সোমনাথ প্রধান-এর কবিতাগুচ্ছ

   
                                                     

সোমনাথ প্রধান-এর কবিতাগুচ্ছ

                                               ছবিঃ প্রসেঞ্জিত মণ্ডল

        ডাডাইজম
   

কমবয়সী খোলা ছাদ ।
শুকোতে দেওয়া নদীর পোশাক গায়েব !
দড়ি বলছে দমকা হাওয়ার দোষ…
তোমার লজ্জারা,
গুপ্তচর সেজে ছড়িয়ে গেছে এদিক-ওদিক !
আর আমি
বাংলার নোট আনতে গিয়ে দেখি,
রঙ্গনের বনে,
ফুলের সাথে ফুটে আছে তোমার অন্তর্বাস !
কাব্যতীর্থ মাসিমণির মতো রোদ ক’রেছিল সেদিন ।
আদরে আমার বাঁদিক খুলে ঢুকে যাচ্ছিল সাত পায়ের চিন্তন,
দালানে তোমার বই-পত্তর খোলা,
পৃষ্ঠাগুলো উড়ছিল দাউ দাউ ক’রে,
হেলায় বলছিল, ‘এইটুকুতেই !’
তুমি এলে তারপর ।
যেন
আন্তরিক রঞ্জন রশ্মি ছুঁড়ে
তোমায় জানালাম, আমি এসেছি !
ক্ষণজন্মা বৈঠক শেষে
অবাক রঙ্গনের প্রশংসাও ক’রে এলাম…
কবিতার কেউ প্রশংসা করলে
আমি যেভাবে আবার পড়ি তাকে,
তুমিও যদি ফিরে দ্যাখো একবার ;
নদীর পোশাকের গায়ে জড়িয়ে থাকবে
আমার নামটিও…
কখনও মুছতে পারবে না !

     কবিকে ভালবেসেছ যখন
       

শিরোনামটা (সিঁথি) ব্যাক স্পেস দিয়ে
আরেকটু বাঁদিকে আনতে হবে,
পলকের ছন্দ পতন হয়েছে মেঘের কমা’য়,
গাভিন গোধূলি ঠোঁটে বিলুপ্ত কম্পন,
অতিরিক্ত ব্রাশে আবছা চিবুকের তিল !
তোমার সাজসজ্জার পর আমাকেই প্রুফ দেখতে হয়…
মেলায় যাবে,
মেলায় যাওয়া মানে তো প্রকাশিত কবিতা !
তাই দেখে নিতে হয়, কত কিছু দেখে নিতে হয়…
তবে মনে রাখবে কিন্তু, কবি মানে অতৃপ্ত নিকট !
মেলা থেকে ফিরলে অক্ষরবৃত্ত সরিয়ে
উত্তরাধুনিক স্পন্দেও বদলে দিতে পারে,
অলংকার কমিয়ে
বহু কষ্ট ক’রে আনতে পারে একটা সহজ ভাব,
একক কবিতাপাঠ নিয়ে হাজির থাকতে পারে
রাত্রির গোপন বাঁকে,
ঘর ও ঝড় যেখানে মিলেমিশে থাকে…
কবিকে ভালবেসেছ,
এ কণ্ঠবায়ু ধ’রে রেখো ঝুলন্ত শাঁখে !

          ইচ্ছেভ্রম

ইচ্ছেভ্রম যোগ করলে
পাখি হয় শালুক ফুলেরা
জলের দোলনায় দোলে মুখোমুখি,
ঝিমুনি ও মোহ,
ঠিকানার প্রতিবিম্বে নেমে যায়
রোদের প্রতিমা !

জলতোড়ার জ্যামিতি
গায়ে মাখে হাওয়ার সোহাগ…
পরিচয় পত্র চেয়ে
দুপুরের ব্যস্ত অভিযান,
পুকুরের পদবীতে 
লেখা থাকে নারীদের স্নান !

               ছোঁয়া

ছোঁয়া-ও দারুণ হস্তশিল্প হতে পারে !
ছুঁয়ে যাও যখন
আমি আবিরের সাথে কথোপকথন লিখি…

নদীকেও চমকে দাঁড় করিয়ে দেয়
এক একটা ছোঁয়া,
রোদেলা কুসুমের পাপড়ি মণ্ডিত আঙনে
রুপোলি ভরসা ছড়ায় !

আমি
দূরত্বের সব বুক হেঁটে যেতে পারি, তার জন্যই…
সে আমার কবিতার চেয়েও বেশি বেশি মোহ,
সে দারুণ হস্তশিল্প হতে পারে,
দারুণ ! তুমি ছোঁয়ো…

                    সে

আমার মুগ্ধতায় তার লিরিক্যাল পদক্ষেপ,
হাওয়ায় উড়ছে পুনমের টেপ-জামা…
হাটখোলা হাঁটু তার
ধরেছি জড়িয়ে !

চাঁদের নিশান ক্রমশ প্রবল…
পৃথিবী যেন 
অশেষ মধুছন্দা,
আমি যেন আজ মনোরম
আর সে আমার সন্ধ্যা !

সে আমার চারপাশে, পাশে…
তার জন্যই আজ,
আমি শুধু চাঁদের দিকে এগোইনি,
আমার দিকেও এগিয়ে এসেছে চাঁদ !

                                     ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *