পরিচিতিঃ জন্ম ও নিবাস ধানবাদ জেলার প্রত্যন্ত মোকো গ্রামে। একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক। “সুতপা” পত্রিকা, প্রকাশন ও সাহিত্য গোষ্ঠীর কর্ণধার। ২০ টির অধিক সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশ। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “শ্বেতপলাশ”। জনপ্রিয় অনুগল্পের বই “হালকা হাসির টোটকা”। ভাষা সংগ্রামী হিসেবে মানভূমের মাটিতে বহুল পরিচিত।
ঝাঁটা
আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসা রাধাকৃষ্ণের ভালোবাসাকেও হার মানাবে!
তা বটে; শোনো না, আমি একটু আসছি লছমনপুর থেকে। ছেলেগুলো ডাকছে সকাল থেকে। পার্টি মিটিং বলে কথা।
যাবে;যাও তাহলে।
বেশী দেরী কোরো না। তুমি না থাকলে একদম ভালো লাগে না।
এই শুনছো কিছু টাকা দিয়ে যাও যদি কম্বলওয়ালা আসে তাহলে নরম কম্বলটা কিনেই নেবো। ওটাই খুব গরম বাঁধবে। ও তো তাই বলেছে সেদিন।
শোনো না আমার হাতে এখন অত টাকা নেই বাদ দাও পরে নেবে।
তাহলে তোমাকে যেতে হবে না। বাড়িতেই থাক।
লক্ষীটি বোঝো না কেন, পার্টির লোকগুলোকে হাতে রাখতে হয়। বিপদে-আপদে কাজে লাগবে তারা…..
আমি পার্টির নিকুচি করি।
টাকা ফেল এখনই…
সমস্যা!
#
বিয়ে করতে কে বলেছিল।টাকা দেওয়ার মুরাদ নেই তো….?
সেটাও বটে।
তবে রাধাকৃষ্ণের প্রেম কেমন ছিল?
ফেল বলছি নতুবা…
কি করবে?
দেখবে?
না না তা বলছি না জানতে চাইছি।
ওরা ঠাকুর বাকুর ওদের প্রেমের সাথে কি আমাদের সাঝে?
তুমি তো বলেছিলে আমাদের প্রেম রাধাকৃষ্ণের মত।
বেশী তর্ক কোরো না টাকা ফেল।
এই নাও পাঁচশ টাকা।
হবে না।
কেন হবে না?
চওড়া বড় কম্বলটা নিলে হাজার টাকা লাগবে।
তুমি ছোটটা নেবে।
পাঁচশ টাকায় হয়ে যাবে।
ছোটটায় দু’জনের হবে না।
তুমি কোন স্কুলে পড়েছো গো?
তোমার জন্য ছোটটাই নাও।আমার লাগবে না। আমার শরীর গরম। সামনে ভোট আর কখন তুমি বুঝবে লক্ষীটি আমার…..
বৌ এর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তোমার পার্টির মুখে ঝাঁটা।
হাওয়া
অহঙ্কারের জন্ম হলেই পেছনে একটি হাওয়া ফুস করে বের হয়ে যায় যথাসময়ে সেটা জানে সুবিমল তাই সে কখনও মনে অহং- কে স্থান দেয়নি।
অতি সাধারন জীবনযাপন সুবিমলের……
ওর বিরক্ত লাগে বিলাসিতায়।ফুটানির গল্প। আহামরি আহামরি চিন্তাভাবনা।তেরটি চাকরী ছেড়ে নিজের জায়গা কালিদাসপুরে টুকটাক ঠিকাদারি করে।পঞ্চায়েতের ছোটখাটো রাস্তা, নালি তৈরী,বিভিন্ন ভবনের রিপিয়ারিং এর কাজ ইত্যাদি…..
সমাজসেবায় যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে সুবিমল।স্থানীয় বিধায়ক থেকে নেতা- মন্ত্রী সবাই তাঁর নাম জানে-চেনে।
এটা সে করতে পেরেছে চল্লিশোর্ধ বয়সে।সে কখনও কারও অমঙ্গল চিন্তা করে না; সকলের মঙ্গল কামনা করে।তাই ভগবানেও তার অমঙ্গল করেনি।তাঁর একটিই চিন্তা সেই হাওয়াটির নাম কখন দেবেন বৈজ্ঞানিকরা…..?
মেয়ে দেখা
একদল কুটুম্ব এসেছে মোহনপুরের বৈদ্যপাড়ায়।বরেনবাবুর বাড়িতে।মেয়ে দেখতে।স্টেশনে নেমে তাঁরা গাড়ী না পেয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছেন গল্প করতে করতে।
বরেন সরকারের ছোট মেয়েকে দেখতে এসেছে।
সুন্দরী মেয়েটি।বেশ ফুটফুটে।বয়স আটারো পেরিয়ে উনিশের ঘরে।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।চারটি মেয়ের মধ্যে ঝুমা’ই ছোট।ঝুমা’র বিয়ে দিলেই বরেনবাবু হাত পা ঝাড়া……
কুটুম্ব ঢুকতে দেখেই গ্রামে জটলা।বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে…..
মহিলাগুলি সম্বন্ধ ভাঙতে মাহির।তাদের কাজ যেভাবেই হোক সম্বন্ধটি ভেঙে দেওয়া।অদ্ভুত বুদ্ধিমতি’র দল।
কুটুম্বরা মেয়ে দেখে বের হোলো বরেনবাবুর বাড়ি থেকে।দূর থেকে দেখে নিয়েছে বুদ্ধিমতি’র দল।তারা পেছনে- পেছনে চলতে থাকে।গ্রাম পেরিয়ে তারা হাঁক দেয়- ও ডাক্তারবাবু ও ডাক্তারবাবু কেমন দেখলেন আমাদের ঝুমি’কে?
ডাক্তারবাবু, ঝুমি ভালো আছে?
আপনারা কি আমাদের কিছু বলছেন?
হ্যাঁ; বলি কেমন দেখলেন ঝুমি’কে?
কে ঝুমি?
আপনারা যে মেয়েটিকে দেখতে এসেছিলেন……?
কার কথা বলছেন আপনারা ?
বরেনবাবু’র মেয়ে ঝুমি’র কথা বলছি।
আপনারা তো ডাক্তার;তাই না ?
দেখে কি বুঝলেন?
কেন?
মেয়ে তো ভালোই দেখলাম।
তারা একে অপরের মুখের দিকে চাইলো…..
মুচকি হাসলো।
গতকালই বাপের সাথে ঝগড়া করে ঝুমি কুয়োতে ঝাঁপ দিয়েছিল।বাবা- মা চান না, মেয়েটিকে বে’জাতে তুলে দিতে….
বুঝলাম না।
বুঝলেন না?
মেয়েটি ভালোবাসে এক নীচু জাতের ছেলেকে।মেয়েটির চরিত্র ভালো নয়।
ও আচ্ছা; বলেই কুটুম্বরা বিদায় নিল।
এক সপ্তাহ পর চিঠি এলো বরেনবাবুর বাড়িতে।
মান্যবর,
নমস্কার।
আপনার মেয়েকে আমার ছেলের পছন্দ নেই।এ বিয়ে হচ্ছে না।ক্ষমা করবেন।
ভবদীয়
নারায়ন সেনগুপ্ত
জঙ্গলপুর
পশ্চিমবঙ্গ
বরেনবাবু, চিঠি পড়ে মাথায় হাত নিয়ে বসে পড়লেন মগরাঘরে…..
স্ত্রী বললেন; কি হয়েছে?
বরেনবাবু চিঠিটি স্ত্রী’র হাতে দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন কি হবে রে ঝুমা। এত সুন্দর হিরের টুকরোর মত ছেলে আর কি পাবো রে……
বিউটিফুল (দুই)
সকাল থেকেই দেখছি বৌ এর মুখটা কেমন ঝুলা ঝুলা।
ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।মনে হয় কোন অপরাধ করে ফেলেছি।ভয় লেগে গেল খুব।বৌ এর রাগ মানে বিরাট বিপদজনক ব্যাপার।বাঘ, সিংহ এলেও সামলে নেব কিন্তু বৌ মানে বাঘ সিংহ মিলিয়ে যে মালটি তৈরী হয় সেইধরনের……
তবুও একটু সাহস করেই বললাম, তোমার মুখটা একটু অন্যরকমের লাগছে।ব্যাপারটা কি একটু বলবে?
এমন ফনফন করে চলে গেল (কাড়া ভিঁড়কে গেলে যেমন হয়)
আমি তো ভয়ে ঘামতে লাগলাম। এই বুড়ো বয়সে বৌ ছেড়ে যদি পালিয়ে যায় তাহলে তো মহাবিপদ।মার্কেটে মেয়ে নেই তারপর এখন মেয়েগুলোও ঠিক পছন্দ হবে না।আমার কালঘাম ছুটে গেল চিন্তায়……
খানিক পর এসে আমায় জোরালো আক্রমন- তুমি, কেতকীকে বিউটিফুল বললে কেন?
আমার সপ্রতিভ উত্তর- কোনো ফুলের নাম মনে পড়লো না তাই “বিউটিফুল” বলে ফেললাম…..
বৌ হঠাৎ মুচকি হেসে রান্নাঘরে…..
এ যাত্রায় বাঁচলাম।
★★★