বজ্র ড্রাগনের দেশের গল্পঃঃ বর্ণালী রায়

বর্ণালী রায়

বজ্র ড্রাগনের দেশের গল্প

ব র্ণা লী   রা য়

বজ্র ড্রাগনের দেশ ভূটান । যার মূল মন্ত্র(G N H) Gross National Happiness. রয়েল গর্ভমেন্ট অফ ভূটানের উন্নয়নের ছোঁয়া পাওয়া যায় দেশের প্রতিটা শহরে। দেশের 72% সবুজে মোড়া ।ছোট্ট এই দেশটার কাছে অন্যান্য অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র হেরে গেছে দূষণ আর সবুজ সংরক্ষনের দৌড়ে। ট্রাফিক সিগন্যাল বিহীন একটা রাষ্ট্র । ভারত আর চীনের মধ্যিখানে অবস্থিত ছোট্ট একটা পাহাড়ি রাষ্ট্র । নিজের সৌন্দর্য , সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য নিয়ে স্বতন্ত্র একটা দেশ ।একশো তিরিশ কোটির ঘিঞ্জি অলিগলি ছেড়ে কটা দিন নিরিবিলির খোঁজে ভূটান।দেশের রাজারাণির রাজত্বে সুখে থাকা একটা রাষ্ট্র।

ফুন্টশোলিং:-
ভূটানের যাত্রা শুরু হয় উত্তরবঙ্গের হাসিমারা থেকে।ইমিগ্রেশন গেটের এদিকে জয়গাঁও অন্যদিকে ফুন্টশোলিং।গেট পাড় করলেই ভারতীয় সিম কার্ড অকেজো।ইমিগ্রেশনের ফর্ম ফিলাপ থেকে ভেরিফিকেশন গোটা প্রসেসিংটাই যথেষ্ট নিয়ম মাফিক।ভূটান প্রশাসন এব্যাপারে মোটেই ঢিলেঢালা নয়।ড্রাইভার সহ আমরা অনুমতিপত্র পেয়েই ফুন্টলশোলিং মার্কেটের তাসি টেলিকমের অফিস থেকে থেকে ভূটানের নম্বর নিয়ে যাত্রা শুরু হল। দক্ষিণ পশ্চিম ভূটানের প্রবেশদ্বার ফুন্টশোলিং । এটিকে বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বারও বলা চলে । থিম্পুর পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি ।পারমিট নেওয়ার দিন হাতে কিছুটা সময় থেকে যায়,তাই খুব তাড়া না থাকলে সেই দিনটা থেকে যান ফুন্টশোলিং দেখার জন্য।তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে রাতে জয়গাঁ এর কোনো হোটেলে থাকা সেটা কম বাজেটে হয়ে যাবে। ফুন্টশোলিং এ দেখে নিতে পারেন ——

★শহর থেকেই কিছুটা দূরেই কুমীর প্রকল্প।
★ খারবন্দি বৌদ্ধ গুম্ফা – ১৯৬৭ সালে নির্মিত হয় গুম্ফাটি।
★ শহরের কেন্দ্রে গুরু পদ্মসম্ভবের মূর্তি।
★ আমাচু (তোর্সানদী) ও ধুতি খোলার সঙ্গমস্থল।
থিম্পু :-
ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মতো । ভূটানের বর্তমান রাজধানী । ১৯৫৫ সালে পুনাখা থেকে রাজধানী থিম্পুতে স্থানান্তরিত হয় । পশ্চিম ভূটানের একটি ছোট্ট সাজানো পাহাড়ি শহর । কিন্তু আধুনিক সুবিধাযুক্ত পাশ্চাত্যের শহরগুলির সাথে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায় ।ভারতীয় শহর গুলোর থেকে বেশ কিছুটা আলাদা।পাহাড়ের পাকদণ্ডী পেরিয়ে ব্জ্রবিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে পাহাড়ের গায়ে জেগে থাকা জোনাকি বাড়ি,জঙ দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম রাজার শহরে।শহরে ঢুকতেই অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে দূর নির্জন পাহাড়ের মাথায় বিশালকায় এক বুদ্ধমূর্তি। অভইয়মুদ্রায় বসে তিনি দেশবাসীকে যেন পাহাড়া দিচ্ছেন ।সেদিন বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকাল সকাল গেলাম পারমিট করতে । ফুন্টশোলিং থেকে পারমিট হয় থিম্পু , পারোর । আর থিম্পু থেকে পারমিট হয় পুনাখা , ওয়াংডু , বুমথাং , হা ভ্যালীর । একই নিয়ম । থিম্পুর ইমিগ্রেশন অফিসটি নরজিন লাম রোডে ।

