পূর্ব প্রকাশিতের পর..
“মন নিয়ে” (২)
নি মা ই ব ন্দো পা ধ্যা য়
“মন নিয়ে “ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন সহজ সরল ভাবে বুঝিয়েছেন তাঁর মতো করে, তেমনই স্বামীজী মহারাজ “মনের” গুরুত্ব বুঝিয়েছেন পবিত্রতা শুদ্ধতার অনুসঙ্গে।আবার জগজ্জননী মা সারদা শুনিয়েছেন আরও নতুন তথ্য। তাঁর কথায়ঃ ” যার যেমন মন,তার তেমন ধন।”
ধন অর্থাৎ ধন-দৌলত নয়,টাকা-কড়ি নয়,সোনা- হীরা-মতি নয়, ‘ সঞ্চয়’। মন শুদ্ধ, শান্ত, স্থিত, এবং চৈতন্যময় হলে, সেই মনে ধনরাশি সঞ্চিত হয়। শুভ চিন্তা, সুস্থ চিন্তা, নিঃস্বার্থ ভাবনা — এগুলিই সঞ্চয়, ধনরাশির সমান পুণ্য সঞ্চয়। এমন মন পেলে তোমার আর ভাবনা কি?
মা সারদা আরও বলেছেনঃ” মনেই পাপ আবার মনেতেই পুণ্য।” জয়রামবাটী গ্রামে, মায়ের বাপের বাড়িতে পথে ঘাটে চলতে অনেক সময় মা কুকুর বা মানুষের বিষ্ঠায় পা দিয়ে ফেলে পা দুটি জলে ধুয়ে মুছে দুবার “গোবিন্দ গোবিন্দ” উচ্চারণ করে বলতেন ‘যা শুদ্ধ হয়ে গেলাম।’ মন কত উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হলে তবে এমন অপূর্ব কথা বলা যায়!
সুতরাং বেশ বোঝা যাচ্ছে মন একটি বিষম বস্তু। কোনো মানুষ পাপী মন নিয়ে জন্মায় না। মানুষই তাকে পাপী করে। মনকে যদি সৎসঙ্গে রাখো, সে সৎ পথে চলবে। আর যদি অসৎ পথে রাখো, তাহলে সে কু-সঙ্গে চলবে।
মা আরও বলেছেনঃ ” নির্বাসনা” র কথা। অর্থাৎ মনে কোনো বাসনাই এনো না। ওই যে সুন্দর দামি গাড়িটি পেতে লোভ হচ্ছে, ওর উৎপত্তি তো তোমার মনে! কামনা বাসনা লোভ সব ক্রমাগত জন্মাচ্ছে তোমার মনের আঙিনায়। তাই মনের মধ্যে সেবার প্রবৃত্তি আনো। সেবা – শুধু সেবা। এইটি করছি বিনিময়ে কিছু পাব, এই আশা ছলনাময়ী! তার থেকে দূরে থাকো।এটিই মায়ের উপদেশ।
মা সারদা ছিলেন সাক্ষাৎ মা জগদ্ধাত্রী।তাঁর মুখের কথায় বলিঃ “আমি তখন দক্ষিনেশ্বরে।রাত তিনটের সময় উঠে জপে বসতুম। কোনো হুঁস থাকতো না।জোছনা রাতে চাঁদের পানে তাকিয়ে জোড় হাত করে বলেছিঃ তোমার ওই জোছনার মতো আমার অন্তর নির্মল করে দাও।আমার মনে যেন কোনো কলংক না পড়ে। ” জগজ্জননী স্বয়ং মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাইছেন।সুতরাং মন বড় বিচিত্র বস্ত।
এই “মন” নামক বস্তুটি থাকে কোথায়? আমাদের দেহের কোন্ অংশে? রক্তে মিশে থাকে? আত্মায় জড়িয়ে থাকে? না ঠিক বুকের মাঝে গেঁথে থাকে? — কেউ জানিনা।
তবে এটা জানি “মন” বলে একটি বস্তু আমাদের সবার আছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।আছে জানি, কিন্তু কখনও দেখিনি। অনুভব করেছি একটা কিছু… আসলে মন অনেকটা ঈশ্বরের মতো।আছেন জানি, তবে আমি দেখিনি।
বাতাস। গায়ে লাগলে তবে বোঝা যায়।দেখা যায় না। “অনুভবে তব পরিচয়।” ঝড় উঠেছে। গাছের পাতাগুলো দোল খাচ্ছে। অনুভূতি! উপলব্ধি! তেমনই। ভাবনাকে দেখা যায় না। চিন্তাকে দেখা যায় না। এরা শুদ্ধসত্ত্ব।
মা সারদা বলে গেছেনঃ ” সবচেয়ে আগে নিজের মনকে পরিষ্কার করো। মন সরল হওয়া চাই।আর মন যার সংশয়ী, তার বড় কষ্ট।” মনকে শিশুর মতো সারল্যে রাখো। শিশুমনই ঈশ্বরের আবাসভূমি। পরিনত মনেই যত সংশয়।
চলবে…