নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকারঃ আলেহো কার্পেন্তিয়ের – ইংরেজি থেকে অনুবাদ : শৈবাল কুমার নন্দ

৫ম পর্ব

নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার 

                  আলেহো কার্পেন্তিয়ের

          ইংরেজি থেকে অনুবাদ : শৈবাল কুমার নন্দ

পাগল হয়ে গেছে, রাষ্ট্রদূত আমায় বললেন। “আপনি পড়ে দেখতে পারেন আপনাদের অসাধারণ সংবিধানে, তুমি বলাে, বইটা তুলে নিয়ে, পাতাগুলাে উল্টে এবং সূচীপত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্বন্ধে লেখাটার উপরে তাকিয়ে, “যে প্রতি বিদেশিই যারা দেশে দুবছর ধরে বাস করেছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে। আমি তাে এখানে আপনাদের জাতীয় কুটনৈতিক এলাকাতেই আছি। আমাকে আপনাদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। যদি এই বাড়িটাতে আমি কোন অপরাধ করে বসি,শুধুমাত্র আপনাদের দেশের আদালত অনুযায়ীই আমার বিচার হবে।” “কিন্তু … তুমি কি এই বাড়িতে দুবছর থাকার কথা ভাবছো?” “আমি এখানে ইতিমধ্যে কয়েকমাস কাটিয়েছি। এবং আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে জনপ্রিয় এক লাতিন আমেরিকান নেতা কিন্তু প্রতিবেশী এক দেশের দূতাবাসে শরণার্থী হয়েছিলেন সাত বছর। জোনার থেকেও দীর্ঘ সময়ের কয়েদবাস। আমি জানি; কিন্তু সিলভিও পেলিকোর মেয়াদের থেকে কম নয়।” “ঠিক আছে আমরা দেখব, যখন তুমি তােমার দু বছরের মেয়াদ শেষ করবে।” “ও অবশ্যই মেয়াদটা শেষ করবে,” রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন যা আমাকে অবাক করল বাকী মাসগুলাে সম্পর্কে – আর কতগুলাে মাস? – আমাকে কাটাতে হবে ঈশ্বরের ও ডােনাল্ড ডাকের চিরন্তনতার মাঝে আটক এ জগতে। আজ খুব সকালেই রাষ্ট্রদূত বেরিয়ে গেলেন, তাঁর ফ্রক কোটে সেজে গুজে, জাতীয় দিবসের সম্মানে আয়ােজিত এক সামরিক কুচকাওয়াজে যােগ দিতে। রাষ্ট্রদূতের সুন্দরী স্ত্রী ও আমি একসাথে নিভৃতে প্রাতরাশ সারলাম। তারপরে আগের রাষ্ট্রদূতের ফেলে যাওয়া ছােট্ট লাইব্রেরি ঘরটাতে দুজনে ঢুকলাম।”কৌতুহল জাগানাের মত কোন কিছু এখানে পাওয়ার আশা কোরাে না”, রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী বললেন, “আগের রাষ্ট্রদূত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এটা প্রমান করতে যে আমেরিকা জয়ীরা সমস্ত আশ্চর্য জিনিস সেখানে পেয়েছিলেন যেগুলাে বীররসের কাহিনীতে বর্ণনা করা হয়েছিল। যে কারণেই তাঁর এই লাইব্রেরী।” তিনি তার হাত দোলালেন : “আমাদিস দে গলা, মারাত্মক বিরক্তিকর এক বই; পালমেরিন দে হিরকানিয়া, আরেকটা মাথাধরানাে বই; এল ক্যাবালেরাে সিফার, দ্বিগুণ বিরক্তিকর একটা বই।” আমি তাক থেকে তিরান্ত লাে ব্লাঙ্ক” টা নিলাম। “এটা কেমন?” “একটা তিনগুন বিরক্তি জাগানাে বই।” – 
    “সম্ভবত: সে কারণেই আমার জীবনের আনন্দ নামক চরিত্রটা যে জগতে থাকে সেখানে আপনি কখনাে ঢােকেননি, যে নাইট (অশ্বারােহী যােদ্ধা) কে লুকিয়ে রেখেছিল আধখােলা এক সিন্দুকে, এবং তারপর তার কাছে বর্ণনা করেছিল ও তাকে দেখিয়েছিল নগ্ন এক রাজকুমারীর শরীরের আকর্ষক বিভঙ্গগুলাে। এবং তাকে বলেছিল” (একই সময়ে তাড়াতাড়ি বইটা খুলে): হে, প্রভু তিরান্ত। আপনি এখন কোথায়, যখন আপনার এখানে থাকা উচিৎ ছিল যাকে আপনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। ভালােবাসেন তাকে দেখা ও ছোঁয়ার জন্য? তাকিয়ে দেখুন, প্রভু তিরান্ত, রাজকুমারীর রেশমের মত চুল পরখ করে দেখুন : আপনার নাম করে আমি এই চুলে চুমু দিই; কারণ আপনিই পৃথিবীর সেরা অশ্বারােহী বীর। রাজকুমারীর চোখ দুটো ও মুখের দিকে তাকান ; আপনার হয়ে ওগুলােতে আমি চুমু দিই। তার খাড়া বুক দুটোর দিকে তাকান, আমি আমার এক একটা হাতে এক একটাকে মুঠোয়। ধরি আপনার হয়ে : দেখুন সদ্য ওঠা কত নিটোল, আঁটসাট অথচ মােলায়েম দুটো বুক। তার নাভি ও দুই উরু ও তার গােপনাঙ্গের দিকে তাকান। ও আমি কত অভাগা! কেন আমি একজন পুরুষ হলাম না যাতে এখানেই আমি শেষ করতে পারতাম আমার দিনগুলাে? আপনি এখন কোথায়, হে অজেয় যোদ্ধা? কেন আপনি। আমার কাছে আসছেন না যখন আমি এত কাতরভাবে ডাকছি আপনাকে? অন্য কারাে নয়, শুধু তিরান্তের হাত দুটোই এগুলাে ছোঁয়ার যােগ্য যেগুলাে ছুঁয়ে আছি আমি। কারণ এটা এমন একটা লােভনীয় গ্রাস যা কোন মুমূর্ষ মানুষই চাইবে পেতে। রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী বইটার কোন কোন অংশের এই হালকা ব্যঙ্গ মেশানাে হাস্যরসের ছোঁয়াতে বিষ্মিত হলেন, যে পরিচ্ছেদটাতে আমার জীবনের আনন্দএর স্বপ্নবর্ণনা রয়েছে। যেটা শুনে তিনি এমন কি আগের থেকেও জোরে জোরে হেসে উঠলেন যেখানে রাজকুমারী বলছেন : “আমাকে একা থাকতে দাও, তিরান্ত, আমায় একা থাকতে দাও।”এবং পান্ডিত্যাভিমানী মনে হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও, এটা বলাই ঠিক যে “ঐ দিন আমরা আর পড়ি না …” এবং যখন আমরা লক্ষ্য করলাম যে আধিকারিকেরা ও সাধারণ মানুষেরা নিজেদের সামাজিক মর্যাদা তছনছ করে দিয়ে রাস্তাগুলােতে পরস্পরের সাথে মিলেমিশে এসে দাঁড়িয়েছে কারণ জাতীয় দিবসের বিশাল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ শেষ হল। এইমাত্র, প্রেমিক ও প্রেমিকা বুঝতে পারল যে তাদের পােশাক-আশাক আবার পরে নেওয়ার সময় হয়ে গেছে এবং কাপড়-চোপড় ঠিকঠাক করে নিয়ে তারা বসার ঘরে রাষ্ট্রদূতের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী একটা সাক্ষাৎকার এর সময় লেখার প্যাড তুলে নিলেন; “পুরাে ব্যাপারটাই একটা সংস্থার মত। জাতীয় দিবস আমাদের আট ঘন্টার শান্তি দেয়। বীরেদের দিবস দেয় ছ ঘন্টা, কারণ ফুলের তােড়াগুলাে স্মৃতিস্তম্ভে সাজিয়ে রাখার পর জলযােগের ব্যবস্থা থাকে। স্বাধীনতা দিবসের শতবার্ষিকীশান্তি দেয় ন ঘন্টা, এবং তারপরে আমরা একা একাই দুপুরের খাবার খেতে পারি।

                                                    ক্রমশ…

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *