লিখছেনঃ- দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
পর্ব-৯
ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা ও বরদা
পূর্বের দেবীর শ্রীমন্দির রাজভবনের সন্নিকটে ছিল। বর্দ্ধমানরাজের অত্যাচারে এই রাজ বংশ
বিলুপ্ত, রাজবাড়ির বিধ্বস্ত ও লুণ্ঠিত হওয়ায় দেবীর পূজক বটব্যাল বংশীয় ব্রাহ্মণগণ বর্ত্তমান
স্থানে মন্দির নির্মাণ পুর্বক দেবীকে প্রতিষ্ঠিত ক’রেছেন। “বিশালাক্ষী দেবীর আসন ” পঞ্চমুন্ডির’
উপর স্থাপিত। এই স্থানে দেবীর চতুর্ভূজ মূর্ত্তি।
এঁর চারটি হস্তে অস্ত্রশস্ত্র ওখর্পর আদি আছে।
দক্ষিণ হস্তস্থিত বাণ অসুরের বক্ষে প্রবিষ্ট
হ’য়েছে। এঁর নাগদন্ত ও নিম্ন ওষ্ঠ উর্দ্ধদন্ত দ্বারা
দংশিত এবং ত্রিনেত্র। এঁর দক্ষিণ পাদ শবের উপর ও হামিদ ভৈরবের মস্তকের উপর স্থাপিত। দেবীর
দুই পার্শ্বে লক্ষী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গণেশ ও দুটি
রাক্ষসী আছে। এই মূর্তিতে সৌম্য ও রৌদ্র, ভীতি ও
অভয় যেন সংমিশ্রিত রয়েছে।
রাজা শোভাসিংএর বংশের সভা পণ্ডিত ভট্টাচার্য্য
উপাধি সম্পন্ন ব্রাম্ভণ ছিলেন। এই বংশের কুলদেবী
‘ত্রিপুরা সুন্দরী’ নামক তান্ত্রিক যন্ত্র প্রসিদ্ধ।
এক্ষণে ধারণা করা যায় যে, ঘাটাল রণাঙ্গনে জয়
লাভের প্রায় ২৯/৩০ বৎসর পরে ১৭৩১বা১৭৩২
খৃষ্টাব্দে কীর্ত্তিচাঁদ বাহাদুর কর্ত্তৃক চন্দ্রকোণা শহরের রামগড়, লালগড় ও রঘুনাথ গড় প্রভৃতি
আক্রমণকালে বাদশাহী তোপে গড় গুলি বিধ্বস্ত
হ’য়ে যায় এবং আরও অন্যান্য করা যায় যে, বর্দ্ধমানরাজের অত্যাচারে এই স্থানের সমস্ত রাজ
বংশও সপরিবারে নিহত হন। ১৭৩৪ খৃষ্টাব্দে বাদশাহ মহম্মদ শাহের মোহরাঙ্কিত সনন্দে কীর্ত্তিচাঁদ, চন্দ্রকোণা, বরদাও চেতুয়া পরগণার
জায়গীর লাভ করেন। জাড়া নিবাসী প্রবীন মনীষী
শ্রদ্ধেয় ভাবে মৃগাঙ্ক নাথ রায় মহাশয় বর্দ্ধমান
রাজবাটীর মহাফেজখানা হ’তে উক্ত সনদের
বাংলা অনুবাদ অধুনালুপ্ত ‘মেদিনীবাণী’ পত্রিকায়
১৩৪৬ সালের ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশ করেছিলেন।
উক্ত সনন্দের অনুলিপি এখানে উল্লিখিত হ’ল:-
“মোহর”
সাহেব কোন দ্বিতীয় গাজী বাদশাহ আবুলফাতা
নসীরুদ্দিন মহম্মদ।
পিতা- মহম্মদ বাদসা জাহানসা বাহাদুর
পিতা-সা আল বাদসা
পিতা-আলমগীর বাংলা(আওরঙ্গজেব)
পিতা- সাজাহান বাদশাহ
পিতা – জাহাঙ্গীর বাদসা
পিতা- আকবর বাদসা
পিতা- হুমায়ুন বাদসা
পিতা- বাবর সা
পিতা- সেখ উমার সা
পিতা-সুলতান সাহিয়দ সা
পিতা-সুলতান মিরণ সা
পিতা-সাহেব কেরান আমীর তাইমুরলঙ্গ।
তথ্যসূত্র: “ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত”
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী।
ক্রমশ:…