ছবিঃ গৌতম মাহাতো
লিখছেন -মৃণাল কোটাল
কবি।তবে সমসাময়িক গদ্যেও আগ্রহ সমান।লিটল ম্যাগাজিনেই তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র।নিজেও আবহমান নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন।লোধাদের সুখ দুঃখ নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন।তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তার হাত প্রসারিত সেই সব জর্জরিত মানুষগুলির জন্য।
“যাত্রা দেখলে লোক শিক্ষা হয়” বলেছিলেন ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ ।
নএকটু পিছিয়ে গিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাবো, যাত্রা শিল্প বাংলার বুকে কিভাবে দাপিয়ে চলত।বিশেষ করে শহরতলি, এবং গ্রাম গুলোতে যাত্রা শিল্পের মান ছিল খুব উন্নত।যাত্রা ছিল সেই সময় সামজিক মান উন্নয়নের চাবিকাঠি।এবং সমাজে খুব প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিমান ছিল শিল্পের।
যাত্রা শুধু বিনোদন ছিল না।যাত্রা সমাজের শিক্ষার্থে খুব বেশি কাজ করত।সমাজের ভালো দিকের উপস্থাপন,সত্যির জয়,সমাজে দেব দেবীর অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করা।
যেমন —-
রামায়ণ
মহাভারত
পুরান
ও মঙ্গলকাব্যগুলি।বিশে
চন্ডি মঙ্গল
মনসা মঙ্গল
Indian independend movement
non-violence movement
এই বিষয় উপস্থাপন করা হত।
এই শিল্পের মাধ্যমে সমাজে প্রতি স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিত মেসেজ এই শিল্প।
এই শিল্পের মাধ্যমে মানুষ সমাজের ভালো দিক মন্দ দিকে সজাগ হতেন।
সমাজে শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করতেন।
যা বহু মাত্রায় এই শিল্পের মাণ বাড়িয়ে ছিল।
এর মাধ্যমে”””””””
সমাজিক যাত্রা
পৌরাণিক যাত্রা
ঐতিহাসিক যাত্রা
বিভাজনে উপস্থাপন করা হতো।
এই শিল্পের সংগে বহু মানুষ জড়িয়ে থাকতেন।
এবং অর্থ উপার্জন করতেন।
এক একটি দলে প্রায় ৬০-৮০জন,
অভিনেতা অভিনেত্রী সহ।
সারা বাংলা জুড়ে এই শিল্প প্রসারিত ছিল।
পশ্চিমবঙ্গ নানা স্থানে এই শিল্প ছিল।
গ্রাম বা শহরতলি তে যেকোনো অনুষ্ঠান হলে এই শিল্পের প্রচলন ছিল।
মুলত আশ্বিন মাসের শেষ দিক থেকেই সিজিন শুরু হোত দল গুলির। তার আগে সারা বছর জুড়ে রিহার্সাল চলত।
গ্রাম গুলিতে অনেক সময় ফ্রি তে অনুষ্ঠিত হত যাত্রা।প্রায় হাজার হাজার মানুষ আসতেন এই যাত্রা দেখতে।একে একে এই শিল্প ব্যাপ্তি পেতে থাকে।
এবং বিরাট অর্থ কারি শিল্পে পরিনত হয়।
প্রথম এই শিল্প দিনের আলোতে উপস্থাপন করা হতো।
তার পর রাত্রে হারিকেন লাইট, হ্যাজাক লাইট এর মাধ্যমে দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিক সংযোগ এর ফলে কৃত্রিমভাবে আলোর প্রভাব দেখা গেছে।দুই তিন ধরনেরও স্টেজ দেখা গেছে।স্টেজের ফর্ম চেঞ্জ হয়ে আসে সাইক্লোরমা পদ্ধতি।
এই শিল্পের মধ্যে চলচ্চিত্র এর শিল্পীরা এগিয়ে আসেন।যেমন –
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
শতাব্দী রায়
চিরঞ্জিৎ
অভিষেক
পাপিয়া অধিকারী
সন্তু মুখোপাধ্যায়
ও অনেক খ্যাতনামা শিল্পী।
যাত্রা শিল্পকেন্দ্রিক অনেকে বহুল পরিচিত ছিল।
বীনা দাসগুপ্ত
ত্রিদিব ঘোষ
বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।এই সংস্থা গুলি নানা শহরে গড়ে উঠেছিল।কলকাতা খুব বেশি।মেদিনীপুর এর-
বেলদা
ডেবরা
কামার পুকুর
জয়রাম বাটী প্রচুর যাত্রা দল ছিল।
এই শিল্পে একজন বিখ্যাত স্বনামধন্য মানুষ ছিলেন ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়।যার রচিত নির্দেশিত অনেক সংস্থা উপস্থাপন করেছেন।
তপোবন যাত্রা সংস্থা
ঠাকুর নাট্য সংস্থা
মুক্ত মঞ্জরী
যাত্রা লোক
বীণাপাণি অপেরা
লোক নাট্য সংস্থা
ও বহু নামজাদা যাত্রা সংস্থা এই পেশাগত ভাবে কাজ করতেন।সময় পেরিয়েছে বিনোদনের পরিবর্তন হয়েছে,টেলিভিশন এর পর্দায়।
এখন আর তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করে যাত্রা দেখতে চাই না..?যাত্রা শিল্পের পরিবর্তন কারি রূপ এসে গেছে,সেগুলোতেই বিনোদন বেশি সমস্ত স্টার
এবং টিভি সিরিয়ালের একঝাঁক নবাগতা মুখের ভিড়েই হারিয়ে যেতে বসেছে পুরাতনী
এই শিল্প।হারিয়ে যেতে বসেছে “নটী বিনোদিনী”!
সভ্যতার এক সময় ধারক ও বাহক এইশিল্প অবলুপ্তের পথে।হারিয়ে যেতে বসেছেন যাত্রা শিল্পীরা।দিশা হারা হয়েছেন এই দল মালিকরা।
এই সব এখন নাকি আর কেউ দেখেনা
★
তাহলে কি হবে আগামী দিনে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ
সব দল ভেঙে গেছে, উঠে গেছে দলের রিহার্সাল এর বারান্দা।শিল্পীরা বহু ধরনের কাজে নিযুক্ত হয়েছেন জীবিকার তাগিদে। এই প্রশ্নের মুখে।তাহলে কি একদিন হারিয়ে যাবে এই সংস্কৃতি।সত্যি এই সময় এ এক বড় প্রশ্ন।