এক
অসহায়
ক বি মি শ্র
চার বাই ছয় খাটটাই এখন সব। আশা ,আকাঙ্খা, জীবন। বিয়ের দু বছরের মধ্যে নিজের জীবনের একটা সর্বনাশ, শতাব্দীকে এইভাবে পঙ্গু দেবে ভাবতে পারেনি। কাছের দূরের কেউ আর আপন নয়। ভাবতে পারে না। মুখে কেউ কিছু তেমন না বললেও বুঝতে পারে সবাই একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখে। ওই ঘটনার পর থেকে অরূপ বিছানা আলাদা করে নিয়েছে। শাশুড়ি মা তো বলেই দিলেন, কি দরকার ছিল বেরানোর ? মেয়েছেলের অত চাকরির কি দরকার ? শতাব্দী কোন উত্তরই দিতে পারেনি।
অনেক চিকিৎসার পর শারীরিক ভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানষিক ভাবে এখন ও অসুস্থ। কোন দিকেই মনসংযোগ করতে পারছে না। অরূপের সঙ্গে ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কাগজ কলম আর লেখাই এখন সঙ্গী। সমাজের অন্ধকার না কাটাতে পারলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব না। মেয়েরা যতই স্বাধীন হোক না কেন কোথায় ও যেন অসহায়। সে দিনটা খুব মনে পড়ে…আতঙ্কে কেঁপে উঠে সারা শরীর… সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে ঝির ঝির করে। অন্যান্য দিন অরূপ অফিস যাওয়ার জন্য ততক্ষণে বেড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেদিন ঘুমিয়ে ছিল। ডাকতে বলল, যাবে না অফিস। সরকারি অফিস হুটহাট ছুটি নিতে পারে। কিন্তু শতাব্দীর হবে না। ওকে যেতেই হবে। স্নান করে এসে দেখে অরূপ উঠে পড়েছে। শাশুড়ি মা চা করে দিয়েছেন। খবরের কাগজ পড়ছে। বড় খবর শবরীমালা মন্দিরে দুজন মহিলা প্রবেশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার হয়েছে , মন্দিরে প্রবেশ সবাই করতে পারবে। খুব সাহসী মনে হলো মহিলা দুজনকেই। শতাব্দীকে দেখে অরূপ টিভিটা চালু করতে বলল। শতাব্দী এই শবরীমালা মন্দির নিয়ে সব তথ্য পড়েছে। এখন ও মানুষ মেয়েদের কতটা অবজ্ঞা করে এই ঘটনাই প্রমাণ। শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই একাকার। অন্ধ সংস্কার এখন ও মানুষ কে গ্রাস করে আছে।
টিভি নিয়ে বসলে আর অফিস যাওয়া হবে না, প্রাইভেট সেক্টর, জবাব দিহি করতে হবে, স্যালারি কেটে নেবে। অনেক ঝামেলা। তাই তাড়াতাড়ি টিভিটা চালু করে কিছু খেয়ে বেড়িয়ে পড়ল বৃষ্টির মধ্যেই। অফিস এ গিয়ে দেখল খুব বেশি জন আসেনি। মোটামুটি যারা কাছাকাছি থাকে তারাই এসেছে। ভাবলো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে কাজ সেরে। যত বেলা হলো , অন্ধকার হয়ে বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তে লাগলো। অফিস ও খালি হতে লাগলো।
৫ টা বাজতেই নিজেও বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু এত বৃষ্টির দাপট তিন হাত দুরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করার পর একটা ফাঁকা অটো এল। তাতে আধ ভেজা অবস্থায় উঠে পড়ল। কিন্তু তার জন্য যে এতবড় বিপদ লুকিয়ে আছে বুজতে পারেনি। কিছুটা যাওয়ার পর হঠাৎ অটোটা একটা সরু অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ল। কেমন অচেনা মনে হল জায়গাটা। জিজ্ঞেস করতে অটো ড্রাইভার বলল, কাজ আছে। একটু যেন ভয় ভয় করলো। এমনি অত ভীতু নয় । তবুও নিজে একটু সজাগ হলো। বলল তাড়াতাড়ি কাজ সারুন , বাড়ি ফিরতে হবে। ততক্ষণে আরও দু চার জন জড়ো হয়ে গিয়েছে। ওদের উদ্দেশ্যে কি শতাব্দী বুজতে পারলো না। কিছু বোঝার আগেই ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল … ছোট বেলায় শেখা ক্যারাটের কায়দায় আত্ম রক্ষার চেষ্টা করলো । কিন্তু ওদের অত জনের সঙ্গে পেরে উঠলো না….
★★★
দুই
ক্যাব কথা
রাত প্রায় ৮টা। সেক্টর ফাইভ এ অপেক্ষা করছি .. একা অনেক গুলো টাকা নেবে, তাই শেয়ারে
ক্যাব বুক করেছি, কিছুক্ষণেই আসবে। সারাদিনের ক্লান্তি , কখন বাড়ি পৌঁছবো ভাবছি , ক্যাব পৌঁছে গেল। নং মিলিয়ে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো , মনটা খুব খচখচ করছে , সারাদিন আজ কোন টপিকই লেখা হয়নি। এত কাজের চাপ। মাথাটাও খুব ধরে আছে, মোবাইলে চোখ রাখতে ইচ্ছে করছে না। বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি।
কিছুটা যাওয়ার পর কলেজ মোড়ের কাছে গাড়ি থামল , একজন উঠলেন। আমার আর দেখারও ইচ্ছে হচ্ছিল না কে উঠেছে। কানে হেডফোনটা দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনছি। ওটাই সারাদিনের এনার্জি। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো পাসের জন আমাকে লক্ষ্য করছে। একটু অস্বস্তি হোলো। আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে গান শুনছি। কিছুক্ষণ পর মনে হোলো উনি কিছু বলতে চান। মুখ ঘুরিয়ে দেখি উনি মোবাইলের সঙ্গে আমাকে মেলাচ্ছেন। আমার হতভম্ভ অবস্থা দেখে,
আমার নাম ধরে বললেন, আমি সেই কিনা ?
– আমি অবাক হলাম, বললাম, কেন বলুন তো ? আমাকে কি চেনেন ?
– উনি বললেন , চিনি বলতে ফেসবুকে তো আপনার সঙ্গে আলাপ, অনেক কথা হয়েছে।
– কি নাম আপনার ?
– উনি নাম বললেন…
আমি চুপ করে গেলাম , খেয়াল হোলো, ইনিই তিনি – যিনি প্রতি দিনই প্রায় আমাকে ভালোলাগার, ভালোবাসার কথা বলেন।
কিন্তু আমি- আমার বয়স ৬০, নাতি নাতনি নিয়ে সংসার, শখে লেখালেখি করি, ওগুলো এডিটিং করা ছবি , এইসব বলে এড়িয়ে যাই।
এখন মুখোমুখি কি বলবো !
জিন্স- টপ – চোখ চশমা- পনিটেল চুল… উনি চিনতে পারলেন কি করে বুজলাম না…!! সমানে বলে যাচ্ছেন..আমি কেন মিথ্যে বলেছি , ?!
এমন সমস্যায় যে পড়বো কোনদিনই ভাবিনি… বিনা মেঘে বাজের মতো…
এই কথপোকথনের মাঝে ক্যাবের ড্রাইভার ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হাসলো। কি বুঝলো কে জানে ?
আমি পড়েছি মহা ফাঁপড়ে , কি বলবো, কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না…
তবে ফেসবুকের বন্ধুটিও বেশ হ্যান্ডসাম… অ্যাপলোড ফটো গুলোর থেকেও …