
কীভাবে গ্রহণ করো মাত্রাবৃত্তে জেগে ওঠা ছন্দ, রোমাঞ্চের নিঃসঙ্গতা
কার কুসুম সনাক্ত করতে গিয়ে টের পাই
প্রিয়, তোমার রুটি-সেঁকার গন্ধ, রাত্রির বাস, দুটি ঠোঁটের ওঠানামা।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *