রাঢ়বাংলার ছোটগল্প,লিখছেন-মৃ ণা ল কা ন্তি মা হা ত

মৃণাল কান্তি মাহাত এই সময়ের একজন বলিষ্ঠ কলমের অধিকারী।কবিতাতে যেমন তাঁর বলার ভঙ্গি পৃথক তেমনই গল্পের বুনোটেও এককত্বের পূর্ণ দায় বহন করতেও সক্ষম।আজ নয় প্রায় এক দশক ধরে মৃণাল লেখনিকে করে তুলেছেন তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর,আর নিভৃতে জমিয়েছে নিজের তুণীরে সাধনাকৃত এক একটি অসাধারণ শর।মৃনাল এখন শর্টফিল্ম ও তথ্যচিত্র নিয়ে ব্যস্ত।বানিয়েছেন রাঢ় বাংলার সংস্কৃতি ও অনটন নিয়ে বেশকিছু ভিন্নস্বাদের তথ্যচিত্র।পেয়েছেন বহু পুরস্কার।মৃণালও বাইফোকালিজম্ পরিবারের অন্যতম একজন।

মৃ ণা ল কা ন্তি মা হা ত

ছৌ শিল্পীর বংশধর


উঠোনে পা দিতেই, বুকটা কেমন করে ওঠে পলাশের। এতবড় বাড়িটা্তে একটস জনপ্রানী নেই। খাঁ খাঁ করছে। চারিদিকে মাকড়সার জাল। আঙিনার মাঝ বরাবর গজিয়ে উঠেছে দু একটা ঘাস পাতা। কে ভেবেছিল তাদের বাড়িটার এই পরিনতি হবে।একসময় কার কলরব মুখর বাড়িতে আজ শ্মশানের নিস্তব্ধতা।ধুলোভর্তি দাওয়ার উপর ধপাস করে বসে পড়ে পলাশ।
-কি রে শরীল টা খারাপ লাগছে? ছূটে আসেন সুবল কাকা।
–না না ।ঠিক আছি কাকু। আমি একটু একা থাকছি। তোমার যদি কোন কাজ থাকে—।
–আচ্ছা ,বইস তাহলে। আমি টুকুন কাড়াগিলাকে ধুঁয়ায় আনি মাঠের দিগের লে।
— ওকে ।ঘুরে এস।
–হাঁ ভাল, কুথাও যাইস না। তর কাকি রাঁধাবাড়া কইরছে।
সুবল কাকা চলে যায়। বাবার ছোটবেলার বন্ধু এই সুবল কাকা। বাবার দলের সহকারী ম্যানেজার কাম প্রধান গায়ক ছিলেন এই কাকা। এই বাঘমুন্ডি তল্লাটের অন্যতম ্সেরা ঝুমুর গায়ক। সুবল কাকার হটাৎ ফোন পেয়েই আবার এই গ্রামে ফিরে আসা।
—লুলু, একদিন সময় করে গাঁয়ে আসতে পারবি ,বাপ।
–কেন? পলাশ জিজ্ঞেস করেছিল ।
–একটু মিটিন করার দরকার আছে বাপ। বুঝতেই পারছু ,তদের ঘরেও লোক নাই। ইন্দুরে চিবাছে মুখোশ গিলা। তা বাদে পুন্না হয়ে যাছে ঢোল ধামসা গিলা। বলরাম পুর থাইকে একটা উঠতি পার্টি আইসেছিল , ওরা মুখোস , ঢোল ধামসা গিলা কিনে লিব বইলছে।
–তো বিক্রী করে দাও।
— হ। কিন্তু তদের ঘরেই জিনিস গিলা আছে বাপ। তা বাদে তর বাপেই ছিল ওস্তাদ। তু থাইকে মিটিং করলে ভাল হত। একদিন সময় করতে পারবি নাই। সুবল কাকুর গলায় ছিল কাতর প্রার্থনা।
পলাশ কথা দিয়েছিল এই রবিবারে আসবে বলে। দীর্ঘ ছয় বছর হল পলাশ রা গ্রাম ছাড়া। সেই বাবার ঘটনা টা ঘটে যাওয়ার পর। চাকরি পাবার পর এখন পুরুলিয়া শহরেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছে পলাশ। গ্রামে আসবে বলে মাকে জানায়নি। কলেজের কাজে জামশেদপুরে আসছে বলে এসেছে পলাশ। জানলে কিছুতেই গাঁয়ে আসতে দিতনা। নিজের গায়ের প্রতি অদ্ভূত এক অভিমান মায়ের। যতবারেই গ্রামে যাওয়ার কথা বলেছে পলাশ, মা বাধা দিয়েছে,—কি দরকার যাওয়ার? যে গ্রামের লোকেরা তোর বাপকে বাঁচানার জইন্য দুটা কথা বলল নাই । সেই গাঁয়ে যাওয়ার দরকার টা কি ।
আজকের পর থেকে ,তাদের পরিবার থেকে ছৌ বিদায় নেবে।তিন পুরুষের লালিত একটা সংস্কৃতি। ধরে রাখার মুরোদ হল না পলাশের। নিজেকে যেন কেমন অযোগ্য মনে হয়। পলাশ দের তিন পুরুষের সাংস্কৃতিক পরিবার।দাদু ছিলেন নামকরা ছৌ শিল্পী। তাঁর বাবা এই ঝাড়খন্ড সিমান্ত বাংলার খ্যাতিমান মাদৈলা ও খ্যামটা শিল্পী ।সঙ্গত করেছেন নাচনি সিন্ধুবালা দেবী , মালাবতীর মত শিল্পীদের সঙ্গে। সেইসব ভাঙ্গাচোরা রেকর্ড এখনও পলাশের পরম সঞ্চয়।
তবে বাবার হাতধরেই বেশিখ্যাতি-যশ এসেছিল তাদের পরিবারে। বাবা পুরুলিয়ার নামকরা ছৌ ওস্তাদ। মনমোহন বশরিয়ার। বাঘমুন্ডি এলাকায় এক ডাকে চিনতেন। সেটায় বোধহয় বাবার পক্ষে কাল হয়ে গেল। সরকারি অফিসার দের সঙ্গে নিয়মিত ওঠবস ছিল বাবার। দুবার বিদেশ ফেরত। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ছৌ- প্রদর্শন করা বাবার ডাক পড়ত যে কোন সরকারি অনুষ্ঠানে।
বাবার পরিচিতির সূত্রেই পলাশের ভাল ভাল স্কুল-কলেজে পড়াশোনা। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ খুব স্নেহ করতেন বাবাকে। তাঁরই আগ্রহে পলাশ ভর্তি হয় ক্লাস ফাইবে। সেই যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা। তারপর সারা ছাত্রজীবনটাই কেটে গেল বাড়ির বাইরে। পুরুলিয়া মিশন থেকে বাঁকুড়া খ্রীষ্টান কলেজ। সেখান থেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছৌ চর্চার আর সুযোগেই রইল না।
পলাশ উঠে দাঁড়ায়। প্রাচীরের ভেতর অনেক ঘাস হয়ে গেছে। পলাশ হিসেব করে দেখে, প্রায় বছর পাঁচেক হল তাঁরা বাড়িছাড়া। তারপর মাঝখানে পলাশ দুএকবার এলেও এ বাড়িতে রাত কাটানো হয়নি। এ আঙিনাতেই বাবা তাঁর দলকে রিহার্সাল করাতেন। এইখানটিতে বসে সুবল কাকা গানের ধরতাই দিতেন। অদ্ভূত গলায় মাকে ডাকতেন ,– বঊদি, টুকুন গরমজল হবেক নাই। বাবাও সঙ্গে সঙ্গে সুবল কাকাকে সাপোর্ট করতেন, – হ গো লুলুর মাই, করহ টুকুন র-চা। পলাশের চোখের সামনেই জন্ম নিয়েছে কত নতুন নতুন পালা।
পলাশ হোস্টেল থেকে ফিরলেই , বাবা নিয়ম করে বলতেন,– লুলু ,আয় তকে ভোল্ডদিয়াটা শিখায়দি। ওথা মাঝে মাঝে পেকটিস করবি। প্রতিবারই পলাশ আলস্য করে বলেছে, -বাবা, ইবারে লয় ,পরের বার।
পলাশ একটা সিগারেট ধরায় । বুকের ভেতর থেকে একটা দলা পাকানো কষ্ট বেরিয়ে আসতে চাইছে। সেদিন যদি বাবার ডাকে আখড়ায় যেত এক আধদিন , তাহলে আজ এই অপরাধ বোধে ভুগতে হত না হয়তো।আসলে সেদিন বাবা বা ছোউ কাউকেই গুরুত্ব দেয়নি পলাশ। তখন চোখের মধ্যে ছিল একটা রঙিন স্বপ্ন। ভাল রেজাল্ট। ক্লাসের টপার। ভাল চাকরি। এইসব গান বাজনা , সংকৃতিকে প্যানপ্যানে মনে হত। বাবা চলে যাওয়ার পর ছৌ এর মর্যাদা বুঝতে পারে পলাশ। সেদিন ছৌ-প্র্যাকটিস করার থেকে অংক করতেই বেশী ভালবাসত পলাশ। আজ অংকের লেকচারার সে। কিন্তু এখনও বাবার ছায়া থেকে বেরতে পারেনি পলাশ। এখনও বাবার নামে তাঁকে পরিচিত হতে হয় অনেক জায়গায়। তুমি তো মনমোহন দার ছেলে না? মনমোহন বাবু কি আপনার? প্রথম প্রথম বিরক্ত হত পলাশ। আমি একজন কলেজের অধ্যাপক। আমার নিজস্ব কোন আইডেন্টি থাকবে না? এখনও আমাকে—।আজ বাবার জন্য গর্ব হয়। শিল্পের দাম অনেক বেশি। অর্থপত্তি, পদমর্যাদা দিয়ে এর সঙ্গে কোন তুলনা চলে না। সবকটা ভুলধারনা, অহংকার ভেঙ্গে যাচ্ছে পলাশের।
-কি রে বাপ? এখনও বইসে আছিস? হামদের ঘর দিকে যাইস নাই কেনে? চ চ।তর কাকির রান্না হয়ে গেছে।
-হাঁ চল।পলাশ উঠে দাঁড়ায়।


সুবল কাকুদের বাড়ি পাশের পাড়ায়। মোরাম রাস্তায় বেশ খানিকটা হেঁটে যেতে হয়। দুজন হাঁটতে থাকে।
-দেখ বাপ, এই রাস্তা দিয়েই তোর বাপকে তুলে নিয়েগিয়েছিল বনপার্টির লোকেরা। বাইকের মাঝখানে বসিয়ে রেখেছিল তোর বাপকে।
আমরা কেউ বাধা দিতে পারি নাই। ভয়ে।তাহলে আমাদেরও হয়ত এই অবস্থা হত।
-বাবা কিছু বলেননি সেই সময়? পলাশ জানতে চায়।
-না। কিছু করেন নি , শুধু আমাদের দিকে তাকিয়েছিলেন। হয়ত বিশ্বাস ছিল , আর যাই হোক তাঁকে প্রানে মারা হবে না। আমারো এই বিশ্বাস ছিল । পরের দিন মোহন দার লাশ পাওয়া গিয়েছিল ডুঙ্গরির নীচে। সুবলের চোখে জল।
-জানি , বোউদি এইজন্য হামদের ক্ষমা কইরতে পাইরল নাই । কিন্তু কি কইরব বাপ?
-হুম।মা এখনও অভিমানী। কিন্তু আমি দোষ দি না তোমাদের। তখন তো সবাই একপ্রকার অসহায়, কার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে , কেউ জানে না । তবে বাবারও কম দোষ ছিল না। আমি বারবার বলেছিলাম , এই সময় বাইরের লোকের সঙ্গে একটু যোগাযোগ কমাও। প্রোগ্রাম টোগ্রাম একদম কমিয়ে দাও। সে কথা শুনলে তো?
-ঠিক বলেছিস। এই সুযোগ টাই কাজে লাগাল বদমাশগুলো। তর বাপকে পুলিশের চর বলে সন্দেহ করল।
-হু। অনেক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ থাকাটায় কাল হল।
-মোহনদা ছো এর জন্য এত ভালবাসা পেয়েছিল। আবার ছো এর জন্য জীবন টাও চলে গেল। বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় থাকাটাই কাল হল। পুলিশের চর সন্দেহে খুন হয়ে গেল। মুখে চুক চুক শব্দ করে আফসোস জানায় সুবল কাকু।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসে পলাশ। বলা ভাল পরিত্যক্ত বাড়িতে । খাঁ খাঁ করছে মাটির দোতলা বাড়ি। রান্নাঘর। গোয়াল। মাচাঘর।এ কি হল সেদিনকার মুখ্যাঘর । গ্রামের বড় ঘর বলে পরিচিতি ছিল। মাচা ভর্তি ধান। গয়ালভরা গরু কাড়া। আজ কোথায় সব। সেদিনকার গম গম করা ঘর আজ ভূতুড়ে । পাড়ার কুকুরদের আড্ডাখানা। পলাশ দরজা খোলে । মূলঘরের চাবিটা সুবল কাকুর কাছে রাখা ছিল। থারে থারে সাজানো আছে মুখোশ । একপাশে টাঙানো ঢোল, ধামসা, মাদৈল । পড়ে আছে অবহেলায় , অনাদরে। কোন যৌথপরিবারে কোন বালকের মা মারা গেলে, সে যেভাবে একপাশে পড়ে থাকে অবহেলায় । হাতে ধরা সিগারেট নিরবে পুড়ে যেতে থাকে। তুমি ব্যার্থ। তুমি রুটলেস। তুমি একটি ট্র্যাডিশন এর মৃত্যুর জন্য দায়ী পলাশ। ছিঃ পলাশ ছিঃ। কে যেন বলে ওঠে ভেতর থেকে। মাদৈল টাকে ছুঁতে নীচে পড়ে যায়। উঁই বোধহয় খেয়ে ফেলেছে দড়িটা। মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভূত এক শব্দ ছড়িয়ে পড়ে পরিত্যক্ত ঘর জুড়ে । চমকে ওঠে পলাশ। কে যেন কাঁদছে । রোদনের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে দেওয়াল থেকে দেওয়াল। মাটি ,ছাদ ফুঁড়ে পলাশের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। আমাকে তরহা বাঁচাও । হামরা ইখিনে ঘরবন্দী হয়ে থাইকতে চাইনাই। হামদের কে তরহা আসরে নিয়ে চল। যেখিন শত শত লকের কুলকুলি আর হাততালিয়ে হামরা বাঁইচে থাকি। পলাশের চোখে জল। হাতের সিগারেট জ্বলতেই থাকে। মাটির উপর ধপাস করে পড়ে যায় পলাশ।লুলুউ উ। কুথায় গেলু বাপ। মিটিনে সবাই চইলে আইসেছে। একি পইড়ে গেছনা না কিছ হয়নি। পলাশ উঠে দাঁড়ায়। চল যাচ্ছি।পলাশদের বাড়ির বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে। বাবার একসময়কার সহশিল্পীরা। সবারেই মন খারাপ। প্রিয় জিনিসগুলিকে আজ বিক্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।বলতো বাপ , কত কি দাম দেওয়া যেতে পারে? সুবল কাকু সবাই কে জিজ্ঞাসা করে।বল সবাই একাই একাই।
কেউ কোন কথা বলে না। সবাই চুপ করে থাকে।আচ্ছা ,কাকু মুখোশ আর ঢোল , মাদৈল গিলা না বিকলে হৈথ নাই। পলাশ বলে ওঠে।
-মানে? না বিকলে তো ইঁদুরে খাবেক সোব।আবার কি নতুন করে শুরু করা যায় না দলটা। কে কে রাজী আছ? সবাই উৎসাহে হাততালি দিয়ে ওঠে।
-কিন্তু? সুবল কাকুর মনে সংশয়।কোন কিন্তু নয় কাকু। তুমি হবে ওস্তাদ। নতুন মুখোশ কেনার দায়িত্ব আমার। আমিও থাকব তোমাদের দলে মাঝে মাঝে। নাচ তো আর পারব না। ঝুমুর শিখব, নাচের সময় সংলাপ বলব।
আনন্দে কুলকুলি দিয়ে ওঠে সবাই। কে যেন আনন্দে মাদলের উপর চাপড় মারে। মাদল বেজেই চলে। ধূলো ঝেড়ে নতুন পালার জন্য তৈরি হয় মুখোশ।নতুন পালার জন্য তোমরা তৈরী হও। পুরনোদের পাশাপাশি নতুন ছেলেদেরও দলে নিয়ে এস, আমিও থাকব মাঝে মধ্যে। নাচ তো আর নতুন করে শিখতে পারব না। তবে ঝমৈর হাঁকাব ।তুই সত্যি বলছিস বাপ? অবাক হয়ে যায় সুবল কাকু।
-হ্যাঁ কাকু। সত্যি। তোমরা রাজী না হলে সারাজীবন মনের মধ্যে আমাকে গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে। যে তার তিনপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারল না।
সুবল কাকু , উত্তেজনায় লাফ দিয়ে উঠে।
-বাপরে ,ইবার তকে ওস্তাদ ঘরের ছা বইলে মনে হছে। হামরা জরুর শুরু কইরব দল। কইরে ধামসা টা বাজা । এত আনন্দের দিন হামদের।
বহুদিন অযত্নে পড়ে থাকা ঢোল ধামসা আবারো যেন প্রাণ পায় । আনন্দে মেতে ওঠে একসময়কার নামজাইজকা শিল্পীরা ।
পলাশ বাসস্টপের দিকে হাঁটা শুরু করে । দূরে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে বেলা ডুবছে। পেছন থেকে ভেসে আসছে শিল্পীদের হৈ হুল্লোড়। পলাশ এগিয়ে চলে।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *