অনুলিপিঃকবি মিশ্র

অনুলিপি

                                                           ছবিঃগৌতম মাহাতো
                              কবি মিশ্র

প্রিয় তুই,
             আজ হঠাৎ মাসিমার সঙ্গে দেখা হল। মনে হয় একদশক পরে দেখলাম।  ৬.১৫ মেদিনীপুর লোকালটা ধরতে পারিনি, লেট হয়ে গিয়েছিল, অপেক্ষা করছি ,
দেখলাম মাসিমা কমলাদিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আমি তো বেশ অবাকই হলাম। চিনতেই পারছিলাম না। মেসোমশায় মারা যাওয়ার পর যে এতটা পরিবর্তন হবে বুঝতেই পারিনি। 
তবে সেই একই রকম আছে, সেই আগের মতো জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া। অত লোকের মাঝে একটু লজ্জাও করছিল।
যেমন সেদিন পেয়েছিলাম… তোর মনে আছে তোর জন্মদিনের পার্টিতে তোর বাড়িতে প্রথম গেলাম, তুই পরিচয় করিয়ে দিলি তোর বন্ধু বলে, অত গেষ্টদের মাঝে যখন ঠিক এমনি ভাবে জড়িয়ে চুমু খেয়েছিল, লজ্জায় আমি তখন তাকাতেই পারছিলাম না, সবাই হাততালি দিচ্ছিল,
 লাবণ্য, প্রতিভা, অতুল, মিতিল সবাই একগাদা ছবি তুলে ছিল, তুই শুধুই হাসছিলি। পরে ওই ছবি নিয়ে কত কাহিনী তৈরি হয়েছে বন্ধুদের মধ্যে।

মাসিমা কিন্তু ” মিমো “নামটা এখন ও ভোলেননি। ওই নামে একমাত্র আমার বাবা ডাকতো, ছোট বেলা আমি খুব রোগা, লাল চুল, ফর্সা, খয়েরি চোখ ছিলাম..তাই বাবা মিমো বলত..মেম থেকে মিমো… একবার গল্প করতে করতে ওই নামটা বলেছিলাম, মাসিমার খুব পছন্দ হয়েছিল… ওই নামেই ডাকতেন। মনে আছে ওই নাম নিয়ে কত রাগাতিস…
তোর মনে আছে ৬.১৫ লোকালের কথা !! ৯টার ক্লাস ধরবো বলে ৬.১৫ লোকাল ধরা, কতদিন হয়েছে তোর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছি..তুই ক্ষ‍্যাপানোর জন্য বলতিস..রাতে কারো সঙ্গে প্রেম করছি নাকি… আমি সঙ্গে সঙ্গে মাথা সরিয়ে বলতাম ,হ‍্যাঁ করছি, আর আড় চোখে দেখতাম তোর রিপার্কেশন…খুব রাগি রাগি মুখ করে বসে থাকতিস..আর আমি মনে মনে হাসতাম..অবশ্য রাগটা আমাকেই ভাঙাতে হতো…সেই অনিলদার ১০ টাকার ফুচকা.. ওতেই তোর রাগ গলে জল…

জানিস অনিলদা এখন ও একিই রকম আছে, মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে তোর কথা, আমি কিছু বলতে পারি না। তবে এখন আর আমি ফুচকা খাই না। অভ‍্যাস মতো ওই দোকানের সামনে দাঁড়াই, অনিলদার সঙ্গে কথা বলি ভালো মন্দ…

তুই কি কখনোই বুজিস নি আমার দুর্বলতা কথা। তোর কাঁধে মাথা রেখে ভরসা চেয়ে ছিলাম, তখন খুব ভীতু ছিলাম তো। তোর হাতটা শক্ত করে ধরতে ছেয়ে ছিলাম, তখন বুঝিনি শক্ত করে হাত ধরাটা কতটা কঠিন। অনেক বিশ্বাস লাগে। তোকে কাপুরুষ বলবো না। নিজের খারাপ লাগবে। তবে কথা দেওয়া আর রাখার মধ্যে যে কত দূরত্ব তোর সঙ্গে না থাকলে বুঝতাম না। আসলে অর্থের কাছে ভালোবাসার কোন মূল্য থাকে না। নিলীমার বাবা অর্থবান. দাদা ভালো সার্ভিস করেন,  জামাইবাবু wbcs  র‍্যাঙ্ক এ চাকরি করে..সেখানে আমি খুব সাধারণ, তোর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হোতো। 

নিশ্চয়ই তুই খুব ভালো আছিস্। আজ কি মনে হয় জানিস তখন আমাকে তোর প্রয়োজন ছিল, আমি তোর কোন দিনই প্রিয়জন হয়তো হতে পারিনি। 
জানিস , আজ খুব মনে পড়ে , ক্লাসে তুই যখন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে জোড়ালো পয়েন্ট রাখতিস, কুক্ষিগত কিছু মানুষের জন্য কি করে একশ্রেণী বড়লোক হচ্ছে আলোচনা করতিস, সেই তুই আর আজকের তুই এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য.. খুব কষ্ট হয় ভাবতে.. তুই অন্তত এতটা পাল্টাস না.. আর কিছু না ..ভালো থকিস…
                             ইতি 
                              “অসমাপ্তি”

                                   ★★★


Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *