বাঙালির মন কেমনের পশ্চিম
ব র্ণা লী রা য়
ছবিঃ লেখিকা ও কিছু সংগৃহীত
সেই কবে থেকে বাংলা সাহিত্যে সিনেমায় বাঙালির পশ্চিম ভ্রমণের কথা পাওয়া যায়।পশ্চিম মানে এই যেমন ধরুন মধুপুর, গিরিডি, গয়া, জসিডি, শিমুলতলা, দেওঘর, দুমকা, মুঙ্গের, ভাগলপুর, ঘাটশিলা। আর আদি অনন্তকাল ধরে বাঙালি এইসব জায়গায় বেড়াতে যায় না, বরং বাঙালি পশ্চিমে যায় চেঞ্জে। তাই মধুপুর কিংবা শিমুলতলায় পর্যটক নয়। যারা যায়, তাঁরা মূলত চেঞ্জার বাবু।যে বিলাসী বাঙ্গালিরা এখানে বেড়াতে আসতেন তাঁদের বলা হত চেঞ্জার। এখানে খাবারদাবার খুবই সস্তা এবং কলকাতার চেয়ে টাটকা। বাজারে জিনিসের দাম শুনে এই চেঞ্জারবাবুরা বলতেন, ‘ড্যাম চিপ’। তাই শুনে এখানকার নিরক্ষর খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই চেঞ্জারবাবুদের নামই দিয়ে দিল ‘ড্যানচিবাবু’।’সে কথাও শোনা যায় এখানকার লোকজনের মুখে।
বিহারের এসব জায়গার জলহাওয়া খুব ভাল। বিশেষ করে পেটের অসুখের জন্য। এখানকার জলে যেমন হজম ভালো হয়, তেমন খিদে হয়। তাই বাঙালিবাবুরা সুযোগ পেলেই পশ্চিমে যেতেন শরীর সারাতে। এইসব জায়গাতে সুন্দর সুন্দর সব বাংলো ধরনের বাড়ি বানিয়ে রেখেছেন অনেক বাঙ্গালিবাবু। জগদীশচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চিত্তরঞ্জন দাস, লীলা মজুমদার, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ থেকে শুরু করে অসংখ্য বাঙালীর মননের ক্ষেত্র ছিল এই এলাকা। এখনও সেই জমানার রায়বাহাদুরদের নামফলক বসানো বাড়ি, বা বহু বাঙ্গালীর পরিত্যক্ত বাংলো, গোটা এলাকা জুড়ে। জলবায়ু এখনও মনোরম। বাংলাভাষীদের ভাবাবেগ-ঐতিহ্য-স্মৃতি সর্বত্র।
১৮৭১ সালে মধুপুর থেকে গিরিডি রেল লাইনের কাজে মধুপুরে এসে বিজয়নারায়ণ কুণ্ডু নামক এক ভদ্রলোক সেখানকার জলহাওয়ার গুণ টের পান।জায়গাটা তাঁর পছন্দ হয়ে যায়। অঞ্চলটা ছিল পাথরোলের জমিদারদের অধীন। তাদের কাছ থেকে বেশ খানিকটা জমি কিনে তিনি বসতি স্থাপন করলেন। কিছু বাড়ি বানান। কালেকালে এখানকার জলবায়ুর গুণের খবর জানতে পারে বাঙালিরা। শুরু হয় তাদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য পশ্চিমে যাত্রা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসেও পশ্চিম যাত্রার কথা আছে।
যদিও পশ্চিমের সাঁওতাল পরগণা নিয়ে বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন, “বিশেষ করে আমার বলবার বিষয়, এই সাঁওতাল পরগনা, দক্ষিণ বিহার, সিংভূম ও মধ্যপ্রদেশের অরণ্য প্রদেশ মানুষের প্রতি ভয়ানক নিষ্ঠুর…খাওয়ার পর্যন্ত বিশেষ কোনও ফল নেই। মুনি-ঋষিরা আর যে কোনো বনেই বাস করুন, এই সব স্থানের বনে নিশ্চয়ই বাস করতেন না, করলে অনাহারে মারা পড়তেন”।
কিন্তু ওই এখানকার ইঁদারার জল খেলে পেটের রোগ সারে, এই যুক্তি মেনে ঘুরপথেও বাঙালিরা এতদিন আসতেন।আর ঘটতোও তাই।এমনকি বিদ্যাসাগরও তাঁর জীবনের শেষ সতেরো বছর এই সাঁওতাল পরগণার এক অজ পাঁড়া গা কর্মাটারে। তাঁর তৈরি বাড়ি আজও সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে।
দেওঘর তো বরাবরই বৈদ্যনাথধাম হিসেবে বিখ্যাত।এখানকার শিবের মন্দির,সতিপীঠ যুগ যুগ ধরে মানুষের ধর্মীয় আবেগের সাথে জুড়ে আছে। তবে এইসব চেঞ্জারবাবুদের দৌলতে শিমুলতলা, গিরিডি, মধুপুর ও দশর্নীয় স্থান হয়ে উঠেছিল।সত্যজিৎ রায়ের ‘মহাপুরুষ’ ছবির মনোরম সূর্যাস্তের দৃশ্য আজও দর্শককে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই অতীতের পশ্চিমে ।পাহাড় ও অরণ্যের মাঝে মনোরম চলার পথে টেলবা নদীর ধারে সিকেটিয়া আশ্রম, ধীরহারা ঝোরা দেখেও মনকেমন করতেই পারে। মনে পড়ে যেতে পারে ‘দাদার কীর্তি’ ছবির কোনও দৃশ্যের কথাও। আজকাল যেখানে বিদেশের দৃশ্য না থাকলে নাকি বাংলা ছবির কদর নেই।অথচ সে যুগের নামজাদা পরিচালকরা এই পশ্চিমকেই শুটিং স্পষ্ট হিসেবে বাছাই করতেন। শুধু কি তাই বাংলা সাহিত্যে বিশেষত শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সি তো অনেকটাই ভাগলপুরের প্রেক্ষাপটে লেখা।একদা বাঙালি ছাড়াও বহু ইংরেজ মধুপুরে আসতেন স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে। রেলের কাজের সূত্রে অনেকে থাকতেনও।সরকারি অন্যান্য দপ্তরেও পোস্টিং নিয়ে আসতেন বাঙালিরা।এখানে এসে বাঙালি ক্লাব, এসোশিয়েশন বানিয়ে আদান প্রদানের একটা ক্ষেত্র তৈরি করতেন। আড্ডা,সামাজিক কাজকর্ম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো।
তবে এখন সবই কেমন ধূলিধূসর। সারি সারি শিমুল গাছ আর নেই। তবে ছোটখাটো জঙ্গল, ইউক্যালিপ্টাসের সারি, চারিদিকে ছোট ছোট পাহাড় আর সবুজের সমারোহ এখনও একইরকম আছে। আর সঙ্গে রয়েছে অজস্র কুঠি বাড়ি বা ভিলা। যেগুলির বেশিরভাগেরই মালিক ছিলেন বাঙালি। তবে মালিকানা এখন বদল হয়েছে।কারণ বাড়ির দেখাশুনা করবে কে? নতুন প্রজন্মের সকলেই যে দেশের বাইরে। আর যে কয়েকটা ভিলা বা কুঠিবাড়ি অবশিষ্ট। তা সারিয়েই চলছে ‘হোম স্টে’।
এসব অঞ্চলে অতীতে গড়ে উঠেছিল স্বাস্থ্য গড়ার আনন্দ নিকেতন। টিলা টিলা শিমুলতলায়, ভিলা ভিলা বাড়ি। যদিও ঐতিহ্য থাকলেও ভেঙে পড়েছে বেশিরভাগ ভিলাই। যদিও শিমুলতলা বিহারে তবু ‘বাঙালির পশ্চিম’ থেকে একে বাদ দেওয়া যায় না। পাহাড়, টিলা, শাল, মহুয়ার অরণ্যে ঘেরা গ্রাম দেখতে দেখতে হারিয়ে যান ভোরের শিশির ভেজা লাল মোরামের পথে পথে। ওখানে ট্রেন থেকে নামলেই দেখতে পাবেন পাহাড়ি ম্যালের মতো ওখানকার রেল স্টেশন। আর রেল স্টেশনের মুখোমুখি মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে শিমুলতলার মূল আকর্ষণ লাট্টু পাহাড়। দুর্গের মতো পাটনা লজ, নলডাঙার রাজবাড়ি, সেন সাহেবদের লন টেনিস কোর্টকে পাশে রেখে মাঠ পেরিয়ে হাজার ফুট উঁচু লাট্টু পাহাড়। গাছগাছালিতে ছাওয়া লাট্টুর শীর্ষে চড়ে দেখে নেওয়া যায় আদিবাসী দেবতাদের স্থান।বাঁদিকে সে কালের হাউজ অফ লর্ডস আর ডানদিকে হাউজ অফ কমন্স। চারপাশ ঘিরে দিকচক্রবাল রেখা ঢেকে প্রহরী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়শ্রেণি। খুবই শান্ত, স্নিগ্ধ, নির্জন পরিবেশে স্বাস্থ্যকর স্থান শিমুলতলা। নিসর্গের রূপকথা, মনোরম প্রকৃতি, আবহাওয়া স্বাস্থ্যপ্রদ।
গিরিডি জায়গাটা শুনলেই প্রথম মনে পড়ে সহজ পাঠের সেই লাইন ‘আজ উস্রি নদীর ঝর্না দেখতে যাব, দিনটা বড় বিশ্রী।’ আর তাঁর সাথেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নন্দলাল বসুর সেই আঁকা ছবিটার কথা। মনে পরে যায় প্রফেসর শঙ্কুর বাড়ি ছিল গিরিডিতে।
গিরিডিবাসী বৈজ্ঞানিক, যাঁর হাতে ছিল নিশ্চিহ্নাস্ত্র, আর পকেটে মিরাকিউরল বড়ি, তাঁকে এতদিন সত্যজিৎ রায়ের লেখায়-আঁকা দিয়েই চিনেছেন পড়ুয়ারা।আর সেই গিরিডিতে দাঁড়িয়ে তাঁকে কি ভোলা যায়। উস্রি ফলস দেখে চমকে উঠতে পারেন,বিশেষত বর্ষার পরে গেলে।যেকোনো নামি-দামি ঝরনাকে হার মানাতে পারে। পাথুরে ভূমিরূপের মাঝখান দিয়ে উচ্ছ্বল উস্রি বয়ে চলেছে।কখনো শান্ত, কখনো খরস্রোতা। এই উস্রি ঝরনা যাওয়ার পথটাই হোক আর,খান্ডোলি ড্যাম যাওয়ার রাস্তা অবর্ণনীয় সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে প্রতিটা বাঁকে। মধুপুরের রাস্তায় বেশ কিছুটা, প্রায় ২৫ কিমি আসার পর পথে পড়ল অজয় নদের ওপরে সেতু। তারপর সেটা পার করে গিয়ে আমরা গিয়ে পড়লাম বুড়াই পাহাড়ে । এখানকার ভূমিরূপের গঠন ভারী অদ্ভুত। ছোট ছোট সাতটি টিলা নিয়ে গঠিত জায়গাটা বুড়াই নদীর ধারে অবস্থিত। টিলার গায়ের অসংখ্য গর্ত, যেগুলো দেখলে অনেকরকম ধারণা জন্মায়, তবে পুরোটাই জল এবং বায়ুর ক্ষয়কাজের ফল। বেশ বড় একটা বাঁধানো পুকুরের পাড়ে বুড়েশ্বরী দেবীর মন্দির। পাথরের নীচের প্রায় গুহার মধ্যে মন্দির। এখনও নিয়মিত পশুবলি হয় মানত হিসেবে। পাশের টিলার মাথায় আছে আরেকটা সাদামাটা, ছোট ত্রিলোকেশ্বরী দেবীর মন্দির। মন্দির চত্বরের বাইরের বিশাল ফাঁকা জায়গায় শীতকালে মেলা
বসে এবং পিকনিক করতেও আসেন প্রচুর মানুষ।
তিনশো বছরের পুরনো দেবী কালীর মন্দির পাথরোল । মধুপুর বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার আগে। পাথরোলেশ্বরী দেবীর মন্দির খুব জাগ্রত এবং বেশ প্রাচীন। কলকাতা থেকে কালীমূর্তি নিয়ে এসে, বসিয়ে পূজা শুরু হয়। মন্দিরের গঠনও বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। মূলত শ্মশানঘাটে এটি নির্মিত হয়। এখনও এখানে পশুবলি হয়।আগেকার দিনে স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য বাঙালীরা মধুপুরে প্রায়ই আসত। এখনও কিন্তু অঞ্চলটা সেরকমই সুন্দর আছে। চুপচাপ, নিরিবিলি, সবুজে ভরা বিস্তৃত উপত্যকা। একটা সাইকেল ভাড়া করে নিয়ে সারাদিন টোটো করে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখাটাই শ্রেয়। কত বিখ্যাত মানুষদের স্মৃতি বিজড়িত বাগানবাড়িগুলো এখনও দিব্যি আছে। অনেক আবার নষ্টও হয়ে গেছে। মধুপুরে শহরের মাঝে একটা বড় পাতকুয়ো আছে। সেখানের জল নাকি শরীরের জন্য খুব ভালো। সেখানের জল যদিও আমরা চেখে দেখিনি সে জলের গুণ।
বিজয়নারায়ণ-নীলমণি-মতিলালদের আহ্বানে মধুপুরে তখন বাঙালিদের রমরমা। অনেক অর্থশালীরা জমি কিনে নিজেদের দ্বিতীয় বাসস্থান তৈরি করতে লাগলেন মধুপুরে। বিদ্যাসাগরের স্নেহধন্য ভূগোলবিদ শশিভূষণ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, বিচারপতি গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, উপাচার্য দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, প্রদ্যুম্ন মল্লিকের মতো অনেকেই সে যুগে নিজের বাড়ি তৈরি করেন মধুপুরে। আজ আর সে সবের কোনও চিহ্ন নেই। যেমন চিহ্ন নেই বাবা গঙ্গাপ্রসাদের নামাঙ্কিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি বাড়ির গঙ্গাপ্রসাদ ভবন । ভেঙে পড়ার জন্য দিন গুনছে জাহাজ বাড়ি বা তার মতো অসাধারণ স্থাপত্যের কিছু বাড়ি।
শহরের একেবারে অন্য প্রান্ত কাঁঠালতলা। এলাম প্রথম বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার নীলমণি মিত্রর তৈরি বাড়িগুলোর খোঁজে। নীলমণি গোড়ায় নিজের থাকার জন্য কাঁঠালতলায় বিশাল বাড়ি তৈরি করলেন। সামনে বিশাল এক ঝিল। জায়গাটা পছন্দ হওয়াতে পাথরোলের রাজাদের কাছ থেকে পাথরচাপাটি মৌজার বেশ অনেকটা জমি লিজ নিয়ে কাঁঠালতলা, বটতলা, পায়ারাতলা নামের ছ’-সাতটা বাড়ি তৈরি করে কলকাতার বাঙালিদের আমন্ত্রণ করেন হাওয়া বদল করতে আসার জন্য। আজ গোটা তিনেক বাড়ি ছাড়া সবই কালের গর্ভে বিলীন। ফেরার পথে দেখলাম রায়বাহাদুর অনাথনাথ সাধুর ‘সাধুসঙ্গ’ বাড়ি, ওই পরিবারেরই তৈরি সিদ্ধেশ্বরী দুর্গামন্দির। মীনাবাজারে বলাই দত্ত প্রতিষ্ঠিত সুন্দর স্থাপত্যের ‘দি দত্ত চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি’র মতো কয়েকটা বাড়ি।শুনলাম, পাথরোল এস্টেটের বাঙালি ম্যানেজার মতিলাল মিত্র রাজবাড়িতে চাকরির সুবাদে অনেক বাঙালিকেই বাড়ির জমি পাওয়ায় সাহায্য করতেন। এডয়ার্ড জর্জ হাইস্কুল নামে এক স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর উদ্যোগে। সে স্কুল এখনও আছে। তবে নাম হয়েছে আশুতোষ-পুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে।
মধুপুরের বাড়িগুলোয় খিলানে খানিক গির্জার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। যা আবার শিমুলতলা বা দেওঘরে দেখা যায় না। মধুপুর একদা সাহেবদের বাংলোও ছিল। সেই কারণেও সেখানকার স্থাপত্যে ওই রকম ছাপ এসে থাকতে পারে।আমরা মধুপুরে আস্তানা গেড়েছি বাহান্ন বিঘের লীলা কমল গেস্টহাউসে।এখানকার বর্তমান মালিক মুকুলবাবু জন্মসূত্রেই মধুপুরের বাঙালি।এক সময় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবার হলেও শহরটার মতো সব কিছুই গতিহীন। গেস্ট হাউসের পিছন দিকের গাছগাছালিঘেরা গলিপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম স্বামী হরিহরানন্দ প্রতিষ্ঠিত কাপিল মঠের কাছে। জায়গাটা এখনও বেশ ফাঁকাই। বড় রাস্তার ধারে কিছু দোকানপাট। মাঝে মাঝে এক একটা বাগানঘেরা একতলা বা দোতলা বাড়ি। এখানেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। নাম ‘স্বস্তিকা’। তিনি সে বাড়ি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে যান। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস তৈরি হয়েছিল। এখন তালাবন্ধ পড়ে।আবার রয়ে গেছে অনেক বাড়িই। চাকরি বা ব্যবসাসূত্রে মধুপুরে এসে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছিলেন অনেকেই। মুকুলবাবুদের মতো কেউ কেউ এখনও বাড়ি ভাড়া দেন কলকাতার পশ্চিমযাত্রীদের জন্য। এখনও এখানকার জলহাওয়ায় খিদে বেড়ে যায় অনেকগুণ। স্থানীয় খেতের টাটকা সব্জি, পুকুরের বা ছোট নদীর মাছ আর মিষ্টির আকর্ষণ ছেড়ে ফিরে আসতে মন চায় না। তখন মনে হয়, বাঙালির ‘পশ্চিম’ এখনও রয়ে গিয়েছে।
একদা পশ্চিম বর্তমান ঝাড়খণ্ডের নিরাপত্তার সমস্যা যত দ্রুত মিটবে,ঝকঝকে রাস্তা দিয়ে পর্যটনের গাড়ি তত জোর ছুটবে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় আবেগ, জলবায়ুতে স্বাস্থ্য উদ্ধার, সব মিলে আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে প্যাকেজ। নতুন রেলপথের গোটাটাই নিসর্গশোভায় ভরপুর, কোথাও সাঁওতাল পরগনার ঘন বনাঞ্চল, কোথাও লালমাটির টিলা পাহাড়। কোথাও প্ল্যাটফর্ম গড়া চলছে, নতুন রেলপথ বলে হকার নামমাত্র। পথেই স্টেশন ঘোড়ামারা, সেখানে হকার ওঠেন এলাকার বিখ্যাত প্যাঁড়া নিয়ে। রামপুরহাট থেকে বেলা বারোটায় ছাড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন জসিডি পৌঁছে যাচ্ছে বিকেল চারটের মধ্যে। তবে পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ওই পথে চলেছে এক্সপ্রেস ট্রেন। আজকের পশ্চিমে নতুন পথে সহজে পর্যটকদের আসা শুরু হয়ে গেছে।