দ্বিতীয় পর্বে /রুমির কবিতাঃ অনুবাদ – তৌফিক হোসেন

দ্বিতীয় পর্বে 

       রুমির কবিতা

                                 অনুবাদ – তৌফিক হোসেন

সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি : মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি (1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]

এগারো

যখন আত্মা প্রথম শরীরের পোশাক পরে 
তখন সমুদ্র সমস্ত উপহার উপরে তুলে ধরে।

যখন ভালোবাসা মানব ঠোঁটের প্রথম স্বাদ পায়
তখন ভালোবাসা গান গাইতে শুরু করে।

বারো 

বান্দা সতর্ক হও
সমগ্র পূর্বের ঈশ্বর এখানে আছেন।

এক থরহরি ঝড়ের মেঘ
তোমার প্রতি বিদ্যুৎ চমকায়!

তোমার কথাগুলি কল্পনা-কর্ম।
তিনি বলেন অভিজ্ঞতা থেকে,
দুয়ের মাঝে বিরাট ব্যবধান!

তেরো 

কোনটা বেশি দামি,বিশাল জনতা,
নাকি তোমার নিজের নিখাদ নির্জনতা?
স্বাধীনতা,নাকি একটি গোটা জাতির উপর কতৃত্ব?

তোমাকে যখনই যাই দেওয়া হোক না কেন 
তার চেয়ে দামি হবে 
তোমার নিজের ঘরে একটু একা থাকা। 

 চৌদ্দ 

আমি শোককে দুঃখের পেয়ালা পান করতে দেখলাম
আর সে বলল,

‘এর স্বাদ মধুর,
তাই না?’
‘তুমি আমাকে ফাঁদে ফেলেছ,’

শোক উত্তর দিল,
‘আর তুমি আমার কাজের সর্বনাশ করেছ।

আমি কিভাবে দুঃখ বেচতে পারি 
যখন তুমি জানো এটা আশীর্বাদ?’

পনের 

আমার বুকে আগুন জ্বালালো প্রেম,
আর ভালোবাসা নয় এমন যা ছিল :
বুদ্ধিদীপ্ত সূক্ষতা,দর্শন,
বই,বিদ্যালয়।

আমি এখন শুধু 
কবিতা লিখতে বা শুনতে চাই।

ষোলো

প্রেম হোল যার ঘুম নেই 
কোনো বিশ্রাম নেই 
আর প্রেমিকের সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকেওনা।

প্রেম একটি ভাষা
যা বলাও যায়না
   শোনাও যায়না। 

সতেরো

তোমার ঠোঁট এখানে না থাকায়
চুম্বন করি চুনি পাথর যা তোমাকে মনে।

তোমার থেকে পান করতে না পারায়
পেয়ালার ঠোঁটে ঠোঁট মেলাই।

তোমার আকাশে পৌছাতে পারিনা তাই
নতজানু হয়ে একমুখো মাটি আঁকড়াই।

আঠারো

ন্যায়পরায়ণ হও
স্বীকার করো আমাদের প্রয়োজনীয় 
সব নিষ্ঠতাই ভালোবাসার আছে।

স্বীকার করো যে তুমি ভুলতে চাও
আর শান্ত হও খুব যেন অনুচ্চ ইচ্ছাকেও
পবিত্র নামে ডাকতে পারো।

ইচ্ছা থেকে কামনার
সাক্ষ্য হয়ে বাঁচো।

ঊনিশ

তুমি এসেছ বিশ্বের বাইরে কোনো দেশ থেকে,
কিন্তু তোমার ধারণা 
তুমি মাটি আর ছাই থেকে তৈরি !

তুমি এই মূর্তি সর্বত্র খোদাই করো
তোমার দেশ ভুলে যাওয়ার স্মারক হিসাবে !

কুড়ি 

শূন্যতাই সারাংশ 
বাকিটুকু দুর্ঘটনা।

শূন্যতাই তোমার প্রেমের শান্তি 
বাদবাকি ব্যাধি।

কপটতার এই সংসারে
তোমার আত্মা শূন্যতাই চায়।

                                 ★★★


Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *