বা সু দে ব না থ-এর কবিতাগুচ্ছ
মেঘবৎ বিরহ
লাল রঙা তোপের মুখে পড়ে মুছে যাচ্ছে কিছু নিজস্বতা।
তদুপরি ঘৃণার গ্লানি নেই —- হাসিমাখা মুখোশের নেপথ্যে মেঘবৎ বিরহ।
আধাঁরের জোনাকিরা সূর্যের বিরুদ্ধে তৎপর।
গিলে খেতে চায় নাদান মারুতির মত।
সূর্যগ্রহণ যেন তার বিরহ ভাব, সূর্য পবিত্র, সূর্য সত্য।
মেঘারণ্যে সূর্যের গতিপথ পরিবর্তন হয় না, শুধু আড়ালে হাসে।
সত্যের উপর আলো দিয়ে আকাশের বুকে ভাসে।
তাও মেঘের ফাঁকে ফেটে পড়া সূর্যরশ্মি আমাকে বিমোহিত করে।
এত শক্তি তার, এত তার আলো।
অসাধ্য আশা সুধা
আকাশের ঠোঁটে চুম্বিত মাটি –
প্রেমে কল্পনা শুভ, বাস্তবতা অশ্রেয়
অসম্ভব কিছু আশা আমাকে বাঁচতে দেয়।
অসাধ্য হলেও, হয়ে থাকে বিরহ, বেদনার ঢাল।
আশার চাঁদ যদিবা ক্ষয়ে যায় ;
আমরা পাতা কুড়ানো চাঁদের বুড়ির পায়ে
কাটা ফোঁড়ার গল্প শুনবো ।
শূন্য সময়ের আশা তো শাদা কাকচক্ষু কাফন,
তাই অসাধ্য আশা সুধা বয়ে চলুক ;
জীবনের টেরাকোটা যৌবন স্রোতে।
জলন্ত শোক
বুকের চিৎকার বাতাসে মিশে যায় বারেবার
প্রভাতের আলোক বার্তা আর না মেলে
কালো ধোঁয়ার অন্ধকারে শোকের মাতন্ড
জপে যায় যদিনা আবার তোমায় ফিরে পেলে।
স্থির বাতাস বয়ে যায় রৌদ্রবিহীন খাঁ-খাঁ
মরিচীকায় ঘষা মেরে দেখি শোকের দাগ
প্রেম-পুরুষের আহুতি নিবেদন প্রেমে, তবু
সংবরিত হয়না মনের জলন্ত শোকের রাগ।
শেষ সন্ধ্যা
দেহালাটা পুরাতন হয়ে গেল
উপায়ন সুরগুলো ঠিক ভাবে আর বাজে না
তবুও তার মায়া ছাড়াতে পারি না।
সাদাকালো দিনের সুরগুলো এখনও ভীষন স্পষ্ট।
আকুল পাথারে চাপা পড়ে থাকা ব্যথা গুলো-
এখনও কেঁপে ওঠে সেই সুরে।
সময় ও সুরের অভিসন্ধিতে যেন এক মরা গিঁট লেগেছে।
ফুরিয়ে ক্ষয়েছে রং-তুলি, আঁকবো বলে স্মৃতির প্রতিকৃতি;
দীঘল কুন্তলের ছায়ায় অন্ধকার ছাড়া আর যে কিছু নেই।
সাত আসমানের সাত সূর্য ডুবেছে —
অতিথিরা ঘরে ফিরেছে।
বয়ে যায় সত্য নদী, চরের বুকে কুণ্ডলী করে ওঠে।
নাসিকাগর্জনের দমকায় বইতে থাকে উষ্মা হাওয়া ।
ঝুপ করে নিভে যায় গোধূলির প্রদীপশিখা।
সত্যবরণ
জঠরাগ্নি পুড়িয়ে দেয় বেঁচে থাকার রোকা
জীবনের কবিতা ছুটতে থাকে দহনছন্দে।
সতীত্ব গর্জে ওঠে
খেতে দে নয় পুঁতে দে ।
হাভাতে কলি ফুল ঝরে পড়ে মাটির বুকে
সাড়ে তিন হাত ঘুম চেপে ধরে বৃদ্ধার বুক।
জোয়ান গর্জে ওঠে
মৃত্যুর মিছিলে নাম দে ।
প্রত্যাশার আলো ঘনীভূত হতে থাকে নীরবে–
বাহুডোর ভেঙে বেরিয়ে আসে প্রাণবায়ু ।
নীরব শব্দে গর্জে ওঠে
মৃত্যুর পরে ভয় নেই ।
ক্ষুধার্তের মৃত আত্মা খিলখিল করে হেসে ওঠে
তৃপ্তহাসি দৃপ্তকণ্ঠে বলে ‘মৃত্যু সত্য মৃত্যু নিত্য ‘।
মৃত অক্ষরের গল্প
আলোর মাঝে যেন এক ঘুটঘুটে আঁধার,
উমেদের তরী ডুবে যায় নিগূঢ় হতাশ্বাসে
সহসা অদৃশ্য মৃত্যদানব গোগ্রাসে গিলে নেয় জীবন
মহাকালের রক্তাভ আঁখিতে নেই কোনো অনুষঙ্গ।
মৃত্যুদূত চোখ বেঁধে নির্মমতায় খেলছে —
‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ যারে পাবি তারে ছোঁ ‘
লিখে আসা প্রতিটি রঙচঙ রেখা মুছে যায় নীরবচারীর চারণে।
এক বায়ুস্রোত পাখলান পরমায়ুর পাণ্ডুলিপি;
আস্ফালিত পতাকা গেঁথে বসে হৃৎকক্ষে।
আতঙ্কিত হয় বীরত্ব, স্তিমিত হয় বুদ্ধি –
মৃত্যু কাফন নির্দয়ে তাড়া করে ভৃত্য-নৃপতি সোসরে।
ছায়া উড়ছে জীবন দৌড়াচ্ছে নেই কূল, নেই ঘাট ;
আছে শুধু মৃত্যু প্রহসন।
মৃতপ্রাণ
নিদ্রাতুর আঁখি প্রানহীন স্বপ্ন শুঁয়োপোকার খুটে খাওয়া শব্দ।
অচেতন তনু চলমান মস্তিষ্ক আয়নার ওপিটে ঘুরে বেড়ানো জব্দ।
জল বিপরীতে প্রতিক্ষার মুখবিম্ব হাতছানিতে ছলছল ভাঙে।
ললাটদুয়ারে এ কেমন খিল! স্বপ্নজালে মাকড়শার মৃত্যু।
ভাসে প্রাণ অপূর্ণ কেতনে স্বচ্ছত্বে মরা দেহের গাঙে।
দায়ী
এক শিশির ছোঁয়া প্রাতঃকালে তোমার হাত ছুঁয়েছিলুম…
তোমায় স্পর্শী উষ্ণতা আমার সারা শরীরে ভর করেছিল।
শক্ত করে ধরেছিলুম তোমার হাতের কোমল পাঞ্জা।
যেন শিমুল তুলোয় আমার প্রেমিক মন গড়াগড়ি দিচ্ছিল।
বাহুডোরে আবদ্ধ করেছিলুম তোমায় যদি না হারিয়ে যাও।
তোমাকে ভালোবেসে দায়ী হতে চাই চিরকাল তোমার নিকট।
বাদলা দিনে তুমি বিনে
আজ বাদল মুখর দিনে
তুমি বিনে,
কাটে নিঃসঙ্গতায়, বাদলের চিত্রে তোমার ছবি সাজে।
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তোমার নামের সুরে বাজে।
যেন এক ছন্দ তুমি, তোমার অবয়বের সাথে তাল মিলাচ্ছে সবাই।
আর আমার শানিত হৃদয়কে জমিয়ে দিচ্ছে তোমার স্মরনে।
হৃদয় তো দাহ্য রেশের মত সামান্য স্পর্শ পেলেই তোমার আহুতি হয়।
নবীণের ডাক
কত শত মেঘ কাবু করতে পারে উদীয়মান সূর্য
কত স্লোগান মুছে দিতে পারে সহসা বীরের তূর্য।
কতটুকু গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে এক নবীনের গর্জনে
বীর! বীর! চিরে ললাটের নীড় সাহস জোগাতে সৎজনে।
কত শত পাখি উড়াল দিলে নীরবে যাবে শকুনি
কত ফোটা লহু গড়ালে থামে ভীত চিত্রের ধুকুনি।
কত শিশিরের ফোটা জমলে সাহস জাগবে পুলিনে
জাগো! জাগো! বীর সম্মুখে ভাগো ধুয়ে মুছে দাও মলিনে।