পূর্ব প্রকাশিতের পর(আজ কুড়িতম পর্ব)
সন্ন্যাসী ও একটি নেংটি ইঁদুর
নি মা ই ব ন্দো পা ধ্যা য়
গুরুর কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর শিষ্য গুরুর পদ
ধূলি নিয়ে নিজের একটি ঝোলায় প্রয়োজনীয় দু
একটি জিনিস নিয়ে ঈশ্বর সাধনায় বের হল। গুরু
উপদেশ দিলেন – ” তোমাকে শূন্য পাঠাচ্ছি। তুমি
পূর্ণ হয়ে আবার এই আশ্রমে ফিরে এসো। এখন, ভগবানের পথে যাও। ধর্মের পথে যাও। সত্যের পথে যাও।” নবীন সন্ন্যাসী নব উদ্যমে শহর জনপদ পেড়িয়ে এসে পৌঁছল এক পাহাড় সংলগ্ন অরণ্য প্রান্তে। নির্জন নিরিবিলি প্রাকৃতির মাঝে পাহাড়ের কোল ঘেঁসে একটি সুন্দর জায়গা নির্বাচন করল নিজেই। জংগলের কাঠ কেটে বানিয়ে ফেলল থাকার মত এক কুঁড়ে ঘর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলল উঠান প্রাংগণ। পাহাড়ি ঝর্ণার জল এনে রাখল। জংগলের ফলমূল কুড়িয়ে আনল। খিদে তেষ্টার ব্যাবস্থা হল। সন্ন্যাসী খুব খুসি হয়ে এবার মনঃসংযোগ করল সাধনায়। পরদিন সকালে সাধক ঠিক করল নিকটবর্তী গ্রামে যাবে মাধুকরী তে( ভিক্ষা)। গুরুদেব বলে দিয়েছেন ‘ মাধুকরীর’ অন্ন শুদ্ধান্ন। তা স্বয়ং মা অন্নপূর্ণার দান। গ্রামের উদ্দেশ্য বের হতে গিয়ে দেখল রাতের মধ্যে তার লেংগটটি কোন এক নেংটি ইঁদুর কেটে রেখেছে।
ভারী মুসকিল হল। গ্রামে ভিক্ষা হয়ত পাওয়া যাবে কিন্তু লেঙ্গট তো পাওয়া যাবে না। এক গ্রামবাসী সবটা শুনে ভিক্ষা দেওয়ার পর বলল, “সন্ন্যাসী ঠাকুর, একটা বিড়াল পুষুন। আপনার এঁটো প্রসাদ খাবে বিড়াল বাবাজী, ওর জন্য খাটুনিও নেই, দেখলে ইঁদুরও পালাবে। ” বুদ্ধিটা মনে ধরল সন্ন্যাসীর। একটা বিড়াল আনল ঘরে। এখন নিজের জন্যে চাল- আলু ভিক্ষা চাওয়ার সঙ্গে বেড়ালের জন্য দুধও ভিক্ষা চাইতে শুরু করলেন সাধু। কেননা বিড়ালটি শুধু ডাল-ভাত খেতে চাইত না। একটু দুধ পেলে সে খুব খুশি হত। “রোজ রোজ কে আপনার বেড়ালের দুধ যোগাবে মশাই? একটা গরু পুষুন। ” বুদ্ধি দিল আর এক গ্রামবাসী। খারাপ কিছু বলেনি।
একটা দুধেল গাই আনলেন সাধু মহারাজ। এখন গরুর জন্য খড় কোথায় পাওয়া যায়? কে দেবে গরুর খোড়াক? নিত্যদিন। আর চেয়ে চিন্তে ক’দিন চলে? একটা সমস্যা মেটে তো আর একটা এসে জুটে যায়। মুস্কিলে পড়লাম। কী করা যায়, ভাবছেন যখন সন্ন্যাসী বসে বসে…”আপনার আশ্রমের সামনেই তো প্রচুর পরিমাণ জমি রয়েছে। চাষ শুরু করুন, বাবাজী। দুটি চালের জন্য ভিক্ষেও করতে হবে না দৈনিক আর গরুর আহারের ও বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। “এক প্রবীন গ্রামবাসী বুঝিয়ে বললেন। ঠিক ঠিক। সেই ব্যাবস্থাই হল। ভালোই ধান হয়েছে জমিতে। ফসল ঘরে তুললেন সাধু। এখন এ সব সামলাবে কে?
“একটা সু- লক্ষণা মেয়ে আনুন ঘরে। বিয়ে করুন। সেই সংসার দেখবে আর আপনাকে ও। আনাজপাতি গরু বাছুর তিনিই সামলে নেবেন। ” এক অতি প্রাচীন গ্রামবাসী পরামর্শ দিলেন। মন্দ যুক্তি নয়। তাই হল। কালক্রমে এক শুভ দিনে সাধুর এক পুত্র জন্ম নিলো। এখন সোনার সংসার।
এমন সময় একদিন গুরুদেব সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। সব দেখে তিনি বললেনঃ “উল্টা বুঝলি রাম একেই বলে। সত্যিই তুই শূন্য থেকে পূর্ণ হয়ে গেছিস। সবই নারায়ণের খেলা।”—শিষ্য মাথা নিচু করে করুণ স্বরে বলল, “সবই ওই একটা নেংটি ইঁদুরের জন্যে গুরুদেব।”
স মা প্ত