ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস চোরাবালি(পর্ব-৫)

পরিচিতিঃ ইন্দ্রনীল বক্সী, “জন্ম – নকশাল পিরিয়ডে ..৭৩ এ দুর্গাপুরে , উচ্চতা মাঝারি, গায়ের রঙ মাজা, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ। লিখছি সেই কিশোরবেলা থেকে, দুর্গাপুর বেলা থেকে বর্তমান নিবাস – বর্ধমান। কি লিখছি ছাই নিজে তো জানিই না অন্যরাও জানে বলে মনে হয় না। হাবিজাবি করে চারটি বই প্রকাশিত।” বাইফোকালিজম্-এ তাঁর আজ ধারাবাহিক উপন্যাস ‘চোরাবালি‘-র পঞ্চম পর্ব।

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস

চোরাবালি(পর্ব-৫)

গদাই ঘোষের গাড়ি যখন বাঁকুড়া মোড় থেকে ডান দিকে বাঁক নিলো তখন রোদ বেশ চড়া। এই বাঁকুড়া মোড় থেকে খন্ডখোষ অবধি অজস্র রাইসমিল গড়ে উঠেছে গত দেড় দশকে। দু লাখ আড়াই লাখ টাকা বিঘের ধেনোজমি এখন রাস্তার ধারের হলে পাঁচ-ছয় লাখ কাঠা প্রতি। আজকাল তো তেমন জমিও লাগে না রাইসমিল করতে। ড্রায়ার এসে যাওয়ায় তুলনায় অল্প জায়গায় রাইসমিল করা যাচ্ছে। বেশীর ভাগই মিনি মিল, গোটা চারেক বড় মিল রয়েছে। বন্ধও হয়েছে দু-একটা। পুরোনো বড় পার্টি নাহলে মিল চালানো মুশকিল এখন, ধানের যা অবস্থা তাতে লেভীর দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে! কয়েক বছর আগেও একথা ভাবা যেত না। এখন বাইরের দিকে তাকাতে হচ্ছে, সাধারণ ভাতের চালেরও ব্র্যান্ডিং হচ্ছে, সুদৃশ্য নাইলনের বস্তায় ছাপা থাকছে “মহাবীর ফাইন রাইস ( রেগুলার )” বা “ধরম বাবা রাইস” … এভাবে চলে যাচ্ছে বর্ধমানের পরিচিত মিনিকিট, রত্না, ছত্রিশ অন্য রাজ্যে, বাংলাদেশে। যাদের খাস চালের মিল, শুধু খাস চালেরই কাজ করে তাদের চিন্তা কম। খাস চালের বাজার দিন দিন বাড়ছে। এখান থেকে খাস চাল চলে যাচ্ছে মুম্বাই, সেখান থেকে আরব মুলুকে। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই সারা ভারতে সম্ভবত এত ভালো খাস চাল একমাত্র দক্ষিণ দামোদরের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলেই উৎপাদন হয়ে থাকে। গদাই ঘোষের মনে মনে একটা খাস চালের মিল করার বাসনাও রয়েছে। তাঁর নজরে রয়েছে  মিলের পাশের বিঘে দুই জমির উপর, যার মালিক এদিকারই চাষি নিশ্চিন্তিপুরের আনোয়ার সেখ। তবে কিছুতেই তাকে বাগে আনতে পারছে না গদাই ঘোষ, অনেক লোভ দেখিয়েও লাভ হয়নি ।

বড় লোহার গেটটা খোলাই রয়েছে, ভেতরে ট্রাক লোড হচ্ছে। গদাই ঘোষের গাড়ি  মিলের বাঁদিকে ফাঁকা জায়গাটাতে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে একটু কোমরটাকে  সোজা করে নেয় গদাই ঘোষ, বুক ভরে শ্বাস নেয়। মিলের আশে পাশের বাতাসে ছড়িয়ে থাকা এই ভাত ভাত গন্ধটা খুব ভাল লাগে ওর। ধীর পায়ে অফিস ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। অফিসে ম্যানেজার ছোকরা সনাতন কম্পিউটারে মুখ গুঁজে কিছু একটা দেখছে, পাশে বেশ কিছু ফাইল। গদাই ঘোষ কোন শব্দ না করে ওর নির্দিষ্ট, ঘাড় পর্যন্ত উঁচু, তোয়ালে দেওয়া, রিভল্ভিং চেয়ারটায় গিয়ে বসতেই ‘ক্যাঁচ’ করে একটা আওয়াজ হলো। ম্যানেজার সনাতন চমকে তাকাতেই গদাই ঘোষকে দেখে উঠে দাঁড়ালো “আরে কখন এলেন, দাদা! বুঝতেই পারিনি … ”

ইশারায় বসতে বলে গদাই ঘোষ জানতে চাইল সনাতন অত মনযোগ দিয়ে কী দেখছিল!

সনাতন জানায় গতমাসের সাপ্লাইয়ের ডিউস চেক করছিল, বাংলাদেশ পার্টির প্রায় এক লাখ পয়ঁষট্টি হাজার টাকা ডিউ রয়েছে। বাংলাদেশের পেমেন্ট নিয়ে সবসময়েই একটা টেনশন থাকে মিলগুলোর। সরাসরি মাল তো যায়না, মাঝে রয়েছে দালাল, ফোড়ে। এরাই এখান থেকে নিয়ে যায়, গোলমালটাও এরাই পাকায় বেশীরভাগ সময় ।

শুনে কয়েকটা চিন্তার ভাঁজ উঠল গদাই ঘোষের কপালে। এই ফেরেব্বাজী বড্ড ব্যাপার, সব কারবারেই থাকে কিছু লোক, তবে চালের কারবারে ইদানীং কমলেও কিছু ফোড়ে রয়েই গেছে এরকম। অবশ্য গদাই ঘোষের টাকা মারা সোজা ব্যাপার নয়, গদাই ঘোষ বকেয়া তোলার ব্যাপারে বেশ নির্দয়। সোজা আঙুলে না উঠলে বিশ হাজার ধার আদায় করতে আরও বিশ হাজার খরচের ত্বত্ত্বে বিশ্বাসী, দরকারে ওই টাকার সমপরিমাণ টাকা খরচ করে যে টাকা দিচ্ছে না তাকে লোক দিয়ে পেটাবেন, হাত পা ভাঙিয়ে দেবেন কিন্তু বকেয়া উসুল করবেন। ব্যবসার এটাও একটা নীতি, যাতে বাজারে প্রচার থাকে যে গদাই ঘোষের টাকা হজম করা মুশকিল।

“বকেয়া পার্টি লিস্ট দিও সনাতন … কোথাকার …বেনাপোল না বনগাঁ?”

“না স্যার, যার সব থেকে বেশী ডিউ সে ব্যাটা ডোমকলের …”

“ ওঃ বাবা! … চৌধুরীবাবুর চামচা নাকি দেখো আবার …” বলে মুচকি হাসল গদাই ঘোষ।

“তা স্যার যা বলেছেন … ”

“ ড্রায়ারে কাল একটা আওয়াজ হচ্ছিল বলছিলে, ঠিক করিয়েছো?”

“ হ্যাঁ স্যার, কাল কোম্পানীর লোক এসছিল।”

“তুমি কাজ করো, আমি একটু ঘুরে আসি…” বলতে বলতে গদাই ঘোষ উঠে পড়ল চেয়ার থেকে। বাইরে মিলের বাউন্ডারীর মধ্যে হাঁটতে লাগল। নয় নয় করেও বিঘে আড়াই জায়গা ঘিরে রয়েছে বাউন্ডারী দেওয়াল, পাঁচিলের ওপাশে চাষের মাঠ। কিছু দূরে আর একটা মিল। বর্ধমান অঞ্চলের আদি মিলগুলো ছিল এক একটা বিশাল বিশাল এলাকা নিয়ে, যার অনেকটা জুড়েই থাকত বিশাল বাঁধানো পাকা চাতাল, ধান শুকোবার জন্য। বয়লারগুলোও ছিল বড় বড়। গদাই ঘোষ মিলের পিছন দিকে চলে এসেছে হাঁটতে হাঁটতে, ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হাসতে থাকে, সেই বিশাল বিশাল মিলগুলোয় গিয়ে হাঁ করে কাজকারবার দেখত এক সময়ে গদাই ঘোষ, যখন চালের কারবার করত সে। কত গল্পই না রয়েছে মিল নিয়ে, আলমগঞ্জে ভূতুড়ে মিলে নাকি ভূত রয়েছে। কোঁয়ারদের মিল নিয়ে একটা গল্প আছে। এককালে নাকি আদিবাসি কামীনদের চরম অত্যাচার করে মেরে বয়লারের চুল্লিতে ফেলে দেওয়া হত, পুড়ে ছাই হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত আস্ত একটা মেয়েছেলে! লোকে বলে পাপের ফল নাকি পেয়েছে কোয়াঁররা, পরিবারের একমাত্র মেয়েটাকেও পুড়ে মরতে হয় বিয়ের পর, সে নিয়ে বিরাট জল ঘোলা হয় সে সময়। এসব গল্পকথা শুনে আসছে সে গত তিরিশ বছর ধরে। আজকাল অবশ্য লেবারদের ওরকম করার কারও সাহস হবে না, উলটে লেবাররাই চরকি নাচাচ্ছে মিল মালিকদের। সে আমলে এসব হতো, যতই হোক বর্ধমান হলো সামন্ত-জমিদারদের জায়গা। একটু আধটু এসব … গদাই ঘোষের অবশ্য মেয়েছেলের নেশা নেই, দরকারে যোগানের ব্যবস্থা করতে হয় কখনো কখনো  ব্যবসার স্বার্থে। কারবারের স্বার্থে যা করতে হয় করতে রাজী গদাই ঘোষ …অনেক কষ্টে এতদূর আসতে পেরেছে সে।

মিলের পিছন দিকে দুটো পেয়ারা গাছ রয়েছে। একটা আম গাছও বেশ মাথা চাড়া দিয়েছে পাঁচিল ছাড়িয়ে, গত বছর মুকুল এসেছিল, কয়েকটা আমও ধরে ছিল, কাঁচা থাকতেই ঝরে যায়। কথায় বলে না সময়ের আগেই ফলন হয় না। গদাই ঘোষ মাথা তুলে গাছগুলো দেখছিল। ওকে দেখে পেয়ারা গাছের গোড়ায় বাঁধা মিশকালো দেশী কুকুরটা সজোরে লেজ নাড়তে লাগল। দারোয়ান বজরং কোথা থেকে এনেছে এটাকে বছর দুয়েক আগে, এখন বেশ নধর হয়েছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই দেশী কুকুর। সনাতন নাম রেখেছে ‘কালুয়া’। তা কালুয়া থাকায় সুবিধেই হয়েছে। মাঠে গরু চড়াতে আসা ছেলেপিলেগুলো পেয়ারা – আমের লোভে পাঁচিল টপকাতে সাহস করে না আর। রাতে কালুয়া ছাড়াই থাকে বাউন্ডারীর মধ্যে, মূল গেট তখন বন্ধ হয়ে যায় ।

“ স্যার …স্যার …” সনাতনের গলা শুনতে পেল গদাই ঘোষ। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেল সনাতন দাঁড়িয়ে রয়েছে সঙ্গে দুটো অল্প বয়সী ছেলে। গদাই ঘোষের ভ্রু কুঞ্চিত হলো …এরা আবার কী ধান্দায়! ইশারায় অফিস ঘরে যেতে বলে অফিস ঘরের দিকে ফিরতে লাগল।

“ স্যার এরা লোকাল পার্টি অফিস থেকে এসছে …আপনার সঙ্গে দরকার আছে বলছে …” সনাতনের চোখে একটা ইশারা খেলে যায় গদাই ঘোষের উদ্দেশ্যে।

“ বল … কী কাজ!”

“ স্যার … আমাকে অসীমদা পাঠাল… মানে নিজেই আসত কিন্তু টাইম শর্ট তাই… ”

“ অসীম ! …ও আচ্ছা … ”   গদাই ঘোষ মনে করতে পারে অসীম হচ্ছে এই এলাকার রুলিং পার্টির উঠতি নেতা … আর একজন আছে তার নাম ডালিম, ডালিম সেখ, সেও নেতা আর একটা গোষ্ঠীর।

“ স্যার কী আর বলি … বুঝতেই পারছেন অনেক খরচা, তাই কিছু …”

গদাই ঘোষ ঠান্ডা মাথায় কথা সাজাতে থাকে, সনাতনকে দুটো ঠান্ডা আনতে বলে সরাসরি তাকায় ছেলেগুলোর দিকে। বছর বাইশ –চব্বিশের হবে। চেহারা দেখলেই বেশ বেয়াড়া মনে হচ্ছে …

“ কিন্তু …খরচ কিসের! এখনও তো ইলেকশানের ঢের দেরী …”

“ না স্যার, এটা ইলেক্সানের কেস নয় … ব্লক থেকে একটা অনুষ্ঠান করা হবে, এই রক্ত দান শিবির, বস্ত্র বিতরণ … এইসব আর কি …

“ও …তা আমায় কি করতে হবে?”

“স্যার অনুষ্ঠানের দিন আপনাকে থাকতে হবে অবশ্যই …আর …আর একটা ডোনেশান ছোট্ট করে …”

“কত ?”

“ এই যে স্যার ” বলে যে ছেলেটি চুপ করে এতক্ষণ বসে ছিল সে একটা বিল বইয়ের ছেঁড়া পাতা এগিয়ে দেয়, গদাই ঘোষ হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে দেখে তাতে কুড়ি হাজারের একটা অংক লেখা আছে।

“ সেকি! এত … এত দেওয়া যায় নাকি? ” গদাই ঘোষ দৃশ্যতই বেশ বিরক্ত হয়ে উঠল।

“ কি বলছেন স্যার …আপনাদের কাছে এতো নস্যি, সারা বছর যা মাল কামাচ্ছেন তাতে এ এমাউন্ট নস্যি …” কথাটা শুনে গদাই ঘোষের কান গরম হয়ে উঠল, নিজেকে সংযত করে শুধু বলল,

“ অসীম কে বোলো এতটা আমি পারব না …তাছাড়া …”

“ স্যার, কিছু মনে করবেন না … আগের পার্টিকে কি একই কথা বলতেন? …আমরা জানি আগের পার্টির এ এলাকা থেকে ভাল কালেকশান ছিল … আমাদের বেলায় …”

গদাই ঘোষ ছেলেগুলোর স্পর্ধা দেখে চমকে উঠল।  হ্যাঁ আগের পার্টিও আসত বইকি! তবে ওদের একটু কায়দা ছিল চাওয়ার। আর একটা জানালাতে দিলেই মিটে যেত, শুধু ওরা কেন ছোটখাটো অনেক পার্টিই আসত। ব্যবসা করতে গেলে মিল চালাতে গেলে এই খরচটা ধরাই থাকে ব্যাবসাদারদের, কিন্তু গুচ্ছের গ্রুপ এলে তো মুশকিল! আগে ব্যবস্থাটা ছিল একই, তবে বেশ গোছানো ছিল। ঝামেলা কম ছিল। একজন ব্যবসাদার সব থেকে যেটা এড়িয়ে চলে। গদাই ঘোষ জানে এরপর ঠিক অন্য গ্রুপ আসবেই অন্য কোনো ছুতোয়, এসে ডালিমের নাম করবে, তাদেরকেও দিতে হবে। এমনিতে পুজোয়, গাজনে মাল খাওয়ার খরচা বাবদ  পাঁচশো হাজার দিয়েই থাকে গদাই ঘোষ, সনাতনকে বলাই আছে। ওই ব্যবস্থা করে দেয়। এইতো পয়লা জানুয়ারী অসীমের গ্রুপ সদর ঘাটে পিকনিক করল, বারো কিলো মুরগির দাম আর দু লিটারের দুটো বোতল পাঠিয়ে দিয়েছিল গদাই ঘোষ।

“শোনো … তোমরা অসীমকে গিয়ে বলো আমায় ফোন করতে … ওর সঙ্গেই  যা বলার বলব …” চোয়াল শক্ত করে কথাগুলো বলে ওঠে গদাই ঘোষ।

“কেন স্যার ? …বললাম তো অসীমদাই পাঠিয়েছে আমাদের দায়িত্ব দিয়ে …আমাদের পছন্দ হচ্ছে না! ”

সনাতন ইতিমধ্যে দু’হাতে দুটো কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল নিয়ে এসে টেবলে নামিয়ে রাখে ছেলে দুটোর সামনে। গদাই ঘোষ ওদের কথার উত্তর না দিয়ে ইশারায় ওদের খেতে বলেন কোল্ড ড্রিংক্সগুলো। ছেলে দুটো স্ট্র ফেলে দিয়ে ঢক ঢক করে বোতলে চুমুক দেয় …

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেলে গদাই ঘোষ ভাবতে থাকে এদের চটিয়ে লাভ নেই, যা এই পার্টির অবস্থা! নিজেদের ছেলেদের উপরেও তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। কখন কী করে বসে…

“আরে না না … অপছন্দ হবে কেন … আমি তো রয়েইছি তোমাদের পাশে, তবে কী জানো বড় টাকার ব্যাপার তো, তাই বড়দের সঙ্গেই বলা ভালো তাই না! …তোমার চিন্তা কোরো না  …খাও খাও …ঠান্ডা হও।”

ছেলেগুলো কী বুঝল কে জানে, নিজেদের মধ্যে অনুচ্চ স্বরে কী কথা বলে ঠক করে বোতলগুলো টেবলে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল।

“তাহলে স্যার আমরা আজকে আসছি … কথা বলে নেবেন কিন্তু অসীমদার সঙ্গে … নাহলে আমাদের আবার আসতে হবে …” বলে অফিস ঘর থেকে বেড়িয়ে গেটের ভিতরেই রাখা ওদের মোটরবাইকটা স্টার্ট করে বেরিয়ে গেল। গদাই ঘোষ অনেকক্ষণ নিজেকে সংযত রাখার পর চাপা আক্রোশে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো

“শালা …”

রাইসমিলের বর্জ্য, ছাই, চাল পালিশের এসবেস্টস সহ দূষিত জল মিলের পিছনের নালি দিয়ে বেরিয়ে সোজা চলে যায় রাস্তার ধারের বড় নালাটায়। বৃষ্টিতে নালা উপছে সেই দূষিত জল মিশে যায় আশেপাশের কৃষিজমিতে। এই ব্যবস্থা এখানকার প্রায় সব মিলেরই। এই নিয়ে স্থানীয়দের, বিশেষ করে যাদের চাষই মূল জীবিকা তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে। মাঝে মধ্যে এই মিলের বর্জ্য কালো জল জমিতে চলে যাওয়া নিয়ে তারা ঝামেলা করে, ব্লক অফিসে রিপোর্ট করে। কিন্তু ওই অবধি। কিছুদিন পরে সব চুপচাপ। মিল মালিকেরা, তাদের সংগঠন অনেক শক্তিশালী। স্থানীয় ও জেলা রাজনীতির বাইরেও রাজ্য রাজনীতিতেও তাদের প্রভাব অনেকদিনের। সরকার বদলায়, ক্ষমতাসীন দল বদলায়, কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়ার সমান্তরাল ব্যবস্থা একই রয়ে গেছে। প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দল সবাই চুপ থাকে, কারণ খুব কম জনই থাকে যারা মিল মালিকদের হাতে তামাক খায়নি … সুতরাং মিলের বর্জ্য জলের প্রভাবে আশেপাশের জমির উর্বরতা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গেছে।

এই সব ছুটকো ঝামেলা গদাই ঘোষের কাছে সামলানো তেমন কিছু ব্যাপার নয়। শুধু স্থানীয় ক্লাব, সংগঠনকে একটু মন জুগিয়ে চলতে হয়। ব্যাপারটায় অনেকদিনই অভ্যস্ত সে। বালির খাদান চালাতে গেলে তো আরও বেশী রকম সামলাতে হয়। তাই সরাসরি ছেলেগুলোকে কিছু বলেনি গদাই ঘোষ, ওরা তো জানে না গদাই ঘোষের ওঠা বসা কাদের সঙ্গে! জানলে মিলে ঢুকতোই না। ওদের জানিয়ে লাভও নেই, মশা  মারতে কামান দাগা হয়ে যাবে, এসব ভাবতে ভাবতে গদাই ঘোষের মুখে  আত্মপ্রসাদের এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।

বিকেল হয়ে আসছে। মিলের উলটো দিকের রাস্তার ওপারে বিস্তীর্ণ চাষ জমির রঙ বদলে যাচ্ছে ক্রমে। আরও একটু এগিয়ে গেলেই দামোদরের দক্ষিন পাড়। চেয়ারে বসে বসে একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল, সনাতনের গলায় তন্দ্রা কেটে গেল …

“স্যার চা … ”

সোজা হয়ে বসে প্লেটে চা ঢালতে লাগল গদাই ঘোষ। এটা তার পুরানো অভ্যাস। প্লেটে চা ঢেলে আস্তে আস্তে চুমুক দেওয়া। গদাই ঘোষের মনে হয় এতে চায়ের স্বাদ বেশী পাওয়া যায়।

“স্যার বলছিলাম কি …কদিন একটু ছুটি চাই …মানে…” সনাতনের কথা শুনে প্লেটটা মুখের কাছে এনে কয়েক মুহুর্ত থমকে যায় গদাই ঘোষ। ভ্রুকূটি জেগে ওঠে …

“আবার কেন! এই তো গত মাসেই চারদিন ডুব দিলে … ”

“স্যার বঊয়ের অপারেশানটা করাতেই হবে …না হলে অবস্থা বিগড়ে যাবে বলছে ডাক্তার …”

“ধূর …ডাক্তারদের কাজই ভয় দেখানো …কি অপারেশান যেন!”

“স্যার বাচ্চার ঘর বাদ দিতে হবে … ”

“ও …  তা সেতো বর্ধমানেই করাবে তাইতো?”

“হ্যাঁ স্যার … সাড়ে নয় হাজারে কন্ট্যাক্ট হয়েছে, ফুল প্যাকেজ …আয়া আলাদা …”

“হুম … তা কবে করাবে?”

“সামনে হপ্তায় … বুধবার ঠিক করেছি … ”

“ঠিক আছে, বংশীকেই নাহয় বুঝিয়ে দিও … আমারও ওদিকে কিছু ঝামেলা রয়েছে, শালা ইরিগেশানের বাবুদের খাঁই দিন দিন বাড়ছে …টাকা পয়সা রয়েছে ?”

“ সে স্যার হয়ে যাবে … আটকে গেলে আপনি তো রয়েছেন ওখানেই …” বলে সনাতন একটা বিগলিত হাসি ঝুলিয়ে রাখল মুখে।

সনাতন আজ চার বছর হল এই মিলে, প্রায় প্রথম থেকেই। গদাই ঘোষ লোক চিনতে খুব একটা ভুল করে না, খুব বিশ্বাসী লোক। এই মিল দাঁড় করাতে সনাতনের কতটা ভূমিকা গদাই ঘোষ জানে। প্রতি পদেই সে সনাতনের উপর নির্ভর করে। এরকম লোকের বিপদে আপদে হাত না খুললে বোকামি। সনাতন কাছেই থাকে বাঁকুড়া মোড়ের কাছেই বাসা ভাড়া নিয়েছে। মেশিন ম্যান বংশী থাকে খেজুড়ীর দিকে। আর দারোয়ান পরিবার নিয়ে মিলেই আস্তানা গেড়েছে, গদাই ঘোষই পাঁচিলের এক কোণে এক ইঁটের দেওয়াল আর এসবেস্টার দিয়ে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই তিন জন তাঁর মূল কর্মচারী বাঁধা বেতনের, বাকি যে কজন আসে তাদের মুখ বদলায় প্রায় প্রতি মাসে। তাদের ব্যবস্থা রোজের, দৈনিক মজুরীর। সুতরাং তাদের তেমন দায়ও নিতে হয়না গদাই ঘোষকে, তবে পুজোয় – ঈদের সময় একটু হাত- খুশ করতেই হয় এটা ওদের আবদার যেমন মিলের রেওয়াজও বটে। এই যেমন ক্যাজুয়াল স্টাফ নুরুলের বউ যে এত ভালো রাঁধে সে কি আর জানা ছিল! গত ঈদে ওর বউ চালের আটার রুটি আর দেশী মুরগীর গায় গায় ঝোল বানিয়ে পাঠাল। গদাই ঘোষ তো খেয়ে মুগ্ধ ! আহা …সে স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে।

সন্ধ্যের মুখে রমেশকে গাড়ি বের করতে বলল গদাই ঘোষ। আর দেরী করে ঠিক হবে না , যাওয়ার পথে একবার সদর ঘাটের খাদানে ঝাঁকি দর্শন করে যেতে হবে। ব্যাটারা সারা দিন কি করল তার একটা খতিয়ান না নিলে চাপ থাকে না। যে যার মতো হাত টানবে, কাঁচা পয়সার কারবারে এই এক মুশকিল! আর যেখানে হিসেবের গরমিলই ব্যবসার অঙ্গ সেখানে তো কথাই নেই। সনাতনের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে, বয়লারে বংশীকে বলে এল গদাই ঘোষ জল যাতে সন্ধ্যা নামার পর ছাড়ে, অন্ধকার হয়ে গেলে।

রাস্তায় মাঝে মাঝে খন্দ, অথচ কিছুদিন আগেই নতুন করে রাস্তা করেছে পি ডাব্লু ডি! কিছু করার নাই, ওভার লোড ট্রাক গিয়ে গিয়ে কয়েকদিনেই রাস্তার বারোটা বাজিয়ে দেয়। আবার পট্টি দিতে হয়। যতটা সম্ভব গর্ত বাঁচিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে রমেশ। রমেশ বেশ পাকা হাতের ড্রাইভার। কিছুটা ফাঁকা ভাল রাস্তা পেলেই হু হু করে ছোটাচ্ছে। দেখতে দেখতে পলেমপুর পার হয়ে সদর ঘাট ব্রীজের উপর উঠতে থাকে গাড়ি। সন্ধ্যের সময় দামোদরের ঠান্ডা হাওয়া গাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে গদাই ঘোষের চোখে মুখে লাগে, বেশ একটা আরাম বোধ হয়। অন্ধকার দামোদর শুয়ে আছে ব্রীজের নিচে , মধ্যে ক্ষীণ জলরেখা। একটা নৌক আটকে আছে চরে। ব্রীজের ওপর থেকে দুরে আবছা কিছু আলোর বিন্দু দেখা যাচ্ছে পাড় বরাবর। মানুষের বসতি ক্রমশ এগিয়ে আসছে দামোদরকে গ্রাস করতে। পাড়ের অনেকটা জুড়েই এখন লোক বসতি গড়ে উঠেছে। বিশ বছর আগেও এত ছিল না। এখন সবাই বুঝে গেছে, এই দামোদর নির্জীব, অতীতের ছায়া মাত্র। এখন আর তার ক্ষমতা নেই বর্ষায় সেই প্রবল ভয়ংকর রূপ নেওয়ার, ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার। দামোদর যেন এখন এক অক্ষম বৃদ্ধ দৈত্য, যাকে ক্ষত বিক্ষত করা যায় যথেচ্ছ, তার গায় এখন বসবাসের খুঁটি গাড়া যায় ইচ্ছে মতো।

তেলিপুকুর মোড়ের ফ্লাই ওভারের ডান দিক দিয়ে গিয়ে পূর্তভবনের বিরাট বাড়িটার আগেই আবার ডান দিকে একটা রাস্তা ঢুকে গেছে পাড়ের দিকে, ওই রাস্তা দিয়ে রমেশ গাড়িটাকে নিয়ে ঢুকে যায়। খাদান অফিসটা এখানে বেশ বড়সর, পাকা দেওয়ালের। সোজা গিয়ে অফিসের সামনের চত্বরটায় গাড়ি দাঁড় করায় রমেশ।

অফিসে এখন পিনু একা। অফিসের টিভিটা বেশ জোরেই চলছে। সম্ভবত খেলা চলছে, আই পি এল। গাড়ির শব্দে পিনু বাইরে এসে দাঁড়ায়। ওর দায়ীত্বেই রয়েছে খাদান, জেসিবির দেখ ভাল করা, হিসেব রাখা, অপারেটরদের সামলানো। গদাই ঘোষ গাড়ি থেকে নেমে সোজা অফিসে ঢুকে যায়। এক নজর টিভিটার দিকে তাকাতেই পিনু টিভিটা বন্ধ করে দেয়। গদাই ঘোষের এসব খেলা টেলা কিংবা টিভির অন্য কিছুতেই যে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই সে বিলক্ষণ জানে।

এন্ট্রির মোটা খাতাটা টেনে নিয়ে একমনে দেখতে থাকে গদাই ঘোষ, সারাদিনে ২৬টা এন্ট্রি। খুব ভালো কিছু না হলেও, মন্দ নয়। পিনু একবার বাইরে বেড়িয়ে আবার ঘরে ঢোকে, মনে হয় মুখের খৈনিটা ফেলে এলো, মুখে খৈনি নিয়ে কথা বললে ওরা হাল খারাপ করে দেবে গদাই ঘোষ।  সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ে। রমেশ বাইরে কার সঙ্গে গুলতানিতে ব্যস্ত।

“ব্যাস! এ কটাই?”

“হ্যাঁ স্যার, চারটের পর জল ছেড়েছে হঠাৎ। তাছাড়া আজ গাড়ি তেমন ছিলো না বেলার দিকে লোড দেওয়ার মতো।” পিনু অকারনে হাতের মোবাইলটা  টেপাটেপি করতে করতে জবাব দেয়।

“হুম … অপারেটারগুলোকে পেমেন্ট দিয়েছ?”

“হ্যাঁ স্যার … পাপ্পুর কিছু এডভান্স নেওয়া ছিলো, আজকে কাটান ছাটান করেছি …ব্যাটা মানছিল না! বলছিল বাড়িতে টাকা পাঠাত হবে , পরে কাটিও …আমি শুনিনি। এদের কোনো ভরসা আছে! কবে কাটবে…”

একটা বড় কাপে লিকার চা নিয়ে অফিসঘরে ঢোকে রমেশ সঙ্গে একটা প্লেট। গদাই ঘোষের সামনে টেবলে নামিয়ে রেখে বেড়িয়ে যায় আবার ঘর থেকে। এই সময়ে ঘাট অফিসে এলে এই এক কাপ চিনি ছাড়া লিকার চা বরাদ্দ গদাই ঘোষের। নেশার মধ্যে এই একটা নেশা বেশ প্রবলভাবে রয়েছে তার। বাকি নেশা তেমন নেই বললেই চলে, সারাদিনে গোটা ছয়েক নেভিকাট আর কদাচিৎ পরব টরব এলে সরকারি অফিসারদের সঙ্গে একটু বসতে হয় কিছুটা সৌজন্যতার খাতিরে, ব্যবসার স্বার্থে।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে খাতায় চোখ বুলাতে থাকে গদাই ঘোষ। নাঃ, এই পিনু ছেলেটার এলেম আছে, প্রথম প্রথম বেশ ক্যাবলা ছিলো এখন বেশ চোস্ত হয়ে উঠেছে। সব থেকে বড় ছেলেটার সাহস আছে। একাই থাকে দরকারে ঘাট অফিসে । এই লাইনে রেষারেষি নেহাত কম নেই খুব একটা মিনমিনে হলে চলবেও না। কদিন আগে গদাই ঘোষেরই একটা লোড গাড়ি বাদুলিয়া মোড়ে দুটো ছেলেকে উড়িয়ে দিয়ে পালিয়েছিল, কি যেন নাম ড্রাইভারটার! হ্যাঁ খোকন …পিনুই সে যাত্রা সামলে দিয়েছে এদিক ওদিক করে। গদাই ঘোষকে মাথা ঘামাতে হয়নি। বিশ্বস্ত লোকজন ছাড়া এসব নেটওয়ার্ক সামলানো অসম্ভব! এদিকে যতদিন যাচ্ছে সাহসী, বিশ্বস্ত লোকে টান পড়ছে বাজারে। সবাই সাড়ে সেয়ানা! দুদিন যেতে না যেতেই ধান্দাবাজি শুরু, কাঁচা পয়সার নেশা যে বড় সাংঘাতিক!

অফিস থেকে বেরিয়ে সামনেটাতে দাঁড়ায় গদাই ঘোষ, একটু আড়মোরা ভেঙে কোমরটা ছাড়িয়ে নেয়। একটা সিগারেট ধরিয়ে অন্ধকার নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, বাঁধের পাড় থেকে নিচে নেমে গেছে বালির রাস্তা । এখান দিয়েই ট্রাক, ট্রলিগুলো নামে, দুপাশে দুচারটে টালি ঘর আছে বিহারীদের। তার কোন একটা থেকে তীব্র ঝগড়ার আওয়াজ আসছে, একটা পুরুষ কন্ঠ বোঝা যাচ্ছে চিৎকার করে কিছু বলছে, নারীকন্ঠটা মাঝে মাঝে তীব্র জবাব দিচ্ছে। একে অপরকে কি বলছে বোঝা ভার, সম্পূর্ণ দেহাতি ভাষায় চলছে তাদের ঝগড়া। টালিঘরগুলিতে টিমটিমে বিদুৎএর আলো, সবই সরকারি লাইন থেকে চুরি করা। মাসিক একটা নির্দিষ্ট টাকা লাগে এই বিদুৎ চুরির জন্য। কোনো মিটারের ব্যবস্থার থেকে বেশ ভালো ব্যবস্থা এটা, সমান্তরাল ব্যবস্থায় দিব্যি দিন গুজরান করছে এরা। গাদাই ঘোষ মনে মনেই হেসে ওঠে, এই সমান্তরাল ব্যবস্থা তো তার জন্যেও …

রমেশ যখন গাড়ি নিয়ে বীরহাটা মোড় পেরিয়ে নীলপুরের দিকে বাঁক নিল তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজছে। নীলপুর ঢোকার আগে একটা কনফেকশনারীর দোকান থেকে এক প্যাকেট পেস্ট্রি নিল গদাই ঘোষ। বাড়ি ফেরার সময় প্রায় রোজই কিছু না কিছু হাতে নিয়ে ঢোকাটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে এক মাত্র সন্তান রুমকির শিশুবেলা থেকেই। মেয়ে এখন বেশ বড় হয়ে গেলেও গদাই ঘোষের ভালো লাগে কিছু নিয়ে বাড়ি ঢুকতে, কে জানে! সেই জন্ম দিয়ে থেকেই সেভাবে আর সময় দিতে পারল কই মেয়েকে! ব্যবসা তার সারাদিনের বেশীরভাগ সময়টাই নিয়ে নেয় সেই কবে থেকেই – তাই কিছু অপরাধ বোধ থেকেই হয়তো এই অভ্যাস হয়ে গেছে তার। তবে বাবা – মেয়ের মধ্যে এই অভ্যাসটা একটা ভালোলাগার অভ্যাসের মতো স্নেহের আর্দ্রতা ধরে রেখেছে।

গাড়িটা এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই ঝিমলি ডেকে উঠল। ভেতর থেকে অল্প বয়সী  মিষ্টি গলার একটা বকুনি শোনা গেল, যদিও জানা ঝিমলি এখন থামবে না। বারান্দার আলোটা জ্বলে উঠতেই আলো ছড়িয়ে পড়ল উর্মিলার কেয়ারী বাগানের ফুলের গাছগুলোয়।

ক্রমশ…  

লেখা পাঠাতে পারেন

আগের পর্ব পড়ার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাসঃ “চোরাবালি”(পর্ব-৪)

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *