সপ্তদ্বীপা অধিকারীর ছোটগল্প

পরিচিতিঃ লেখিকার বাংলা সাহিত্য নিয়েই পড়াশুনো, গবেষনা ও চর্চা।মূলত গদ্য-সাহিত্যেই তাঁর বিচরণ। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকেন। চর্চা করেন লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে। “কথাকাব্য” ও “রাজকন্যা”(শিশু কিশোরদের জন্য) নামে দুটি পত্রিকারও সম্পাদনা করেন যা করোনার কারণে এবারের সংখ্যা মাঝ পথে পড়ে আছে। প্রথম গল্পগ্রন্থঃ “মৃত্যুর মুখ” দশটি গল্প নিয়ে এই সংকলন। দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ–“খেজুর গাছের ঘাট এবং পঞ্চীর ইন্দ্রীয় সকল” প্রকাশকঃ কবিতীর্থ।এই বইএর একটা গল্পের নাম- ‘হলুদ বুটি’।আন্ডারওয়ার্ল্ড এর ভাষা ব্যবহার করা। তৃতীয় গল্পগ্রন্থঃ জায়ান্ট কিলার( কিশোর গল্প-সংকলন) চতুর্থঃ খেঁদির কথা( উপন্যাস) নিম্নবর্গের মানুষের যুদ্ধ কাহিনি।এটিও কিশোর উপন্যাস। একটা কাব্যগ্রন্থ করেছে ৯ নম্বর সাহিত্য পাড়া লেন।কাব্যগ্রন্থের নামঃ প্রায়শ্চিত্ত পর্ব। ইনিও বাইফোকালিজম্ পরিবারের একজন সদস্যা।

 

চোখ

স প্ত দ্বী পা   অ ধি কা রী

কোথা থেকে কীভাবে শুরু করবাে জানিনা। কাব্যে-সহিত্যে সর্বত্র নারী-রূপের বন্দনা। সত্যি বলতে নিজে নারী হয়েও রাস্তা-ঘাটে সুন্দর নারীদেরকেই দেখি। পুরুষদের দেখি না? সত্য বলবাে বলেই আজ কলম ধরেছি।
২০১৪ সালের ঘটনা। গৌহাটি থেকে ফিরছিলাম কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে।ট্রেনটা ছেড়েছিল রাত এগারটায়। আমি ট্রেনে একা থাকা পছন্দ করি। হাতে বই আর জানালার ধারের সিট ভীষণ ভালােবাসি। জানালার বাইরের দৃশ্যপট আমায় এই কায়া পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে কোন্ সে অনন্ত মায়াময় অনুভূতিতে অবগাহন করায়।পৃথিবীর ধুলাে-ময়লা লাগে চোখে-মুখে। চুলে জট পাকিয়ে যায়। সারা মুখে কয়েক পরত ধুলাে-বালি জড়িয়ে যায়। জিভে বালি কিচকিচ করে।তবুও কী যে এক অমৃত অনুভব! সে তাে কাউকে বােঝানাে যায় না!তাে সেবার কোনােকারণে এসিতে টিকিট করেছিলাম।আপার বার্থে ছিল আমার সিট।তাে ট্রেনে উঠেই চলে গেলাম উপরে নিজের সিটে।হাতে বই। ব্যাস। আলাে নেভার আগে যতোটা পারি পড়ব। এই এক নেশা আমার সকালে অবতরন করলাম। হাত-মুখ ধুয়ে সিটে এসে বসলাম। এবার মােবাইল বার করলাম। আর মুখ না তুলেই টের পেলান,সামনের কেউ এদিকেই চেয়ে রয়েছে। পাত্তা দিলাম না। এসব গা-সওয়া ব্যাপার। হঠাৎ টের পেলাম সে কিছু বলছে কী বলছে বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কিছু একটা যেন ঘটছে।বা ঘটতে চলেছে।মানুষের ইন্দ্রিয় পাঁচটা। এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ই সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সজাগ হলে অনায়াসে আরো একটা অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়ের জন্ম হয় এবং এই নতুন ইন্দ্রিয়টি অত্যন্ত শক্তিশালীও হয়। আমি পরিষ্কার বুঝতে পরলাম,কেউ যেন কিছু ইঙ্গিত করলো এবং সে বাইরের কেউ না। আমার মুখটা সে জোর করে তুলে ধরল এবং পিছন ফিরতে বাধ্য করলাে। সে, আমি জানি সে।এক পল সময় মাত্র। সেই এক পল সময়েই কী সব যেন ঘটে গেল।দুটো চোখের সাথে আমার দুটো চোখের মিলন ঘটেছিল। পৃথিবীর আহ্নিক গতি কি থেমে গিয়েছিল? কিম্বা ভূমিকম্প শুরু হয়েছিল? না কি পৃথিবী তার নির্দিষ্ট গতিপথ ছেড়ে উল্কার বেগে ছুটতে শুরু করেছিলা। সেই জন্যই আমার এতাে অস্থির অস্থির লাগছিল। এত্তো হাহাকার লাগছে কেন বুকের মধ্যে? এত্তো গভীর প্রশান্তময় হাহাকার কেন? কেন মনে হচ্ছে,এই পৃথিবীর কাছে আমার আর কিছু চাইবার নেই! কেন মনে হচ্ছে,আমি সবকিছু পাওয়ার সুখে সুখী।আবার কেন মনে হচ্ছে আমার মতো হতভাগা আর নেই এই দুনিয়ায়!আচ্ছা,ওই অচেনা পুরুষ কি যাদু জানে?কিম্বা চোখ কি বেতার যন্ত্রের মতো রঙ পাঠাতে পারে? পাঠক, এইবার আমি ওই চোখ বন্দনা করি,কেমন!” সই, কী পুছসি অনুভব মোয়,সেই পিরিতি অনুরাগ বাখানিতে তিলে তিলে নুতন হােয়! “আহ! সেই পুরুষ কবির নারী রূপের অনুভূতি বর্ণনার সাহায্য নিলাম! তাছাড়া পিরিতিই বা বল্লাম কেন? নাহ,এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেল! পটলচেরা চোখ না কী যেন সব বলে! এসব বলেও মন পােষাচ্ছে না!” এই যে দুনিয়া কীসের লাগিয়া,এতাে যতনে গড়াইয়াছেন সাঁই..!” হ্যাঁ, অবশেষে অনুভূতির চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আমার মােক্ষণ ঘটলাে। চরম পাওয়ার উত্তেজনায় অবিল হলাম।এবং সুখে সর্বসুখের চুড়ান্ত পর্যায়ের শীর্ষবিন্দুতে অবগাহন করার পর সিদ্ধান্তে সর্বহারা সুখের রাজত্যে আছড়ে পড়লাম। অকারণে ট্রেনের কামরায় যত কাজ দেখাচ্ছি।ব্যাগ গোছাচ্ছি; বই এর পাতা ওলটাচ্ছি।বই ভিতরে রাখছি।কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে | আর পিপাসা পাচ্ছে। এবার ফোন করছি বড়িতে।একটু স্বাভাবিক হতে চাই।কিন্তু ট্রেনের এই এক সমস্যা। কিছুতেই সংযোগ হয় না৷দুলতে দুলতে চলেছেন মহারাজ।যেখানে চাই সেখানে যােগাযােগ কিছুতেই হচ্ছে না!আর যেখানে চাইছি না সেখানে যে ঘোল বানাবার লাঠি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘেটে সব “ঘ” করে দিচ্ছে। হঠাৎ ছেলেটা কিছু বলল।মনে মনে ভেবেই নিলাম আমি-ই তার বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু। বাচ্চা ছেলেটা প্রাণখােলা হেসে উঠলাে| আমার তাতেও হাসি পাচ্ছে না! কেন যে! কে জানে!! কাতর চোখে বাইরে তাকাতে গিয়ে টের পাই এসি কামরার এক বন্দি যাত্রী মাত্র আমি।বাইরের জগৎ আমার কাছে বন্ধ।কিন্তু আমি তো টিপিক্যাল ধুলােবালি মাখা পৃথিবীর মানুষ। একটু মুক্ত বাতাস আমার চাই।দরজা খুলে এগিয়ে গেলাম। বাথরুমের করিডােরে পৌঁছে দেখি একদম ফাঁকা। কেউ নেই এখানে।
একটু স্বস্তি পেলাম।দরজাটা খুলে দিতেই মুক্ত বাতাস জড়িয়ে ধরল! তার উচ্ছ্বসিত আবেগ বাঁধ মানতে চাইছে না। মুখে-চোখে-বুকে সমস্ত শরীরে ভীষণভাবে অট্টহাস্যে ফেটে পড়তে লাগলাে সে। মাথার চুলেও যেন বিলি কেটে কেটে বয়ে যেতে লাগল। বাতাসের সােহাগ উপেক্ষা করেও বাইরে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিলাম।একটা স্টেশান এলাে। কিন্তু মানুষজন দেখতে পেলাম। প্রতিটি মানুষের মুখেই দুটো করে চোখ আছে। এই অনুভূতিতে প্রথম আক্রান্ত হলাম।এবং এ-ও মনেহলাে, আমিই বােধহয় পৃথিবীতে প্রথম ব্যক্তি, যে,দুটো চোখ দিয়ে চোখকে অনুভব করতে পারলাম। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি আরো দুটো চোখের উপর, আরো পরিষ্কার করে বললে, আরাে অচেনা কোনাে পুরুষের দুটো চোখের উপর দৃষ্টি মেলাতে চাইছি। কোনাে কি রোগ হয়েছে আমার চোখের, বােঝ যেতাে তাহলে! কিন্তু জীবনের গতিপথে কারও দৃষ্টিতে মেলাতে পারলাম না চোখের মণি! সবাই আলেয়ার মতাে সরে সরে যেতে লাগল। হঠাৎ নজরে এল.সবুজ পানা-ভর্তি একটা ভরাট পুকুর। পুকুরের পাড়ে একটা হেলানাে খেজুর গাছে দাঁড়িয়ে একজন যুবক। ট্রেনটাও একটু গতি কমিয়েছে । যুবকটি একা এক যুবতী নারীকে চলন্ত ট্রেনের খােলা কামরায় দেখে হাসতে হাসতে হাত নেড়ে টা টা করল। আমি আনন্দিত হলাম।এবং অত্যন্ত ব্যগ্র হয়ে ওর আঁখি খুঁজতে লাগলাম আর যুবকটি কোত্থাও কিছ্ছু না, আমার সাথেই শক্রুতা করে বসল।করল কী হঠাৎ, এক লাফ মেরে পুকুরে ডুব দিল হঠাৎ এক্কেবারে টপাস করে! মুক্তোদানার মতো জলের ফোয়ারায় হারিয়ে গেল সে। ট্রেন যতােটা সময় তাকে পাস করে গেল, সে আর জলতলদেশ থেকে উঠল না। আর ঠিক এই সময় আমার ব্যগ্র-ব্যাকুল দৃষ্টিকে থামিয়ে সজাগ হয়ে উঠল শ্রবণযন্ত্র। “শশা নেবে, শশা?” মানে অমৃত হখন শশা হয়ে গেছে তার মানে তো বংলায় ঢুকে পড়েছি। ঝট করে তাকালাম ভাবলাম, আলেয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে এভাবে কি কখনাে আপন গন্ডিতে ফেরা যায়? ছেলেটাকে বমি–” ভাই,শিয়ালদা আর কতোদূর?” সে হাসিমুখেই জবাব দিল—” এইতো এসে গেছে! দমদম ঢুকছে। ” ট্রেন ততক্ষণে গতি কমিয়েছে অনেক। ছেলেটি উপযাচক হয়ে বলল—“ট্রেনটা মিনিট দশেক দাঁড়াবে।” অথচ ‘আমি ওই ছেলেটার কাছ থেকে একটিও শশা কিনিনি । মাত্র দশ টাকা দাম। দ্রুত ভিতরে ঢুকলাম। দমদমে নামতে পারলেই আমার সুবিধা। সাধারণতঃ এই ট্রেনটা দাঁড়ায় না দমদমে। আজ দাঁড়াবে এবং মিনিট দশেক থামবে।একটাই মাত্র ছােট্ট লাগেজ। হাতে নিয়ে এগিয়ে চললাম গেটের দিকে। দরজার কাছে দাঁড়াতেই শশাওয়ালা বলল-”দিদি,চিন্তা করবেন না। ঠিকই নামতে পরবেন ” অথচ আমি তার হেকে একটিও শশা কিনিনি। ছেলেটি কথা কয়টা বলে হাসলাে।অমি তারদিকে চেয়ে বললাম—” একটা দিন তাে শশা!” হতভম্ভ ছেলেটি বলল—” কিন্তু স্টেশন এসে গেছে তাে দিভাই। “ওর কথা শেষ হবার আগেই আমার হাতে দশ টাকার নােট। স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেটিও হাসলো| আমিও।আমি ব্যস্ততম মনে দাঁড়িয়ে আছি।কখন দমদম স্টেশন আসবে। ঠিক তক্ষুনি টের পেলাম! হ্যাঁ,সেই অনুভূতি। হাঁ,পরিষ্কার বুঝতে পারছি সে ঠিক আমার পিছনে! অথচ আমি একবারও পিছন ফিরিনি। আমি জানি, ও না এলে আমি ওই শশাওয়ালার সাথে আরাে কথা বলতাম| স্বাভাবিক কথা। কিন্তু ওর আগমন মুখের ভাষাও কেড়ে নিতে পারে নাকি? কী মুশকিল! হঠাৎ সেই বাচ্চা ছেলেটা বলে—” দিদি,আপনার মােবাইল নাম্বারটা একটু দেবেন? “

আমি কিছু জবাব দেবার আগেই জোরে ট্রেনের সুইসিল বাজলো। আর আমিও থরথরিয়ে কেঁপে উঠলাম। শব্দের কারণে নাকী শব্দের ঘর্ষণের কারণে বলতে পরবাে না। আসলে ট্রেনে চলাকালীন সময়ে ট্রেনের আওয়াজ একেবারে ভিতরে কোথায় যেন বেজে ওঠে।আমি একসময় ট্রেন ছেড়ে দুলন্ত ট্রেন ছেড়ে, শক্ত, কঠিন,পাথরের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালাম। টের পেলাম সেই আঁখিওয়ালা এবং সাথের বাচ্চাটিও নেমেছে। পুরুষের নারীর রূপ বর্ণনার মতাে,নারী হয়ে পুরুষের রূপ বর্ণনার মােহ বা আকাঙ্ক্ষা ততক্ষনে কেটে গেছে। কেননা,পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠেছি তখন! কেননা,ততক্ষণে বুঝে গেছি যে,এই যে আমার “উচাটন মন ঘরে রয় না” অবস্থা, তা সেই আঁখির মালিক বুঝে গেছে!সুতরাং? পালাও,পালাও এবং পালাও।ওই যে বাচ্চাটাও কতােবার যেন মােবাইল নম্বর চেয়েছে আমার কর্ণকুহরে কিছুটা প্রবেশ করেছে।নাইন এইট জিরো ফোর… তারপর আর শােনা যাচ্ছে না! ওরা টাক্সি স্ট্যান্ডেও এসেছিল।যতটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম ওরাও ছিল | আর বাচ্চা ছেলেটা সমানে বলে যাচ্ছে নাইন এইট জিরো ফোর – ড্রাইভার ট্যাক্সি ছেড়ে দিলেন… একবার পিছন ফিরলাম। সে-ই সে-ই ফেরালাে চোখ। জোর করে! চোখে চোখ আর মিলল না! আমি হতাশ হয়ে হেলান দিলাম ট্যাক্সির সিটে। চোখ দুটো বন্ধ করে। ড্রাইভার গান চালিয়ে দিল—” চক্ষে আমার তৃষ্ণা, ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে,” কে জানে ট্যাক্সিওয়ালা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? নইলে এই গানটাই কেন চালালেন?
এই হল আমার অধরা মাধুরী। কোনােদিন তাকে ধরতে পরিনি। “নয়ন তোমায় পায় না দেখিতে,রয়েছো নয়নে নয়নে,..”
তার গল্প এখানেই শেষ। কারণ তার সাথে দেখা এ জীবনে আমার আর হয় নি|কিন্তু বাস্তব আর গল্পের মধ্যে অনেক ফারাক থাকে। বাস্তবে আরাে অনেক কিছুই ঘটে গেল|সেবার সমস্ত বন্ধুরা মিলে গেট টুগেদার করছিলাম।নাচ গান হৈ হৈ বেশ চলছিল।মাস ছয়েক হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
আমার এক বন্ধবীর নাম সায়ন্তনী।
প্রচণ্ড ফক্করবাজ মেয়ে। কতােছেলের সাথে যে সম্পর্ক করেছে তার ইয়ত্তা নেই|সায়ন্তনীর একটিা খাতা আছে সেখানে সে তার প্রেমিকদের নাম লিখতো। মুখে বলত হাফ সেঞ্চুরি হয় নি এখনো!ও দেখি চ্যাট করছে তার সঙ্গে খুব খিলখিল করে হাসছে।একটু পরে আমাদের অনুমতি নিয়ে ও একটু আড়ালে গেল। বুঝতেই পারলাম,আবার নতুন কেস! খাবার সময় পার হয়ে যাচ্ছে দেখে ওকে ডাকতে গেলাম। কাছাকাছি গিয়ে শুনি ও বেশ জোরের সাথে বলছে—“আরে বাবা,কাঞ্চনকন্যায় সেদিন আমিই ছিলাম! কত্তোবার বলবো! হ্যাঁ রে বাবা,হ্যাঁ! এই ছয় মাস আগেই!”

আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম! বিচলিত হলাম। সই কী পুছসি, অনুভব মােয়,সােই পিরিতি অনুরাগ বাখানিতে তিলে তিলে নুতন হােয়!” হ্যাঁ আমি সেদিন ভুল ভাবিনি! পিরিতি’ উচ্চারণ করে কিছু ভুল করিনি|আসলে নিজেকে চিনতেই বােধহয় সবথেকে বেশি সময় লাগে। ধীরে ধীরে বন্ধুদের কাছে এসে বসলাম বুঝতে পারছি না, সায়ন্তনী এসব কেনই বা বলছে। ওদের যােগাযােগই বা হলাে কীভাবে! সায়ন্তবী এলাে একটু বাদে। ওকে জিজ্ঞাসা করতেই ও কল কল করে উঠল হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলল—” আরে তােকে বলা হয়নি। গত প্রায় ছয় মাস ধরে আনন্দবাজার পত্রিকার ব্যক্তিগত কলামে একটা এড দেখা যাচ্ছিল।”১৫/০৬/১৪ তারিখ কাঞ্চনকন্যায় তুমি ছিলে। এসি টু টায়ার! আমি তোমার সাথে টাক্সিতে ওঠার আগ পর্যন্ত ছিলাম। এটা আমার ফোন নাম্বার। প্লিজ যোগাযোগ করাে!”আমি ঢোক গিলে বললাম–” কিন্তু তুই তাে ওই ট্রেনে ছিলি না।”
সায়ন্তনী বলল–.” আমি ছিলাম না তুই জানিস। আরো অনেকেই জানে। এমন কি আমি নিজেও জানি। কিন্তু অয়ন তা জানেনা।”আমি বিড়বিড় করলাম—” তােমার নাম তাহলে অয়ন!”
সায়ন্তনী চোখ মেরে বলল,— “কতো রকম পাগলা আছে দুনিয়ায় মাইরি। মা-বাবার একমাত্র দুলাল.।মাধ্যমিকে দ্বিতীয়। গুরু বিসিএসে চান্স পেয়েছে। দারুণ গানের গলা, জানিস! আর এ হেন মালটা ক্রাশ খেয়েছে ট্রেন জার্ণি করতে করতে।তাও নাকি একটাও কথা কেউ কারাে সাথে বলেওনি।আর আরাে শুনবি? শালা ফিগার নয়,বুক নয়, এমনকি ঠোঁটও নয়। এ মালটা একটা মেয়ের চোখ দেখেই পাগলা! বােঝ একবার!যদি পটাতে পারি, এখানেই ঝুলে পড়বাে।–“
আমি সােফায় ধমাস করে বসে পড়লাম। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করছিলাম —“নাইন এইট জিরো ফোর…”
ভিজেতে গান বাজছিল—“সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগােল হয়ে,পরাণে জ্বলছে আগুন আর নেভেনা,একবার ধরতে পেলে মনের মানুষ,ছেড়ে যেতে আর দিও না…”

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *