ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস “চোরাবালি”(পর্ব-৬)

পরিচিতিঃ ইন্দ্রনীল বক্সী, “জন্ম – নকশাল পিরিয়ডে ..৭৩ এ দুর্গাপুরে , উচ্চতা মাঝারি, গায়ের রঙ মাজা, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ। লিখছি সেই কিশোরবেলা থেকে, দুর্গাপুর বেলা থেকে বর্তমান নিবাস – বর্ধমান। কি লিখছি ছাই নিজে তো জানিই না অন্যরাও জানে বলে মনে হয় না। হাবিজাবি করে চারটি বই প্রকাশিত।” বাইফোকালিজম্-এ তাঁর আজ ধারাবাহিক উপন্যাস ‘চোরাবালি‘-র ষষ্ঠ পর্ব।

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস

চোরাবালি(পর্ব-৬)

বিছানা ছাড়তে আজ মন চাইছেনা দেবুর। শরীরটাও কেমন ভারী ভারী ঠেকছে, কাল রাতে আচমকা কয়েক পশলা বৃষ্টি আবহাওয়ার কিছু পরিবর্তন করে দিয়েছিল। একটা ঠান্ডা ভাব জড়িয়ে গেছিল রাত্রের নিজস্ব স্বাভাবিক শীতলতার সঙ্গে। দেবুর আবার বরাবর খালি গায় শোয়া অভ্যাস। মনে হচ্ছে একচোট ঠান্ডা লেগেছে।
“ এই দাদা! দাদা… ওঠ …আটটা বাজছে! ভোঁদাইয়ের মতো শুয়ে আছিস এখনও! …ওঠ…”
মণি চায়ের কাপটা বিছানার পাশে কাঠের টেবিলটায় নামাতে নামাতে বেশ জোরে চেঁচিয়েই বললো কথাগুলো। দাদার ঘুমের বহর ও জানে , কুম্ভকর্ণও হার মানবে।
“আঃ চেঁচাচ্ছিস কেন!… আমি উঠেই আছি …”
আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসল দেবু বিছানায়, মণিটা খুব পাজি, ওকে যত বলে সকাল বেলায় চেঁচাবি না, ও সেই চেঁচাবেই ইচ্ছে করে।
“তা আমি কি করে জানব যে তুই জেগে!…মটকা মেরে পড়ে আছিস… ”
দেবু কোনো উত্তর দেয় না মণির কথার, হাত বাড়িয়ে জলের জগটা নিয়ে ঢক ঢক করে অনেকটা জল গলায় ঢালতে থাকে। এই অভ্যাস ওর বাবার কাছ থেকে পাওয়া। বাবার কথায় সকাল সকাল পেট ভরে জল খাওয়া ভালো, সিস্টেম ঠিক থাকে। দেবুরও অভ্যাস হয়ে গেছে ছোটবেলা থেকেই।
বাইরে রোদ ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওদের উঠোনে। রাতে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় একটা সোঁদা গন্ধ জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। দেবু চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে আসে, খালি গা পেটানো চেহারায় একটা সুতীর পকেট দেওয়া পায়জামা। উঠোনের কোণে নয়নতারা গাছ গুলোর যে ঝোপটা হয়ে উঠেছে, তার নিচে বৃষ্টিতে ঝড়ে পড়ে রয়েছে অজস্র নয়নতারা। এই সাদা নয়নতারার গাছটা মা এনে লাগিয়েছিল দেবুর মনে আছে বেশ কিছু বছর আগে। এখন আর মূল গাছটাকে খুঁজে পাবেনা ও, অসংখ্য চারা হয়ে তারা আবার গাছ হয়ে আবার চারা হয়েছে আরও… কয়েক প্রজন্ম নয়নতারায় একটা ঝোপের আকার নিয়েছে জায়গাটা। কিছু গাছ থাকে যারা কোন যত্নের প্রত্যাশী নয়, লাগিয়ে দিলে এমনিই বেড়ে ওঠে। কেউ মাঝে মধ্যে দু এক পাত্র জল গড়ায় আনমনে দিয়ে দিলেই যথেষ্ট। এরকমই অল্প যত্নের মায়ের আরও কটা গাছ রয়েছে দেবু জানে। এই যেমন বাড়ির পিছনের টগর গাছটা , সাদা জবা গাছটা… ওটা মায়ের খুব প্রিয়।
