আফ্রিকার গল্প-৪
কালো-কিশমিশ ফান্টা
মাকেনা ওঞ্জেরিকা (কেনিয়া)
অনুবাদঃ কা মা রু জ্জা মা ন
আমরা টোটো (বড়ো বাচ্চা) হয়ে ওঠার পর থেকেই সে ছিল আমাদের বোন, আমাদের বন্ধু। মেরি আমাদের মতো ছিল না। রবিবারে সমারিটানরা যখন আমাদের খাবার ও কাপড়জামা দিতে আসত তারা জানতে চাইত আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কে কী প্রার্থনা করি, আমাদের মধ্যে কেউ বলত তারা স্কুল যেতে চায়, কেউ বা বলত মাঠের বস্তির ঘরে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য টাকাকড়ি চায়, আবার আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বা যারা পৃথিবীতে আবার ফিরে আসতে চাইত তারা পুনরায় জন্মলাভ করে স্বর্গে যাওয়ার কথা বলত। কিন্তু মেরি শুধুমাত্র বড়ো বোতলে কালো-কিশমিশ ফান্টা চাইত যাতে সে তা সারাদিন পান করতে পারে, যা কখনো ফুরাবে না।
ঈশ্বর সবসময় মেরিকে পছন্দ করত। রাস্তায় আমরা যখন হাতের মুঠো খুলে লোকজনের কাছ থেকে পয়সা ভিক্ষে চাইতাম, তারা মেরিকেই সবথেকে বেশী অনুগ্রহ করত। তারা তার রূপের দিকে তাকিয়ে থাকত – তার বাদামি-সাদা রঙের মুখ, দাঁতের সামনে একটা ফাঁক। তারা জিজ্ঞাসা করত তার বাবা কোথায়, তার মা কোথায়? তারা তাকে দশ শিলিং দিত। আর আমরা যারা কালো ছিলাম তারা পেতাম মাত্র পাঁচ শিলিং করে।
আমরা সবাই মেরিকে হিংসা করতাম। তাকে মনে হত গরম আলু গিলে খেতে অস্বীকার করার মতো। আমরা তার নাইলনের কাগজ থেকে এটা সেটা চুরি করে নিতাম। ছোট্ট ছোট্ট কিছু জিনিস, যেমন তার রুটি, ক্ষুরের পাত, তার রান্না করার টিন। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে খুব ঈর্ষা করত। আমরা চাইতাম তার মাথায় গাছ ভেঙ্গে পড়ুক।
তারপর একদিন মেরি টিভির পর্দ্দায় ফুটে উঠল। এটা ঘটেছিল যখন ওয়ানুগু নামে একটা ছেলে একজন পুলিশের হাতে নিহত হয়েছিল। ওয়ানুগু আমাদের ভাই বা বোন কেউ ছিল না। আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে কিছু ছেলে লাঠিসোটা পাথর ও ছুরি নিয়ে হাজির হল। তারা রাস্তার সব ছেলে ও মেয়েকে বলল ওয়ানুগুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হল্লা করতে হবে। ভয়ে তারা তাদের অমান্য করতে না পেরে আমরা গেলাম এবং বলতে লাগলাম, ’খুনিরা শোনো, রাস্তার ছেলেরাও (চোকোরা) মানুষ’, তখন টিভির লোকেরা এসে ক্যামেরা দিয়ে আমাদের দেখতে লাগল।
আমরা সবাই টিভিতে আমাদের মুখ দ্যাখাতে চাইলাম। একটুও দেরী না করে আমরা আমাদের পোশাকের ধুলো ঝেরে ফেললাম, আমাদের কালো দাঁতগুলো যাতে না চোখে পড়ে, আমরা মুখ খুলে হাসলাম না, নাকের শিকিন নাকের মধ্যে টেনে নিলাম। আমরা সবাই ওয়ানুগুর কথা বলতে চাইলাম, সে যখন জিভানজি বাগানে বসে ছিল তখন তাকে কীভাবে এ.কে.-৪৭ বন্দুক দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল সেই কথা, তখন দুপুরের খাওয়ার সময় সে আঠার মতো নিঃশ্বাস নিতে নিতে প্রচারকের বাণী শুনছিল, স্বর্গ কী মহান! এমন কি সে কোনো গাড়ির চোখ বা আয়না বা টায়ার চুরি করার কথাও ভাবছিল না। আমরা সবাই কাহিনীটা বললাম, কিন্তু রাতে যখন আমরা ভারতীয় টিভির দোকানে নিজেদের ছবি দেখতে গেলাম, আমরা শুধু মেরিকেই দেখলাম, সে ইংগ্রিসে (ইংরেজি) গান গাইছিল:
’মেরি হাডা নাইট্রো রাম্প, নাইট্রো র্যাম্প, নাইট্রো র্যাম্প।’ (Ramp)
আমরা কয়েকজন বড়ো বড়ো চোখ করে মেরিকে দেখতে লাগলাম কারণ আমরা কখনো শুনিনি যে রাস্তায় আসার আগে সে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস থ্রি পর্য্যন্ত পড়াশোনা করেছিল।
আমরা বললাম, ’মেরি, তুমি ইংগ্রিসে বলো, আমরা শুনবো।’
আমরা তার গালে চড় মেরে হেসে উঠলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমাদের ভয় হতে লাগল যে মেরিকে রক্ষা করতে রাস্তা থেকে কেউ বুঝি ছুটে আসবে। আমাদের সবার মনে পড়ল যে গত বছর একটা কুকুরকে মেরে তাড়াতে লোকজন ছুটে এসেছিল কারণ কুকুরটা আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া একটা টোটোকে দেখতে পেয়েছিল। মেরির উপর আমাদের হিংসা হচ্ছিল। সে এই নিয়ে কখনই মনে মনে কিছু ভাবছিল না। এমন কি সে আমাদের বোন ও বন্ধু হলেও সে ছিল একেবারে অপদার্থ – সবসময় সে আঠালো নিঃশ্বাস ছাড়ে এবং ভাবে কোথায় গেলে কালো-কিশমিশ ফান্টা পাওয়া যাবে। যদি কেউ মেরিকে বাঁচাতে আসত, তাহলে আমরা বলতাম যে আমরা সবাই মেরি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চকোরাদের গা’য়ের গন্ধ ধুতে নাইরোবি নদীতে যেতাম, কেউ কেউ মিহিন্দিদের টিভির দোকানে গিয়ে লোকেরা কেমন করে ইংগ্রিস বলে তা শুনতাম, কেউ কেউ বা কতকাল আগে আমরা একটা বড়ো বাড়িতে বাস করতাম তা নিয়ে একটানা গল্প ফেঁদে বসতাম।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কেটে গিয়েছিল। মেরিকে কেউ রক্ষা করতে আসেনি। আমরা বড়ো হয়ে উঠালাম। আমাদের দুই পা’য়ের মাঝ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল। এবং দিনের পর পর দিন রোদে পড়ে থেকে মেরির বাদামি চামড়া আমাদের মতো কালো হয়ে উঠল। তার পা’য়ের বুড়ো আঙ্গুলে চামউকুন ধরল। মুখ থেকে তার দাঁতগুলো আরও দশগুণ ফাঁক হয়ে বেরিয়ে এল। আঠালো নিঃশ্বাস নিতে নিতে সে বাবা-মা’য়ের নাম বিস্মৃত হয়ে পড়ল। প্রতিদিন তার মাথাটা খারাপ হয়ে যেতে লাগল। সে তার কাপড়জামা খুলে ফেলে মাটি দিয়ে ধুত যতক্ষণ না আমরা এসে তাকে তাড়া করতাম। আমরা তাকে পাকড়াও করে তার উপর চড়ে বসতাম। তার গা’য়ে চিমটি কাটতাম। চড়-চাপড় মারতাম। তার চুল ধরে টানাটানি করতাম। তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে না আসা পর্য্যন্ত আমরা তাকে ছাড়তাম না।
এখন আমরা সবাই ধেড়ে মা হয়ে উঠেছি। আমরা যখন রাস্তায় পয়সা ভিক্ষে চাই, তখন তারা আমাদের বুকের উপর পাকা আম ফলের মতো ঝুলতে থাকা মাতিতির (স্তন) দিকে চেয়ে তাকিয়ে থাকে। আমাদের লজ্জ্বা হত কারণ তারা আমাদের বাজে মাল বলে ভাবে। শেষে আমরা সবাই রাস্তায় ভিক্ষে করা ছেড়েই দিলাম, এমন কি মেরিও। আমরা যখন রাতে ব্যাঙ্কের রক্ষীর কাছে গেলাম সেও আমাদের অনুসরণ করে এল।
রক্ষী বলল, ’আমি – আমি তোমাদের সাহায্য করবো কারণ আমি তোমাদের বন্ধু।’
বলল, ’তোমাদের দশ শিলিং আমার, বাকি দশ শিলিং তোমরা রেখে দিয়ো।’
বলল, ’আমি তোমাদের ভালো ভালো খদ্দের জোগাড় করে দেবো।’
সে আমাদের বন্ধু ছিল, কিন্তু যখন আমরা তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম মেরির পেট থেকে টোটোটা কীভাবে বের করে আনা যায়, সে আমাদের তাড়া করল, আমাদের শয়তান বলে গালমন্দ করল।
সে বলল, ’তোমাদের কে বলল আমি টোটো মারতে জানি?’
মেরির জন্য আমাদের করুণা হল। হয়ত’ কোনো একবার একজন খদ্দেরের সঙ্গে কাজ শেষ করার পর সে নুনজল দিয়ে নিজেকে সাফ করে নিতে ভুলে গিয়েছিল। আমরা যে-বাড়িতে বাস করতাম, তার দু’দিকে দেওয়াল, উপরের একদিকে ছাদ ছিল না। আমাদের একজন বলল সে তার দিয়ে কীভাবে টোটো বের করতে হয় জানে, আর একজন জানত জাভেনজি বাগানের পাতা দিয়ে কীভাবে কী করতে হয়। আমরা কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করলাম, আমাদের ভয় হল আমাদের পেটেও বুঝি টোটো আছে।
কিন্তু মেরি যথারীতি আঠালো নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে, আপন মনে গান গাইছে। আমরা যে-বাড়িতে বাস করতাম, তার দু’দিকে দেওয়াল, উপরের একদিকে ছাদ ছিল না। সে সারাদিন কোন যমের দক্ষিণে চলে যাওয়া একটা সিঁড়ির নিচে বসে থাকল, বলল কোন লোকটা তার পেটে টোটোটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রথমে লাঠি ধরে হাঁটা একটা লোক ছিল যে তার হাতে একশো শিলিংয়ের একটা নতুন কড়কড়ে নোট ধরিয়ে দিয়েছিল। সে ছিল একজন মাজুঙ্গো (সাদা মানুষ), নেকো সুরে ইংগ্রিসে কথা বলছিল। মেরি তখন পা’য়ের বুড়ো আঙ্গুলের চামউকুন ও চুলের উকুন চুলকোচ্ছিল। সে বলল, না, এটা ছিল সেই লোকটা যে তাকে একটা বড়ো গাড়ি করে একটা নতুন বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল, তারপর তার গা ধুইয়ে তাকে খুশবাই মাখিয়ে দিয়েছিল, এবং বলেছিল এখন তাকে না কি দারুণ সুন্দর লাগছে। আমরা তাকে বললাম সে লোকটাকে খোঁজার চেষ্টা করলে কেমন হয়। লোকটা তাকে বিয়ে করে ওই বড়ো বাড়িটায় নিয়ে গিয়ে তাকে রুটি ও দুধ খাইয়ে রাখবে।
আমরা সবাই দাঁতের মধ্যে দিয়ে হাওয়া টেনে তার দিকে লম্বা আওয়াজ করতে লাগলাম কারণ সে বাওয়া ডিমের মতো ভেবেই চলেছিল, আমরা কেউ কেউ লক্ষ্য করলাম তাকে সুখী সুখী লাগছে – তাকে আমরা সাবান উপহার দিলাম যা দিয়ে তিনবার অন্ততঃ গা ধোওয়া যায়, আর দিলাম ভাঙ্গা দাঁতের চিরুণি, একটা আম যা তখনও কাঁচা সবুজ। আমরা চাইলাম যে যখন টোটোটা বেরিয়ে আসবে সে তাকে আমাদের হাতে তুলে দিতে আপত্তি করবে না, পেটে হাত ছোঁয়ালে বাচ্চাটা ফিক করে হেসে উঠবে। আমরা তাকে বলতে লাগলাম তার কী নাম দিলে দারুণ সুন্দর শুনতে লাগবে। আমরা চাইলাম টোটোটা যাতে মেয়ে হয়, এমন কি ছেলে হলেও আরও ভালো হবে কারণ ছেলেরা আস্তকুঁড় খুঁজে টিন কাগজ ও বোতল আনতে পারবে, এবং ওয়েস্টল্যান্ড নিয়ে গেলে তার বিনিময়ে কিছু পয়সা পাওয়া যাবে। কিন্তু মেয়েরা সুন্দর হয়, তাদের চুলে বিনুনি বেঁধে দেওয়া যায় এবং নানা রঙের পোশাক পরতে পারে। আমরা সবাই এইরকম ভাবলাম কিন্তু আমরা সবাই লক্ষ্য করলাম মেরি আনমনা হয়ে খারাপ কিছু ভাবছে।
আমরা রক্ষীর কাছে তার জন্য আর্জ্জি করলাম। সে বলল, ’না, না, পেটে টোটো থাকলে খদ্দেররা কেউ পছন্দ করবে না।’
আমরা কেউ মেরিকে টাকার ভাগ দিতে পারলাম না। তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করে গেলাম। সে একটা সুপারমার্কেটে দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করল। দেখল লোকজন তাদের টোটোর জন্য দুধ রুটি ও চিনি নাইলন প্যাকেটে ভরে নিয়ে বেরিয়ে আসছে। সে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে, ’আমাকে কিছু সাহায্য করুন।’ কিছু লোক মাটিতে থুতু ছিটিয়ে দিল। কিন্তু ঈশ্বর মেরির প্রতি সহায় ছিল। তার গা’য়ে ছেঁড়াফাটা পোয়াতির পোশাক, খালি পা দেখে কিছু সহৃদয় মানুষের তার প্রতি করুণা হল, তার হাতে চল্লিশ পঞ্চাশ শিলিং ধরিয়ে দিল। কিন্তু ওই সুপারমার্কেটের বাইরে আরও কিছু ভিখারি মাটিতে বসে ছিল, তারা তাদের ভাঙ্গা পা অন্ধ চোখ দেখিয়ে করুণা চাইল। তারা মেরিকে ঈর্ষা করতে লাগল। যখন আশেপাশে লোকজন কেউ ছিল না, তারা দাঁড়িয়ে উঠে তাদের হাঁটার লাঠি নিয়ে তাকে খেদিয়ে দিল।
সেখান থেকে সে গ্লোব সিনেমার মোড়ে থামিয়ে রাখা গাড়ির ভিড়ে হাত বাড়াল। সে চোখে জল নিয়ে বলতে লাগল, ’মা-ম্-মা, আমাকে কিছু সাহায্য করুন।” কিন্তু তাদের করুণা হল না। তারা তাদের জানালা বন্ধ করে দিল এবং অন্যপাশ থেকে তার দিকে তাকাল, ভাবল সে বুঝি রাস্তার ছেলে-ছোকরার মতো তাদের নোকিয়া ক্যামেরা নিয়ে ভেগে পালাবে। কখনো কখনো গাড়িগুলো তাকে ধাক্কা দিয়ে খুব জোরে ছুটল, তখন তারা জানালা দিয়ে মাথা বের করে চিৎকার করতে লাগল, ’এই ছুঁড়ি, রাস্তা থেকে সরে যা, না হলে তোকে চাপা দিয়ে মারবো।’ মেরি আঠালো নিঃশ্বাস ছাড়ল, লোকগুলোর কথায় কান দিল না। কিন্তু সে জানত না ওই এলাকায় বুড়ি মেয়েরা রাস্তার কাছে বসে থাকে, পাশ কাটিয়ে যেতে থাকা লোকেদের দিকে চেয়ে তাদের টোটোদের ভিক্ষে করতে পাঠায়। যখন তারা মেরিকে দশ শিলিং পেতে দেখল, তখন তারা মেরিকে দু-চার ঘা কষিয়ে দিল কারণ সেটা ছিল তাদের এলাকা, সেখান থেকে তারা তাদের মুখের গ্রাস সংগ্রহ করত।
আমরা বললাম, ’মেরি, তুই ওই মাগীদের ভয় পাস না।’
বললাম, ’নাইরোবি ওদের বাবার নয়।’
কিন্তু আমরা জানতাম মেরি ডগির মতো নয় যে কেউ কিছু কেড়ে নিতে গেলে সে তার আঙ্গুল কামড়ে দেবে। রাতে রাস্তার কোনো ছেলে তার খোঁজে এলে তার পা’য়ে সে কুংফুর মতো লাথি মারতে পারত না। আমাদের মেরির জন্য করুণা হল। আমরা তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করে গেলাম।
সে তার বস্তায় শুয়ে দু’দিন পড়ে রইল। তখন তার আর খাবার কিছু পড়ে ছিল না। সে একটা নাইলন কাগজের মধ্যে তার সবকিছু ভরে নিয়ে একটা চাদর দিয়ে তার পিঠে টোটোর মতো করে বাঁধল। কিছু বলল না কোথায় সে যাচ্ছে।
একদিন কাটল, দু’দিন কাটল, তিনদিন কাটল। আমরা তার কথা ভাবাই ছেড়ে দিলাম। আমরা আমাদের বস্তায় শুয়ে পড়ে থাকি। মুখ ধুয়ে মুখে পাউডার মাখি। রাস্তায় গিয়ে অপেক্ষা করি কখন খদ্দেররা আসবে। আমাদের কিস-কিস-কিস করে জলদি আসতে বলবে। পয়সা গুণি। কী কী উপহার দিয়েছে দেখি – প্ল্যাস্টিক বালা, একটা প্যাকেটে পড়ে থাকা দু’টো বিস্কুট, একটা কাচভাঙ্গা হাতঘড়ি – সবসময় একই জিনিস। সেইসময় আমরা নিজেদের জিনিসের কথা ভাবছিলাম। কেউ কেউ ভাবছিল তাদের পা’য়ের বুড়ো আঙ্গুলে চামউকুন ধরেছে কি না। কেউ ভাবছিল মোলো সংঘর্ষে তাদের বাবা-মা মারা না গেলে তাদের অবস্থা কী হত। আমরা সবাই আঠালো নিঃশ্বাস ফেললাম এবং আমাদের রাস্তার জীবন কবে শেষ হবে ভেবে হাতের পাঁচ আঙ্গুলে দিন গুণতে লাগলাম।
চারদিন, পাঁচদিন, ছয়দিন পর আমাদের মেরিকে নিয়ে ভাবনা শুরু হল। আমরা নিজেদের মধ্যে গুঞ্জন করতে লাগলাম। রাস্তার ছোকরারা যদি মেরিকে একলা পড়ে থাকতে দেখতে পায় আর সে যদি না তার ছুরি দিয়ে তাদের গলা কেটে ফেলতে পারে? নগর পর্ষদ যদি তাকে ধরে জবরদস্তি করে লরিতে তুলে থানায় নিয়ে যায়? যখন আমরা জেলঘরের আরশোলা ও ইঁদুরে গিসগিস করা এবং ষণ্ডাগণ্ডা মার্কা লোকেদের কথা ভাবতে লাগলাম, এবং সেখানে টয়লেটে যাওয়ার জন্য সবার সামনে মাত্র একটা বালতি বসানো থাকার কাহিনী বললাম, তখন আমাদের মধ্যে যারা কখনো থানায় ঢোকেনি তারা চোখকান বন্ধ করে ফেলল।
তারা জিগ্যেস করল, ’তোমরা সেখান থেকে কীভাবে বেরিয়ে এলে?’
আমরা তাদের সেই কাহিনীও শোনালাম। আমরা বললাম, ’খদ্দেরদের মতো ওই পুলিশরা দশ শিলিং কেন এক শিলিংও দিত না।’
এবং তারপর মেরি ফিরে এল। সে এমন একটা পোশাক পরে এল যা আমরা আগে কখনো দেখিনি। একটা ঢাউস আকারের সোয়েটার, তাতে তার পেটটা ঢাকা গিয়েছিল। সে সাবান ও পরিস্কার জল দিয়ে গোসল করেছিল। সে যখন চলে গিয়েছিল তখন তার নাইলন যেমন ছিল, কাগজটা সেইরকম আর আমরা দেখলাম না। রাস্তায় জীবনযাপন করার জন্য যেসব জিনিসপত্র লাগে তার কাছে তাই শুধু ছিল না: খাবার রাখার জন্য সমারিটানদের দেওয়া প্ল্যাস্টিক ব্যাগ, পানির বোতল, জোয়ার ও কড়াইশুঁটি রাখার বাটি, আগুন জ্বালানোর লড়কি ও কাগজ, রক্ত রুখবার কাপড়, রান্না করার নুন ও টিন। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা বেখাপ্পা জুতো ও চটিই শুধু আনেনি, তার সঙ্গে ছিল একটা কানের দুল, হাতল ভাঙ্গা একটা কাপ, মজার মজার কথা লেখা একটা কাগজ। বহু আগে যেসব জিনিস সে হারিয়ে ফেলেছিল রাস্তায় ফিরে এসে সে সেইসব জিনিস সঙ্গে নিয়ে এসেছিল: তার মা’য়ের মন্ত্রপূত তাবিজ, যে-ছুরি দিয়ে তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই ছুরিটা, এবং একটা গান যা তার ভাই তাকে গেয়ে শোনাত।
আমরা শুধু তার নাইলন কাগজের ভিতরটা দেখতে চাইলাম। দেখতে চেয়ে আমরা তেমন খারাপ কিছু করিনি। আগে সে আমাদের নাইলন কাগজও দেখেছিল। এখন সে যমের দখিনে চলে যাওয়া সিঁড়ির নিচে একা বসে তার পেটের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে: ঘুমাও, সোনা আমার, ঘুমাও। আমরা কেউ কেউ বললাম যে তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বলল, ও স্বার্থপর। সে যেভাবে নাইলন কাগজটা ধরে ছিল তাতে আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলাম, ও কি ভাবছে আমরা তার জিনিসপত্র সব চুরি করে নেব? এমন কি আমাদেরও জিনিসপত্র ছিল, আমাদের টাকাকড়ি, খাবার। যখন সে টয়লেটে গ্যালো, আমরা তার নাইলন কাগজটার দিকে উঁকি দিলাম এবং দেখে বললাম, ’ও-য়া-হ্!’
মেরির নাইলন কাগজে ছিল তিনটে রুটি, চারটে দুধ আর তিনটে চিনি। তার সঙ্গে রুমালে বাঁধা মিষ্টিও ছিল, আর ছিল বাঁধাকপি ও চাল। আমরা নাইলন কাগজটা শুঁকে বুঝলাম তার মধ্যে মুরগীর মাংস ও চিপসও আছে। নিচের দিকে দেখলাম দু’টো সাবান, মাথায় বাঁধার প্ল্যাস্টিক ফুল আর কালো-কিশমিশ ফান্টার খালি তিনটে বোতল।
সে চিৎকার করে বলে উঠল, ’চোর কোথাকার!’
সে আমাদের মুখ থেকে রুটিগুলো ছাড়িয়ে নিল এবং নাইনল কাগজে ঢূকিয়ে রাখল। আমরা আগে তাকে যেভাবে স্মরণ করেছি সেইকথা স্মরণ করে আমরা তাকে পেটাতে চাইলাম, তার চুল ধরে টানতে চাইলাম, তাকে কামড়াতে চাইলাম। তাকে চিমটি কাটতে চাইলাম। তার মুখে মাটি গুঁজে দিতে চাইলাম। কিন্তু তার পেটে টোটো থাকার কারণে আমাদের কারুর কারুর মনে দুঃখ হল। আমরা মেরির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে গেলাম। এবং যমের দখিনে চলে যাওয়া সিঁড়ির কাছে মেরির পাশে বসলাম।
আমরা বললাম, ’মেরি, আমরা কাউকে বলবো না।’
বললাম, ’মেরি, তোর মনে আছে কারা তোর সঙ্গে একই টুথব্রাশে দাঁত মাজত?’
কিন্তু মেরি তার গোপন কথা আমাদের বলতে চাইল না। রাতে আমরা যখন রক্ষীর সঙ্গে দ্যাখা করতে গেলাম, মেরি আমাদের বিছানায় শুয়ে পড়ে রইল, রাস্তার ছোকরারা তাকে একা পেয়ে যেতে পারে বলে ভয়ও করল না। সকালে আমরা যখন ফিরে এলাম, সে আর সেখানে ছিল না। যখন সে ফিরে এল তখন সে আরও জিনিস নিয়ে ফিরে এল। আমরা সবাই বুঝতে পারলাম মেরি কোথাও থেকে চুরি করে এনেছে।
এবং ঠিক তার পরই মেরি ধরা পড়ল।
তখন ছিল জানুয়ারি মাস। মধ্য-গগনে সূর্য্য তখন গা’য়ে জ্বালা ধরিয়ে হাসছিল। প্রবল বাতাসের তোড়ে পড়ে নাইলন কাগজ অফিসের মেয়েদের স্কার্টে ঘুরঘুর করছিল। ছোটো ভ্যানগাড়ির দালালরা কাহওয়া, কাঞ্জেমির ও অন্যান্য যাওয়ার লোকজনের উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে ওঠার জন্য হাঁক পাড়ছিল। লোকজন কেউ ছোটো ভ্যানগাড়িতে যেতে চাইছিল না কারণ তারা কুড়ি শিলিংয়ের জায়গায় চল্লিশ শিলিং দাবি করছিল। আমাদের মধ্যে কয়েকজন ঘুমিয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল আমাদের জান যেতে বসেছে, কেউ কেউ খাবার রান্না করার জন্য আগুন ধরাচ্ছিল, কেউ কেউ বা লাফদড়ি খেলছিল এবং যখন আমরা টোটো ছিলাম তখন আমরা কেমন ছিলাম সেই কথা মনে ভেসে আসছিল। কেউ কেউ আবার আঠালো নিঃশ্বাস ফেলে চিপস ও মুরগীর মাংস খাওয়ার খোয়াব দেখছিল।
আমরা মেরিকে ছুটতে শুনতে পেলাম, সে যখন আমাদের বাড়ির তারজালি বেড়া টপকাল, দেখলাম তার সঙ্গে তার নাইলনের কাগজ নাই। তারপর তার পিছনে চারজন লোক প্রবেশ করল। একটা লোক লম্বা, একজন খাটো, একজন লাল জামা পরে ছিল এবং তাদের যে সর্দ্দার তার হাতে ছিল একটা লম্বা লাঠি। তারা আমাদের কিছু বলল না। মেরি যমের দখিনে চলে যাওয়া সিঁড়ির তলায় যেখানে লুকিয়ে ছিল তারা সেখানে গ্যালো। তারা তার মুখ চেপে ধরল যাতে সে না চিৎকার করতে পারে। আমাদের মধ্যে কেউ একজন আঠালো নিঃশ্বাস ফেলল এবং অনন্তে তাকিয়ে রইল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে ফেলল এবং আমরা আমার বস্তার তলায় গা ঢাকা দিলাম।
এখন আমরা বুঝতে পারলাম মেরি কোথা থেকে চুরি করে। রাস্তার মহিলাদের কাছ থেকে। অফিসের মহিলারা সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে থাকে, তাতে তাদের গড়নটা আট বছরের মতো মনে হয়। সে তাদের চুপিচুপি অনুসরণ করছিল। সে রাস্তার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিল কোথাও কোনো পুলিশ বা নগর পর্ষদের কেউ আছে কি না। অফিসের মেয়েরা খুব জোরে হাঁটে না, তাদের পা’য়ে থাকে ছোঁচালো জুতো, দোকানের জানালার দিকে তাকিয়ে হাঁটে। রাস্তা পার হওয়ার মোড়ে এসে তারা থেমে পড়ল কারণ কোনো গাড়ি বা ছোটো ভ্যান তাদের গা’য়ে নোংরা জল ছিটিয়ে দিতে পারে। এইসময় মেরি খুব দ্রুত হেঁটে গ্যালো এবং হাত বাড়িয়ে বলল, ’গরীবকে সাহয্য করুন।’
যদি অফিসের মহিলা তাকে সাহায্য না করত, মেরি কিছু করত না, কিন্তু মহিলা যদি তাকে খারাপ কিছু বলত, তাকে বেশ্যা বলত বা জিগ্যেস করত তার পা দু’টো খুলে মেলে ধরে তার কিছু মনে হয় কি না, মেরি তখন তার সোয়েটারের তলায় লুকিয়ে রাখা নাইলন কাগজটা বের করত। প্রতিদিন সকালে মেরি তার টয়লেটের কাগজটা নিয়ে ঘুরে বেড়াত। শান্ত স্বরে সে অফিস মহিলাকে পয়সা ভিক্ষে দেওয়ার জন্য বলত বা সকালে টয়লেট যাওয়ার কাগজটা ব্যবহার করত এবং টয়লেট কাগজের গন্ধ নিয়ে অফিসে ফিরে যেত। অফিস মহিলারা টয়লেট গন্ধের ভয়ে তাকে একশো শিলিং ভিক্ষে দিত, এমন কি দু’শো শিলিং পর্য্যন্ত।
তারপর থেকে মেরি চালাক হয়ে উঠল। সে পালিয়ে যেত না। অফিস তাকে চোর বলে চিৎকার করে ওঠার আগেই সে নিজের মনে কথা বলতে শুরু করে দিত এবং টয়লেট কাগজটা তার মুখে তুলে ধরত যতক্ষণ না লোকেরা ভাবতে শুরু করত সে একটা পাগল মেয়ে।
ঈশ্বর মেরির সহায় ছিল, কিন্তু সে জানত না যে এটা চোর ও খুনেদের এলাকা। মেরিকে এমন চতুরভাবে চুরি করতে দেখে তাদের ঈর্ষা হত। তাকে পিটুনি দিতে তাদের চারজন লাঠি নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিল। বস্তার শুঁটির সবুজ ছাল ছাড়ানোর মতো তারা তাকে তাদের ঢাউস জুতো দিয়ে দমাদ্দম লাথি মারতে লাগল। তার নতুন পোশাকটা ছিঁড়ে ফালাফালা করে ফেলল। তার পা মাথা গলা হাত ও পা’য়ের মাঝ দিয়ে রক্ত ঝরতে লাগল। তাদের মেরির প্রতি একটুও করুণা হল না।
আমরা সবাই মেরিকে সাহায্য করতে চাইলাম। আমরা তার বাঁধা মুখের আর্তনাদ শুনতে পেলাম। আমরা সবাই ছুটে গিয়ে রাস্তার লোকেদের ডেকে আনতে চাইলাম, পুলিশ নগর পর্ষদে খবর দিতে চাইলাম। কিন্তু আমরা সবাই ভাবছিলাম যে যদি খুনে চোরেরা ফুলে ওঠা পোয়াতি পেটের মেরিকে করুণা না করে তবে তারাই বা তার প্রতি কেমন করে করুণা করবে।
দিনের পর দিন কেটে যায়। মেরি তার বস্তায় শুয়ে থাকে। নড়াচড়া করে না, আমাদের সঙ্গে কথাও বলে না। আমরা তার জন্য পানি এনে দিই। আমরা আমাদের মুখে খাবার দিই, তারপর মেরির মুখে। সে ছিল আমাদের বোন, সে ছিল আমাদের বন্ধু। আমরা তার পোশাক ও সোয়েটার খুলে নাইরোবি নদীতে গিয়ে ধুয়ে আনলাম। তার শরীর থেকে যেখানে রক্তপাত হয়েছিল সেখানে মাটি ঢেলে দিলাম। তার মরা টোটোকে একটা নাইলন কাগজে ঢেকে দূরে কোনো আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে এলাম। মেরির জন্য আমাদের চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একজন চাপা স্বরে বলল মেরি মরে যাচ্ছে। তারা বলল আমার অন্যকোনও বাড়ি খুঁজে সেখানে গিয়ে থাকি, মেরির থেকে দূরে। আমরা তাদের চড় কষালাম। তাদের চুল ধরে টানলাম। তাদের মুখে মাটি গুঁজে দিলাম।
আমরা বললাম, ’মেরি, এই আমাদের বেশ।’
বললাম, ’মেরি, রক্ষী এখন থেকে আবার তোকে খদ্দের পাইয়ে দেবে।’
কিন্তু মেরি কিছু শুনছিল না।
একদিন আমরা সবাই দেখলাম মেরি নিজের মনে কথা বলছে। তারপর সে তার জিনিসপত্র নাইলন কাগজে ভরে নিল। এবং একটা চাদর দিয়ে তার পিঠে বেঁধে নিল, যেন সেটা তার মরা টোটো। সে আমাদের পাশ কাটিয়ে আমাদের তারজালি ঘেরা বাড়ি ছেড়ে চলল। সে তার চোখটা একটু বন্ধ করল কারণ সূর্য্যটা তখন চাদ্দিকে লাফিয়ে উঠছিল গাড়ির জানালায় এবং চলন্ত লোকের মাথার উপর। হর্ন বাজিয়ে লোকের গা’য়ে কাদা ছিটিয়ে চলা ভ্যান গাড়ির পাশ কাটিয়ে, নগর পর্ষদ থেকে ছুটে বেড়ানো হকারদেরও সে পাশ কাটিয়ে চলল। অফিস ও ব্যাঙ্কের রক্ষীদেরও সে পাশ কাটিয়ে চলল। আস্তাকুঁড়ের উপর উঠে টিন কাগজ ও বোতল খুঁজে বেড়ানো রাস্তার ছেলে-ছোকড়াদেরও সে পাশ কাটিয়ে চলল। হলুদ ও কালো চোখের পথবাতিও সে পাশ কাটিয়ে চলল। সে পাশ কাটিয়ে চলল একটা লোককে যার জুতো, পকেট ও পোশাক চুরি হয়ে যাচ্ছিল। সর্বত্রই আমরা তাকে অনুসরণ করে চললাম সে কোথায় চলেছে তা বারবার করে জিগ্যেস করতে করতে।
’মেরি, কোথায় যাচ্ছিস?’
’মেরি, কোথায় যাচ্ছিস?’
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পার হয়ে চলল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ পুলিশ ও নগর পর্ষদের হাতে ধরা পড়ল। থানা থেকে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটর কাছে নিয়ে যাওয়া হল, লোকটা তার চোখের সামনে বসানো আয়না থেকে দেখল আমরা ভালো না খারাপ। কাঠের হাতুড়ি দিয়ে সে তার টেবিল ঠুকল এবং আমাদের কয়েকজনকে কিছু বিশালদেহী অপরাধী মেয়ের সঙ্গে থাকতে পাঠাল, কয়েকজনকে পাঠাল একটা স্কুলে ঘাস কাটতে। এ,কে.৪৭ নামের বন্দুক দিয়ে পুলিশ আমাদের কয়েকজনকে মেরে ফেলল। আমরা কয়েকজন রাস্তার ছোকরাদের বউ হয়ে গেলাম। বহুবছর পর যখন আমাদের কযেকজনের হাতে বিস্তর টাকা জমল আমরা তা দিয়ে মাথারে বস্তির বাড়িতে থাকতে লাগলাম এবং আমরা নিজেরাই খদ্দের খুঁজে নিতে লাগলাম। এবং আমাদের কয়েকজনের খুব বেশী অঠালো নিঃশ্বাস ছাড়ার কারণে মাথা বিগড়ে গ্যালো, আমরা খুলে নাইরোবির লোকেদের পিছনে ধাওয়া করতে লাগলাম।
কিন্তু মেরি নাইরোবি নদী পার হয়ে গ্যালো। আমরা জানতেও পারলাম না সে কোথায় গিয়েছে।