★শীত প্রভাত ★
অনুশ্রী তরফদার
সূর্য যখন স্পর্শ করে ধরা
ভোরের শিশির কেমন পাগলপারা
লুপ্ত হওয়ার ভয় যে পেয়ে বসে
উধাও হবে খানিক বাদেই তারা
ফুলেরা তখন খিলখিলিয়ে হাসে
ভোরের আলোয় মেলবে পাপড়ি সে যে
ফলেরা তো আনন্দে আট খানা
প্রভাত কিরণে পুষ্ট শরীর খানা
শীতের প্রভাত আশিস সবাই পাক
আজকে না হয় এতটুকুই থাক।
******
★ স্বপ্ন উড়ে★
এক গুচ্ছ স্বপ্ন হাতের মুঠোয় বন্দি
লুকিয়ে রাখার প্রয়াসে আঁটে নানা ফন্দি।
মুঠোর ভেতর স্বপ্ন গুলো ছটফটিয়ে মরে
কেমন করে উড়বে তারা বুঝতে নাহি পারে।
আলগা করে হাতের মুঠো আকাশ পানে তোলে
স্বপ্ন গুলো বাঁচার আশায় ভাসছে পাখনা মেলে।
কোনটা বাঁচে কোনটা মরে হিসেব রাখা দায়
আয়রে স্বপন আয়রে আপন আবার ফিরে আয়।
********
★ অচৈতন্য ★
আমরা ঘুমিয়ে আছি, নিশ্চিন্তে আছি,
নিজেদের চাওয়া পাওয়া নিজেদের নিয়ে বেশ আছি।
দূর হতে কালো দানবের দল ধেয়ে আসছে,
ছিন্ন ভিন্ন করে ধ্বংস করে দিতে সভ্যতা-
আঁচড়ে কামড়ে, প্রাণ কেড়ে নিয়ে ঝলসে দিচ্ছে যাদের,
তারা সবাই আমার মা আমার বোন আমার দিদি আমার স্বত্ত্বা।
কিন্তু আমারা বেশ আছি শূণ্যে হাত তুলে আনন্দে।
আমরা ভাবিনা ভাবতে চাইনা কি – দরকার ভেবে?
কিছু তো হয়নি আমার ঘরে, কি ! লাভ নড়েচড়ে?
অকারণে সময় নষ্ট, তার চেয়ে বেশ আছি সুখে।
ওই যে মরলো মেয়েটা কি যেন নাম! আহারে —
অবিরাম পুড়ছে, ঝুলছে মরছে কি অবস্থা দেশে,
দুটি কথা দুটি মত বিনিময় আমাদের দায় ঠিক এতটুকু।
সত্যিই আমরা বেশ আছি – আঁচ লাগেনি আমার ঘরে।
আমরা অচৈতন্য শিক্ষিত সভ্যতার অধিবাসি।
ভালো কথা বলি, পুঁথি নিয়ে চলি,জ্ঞান সঞ্চয় করি রাশি রাশি।
আমরা বুদ্ধিজীবি আমরা সংস্কৃতিবান স্ব জগতে নিত্য হাসি।
বিবেকের দরজা তে তালা ঝুলিয়ে সিন্দুকে করেছি বন্দি,
কাজ করি কম বলি বেশি আমরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
চৈতন্য ফেরার সময় কি হলো ! জল ছিটাবে কে?
আমার ঘরেও অশনি সংকেত তাকিয়ে দেখো চেয়ে।।
*********
★এবং চাঁদ★
পুর্নিমার রাতে নিশব্দ প্রকৃতির মাঝে একা
খোলা বারান্দায় অপলক চেয়ে আছি গাঢ় নীল শামিয়ানায়
মেঘের আড়ালে লুকিয়ে কখনো প্রকাশ্যে তুমি
আমার এই নির্জনবাস তোমার কাছে উল্লাস
মুচকি মুচকি হেসে অবিরাম চেয়ে দেখছ আমায়
দুজনেই বড় একা অস্থির নীরব ও চঞ্চল
আমাকে এমনি করেই সঙ্গ দাও সেই সেদিন হতে
যেদিন আমি সেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে ঠাঁই নাড়া হই
তোমার তো সাক্ষী আছে সম্পূর্ণ জাগতিক কোষ
আমার নাই বা কেউ রইল, তুমি থাকো রাতপ্রহরী হয়ে
ওপরে আলোময় এক থেকে পূর্ণ ষোলকলা হও
আমি একই বৃত্ত তে রয়ে যাই সীমাবদ্ধ
সময় বয়ে যায়, আয়ু কমে কমে আয়ুষ্মান ভব, তুচ্ছ
প্রকৃতির নিয়মে আগামী তে বিচ্ছেদ চিরন্তন সত্য
তুমি কেবল একটি চিহ্ন এঁকে নিও তোমার রূপালী বুকে
রাতের বিশ্ব আলোকিত করার দিপ তুমি
আমি কদিনের অতিথি, এই চরাচরের সামান্য দিপ আমি ।
*********
★চাই-ই ই বাকি★
হিমেল হাওয়ার চাদর মোড়া পৌষের সকাল
লেপ কম্বলের দরজাটা আলতো খুলে পঞ্চেন্দ্রিয় নিরীক্ষন করে চলে
সূর্যের আদরে নরম রোদের খুনসুটি
অলস মনটা ঘুমাতে চায় সময়ের লম্ব ভূলে
চা এর চাই চাই বায়না টা দাপিয়ে বেড়ায় অন্তর আঙিনায়
পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে মন খারাপের মেঘ জমে
হঠাৎ সম্মুখে লালচে তরলের গরম ধোঁয়া
নিমেষেই দুঃখ মেঘেরা পাড়ি দেয় অসীম সমুদ্রের বুকে
উৎফুল্ল পিপাসিত মনের জানালা খুলে উঁকি মারে তৃপ্তি
***********
আমি বিহঙ্গ তুমি নদী হয়ে বও প্রকৃতির
আপন খেয়ালে চলি গতি নয় স্থির
তুমি বয়ে যাও আপন স্রোতে
আমি উড়ি তোমার বিপরীতে
বিপরীতে চলি আমি ভালোবেসে শোন
তুমি বও নদী হয়ে স্নিগ্ধ স্রোতোস্বিনী যেন
আমি উড়ি আকাশে তাই ভিন্ন চরিত
নীচে ধরিত্রী উপরে আকাশ এটাই বিপরীত
জানি তুমি এক মেরু একই পথের সঙ্গী
চলার ধরনে শুধু বৈপরীত্য ভঙ্গি
ন্যায়ের জন্য বিপ্লবী তুমি ও বিপ্লবী আমি
কলম কালি তে বিপ্লব করি সেটা বুঝি আমি
আসলে তো একই মোরা এক মন্ত্রের মন্ত্রী
অবিরাম সুর বাঁধে হৃদয়ে এক সুত্রের যন্ত্রী।