অতীতে বাংলার ধর্মীয় উৎসব তথ্য
(Bengal in Holi Writ)
১৬
আদি মহাকাব্য এবং ধর্মসূত্র অনুসারে এই বঙ্গের (vangas) কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে উল্লেখ আছে।
বুদ্ধায়ন ধর্মসুত্র এই ভূমিকে তিনটি সাংস্কৃতিক জাতিগত অসামঞ্জস্য এলাকা ও বিভিন্ন মাত্রাতে চিহ্নিত করেছেন। এই পবিত্রতম তিনটি স্থান হল আর্যাবর্ত যা হিমালয় পর্বতমালা এবং পশ্চিম বিন্ধ্যাচল ও জলপূর্ণ উপরের গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থান। পরবর্তী পবিত্রতম এলাকা যা ঘিরে
আছে মালওয়া, পূর্ব ও উত্তর বিহার, দক্ষিণ কাটিহার, দাক্ষিণাত্য এবং নিম্ন ইন্দাস উপত্যকা।
আর সবচেয়ে বাইরের সীমারেখা হ’ল পাঞ্জাবের আরাতা (arattas) , উত্তর বঙ্গের পুণ্ড্র, দক্ষিণ
পাঞ্জাব ও সিন্ধের সৌভিরাস (sourivas), বঙ্গের
মধ্যবর্তী এবং বাংলার পূর্বাংশ, এবং উড়িষ্যার কলিঙ্গ এবং সংলগ্ন এলাকা। এই সব এলাকার অধিবাসীগণ আর্য সংস্কৃতির বাইরে ছিল। যে সব
লোকেরা স্বীকৃতি পেত এই সব স্থানে অল্পসময়ের জন্য বসবাস করার জন্য শেষকৃত্য করতে হ’ত।
“In the epics of the Vangas are no longer
Shunned as impure barbarians. The Ramayana mentions them in a list of peoples that entered into intimate political
relations with the high-born aristocrats
of Ayodhya. The search parties that were sent to the east in quest of the heroine are asked to visit the land of the Pundras and
Mañdaras. The last mentioned place reminds one of Mandaran in West Bengal
(or Mandar Hill near Bhagalpur. “)
১৭
প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় তথ্য ও জাতি জিজ্ঞাসা
মহাকাব্যের তথ্য অনুযায়ী বঙ্গের মানুষদের অপরিস্কার বর্বর আখ্যা দেওয়া পরিহার করতে হয়েছিল। আমাদের রামায়ণে উল্লেখ আছে এই স্থানের ব্যক্তিদের সঙ্গে অযোধ্যার সম্ভ্রান্তব্যক্তিদের রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল। এই ব্যপারে
অযোধ্যা থেকে পূর্ব দিকে কয়েক দলকে পুণ্ড্র ভূমি ও মান্দারাতে উচ্চ কূলের মহিলা (heroine)
খোঁজার জন্য পাঠানো হয়েছিল।এই মান্দারন স্থান বাংলা অথবা ভাগলপুরের কাছে মন্দার পর্বত হতে পারে।
আবার মহাকাব্য মহাভারতের ভীম ঝটিকা প্রচারে
এই বঙ্গে এসেছিলেন। তিনি মদাগিরিকে (মুঙ্গেরের)
নিহত করেছিলেন এবং পুণ্ড্রের সর্বশক্তিমান রাজা যিনি কোশীনদীর তীরবর্তী রাজ্য শাসন করতেন তাঁর সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাঁদের পরাজিত করে
বঙ্গের (vanga) রাজাকে আক্রমণ করেছিলেন।
তারপরে তাম্রলিপ্তের রাজার বশ্যতা হ্রাস করেছিলেন (modern Tamluk in the Midnapur district) । এবং স্পষ্টতই পার্শ্ববর্তী করবত (Karvata) , সেই সঙ্গে সুম্ভের শাসনকর্তা (বর্তমান হুগলি জেলা), যাঁরা সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানে বসবাস করতেন। এবং সমস্ত বিদেশি বর্বর সৈন্যদেরও(all the hordes of outlandish barbarians (mlechchas)। এই সব এলাকা জয় করেছিলেন, তাঁদের ধনসম্পদ লুন্ঠন করে সর্ব্বশক্তিমান অগ্রসর হলেন লৌহিত্য রাজ্যের (Brahmaputra) দিকে অগ্রসর হলেন।
সমস্ত ম্লেচ্ছ রাজারা যারা সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে
জমিদার ছিলেন তাঁদের কাছ থেকে সঠিক রাজস্ব
আদায় করেছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের রত্ন রাশি
আদায় করেছিলেন। এই প্রচার(campaign) কে উল্লেখ করে আমরা বলতে পারি পশ্চিম বাংলার কিছু অংশে প্রা- সুম্ভ্র (pra-suhmas)জনজাতি
এই সুম্ভ রাজ্যে বসবাস করতেন। (History of Bengal)
রামায়ণ এবং মহাভারত মহাকাব্য গুলিতে বঙ্গ ও
সুম্ভ নাম অনেকবারই উল্লেখ রয়েছে। বাল্মীকি
রামায়ণ খৃষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে রচিত হয়েছিল;
ইহাতে বঙ্গ ও সুম্ভের নাম যে উল্লেখ আছে, তাহাতে
বঙ্গ ও সুম্ভ দেশের বসবাসকারীদের ছোট জাতিগোষ্ঠীরবলিয়া মনে হয় না। কারণ ছোট জাতি হ’লেবিদেহ, মলয়, কাশী প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ জাতির সাথেসুম্ভ ও বঙ্গের নাম কখনও উল্লেখিত হ’ত না।
নিম্নে রামায়ণের একটি শ্লোক উদ্ধৃত হ’ল।
“সুম্ভ মালিকানা বিদেহাংশ্চ মলয়ান
কাশিকোশলান।
মগধান দম্ভ- কুলাংশ্চ বঙ্গালঙ্গাংস্তথৈচ।। “
কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, ৪০; অঃ ২৫ শ্লোক।।
আবার মহাভারতের রচনাকাল দ্বিতীয় শতাব্দীতে
ইহার ‘আদি, সভা, উদ্যোগ ‘প্রভৃতি প্রত্যেক পর্ব্বেই
বঙ্গ ও সুম্ভের উল্লেখ আছে। হরিবংশে এই সম্বন্ধে
একটি আখ্যায়িকা আছে (৩১ অধ্যায়)
দৈত্যরাজ বলিরাজার পত্নী সুদেষ্ণার গর্ভে ও
দীর্ঘতমা ঋষির ঔরষে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র
ও সুম্ভ নামে পঞ্চপুত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং
তাহাদের নামানুসারে পরবর্ত্তীকালে অঙ্গ দেশ, বঙ্গ দেশ, পুণ্ড্র দেশ, কলিঙ্গ দেশ ও সুম্ভ দেশ এই পাঁচটি
রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল।
“অঙ্গো বঙ্গঃ কলিঙ্গশ্চ পুণ্ড্রঃ সুম্ভাশ্চ তে সুতা,
তো দেশাত্মবোধক সমাখ্যাতাঃ স্বনামকথিতা ভুবি।”
মহাভারত, আদি পর্ব্ব ১০৪। ৫০
তথ্যসূত্র: The History of Bengal 1943
Dr. R. C. Majumdar
হুগলি জেলার ইতিহাস ১৯৪৮
সুধীর কুমার মিত্র বিদ্যাবিনোদ
ক্রমশঃ….