অভ্যাস অনুযায়ী সকালের কাজকর্ম সেরে দেবু স্নান করে নেয়। আজ একবার কলেজে যেতে হবে দুটো ক্লাস এটেন্ড করতে হবে। তারপর টিউশান ক্লাস রয়েছে। রান্নাঘর থেকে মায়ের কাজকর্মের আওয়াজ আসছে, দেবু জানে ঠিক সময়েই মায়ের রান্না রেডি হয়ে যাবে। জিন্সের প্যান্টের উপর হাল্কা নীল হাফহাতা টি-শার্টটা পরে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আয়নায় নিজেকে বেশ ফ্রেশ লাগছে। আয়না কবেই বা কাউকে অখুশি করে! মেয়েদের যে কি পছন্দ এখনও বুঝে উঠতে পারে না দেবু! অবশ্য তেমন বোঝার জন্য চেষ্টাও যে ও করেছে এমন নয়। কলেজে, কোচিং ক্লাসে দু একবার কারও কারও ব্যবহারে আলাদা আগ্রহের কিঞ্চিৎ আভাস পেলেও ও সেভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। নিজের খেয়ালেই মগ্ন থেকেছে। খুব বেশী ঘনিষ্ট হতে কেমন যেন বাধো বাধো লাগে ওর, কে জানে! এক রকম ভয়ই কাজ করে হয়তো ওর মনে। এক মাত্র নন্দিতার সঙ্গে ও কিছুটা সহজ ভাবে মিশতে পারে। নন্দিতার সোজা-সাপ্টা কথাবার্তা, সহজ ব্যবহারই সম্ভবত ওকেও সহজ করেছে মিশতে। আজ কি নন্দিতার সঙ্গে দেখা হবে? কলেজে হতে পারে, কোচিং ক্লাসেও হতে পারে। ভাবতে ভাবতে খাওয়ার টেবলে গিয়ে বসে দেবু।
সাইকেলে সদরঘাট ব্রীজের উপর পৌঁছে একটু দম নেয় দেবু। ব্রীজের আগে রাস্তাটা বেশ চড়াই, একটানা প্যাডেল করে হাঁফ ধরে যায়। ঝন্টুর চায়ের দোকানে বেশ ভিড় লেগেছে, রজতের বাইকটাও মনে হচ্ছে দাঁড় করানো রয়েছে, রজতকে দেখা যাচ্ছে না দোকানে। রজত এখানে বেশ কিছুক্ষণ গুলতানি করবে তারপর কলেজে পৌঁছাবে দেবু জানে। ওর ইচ্ছে করছে না এখন রজতের সঙ্গে কথা বলতে। সাইকেলে একটু গতি কমিয়ে দেবু ব্রীজ পেরিয়ে যায়।
তেলি পুকুর মোড় পেরোতে পেরোতে এক নজর মাস্টারের দোকানের দিকে দেখে নেয়। মাস্টার মন দিয়ে ইস্ত্রি চালাচ্ছে,ওকে লক্ষ্য করেনি। কলেজ মোড়ে পৌঁছে ডান দিকে বাঁক নেয়। কলেজের গেটের পাশেই অরুণ, গিয়াস আরও কয়েকটা ক্লাসের ছেলেদের দেখতে পায়। কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে গজ্জলা করছে। দেবু গিয়ে দাঁড়ায় ওদের পাশে।
“কি রে! কি কেস? বেশ জমিয়ে গ্যাঁজাচ্ছিস যে…”
“আরে গুরু যে! কোনো খবর রাখোনা! কি যে বলি… আবে বিরাট কেস …নেমে আয় বলছি…” অরুণ বলে ওঠে।
দেবু বুঝতে পারে কিছু একটা জোরাল ব্যাপার ঘটেছে কলেজে। ও নেমে সাইকেলটা গেটে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে জটলাটার দিকে এগিয়ে যায়।
“বস এরকম কেস আগে দেখেছো… আমাদের কলেজ জাতে উঠে গেল যাই বল…” বলেই মোবাইলটা বাড়িয়ে দেয় দেবুর দিকে গিয়াস। দেবু দেখে মোবাইলে একটা ভিডিও ক্লিপ চলছে…একটা বছর ১৮-২০র মেয়ে… বার বার হাত দিয়ে বুক ঢাকছে সলজ্জভাবে আর একটা ছেলের হাত মেয়েটার হাত সরিয়ে দিচ্ছে, সরিয়ে দিয়ে মেয়েটার চুড়িদারের সামনের বোতামগুলো খোলার চেষ্টা করছে, দু একবার বাধা দেওয়ার পর মেয়েটা ক্ষান্ত হয়। বুকের বোতাম খুলে যায় প্রথমে, এখন শুধু অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে সাদা রঙের… ছেলেটার হাত এবার মেয়েটার কাঁধ থেকে স্ট্র্যাপ নামিয়ে দিতেই একদিকের বুক উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। দেবুর কান গরম হয়ে ওঠে উত্তেজনায়… ছেলেটার হাত ঘোরাফেরা করছে মেয়েটার উন্মুক্ত বুকে ইচ্ছেমতো… মেয়েটা চোখ বুজে আছে… ভিডিওটা থেমে যায়। দেবুর কেমন যেন মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে! গোটা ভিডিওটাতে ছেলেটার শুধু হাত দেখা যাচ্ছে,তাই চিনতে পারার প্রশ্ন নেই। মনে হচ্ছে একটা বন্ধ ঘরের ভিতর তোলা গোটা ক্লিপিংটাই! কোথায়!… মেয়েটাই বা কে?…
“কি গুরু! …কেমন দেখলে! এক্কেবারে ডাঁশা পেয়ারা না?” অরুণ বলে ওঠে…
“মেয়েটা কে বলতো! চেনা লাগল!” দেবু বলে ওঠে।
“আরে চিনতে পারলি না! ফার্স্ট ইয়ার সায়েন্সের মধুরিমা ! সলিড মাল… শালা ওর বুকের ছবি না তুলে পাছার ছবি তুল্লে ভালো হতো… যা জিনিস না!”
দেবুর এবার পরিষ্কার হলো ব্যাপারটা। বাকিটা অরুণদের কাছে জানলো। কাল থেকে এই এম.এম.এসটা ছড়িয়েছে, ব্যাপারটা সংসদে, এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ অবধি গড়িয়েছে। দেবুর ভিডিও দেখার প্রাথমিক উত্তেজনা মরে আসে, কেমন তেতো লাগতে থাকে মুখটা।
“কোন হারামি এটা করেছে?” দেবু ধীর স্বরে জানতে চায়…
“হারামি কিরে!… বল মহাকাজ করেছে! একা ফল খেলেও কমসে কম শেয়ার করেছে বন্ধুদের সঙ্গে ফলের ছবি! …কে আবার করবে, ওই থার্ড ইয়ারের মধুরিমার বয়ফ্রেন্ড কাজল ছাড়া… ও তো প্রায়ই যায় ওদের বাড়ি… মধুরিমার বাপ-মা দুজনেই চাকরি করে… সেই মওকায়…
আরও কয়েক মিনিট কথা বলে দেবু কলেজের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ওর ভাল্লাগছিলো না, কি যা তা কেস! এরকম কেউ পারে! নিজেরা মস্তি করছিস কর… তার আবার ভিডিও তুলে বন্ধুদের পাঠিয়েছে!… শালা ঢ্যামনা… সিওর কেস খাবে… দেবুর মেজাজটা খিঁচড়ে যায়।
পর পর দুটো ক্লাস করে দেবু নেমে আসে নিচের করিডোরে। জায়গায় জায়গায় ছেলে মেয়েদের জটলা, অন্যদিনও একই রকম থাকে তবে আজকে সমবেত গুঞ্জনটায় যেন গম গম করছে করিডোরটা। আলোচনার কেন্দ্রে নিশ্চয়ই এম.এম.এসটা! দেবু আন্দাজ করতে পারে। একবার ক্যান্টিনের দিকে যাবে ভাবল ও, একটু ক্ষিদে ক্ষিদে লাগছে, একটা টোস্ট আর চা খেলে মন্দ হয় না। এখনও কিছু সময় রয়েছে ওর টিউশান ক্লাসে যাওয়ার। দেবু বাঁদিকে লম্বা বেঞ্চটায় গিয়ে বসে পড়ে। ওটাই ওর পছন্দের জায়গা, একটা কোণের দিকে। এখান থেকে পুরো ক্যান্টিনটাই দেখা যায় বেশ অথচ কোণটা বেশ নিরিবিলি এই হট্টগোলের মধ্যেও। কে ঢুকছে বেরচ্ছে দেখা যায় ভালো এখান থেকে। চা আর কোয়ার্টার পাউন্ডের একটা মোটা করে সর লাগানো ওপরে চিনি ছড়ানো টোস্ট নিয়ে এসে বসে দেবু।
টোস্ট শেষ করে চায়ে চুমুক দিতেই ক্যান্টিনের দরজার দিকে নজর গেল দেবুর, ছাত্র সংসদের তমাল সঙ্গে ফার্স্ট ইয়ারের কটা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বেশ একটা ব্যাস্ততা নিয়ে ঢুকলো। ক্যান্টিনের হট্টগোলটা মুহুর্তে থেমে গেল। তমাল বসল না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বেশ উঁচু গলায় বলতে শুরু করল“ ভাইসব, এখানে যারা রয়েছ তাদের বলছি, তবে তারাও যেন কথাগুলো বাকিদের বলে দেয়… আজ যা হয়েছে, ভাল হয়নি, একদম ফালতু কাজ হয়েছে। এতে আমাদের কলেজের বদনাম, ছাত্র সংসদের বদনাম… এটা আমরা হতে দিতে পারি না। ব্যাপারটা আমরা সংসদের তরফ থেকে দেখছি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, শুধু বলে রাখি এ জিনিস যেন এরপর না হয়… মোবাইল কথা বলার জন্য, পানু তোলার জন্য নয়… এরপর যদি জানতে পারি কেউ এই কাজ করেছে তার বারো বাজিয়ে দেবো… মোবাইল পিছনে ঢুকিয়ে দেবো… এটা যেন মাথায় থাকে… আর হ্যাঁ এটা নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে যেন বাওয়ালি না হয় একদম, মিডিয়ার কাছে গেলে, কে লিক করছে ঠিক জানবো… তার কলেজে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে… মনে থাকে যেন…” বেশ বক্তৃতার ঢঙে কথাগুলো বলে বেড়িয়ে গেল তমাল সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে। কিছুক্ষণ চুপ ক্যান্টিনের হল, তারপর আবার ধীরে জেগে উঠল গুঞ্জন। দেবুর চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠল, কানটা গরম গরম ঠেকছে “শালা… ধোয়া তুলশীপাতা! সেদিন সংসদের ওদের একটা ছেলে মেয়েটার সঙ্গে টানাটানি করল! কি ব্যবস্থা নিয়েছে?… ব্যবস্থা নেবে… হুমকি দিয়ে গেল কি রকম…!” মনে মনে উত্তেজিত ভাবনা দেবুকে অস্থির করে তোলে, চায়ের শেষ চুমুকটা দিয়ে ও উঠে পড়ে, বেরিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে। স্ট্যান্ড থেকে সাইকেলটা নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরায়। মিনিট দশেক সময় আছে, স্যারের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট।
স্যারের ঘরে ঢুকতেই মনে হলো কিছু একটা গরমিল রয়েছে! সবাই একটু যেন বেশি গম্ভীর। মনযোগী। নন্দিতা একবার তাকিয়ে আবার নিজের সামনে খোলা লম্বা খাতার দিকে তাকিয়ে রইল। একটা জায়গায় ফাঁকা দেখে বসে পড়ল দেবু। কলেজের কেসটার আঁচ নিশ্চয়ই!
ঘন্টা দেড়েক একতরফা স্যার বলে গেলেন, সবাই নোট করে গেলো, কেউ প্রশ্ন করলো না মাঝে অন্যদিনের মতো। স্যার মাঝে উঠে যাওয়ায় কেউ আলটপকা ফাজলামিও মারলো না আজ। স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্যদিনের মতোই দেবু সাইকেলটা নিয়ে খুব ধীরে এগোতে লাগলো বাঁকার পুলটার দিকে, একটু পরেই নন্দিতা আসবে ও জানে… অনেকটা এগিয়েও পিছনে নন্দিতাকে আসতে না দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। মনে মনে একটু অবাকই হলো নন্দিতার দেরী দেখে। একটু পরেই দেখলো স্যারের বাড়ির গেট দিয়ে এতক্ষণে নন্দিতা বেরোচ্ছে ।
বেশ কিছুটা রাস্তা ওরা কোনো কথাবার্তা ছাড়াই পেরিয়ে এল। নন্দিতাকে একটু আনমনা মনে হচ্ছে দেবুর কেন জানে না! ধীরে নিস্তব্ধতা ভাঙল নন্দিতাই…
“তোরা ছেলেরা এরকমই বল!”
“এরকমই মানে?”
“ভাটাস না… কি বলছি ভালই বুঝছিস… শালা একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে কি করে পারে তাকেই পাবলিকের খোরাক বানাতে!! …”
“ওঃ… ওই এম.এম.এস কেস… তাই বল…”
“খুব ক্যাজুয়্যাল দেখছি? …এটা নিশ্চিত ‘ছোট্ট’ ঘটনা তোর কাছে …!” বেশ রাগত এবং তির্যক স্বরেই বলে উঠল নন্দিতা।
“যাচ্চলে! খচে যাচ্ছিস কেন? …এমন করছিস! যেন আমিই…”
“তুইও হতে পারতিস… তোরা সবাই সমান …”
“এভাবে বলা ঠিক হচ্ছে ! …যদি উল্টো কথাটা বলি এরকম উল্টো উদাহরণ টেনে…”
“বল না… বল বল…” নন্দিতা দাঁড়িয়ে পড়েছে , বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছে “একটা উদাহরণ দেখা তোর চেনা জানাদের মধ্যে… পারবি?”
“দেখ তুই বেকার বাওয়াল করছিস… এরকম নয় তো অন্য রকম, বললেই বলা যায়… বাদ দে”
নন্দিতা গোঁজ হয়ে হাঁটতে থাকে, বোঝাই যাচ্ছে কলেজের ঘটনাটা ওকে বেশ নাড়া দিয়েছে। পাশে হাঁটতে থাকে দেবু, শুধু নীরবতা ভাঙার জন্যই কথা হাতড়াতে থাকে।
“কি ঠিক করলি? ফাউণ্ডেসানে ভর্তি হবি?”
“এখনও কিছু ঠিক করে উঠিনি, বাড়িতে বলিইনি এখনও…”
“সেকিরে! এদিকে আমার মাথা খেয়ে দিচ্ছিলি ফর্ম আর প্রস্পেক্টাসের জন্য!”
“আচ্ছা আমি চাকরি পেলে তোর কি লাভ বলতো?”
“এটা আবার একটা কথা হলো! আমার ভালো লাগবে… কেন আমি যদি চাকরি পাই তোর ভালো লাগবে না?”
“হুম… তুই খুব চাস না, আমি চাকরি করি… নিজের পায়ে দাঁড়াই…”
“হ্যাঁ তাই তো… মাঝে মাঝে এই বেকার বন্ধুর পিছনে একটু খরচ করবি… সেদিক দিয়ে আমারও স্বার্থ আছে বলা যায়…”
“চাকরি পেলে তোকে পাত্তা দেবো কেন? তখন এম.এ(বি.এড) টিচারের সঙ্গে লাইন মারবো”
“ঠিক… সেটাই করে সবাই, তোরা মেয়েরা আবার যতই শিক্ষিত হোস, চাকরি করিস, প্রেম করতে গেলে নিজের থেকে উঁচু পোস্টের, বেশি শিক্ষিত স্যাম্পেলই পাকড়াও করিস…”
এই এই শালা… তোরা মেয়েরা মানে! একটু আগে তো খুব ঝাল লাগছিল!”
“না মানে, যা সিস্টেম তাই বললাম আরকি …তাছাড়া আমার নো প্রবলেম… আমি তো আর তোর বয় ফ্রেন্ড নই!”
“তাহলে তুই কি?” আচমকা প্রশ্নটা করে কয়েক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে পড়ে নন্দিতা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দেবুর দিকে। দেবু চমকে উঠে নন্দিতার চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নেয়, কেমন একটা শিরশিরানি ভাব খেলে যায় সারা শরীরে। মুহুর্তে নিজেকে গুছিয়ে উত্তর তৈরি করে…
“আমি তোর বন্ধু! এমনি বন্ধু… কেন?”
“কিছু না…” চোখ নামিয়ে নেয় নন্দিতা। আবার হাঁটতে থাকে ওরা পাশাপাশি। বাঁকার ব্রীজের নির্দিষ্ট জায়গায় এসে নন্দিতা সাইকেলে উঠে বসে।
“আসি …কাল যাবি তো কলেজ?”
নিঃশব্দে মাথা নেড়ে জবাব দেয় দেবু। নন্দিতা এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দেয়। ব্রীজ পেরিয়ে রাস্তাটার বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায় নন্দিতা, দেবু ওর দৃষ্টিপথ থেকে নন্দিতা একেবারে অদৃশ্য হওয়া অবধি দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর সাইকেলে উঠে পড়ে।

ক্রমশঃ…
লেখা পাঠাতে পারেন
আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিংকে

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস চোরাবালি(পর্ব-৫)

 

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *