রুমির কবিতা
সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি : মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি (1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]
অনুবাদ – তৌফিক হোসেন
একত্রিশ
বৃষ্টি নেমে এল তার উপর
সে মানব ঢুকে গেল ঘরে।
আর রাজহংস তার ডানা মেলে বলল,
‘দাও আমাকে আরো শক্তি
যা থেকে আমার উৎপত্তি ‘।
বত্রিশ
বন্ধুর বাড়িতে
সারা সারা রাত,
এরকমই হওয়া চাই,
কারণ প্রিয় চায়
শূন্য পেয়ালা
আবারো শূন্য পেয়ালা।
তেত্রিশ
প্রেমিক আর কি করবে-
তোমার ঘরের পাশে ঘুরে ঘুরে
নিজেকে হেয় করা ছাড়া?
যদি তোমার কেশ চুম্বন করে,
জিগ্গেস করোনা কেন।
মাঝেমাঝে পাগলা গারদে
ওরা ওদের শেকল কামড়ায়।
চৌত্রিশ
গত রাতে বন্ধু এল
আমি রাতকে বললাম
গোপন রাখো
কিন্তু রাত বললো- দেখ
তোমার পেছনে আর ঐখানে
সূর্য উঠছে!
আমি কিকরে
সবাইকে সবকিছু দেখাব?
পঁয়ত্রিশ
আমার আত্মা দেখল
আমি কত বিষন্ন আর বিপর্যস্ত ছিলাম
এবং কাছে এসে আমার শয্যায় বসে হাসতে থাকল।
আমার ললাট ধরে বলল–
প্রেমিক,তোমাকে এরকম
আমি দেখতে পারছিনা!
ছত্রিশ
তোমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছি
সেই ভালোবাসাতেই আমি মিলিয়ে যাবো:
যেমন ছোট ছোট মেঘেরা
গলে যায় সোনার আলোয়।
সাঁইত্রিশ
যে ভালোবাসার প্রলোভনে পড়েনি
সে শূন্য পথের পথিক।
আর মাথার উপর প্রেমের বাজপাখি ভাসছে জেনে
পারাবত অপেক্ষা করে
তাকে তাড়াও করবে না
তার ভয়ও নেই।
আটত্রিশ
ফুল প্রতি রাত্রিকে প্রস্ফুটিত করে
আকাশ জুড়ে
যেমন রাত্রি জাগরণের প্রশান্তি
শূন্যতাকে প্রজ্বলিত করে।
ঊনচল্লিশ
এক মুহূর্তের জন্যও ভেবোনা
তুমি তোমার ভালোবাসার লক্ষ্যে পৌঁছেছো!
পংক্তিতে স্থির দাঁড়িয়ে থেকোনা।
উর্দি পরে তোমার কোনো বিশ্রাম নেই।
তোমাকে কোনো সুন্দরীর কাঁচুলি
বা তার চুলের গোলাপ হওয়ার ইচ্ছে রাখতে হবে।
চল্লিশ
একটা পথ হয়তো একটা বাড়িতে থামে,
কিন্তু এটা ভালোবাসার পথ নয়।
ভালোবাসা নদী।
পান করো।
★★★