তারপর বেড়িয়ে পড়লাম থিম্পুকে আবিষ্কার করতে —-

★তাশি চো জং –
জং কথার অর্থ দুর্গ । প্রতিটা শহরেই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরী করা বিশাল বিশাল জং রয়েছে । সেগুলি বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন রূপে ব্যবহ্রত হয় । জং গুলির গঠন শৈলী । আর তার কারুকাজ দেখার মতো । এই তাশিচো জং বা থিম্পু জং-র পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে থিম্পু নদী বা ওয়ানচু (‘চু’ কথার অর্থ নদী) । এই জং-র পাশেই রয়েছে ভূটানের বর্তমান রাজা জিগম খসর নামগিয়াল ওয়াণচুক-র রাজভবন ও অফিস । এই জং-এ প্রবেশের অনুমতি নেই ।
★ন্যাশানাল মেমোরিয়াল চোর্তেন –
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত । ১৯৭৪ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুকের স্মৃতি মন্দির এটি । স্থানীয় মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্রস্থান । প্রবেশমূল্য ভারতীয়দের জন্য মাথা পিছু ৩০০টাকা ।
★ বুদ্ধ পয়েণ্ট –
১৬৯ ফিট উঁচু ব্রঞ্জের তৈরী বুদ্ধ মূর্তি । বলা হয় এটি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু । বিশাল একটি এলাকা জুড়ে এই পয়েন্ট । চারিদিক পাইনের জঙ্গল , মাঝখানে বুদ্ধ মূর্তি । অভয় মুদ্রায় বুদ্ধ বসে আছেন, তার চারদিকে দেবদূতেরা তাঁকে নানাবিধ জিনিস অর্পণ করছে। থিম্পু শহরে ঢুকলেই বহু দূর থেকে এই মূর্তি দেখা যায় ।
★ তাকিন সংরক্ষন কেন্দ্র –
তাকিন ভূটানের জাতীয় পশু , যদিও এখন প্রায় অবলুপ্তির পথে । শহর থেকে দূরে মাইথাং-এ তাকিন সংরক্ষন কেন্দ্র আছে ।
★ফোক হেরিটেজ মিউজিয়াম –
ভূটানকে জানতে হলে , ভূটানের জন জাতিকে জানতে গেলে এই মিউজিয়ামটি দেখতেই হবে ।
এসব দেখতে দেখতে দুপুর।স্থানীয় রেস্তোরাঁতে কোকা(ম্যাগী জাতীয় তবে স্বাদে গন্ধে আরো দুর্দান্ত) খেয়ে ছুটলাম লাইব্রেরি দেখতে—
★ ন্যাশনাল লাইব্রেরী –
১৯৬৭ সালে নির্মিত এই লাইব্রেরীতে রয়েছে বহু দুস্প্রাপ্য বই , নথি । সকাল ৯.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে ।
★সিটি ভিউ পয়েন্ট –
বুদ্ধ পয়েণ্ট যাবার রাস্তায় সমস্ত থিম্পু শহরকে পাখির চোখে দেখে নেওয়া যায় এই ভিউ পয়েন্ট থেকে । একই রকমের দেখতে রং বেরং-এর বাড়ি ঘর , জং আর শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা থিম্পু নদীকে যেন মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা ।
★চাংগাং খা মনেষ্ট্রি –
১২ শতকের তৈরী একটি মনেষ্ট্রি। ভূটানের অধিবাসীরা সদ্যজাত শিশুর নামকরনের জন্য তাদের এখানে নিয়ে আসেন । তাদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র ।
★ হ্যান্ডিক্রাফট বাজার –
শহরের প্রাণকেন্দ্র মরজিন ল্যামের মাইগ্রেশন অফিসারের উল্টোদিকে সারি সারি হ্যান্ডিক্রাফটের দোকান । হাতে বোনা পোশাক , চাদর , রকমারি বৌদ্ধিক সিম্বল আর রকমারি জিনিস । মূলত মহিলারাই এই দোকানগুলি চালান ।
এছাড়াও টেক্সটাইল মিউজিয়াম , সিমতোখা জং , শিল্পকলা বিদ্যালয় দেখে নিতে পারেন ।সন্ধ্যে বেলা যখন ক্লান্ত শরীর হোটেলে ফিরছি, কানে ভেসে আসছে গং এর আওয়াজ।কাল যাব পুনাখা।

পুনাখা:-
ভূটানের পূর্বতন রাজধানী । মো চু (নারী) ও ফো চু (পুরুষ) নদীর মিলন স্থল এই পুনাখা উপত্যকা । সারা শহর জুড়েই চাষাবাদ হয় । পুনাখাকে ভূটানের কৃষিক্ষেত্র বলা হয় । পুনাখা আর ওয়াংদু পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ছোট ছোট শহর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। থিম্পু থেকে যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ।পুনাখা জং এর সৌন্দর্য,বয়ে চলা নদী,বেগুনি ফুলের গাছ আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
যাওয়ার পথেই দেখে নিলাম–

★দো-চুলা পাস –
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথেই পরে দো-চুলা পাস । এখানে আছে ১০৮টি চোর্তেন , একসঙ্গে যাদের বলে ড্রক ওয়াংগিয়াল চোর্তেনস । ১০ হাজার ফুট উচ্চতার এই পাসে কিছুক্ষণ সময় কাটানো । কখনো মেঘ , কখনো রোদ , লম্বা লম্বা পাইনের ফাঁকে সাদা সাদা বরফের পাহাড় । এখানে কাছাকাছি একটি বৌদ্ধ মঠও আছে ।
★ পুনাখা জং –
দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর জং । ভূটানের পূর্বতন রাজধানী । বর্তমানে এটি কেন্দ্রীয় মনেষ্ট্রিক বাড়ির গ্রীষ্মাবাস । মো চু ও ফু চু নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত জং টি । সমগ্র জং টিকে বাইরে থেকে দেখতে পুরো ছবির মতো । জাতীয় ফুল ব্লু পপি গাছে ঘেরা , নদী পারাপারের কাঠের সেতু , কারুকার্যময় জং টি এককথায় অপূর্ব । জং-এর মধ্যে একটি বৌদ্ধ মনেষ্ট্রি আছে । এখানেই সব ধরণের প্রশাসনিক কাজ কর্ম হয় । কিন্তু এর পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত , নির্জন । জং এ প্রবেশের জন্য মাথাপিছু প্রবেশ মূল্য ৩০০টাকা ।
★সাশপেনসন ব্রীজ –
ফো চু নদীর উপর এই ঝুলন্ত সেতুটি তৈরী হয়েছে । এই সমস্ত সেতুটি জুড়ে দেশের দীর্ঘতম সাশপেনসন ব্রীজ । রং বেরং- এর পবিত্র পতাকা ঝুলছে ।চারিপাশের সৌন্দর্য অবর্ননীয়।
পুনাখার মো চু আর ফো চু নদীতে রিভার রাফটিং –র ব্যবস্থা আছে । শহরের অদূরেই আছে ফোবজিখা ভ্যালি । শীতকালে সেখানে কালো গলা বকের দেখা মেলে ।দুদিন কাটানোর মতো একটা শান্ত জনপদ।
পরবর্তি গন্তব্য

পারো:-
আমার দেখা ভুটানের শহরগুলির মধ্যে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সেরা শহর পারো । পাহাড়ের কোলে সবুজ দিয়ে ঘেরা ৯০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত , পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পারো চু । সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধান চাষের জমি । সারা গ্রীমকাল ব্যাপী এখানে ধান চাষ হয় ।হোটেল ঢোকার পথেই দেখে নিলাম —–
★ পারো এয়ারপোর্ট –
‘দ্যা মোস্ট ডিফিকাল্ট’ কমার্শিয়াল এয়ারপোর্ট অফ দ্য ওয়াল্ড। শহর থেকে ৬-৭ কিমি দূরে অবস্থিত এটি । কলকাতা , দিল্লী , থাইল্যান্ড , সিঙ্গাপুর , নেপাল , ঢাকা থেকে বিমানের যাতায়াত আছে । এয়ারপোর্ট ভিউ পয়েন্ট থেকে বিমানের ওঠানামা দেখে আশ্চর্য হতে হয় । যেভাবে বিমান যাতায়াত করছে সেটাই দারুণ আশ্চর্য বিষয় ।দুটি পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ল্যান্ডিং ও টেক অফ দুটোই বিশ্ময় উদ্রেক করে।
পরদিন সকালে যাব টাইগার নেস্ট মনেস্ট্রি।গোটা ট্রিপের অন্যতম আকর্ষণ।আর সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। গোটা দিনই কেটে যাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা দ্রষ্টব্যটির খোঁজে।
★ তাকসাং মনেষ্ট্রি / টাইগার নেস্ট মনেষ্ট্রি –উত্তর পারো শহর থেকে ১০ কিমি দূরে প্রায় সাড়ে দশ হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের খাঁজে ঝুলন্ত বৌদ্ধ গুম্ফা । ১৬৯২ সালে এটি তৈরী হয় । কথিত আছে বৌদ্ধ গুরু পদ্ম সম্ভব বা গুরু রিমপোচে একটি বাঘিনীর পিঠে চড়ে তিব্বত থেকে উড়ে এখানে এসেছিলেন , তাই এই মনেষ্ট্রি কে টাইগার নেস্টও বলা হয় । তিব্বতের মতো ভূটানেও তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের উপাসনা হয় । এই মনেষ্ট্রিতে পৌঁছাতে গেলে প্রায় ১০ কিমি পথ চড়াই , প্রায় হাজার দুই সিঁড়ি পেরোতে হয় । অর্ধেকটা পথ ঘোড়ার পিঠে পৌঁছানো যায় । বাকিটা হাঁটা পথ । লাঠি ভাড়া পাওয়া যায় । অর্ধেক পথ পেরোলে পাওয়া যায় একটি ক্যাফেটেরিয়া । খাবার , চা , কফি খুবই অধিক মূল্য । তাই জল , শুকনো খাবার সাথে নেওয়া ভালো । এইখানে যাতায়াতে প্রায় ৭ / ৮ ঘণ্টা সময় লাগে । যাওয়ার পথে ও পৌঁছানোর পথে পাহাড়ের মোহময় দৃশ্য চোখে পড়ে । মনেষ্ট্রি মধ্যে মোবাইল , ক্যামেরা প্রবেশ নিষিদ্ধ । প্রবেশ মূল্য মাথা পিছু ৫০০ টাকা । নীচে নামার পর ভূটানী ফেরিওয়ালার রকমারি গহনা , সাজসজ্জার সরঞ্জামের ফেরি অতিরিক্ত পাওনা ।
সারা শরীরে ক্লান্তি আর পায়ে ব্যাথা হলেও মনেস্ট্রির মনোরম দৃশ্য বর্ননাতীত। রাতে ফিরে ভূটানি ডিশ বাথআপ(নুডুলস দিয়ে তৈরি থুকপা),রুটি ও এমা দাশি(লঙ্কা আর চিজের সব্জি)খেয়ে মন ভরে গেল।পরদিন গেলাম

★ড্রুক গিয়েল জং –
১৬৪৯ সালে এই জংটি নির্মিত করেন জাবড্রং নওয়াং নামগিয়েল । ১৯৫৪ সালে এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় । বর্তমান কালে এটি টুরিস্টদের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে ।
★ রিং পুং জং –
পারো নদীর তীরে এই জংটি অবস্থিত । প্রতিবছর এখানে বাৎসরিক উৎসব ‘Tse chu’ অনুষ্ঠিত হয় । এটাই দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ।
★ তা জং / ন্যাশানাল মিউজিয়াম –
রিং পুং জং –এর উপরেই এর অবস্থান । ১৭ শতকে এটি বৃত্তাকার বাড়ির মতো তৈরী করা হয়েছিল । এখানে ৪০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ রকমের শিল্পকলা ও শিল্প সম্বন্ধীয় জিনিস সংরক্ষিত আছে । অডিও ভিস্যুয়ালেরও ব্যবস্থা আছে । টিকিটের মূল্য মাথা পিছু ২৫টাকা । রবিবার ও জাতীয় ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে ।
আজই শেষ রাত পারো তে।কাল যাচ্ছি হা ভ্যালি।

 

হা ভ্যালি:-
পারো থেকে চেলে লা পাস হয়ে হা উপত্যকা । প্রায় ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া সারা শরীর কাঁপন দেয় । হাজার হাজার লাল , হলুদ , নীল , সাদা প্রার্থনা পতাকার ফাঁক দিয়ে আকাশ পরিষ্কার থাকলে বরফ মোড়া হিমালয়ের দেখা মেলে । চারিপাশে পাইন আর রোডোড্রেনড্রনের জঙ্গল ।হা ভ্যালি যেন শুয়ে আছে মেরি ফুন সুম এই তিন বোন কোলে (তিনটি পাহাড়ের নাম) । একে অনেকে ভূটানের গোপন ভাণ্ডারও বলে । দেশের মধ্যে অন্যতম সুন্দর উপত্যকা । পারো থেকে যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে ।
এখানেও আছে অনেক দেখার জায়গা—
★ লাখাং কারপো –
সাদা রঙের একটি মন্দির । এটি হা-এর মনেষ্ট্রিক বডি হিসাবে কাজ করে। বাৎসরিক উৎসব ‘Tse chu’ এখানেই হয় ।
★ লাখাং কারপো –
কালো রঙের মন্দির । এর মধ্যে একটি ছোট জলাশয় আছে যা বৌদ্ধ সংরক্ষক দেবতা মহাকালের সাথে সম্পর্কিত ।
★ হা জং –
১৮৯৫ সালে নির্মিত হয় । ১৯১৩ সালে আগুনে পুড়ে ছাই হলে নতুন জং নির্মিত হয় ।
এছাড়াও গাসা জং , গাসা উষ্ণপ্রস্রবন ঘুরে দেখে নেওয়া যায় ।

আমার ভূটান ভ্রমণের শেষ গন্তব্য

বুমথাং:-
মধ্যভূটানের অন্যতম সেরা উপত্যকা । ভূটানিদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান । ‘বুম্পা’ কথার অর্থ পুজোর সময় জলের যে পাত্র ব্যবহৃত হয় আর ‘থাং’ কথার অর্থ ভ্যালি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে ধর্মীয় পবিত্রতার মেলবন্ধন পাওয়া যায় এখানে ।একদিন থেকে ঘুরে নেওয়া যায় —-
★ মোরারসো লেক / জ্বলন্ত (বার্নিং) লেক –
বুমথাং-এর অন্যতম পবিত্র স্থান । বৌদ্ধগুরুদের বিশ্বাস ও পূজার্চনার বিশেষ ক্ষেত্র ।

★ জাকার জং –
জাকার জং কথার অর্থ সাদা পাখির দুর্গ । এটা ১৫৪৯ সালে তৈরী হয় । পরবর্তী কালে এটির বিস্তার ঘটে । এটি বুমথাং-এর প্রশাসনিক ভবন ।
★কুর্জ লাখাং –
তিনটি মন্দির নিয়ে এই লাখাংটি গঠিত । কথিত আছে , গুরু পদ্মসম্ভব এখানে তপস্যা করেছিলেন । তাঁর মূর্তি ছাড়াও বুদ্ধ মূর্তিও আছে ।
এছাড়াও দেখে নেওয়া যায় জাম্বো লাখাং , উড়ি ভ্যালি ।
ভারতের পাশের দেশ,কিন্তু বিদেশ।তাই তো ভূটান ঘুরতে যেতে হলে কতগুলো বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে –
★ ভারতীয়দের জন্য ভূটানে প্রবেশের জন্য পারমিট লাগে । পারমিট পাওয়া যায় ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সোম থেকে শুক্র সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত (ভূটানের সময়)। পারমিট পাওয়ার জন্য পরিচয় পত্র হিসাবে শুধুমাত্র ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড বা পাসপোর্টের জেরক্স , থিম্পু ও পারোর হোটেল বুকিং-এর ভাউচার আবেদন পত্রের সাথে জুড়ে দিতে হবে (আবেদন পত্র ঐ অফিস থেকে পাওয়া যাবে ।) আর পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে (বেশ কিছু পাসপোর্ট ছবি নিয়ে যাবেন) । আপনি কবে কোথায় থাকবেন তারিখ , জায়গার নাম সহ আইটিনারী সাদা কাগজে লিখে জমা করতে হবে । আপনি যদি ফ্লাইং গেস্ট (ট্রাভেল এজেন্সির মারফত নয় একক হিসাবে) বেড়াতে যান তবে আপনাকে গাড়ি নিতে হবে ভূটান থেকে (পাশেই ফুন্টশোলিং ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বা আগেও যোগাযোগ করতে পারেন) আর যদি কোন ট্রাভেল এজেন্সির মারফত যান তবে সেই সংস্থাই আরও প্রাসঙ্গিক কাগজও ড্রাইভারের ব্যবস্থা করে । মানুষের পারমিট করাতে কোন পয়সা লাগে না । নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে পারমিটের জন্য যতদিন থাকবেন দিনপিছু ১০০ টাকা করে লাগবে । পারমিট পাওয়া যাবে ৭ দিনের । কলকাতা অফিস থেকে পারমিট ইস্যুর ব্যবস্থা সময়ে সময়ে বন্ধ থাকে।খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।বর্তমানে পাসপোর্ট লাগছে।যাওয়ার আগে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে নিন।ব্যবস্থা পরিবর্তনশীল ।
★পারমিটের সময় যাদের যাদের পারমিট হবে সবার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ।
★ ভূটানি টাকাকে নূলতট্রাম বা ন্যূ বলে । ভারতীয় টাকার সমমূল্য । তাই ভারতীয় টাকা চলে তবে শুধু ১০০ আর ৫০০ টাকা । তবে অনেক জায়গায় নতুন ভারতীয় ৫০০ টাকা নেয় না , তবে বেশীর ভাগই নেয় । কোনরকম ভারতীয় ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড চলে না ।
★ভূটানের সময় ভারতীয় সময়ের থেকে আধঘণ্টা এগিয়ে , তাই ফুন্টশোলিং-এ পারমিত নিতে যাওয়ার আগেই ঘড়িবাবুর
★ ভূটানে ভারতীয় ফোনের কোন নেটওয়ার্কই কাজ করে না । তাই ফুন্টশোলিং মার্কেটের মধ্যেই তাসি সেলের অফিস থেকে একটা ভূটান সিম নিয়ে নিন ।
★ভূটানে ধূমপান , প্লাস্টিক ব্যাগ , রাস্তায় আবর্জনা ফেলা , হর্ন বাজানো নিসিদ্ধ

যাওয়া আসাঃ

বিমান – কলকাতা থেকে পারো বিমান চালায় ড্রুক এয়ার ।
বাস – ধর্মতলার NBSTC বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি সোম , বুধ , শুক্রবার ভূটান ট্রান্সপোর্টের বাস ছাড়ে ফুন্টশোলিং –এর জন্য । আর ভূটান ট্রান্সপোর্ট ডিভিশনের বাস ছাড়ে মঙ্গল , বৃহস্পতি , শনিবার । অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয় সোম থেকে শনি।
ট্রেন – কলকাতা থেকে হাসিমারা ট্রেন ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস , শিয়ালদা রাত ৮.৩০ মিনিটে ছেড়ে হাসিমারা পৌঁছায় পরদিন সকাল ১০.৪৬ মিনিটে । ২২৫১১ কর্মভূমি এক্সপ্রেস , হাওড়া রাত ৯.৫৫ মিনিটে ছেড়ে পরদিন ১২.১০ মিনিটে হাসিমারা পৌছায় । সরাসরি হাসিমারা টিকিট না পেলে যে কোন ট্রেনে NJP পৌঁছে সেখান থেকে NJP আলিপুরদুয়ার ইন্টারসিটিতে হাসিমারা পৌঁছানো যায় । এছাড়া তিস্তা তোর্সা এবং উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস । দুটো ট্রেনই ফালাকাটা দাঁড়ায় । সেখানে নেমেও হাসিমারা পৌঁছানো যায় ।সেখান থেকে শেয়ারগাড়ি,বাস,ট্রেকারে চেপে জয়গাঁ।

 

থাকাঃ

১) জয়গাঁ – (এস.টি.ডি.কোড – ০৩৫৬৬)
হোটেল কস্তূরী ( ২৬৩০৩৬ / ৯২৩০৮৪৮৮৪৮ )
হোটেল দেবী ( ২৬৪৭১০ / ২৬৩১৭৪ )

২) ফুন্টশোলিং – (আই.এস.ডি.কোড – +৯৭৫-৫)
হোটেল এভারেস্ট ( +৯৭৫-০৫-২৫৪৮৭০ / ৯৯০ )
হোটেল সাইন ( +৯৭৫-০৫-২৫২৩৮৭ )
৩) থিম্পু – (আই.এস.ডি.কোড – +৯৭৫-২)
হোটেল নির্মল ( +৯৭৫ ১৭৯২২৮০৪ )
হোটেল শান্তি দেবা ( ৯১৬৩১৭৪৭০৭ )

৪)পারো- (আই.এস.ডি কোড +৯৭৫-০৮)
অম ওম হোমস্টে (১৭১১৯১৯৯),হোটেল ড্রাগন (৭৭৯৯৯৬৪৮)
৫)পুনাখা-(আই.এস.ডি কোড)
দামচেন রিসর্ট (৫৮৪৩৬৭/৩৬৮),হোটেল রিগসুম (১৭৮৯৪৪১৬)
৬)হা ভ্যালি (আই.এস..ডি কোড +৯৭৫)
টি ডি এস হোটেল (৩৭৫৬০০)
৭)বুম থাং (আই.এস..ডি কোড +৯৭৫-৩)
সুইস গেস্ট হাউস (৬৩১১৪৫)
এছাড়াও জয়গাঁ তে প্রচুর ট্রাভেলএজেন্সী আছে যারা সবটা ব্যাবস্থা করে দেয়।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *